জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য ও চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিসহ বেশ কিছু বিষয়ে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। এই সব অনিয়মের বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনও করেছিলেন তিনি। কিন্তু শরীফকে হঠাৎ বদলি ও চাকরিচ্যুত করার পর পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। তাঁর করা তদন্তে অভিযুক্তদের একের পর এক দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
শরীফ উদ্দিন সর্বশেষ ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই দিনই হঠাৎ তাঁকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। বদলির আগে চট্টগ্রামের দুদক অফিসে কেজিডিসিএল, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত, চট্টগ্রামে এলএ শাখার দুর্নীতিসহ ২২টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন শরীফ। এর মধ্যে সাতটির তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম অফিস দুদক কার্যালয়ে পাঠায়নি বলে জানা গেছে।
বাকি ১৫টি পাঠালেও একটিরও মামলার অনুমোদন দেয়নি দুদক। উল্টো শরীফের করা তদন্ত পুনরায় তদন্ত করে অভিযুক্তদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরী, তাঁর দুই ছেলেসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শরীফের তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও পুনরায় তদন্ত করে তাঁদের নির্দোষ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিচ্ছে চট্টগ্রামের দুদক অফিস।
শরীফের তদন্তে উঠে আসে, আইয়ুব খান চৌধুরীর নিজের নিয়োগটাও ছিল অবৈধ। এমনকি তাঁর দুই ছেলেকেও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। কর্ণফুলী গ্যাসে আইয়ুব খান বয়স জালিয়াতি ও দেওয়ানি মামলায় শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি গোপন রেখেই চাকরিতে যোগ দেন। আইয়ুব খান চৌধুরী পেট্রোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদে ভুয়া জন্মতারিখ দিয়ে নিয়োগ পান। ১৯৯১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় এই পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ বছর। আর একাডেমিক সনদপত্র অনুসারে আইয়ুব খানের জন্ম ১৯৬২ সালের ৪ আগস্ট। সে অনুসারে এই পদে আবেদনের শেষ তারিখ ১৯৯১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর বয়স হয় ২৯ বছর ১ মাস ৭ দিন। যে কারণে তাঁর নিয়োগ পাওয়াটাই ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইয়ুব খান ১৯৮৭ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে চেক জালিয়াতির একটি মামলায় ব্যাংক থেকে তাঁর চাকরি চলে যায় ও তিন মাসের জেল হয়। জেল থেকে বের হয়ে কয়েক মাসের মাথায় তিনি কর্ণফুলী গ্যাসে যোগ দেন।
শরীফের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি সেখানে তাঁর দুই ছেলে আশেক উল্লা চৌধুরী ও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সব ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেন। সে সময় বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া, কিন্তু তা না করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে পরীক্ষা নেন বিধি বহির্ভূতভাবে। উপব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের জন্য পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক হলেও তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতার সনদ ছিল না। এ ছাড়া তাঁর সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, খোদ দুদক কমিশনে ৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ারও অভিযোগ করা হয় আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে। কিন্তু শরীফের বদলির পর তাঁর দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর আবারও তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক এই তদন্তের দায়িত্ব পান। তাঁরা গত ১৩ জানুয়ারি পুনরায় ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দেন। এতে আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগেরই সত্যতা মেলেনি বলে দাবি করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর আছে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসানের। দুই কর্মকর্তার তদন্তে এই আইয়ুব খানের দুই ছেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে দুদক মহাপরিচালকের দপ্তরে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাই এ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
দুদকের ছাড়পত্র গোপন ও অনিয়মের মাধ্যমে কেজিডিসিএলে মধ্যরাতে ৬২ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলে শরীফের তদন্তে উঠে আসে। কিন্তু ওই ৬২ জন কর্মকর্তা দুদকের ছাড়পত্র নিয়ে ও কমিটির অনুমতি এবং নিয়ম মেনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া শরীফের তদন্তে ফারুক আহমেদ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ বয়স বেশি হওয়া সত্ত্বেও চাকরি পাওয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। আইয়ুব খান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে একজন দুদক কর্মকর্তা তদন্ত করে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায়, সে অভিযোগটিও নিষ্পত্তি করা যায় বলে প্রতিবেদনের ৭ নম্বর কলামে উল্লেখ করা হয়।
নাসিরাবাদের ক্রাউন স্টিল লিমিটেড, মেসার্স জাকির হোসেন রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের, মেসার্স ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে টাকা বকেয়া থাকার পরও সংযোগ দেওয়া বা স্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও অবৈধ সুবিধা নিয়ে কেজিডিসিএল পুনঃসংযোগ দেয় বলে তদন্ত করে পান শরীফ। কিন্তু দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক তদন্ত করে এসবের সত্যতা পাননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
কর্ণফুলী গ্যাসের জহিরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ নিয়ামূল কবির, প্রকৌশলী মো. আমির হামজাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে শরীফের তদন্তে দুর্নীতির তথ্য উঠে এলেও দুদকের পুনরায় তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করেন শরীফ উদ্দিন। তাঁর তদন্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ঘিরে ৫০ জনের সিন্ডিকেটের নাম উঠে আসে। যারা পুরো চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন। মূল হোতা হিসেবে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক নেতার নাম উল্লেখ করা হয়।
চমেকের কর্মকর্তা, ঠিকাদার মিলে ৩০ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পান শরীফ। এসব টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন বলে শরীফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। শরীফের দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নানা অসংগতি তুলে ধরে পুনরায় তদন্তের জন্য আদেশ দেন দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কেজিডিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আইয়ুব খান চৌধুরীর ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ উদ্দিন আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমি তদন্ত করেছি। এ জন্য আমি কয়েক বছর সময় নিয়েছি। এখন কমিশন কেন দায়মুক্তি দিচ্ছে, সেটি তাঁরা ভালো জানবেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান ও উপপরিচালক মাহবুবুল আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শরীফকে চাকরিচ্যুতি করার পর এবার তাঁর করা তদন্তগুলো ভুল প্রমাণে ব্যস্ত থাকাটা স্বাভাবিক। এটি শরীফকে ঘায়েল করার চেষ্টা। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, শরীফকে এই সবের কারণে বদলি ও পরে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এটি অনেক দিনের পুরোনো অভ্যাস।’ প্রভাবশালীদের চাপেই দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য ও চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিসহ বেশ কিছু বিষয়ে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। এই সব অনিয়মের বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনও করেছিলেন তিনি। কিন্তু শরীফকে হঠাৎ বদলি ও চাকরিচ্যুত করার পর পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। তাঁর করা তদন্তে অভিযুক্তদের একের পর এক দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
শরীফ উদ্দিন সর্বশেষ ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই দিনই হঠাৎ তাঁকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। বদলির আগে চট্টগ্রামের দুদক অফিসে কেজিডিসিএল, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত, চট্টগ্রামে এলএ শাখার দুর্নীতিসহ ২২টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন শরীফ। এর মধ্যে সাতটির তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম অফিস দুদক কার্যালয়ে পাঠায়নি বলে জানা গেছে।
বাকি ১৫টি পাঠালেও একটিরও মামলার অনুমোদন দেয়নি দুদক। উল্টো শরীফের করা তদন্ত পুনরায় তদন্ত করে অভিযুক্তদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরী, তাঁর দুই ছেলেসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শরীফের তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও পুনরায় তদন্ত করে তাঁদের নির্দোষ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিচ্ছে চট্টগ্রামের দুদক অফিস।
শরীফের তদন্তে উঠে আসে, আইয়ুব খান চৌধুরীর নিজের নিয়োগটাও ছিল অবৈধ। এমনকি তাঁর দুই ছেলেকেও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। কর্ণফুলী গ্যাসে আইয়ুব খান বয়স জালিয়াতি ও দেওয়ানি মামলায় শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি গোপন রেখেই চাকরিতে যোগ দেন। আইয়ুব খান চৌধুরী পেট্রোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদে ভুয়া জন্মতারিখ দিয়ে নিয়োগ পান। ১৯৯১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় এই পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ বছর। আর একাডেমিক সনদপত্র অনুসারে আইয়ুব খানের জন্ম ১৯৬২ সালের ৪ আগস্ট। সে অনুসারে এই পদে আবেদনের শেষ তারিখ ১৯৯১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর বয়স হয় ২৯ বছর ১ মাস ৭ দিন। যে কারণে তাঁর নিয়োগ পাওয়াটাই ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইয়ুব খান ১৯৮৭ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে চেক জালিয়াতির একটি মামলায় ব্যাংক থেকে তাঁর চাকরি চলে যায় ও তিন মাসের জেল হয়। জেল থেকে বের হয়ে কয়েক মাসের মাথায় তিনি কর্ণফুলী গ্যাসে যোগ দেন।
শরীফের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি সেখানে তাঁর দুই ছেলে আশেক উল্লা চৌধুরী ও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সব ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেন। সে সময় বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া, কিন্তু তা না করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে পরীক্ষা নেন বিধি বহির্ভূতভাবে। উপব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের জন্য পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক হলেও তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতার সনদ ছিল না। এ ছাড়া তাঁর সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, খোদ দুদক কমিশনে ৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ারও অভিযোগ করা হয় আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে। কিন্তু শরীফের বদলির পর তাঁর দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর আবারও তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক এই তদন্তের দায়িত্ব পান। তাঁরা গত ১৩ জানুয়ারি পুনরায় ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দেন। এতে আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগেরই সত্যতা মেলেনি বলে দাবি করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর আছে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসানের। দুই কর্মকর্তার তদন্তে এই আইয়ুব খানের দুই ছেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে দুদক মহাপরিচালকের দপ্তরে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাই এ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
দুদকের ছাড়পত্র গোপন ও অনিয়মের মাধ্যমে কেজিডিসিএলে মধ্যরাতে ৬২ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলে শরীফের তদন্তে উঠে আসে। কিন্তু ওই ৬২ জন কর্মকর্তা দুদকের ছাড়পত্র নিয়ে ও কমিটির অনুমতি এবং নিয়ম মেনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া শরীফের তদন্তে ফারুক আহমেদ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ বয়স বেশি হওয়া সত্ত্বেও চাকরি পাওয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। আইয়ুব খান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে একজন দুদক কর্মকর্তা তদন্ত করে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায়, সে অভিযোগটিও নিষ্পত্তি করা যায় বলে প্রতিবেদনের ৭ নম্বর কলামে উল্লেখ করা হয়।
নাসিরাবাদের ক্রাউন স্টিল লিমিটেড, মেসার্স জাকির হোসেন রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের, মেসার্স ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে টাকা বকেয়া থাকার পরও সংযোগ দেওয়া বা স্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও অবৈধ সুবিধা নিয়ে কেজিডিসিএল পুনঃসংযোগ দেয় বলে তদন্ত করে পান শরীফ। কিন্তু দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক তদন্ত করে এসবের সত্যতা পাননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
কর্ণফুলী গ্যাসের জহিরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ নিয়ামূল কবির, প্রকৌশলী মো. আমির হামজাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে শরীফের তদন্তে দুর্নীতির তথ্য উঠে এলেও দুদকের পুনরায় তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করেন শরীফ উদ্দিন। তাঁর তদন্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ঘিরে ৫০ জনের সিন্ডিকেটের নাম উঠে আসে। যারা পুরো চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন। মূল হোতা হিসেবে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক নেতার নাম উল্লেখ করা হয়।
চমেকের কর্মকর্তা, ঠিকাদার মিলে ৩০ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পান শরীফ। এসব টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন বলে শরীফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। শরীফের দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নানা অসংগতি তুলে ধরে পুনরায় তদন্তের জন্য আদেশ দেন দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কেজিডিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আইয়ুব খান চৌধুরীর ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ উদ্দিন আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমি তদন্ত করেছি। এ জন্য আমি কয়েক বছর সময় নিয়েছি। এখন কমিশন কেন দায়মুক্তি দিচ্ছে, সেটি তাঁরা ভালো জানবেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান ও উপপরিচালক মাহবুবুল আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শরীফকে চাকরিচ্যুতি করার পর এবার তাঁর করা তদন্তগুলো ভুল প্রমাণে ব্যস্ত থাকাটা স্বাভাবিক। এটি শরীফকে ঘায়েল করার চেষ্টা। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, শরীফকে এই সবের কারণে বদলি ও পরে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এটি অনেক দিনের পুরোনো অভ্যাস।’ প্রভাবশালীদের চাপেই দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদসহ আশপাশের সড়কে বড় জমায়েত করে গতকাল শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাবলিগ জামায়াতের সাদপন্থীরা। নামাজ শেষে যাওয়ার আগে আগামী ৭ ডিসেম্বর বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
৭ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুম হত্যায় আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে রুকু আক্তার নামের ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়
৭ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত বুধবার উদ্ধার হওয়া খণ্ডবিখণ্ড লাশটি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২)। তিনি ফতুল্লার চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রুমা আক্তার নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৮ ঘণ্টা আগেরাজশাহীতে মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
৯ ঘণ্টা আগে