জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার তিন মাসের মধ্যে কোনো ছেলে চাকরি না পেলে, তাকে সমাজ অপদার্থ বলে। শুধু সমাজ না, তার পরিবারও তাকে অপদার্থ ভাবে। এমনকি তার প্রেমিকাও তাকে ভুল বোঝেন। কথাগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর। মৃত্যুর ১৫ দিন আগে দিয়াজ তাঁর ফেসবুক পেজে এই স্ট্যাটাস দেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাবি—প্রেমিকা, পরিবার আর রাজনীতি এই তিন কারণে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন। আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সিআইডি মামলার এজাহারে আনা খুনের অভিযোগকে ‘তথ্যগত ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।
দীর্ঘ ছয় বছর পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন চট্টগ্রাম সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (মেট্রো ও জেলা) আব্দুস সালাম মিয়া।
মোট ২৭ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। চারজন সাক্ষী ঘটনার দিন পুরোটা সময় দিয়াজের সঙ্গে ছিলেন। সাক্ষীর মধ্যে একজন প্রেমিকা, আরেকজন গোপনে বিয়ে করা দিয়াজের স্ত্রী রয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের আত্মহত্যার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা জানতেন। জেনেও দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে প্রতিপক্ষ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সায়মা জেরিন প্রিয়াংকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অবস্থায় প্রিয়াংকা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে দিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হয়। দিয়াজের মাধ্যমে তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান। পদ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায়ও যান একত্রে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং এক সঙ্গে কাজ করার কারণে প্রিয়াংকার সঙ্গে দিয়াজের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। দুই পরিবারও বিষয়টি জানতেন।
দিয়াজ হাটহাজারীর বালুচরা প্রিয়াংকার বাসায় যেতেন, প্রিয়াংকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন দিয়াজের ভাড়া বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। প্রেমের সম্পর্ক যখন গভীর, ঠিক তখন ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের দিকে প্রিয়াংকা জানতে পারেন দিয়াজের এক বিয়ে হয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাজিয়া আফরিন কুহেলী নামের একটি মেয়ের সঙ্গে রোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে হয়। সেই থেকে প্রিয়াংকা দিয়াজের স্ত্রী কুহেলীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে কুহেলীর সঙ্গে প্রিয়াংকার কথা বলে বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন।
প্রতিবেদন মতে, প্রিয়াংকা আরও জানতে পারেন, ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর কুহেলীকে দিয়াজ ডিভোর্স দেন। ডিভোর্স কারণ হিসেবে কুহেলী জানান-দিয়াজ তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করত না। রাজনৈতিক কারণে তাদের মধ্যে বিয়ের কথা গোপন রাখার জন্য দিয়াজ উপদেশ দিতেন। দীর্ঘ সময়ে গোপন রাখার পরও দিয়াজ তার স্ত্রী কুহেলীর সঙ্গে যোগাযোগ না করায় এবং মোবাইল নম্বর ব্লক লিস্টে দেওয়ায় দিয়াজকে ডিভোর্স দেন কুহেলী।
বিষয়টি জানার পরে প্রিয়াংকার মন ভেঙে যায়। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। বিয়ের বিষয়টি দিয়াজ অনেকভাবে প্রিয়াংকাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে দিয়াজের পরিবার প্রিয়াংকার পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও প্রিয়াংকার পরিবার তা গ্রহণ করেনি।
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রিয়াংকা তাঁর বান্ধবী ও বন্ধুদের নিয়ে ১৯ নভেম্বর বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে দিয়াজ সেই অনুষ্ঠানে যায়নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে দিয়াজ প্রিয়াংকাকে ফোন করে তাঁর অবস্থান জানতে চান। প্রিয়াংকা তাঁর বন্ধুরাসহ জিরো পয়েন্টে আছেন বলে জানান। দিয়াজ জিরো পয়েন্টে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বলেন, ‘চল আমরা সবাই মিলে শহরে গিয়ে ডিনার করি এবং আমার বাসায় আজকে মুভি দেখে সারা রাত কাটাব।’ কিন্তু প্রিয়াংকা রাজি হননি।
পরে প্রিয়াংকা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ডেকে বন্ধু যুথী ও ফয়সালকে বালুচরায় নামিয়ে দিয়ে শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন দিয়াজ খুবই রাগান্বিত অবস্থায় ছিলেন। একপর্যায়ে দিয়াজ সিএনজিতে উঠে বসেন। কিন্তু প্রিয়াংকা বিষয়টিকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি।
দিয়াজ কোনো কথা না বলে রাগে ক্ষোভে বালুচরার আগে লালিয়ার হাট এলাকায় যাওয়ার পরে চালককে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামাতে বলেন। পরনের ব্লেজার, সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন প্রিয়াংকার হাতে রেখে নেমে যান দিয়াজ। পরে দিয়াজের রেখে যাওয়া মোবাইলটি ফয়সালকে দিয়ে দেন প্রিয়াংকা। প্রিয়াংকা ও যুথী বালুচড়ার দিকে যেতে থাকেন।
ফয়সাল রাস্তার অপর পাড়ে দিয়াজের কাছে গিয়ে মোবাইলটি তার হাতে দেন। তখন দিয়াজ আরও রাগান্বিত হয়ে বলেন-‘তুই আসছিস, প্রিয়াংকা আসল না কেন? ওর কাছে আমার জীবনের কোনো মূল্যই নেই’। এই বলে মোবাইলটি ছুড়ে ফেলে দেয়।
সিআইডি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, যুথী ও ফয়সাল দিয়াজের কাছে যাওয়ার পর দিয়াজ চিৎকার করে বলতে ছিল ‘তোরা আসলি কিন্তু ও (প্রিয়াংকা) আসল না? আমাকে কি তোরা চিনিস না, আমার সঙ্গে থাকলে তোরা বেচে যাবি।’ এই বলে দিয়াজ পাশের একটি কবরস্থানে কবরের ওপর উঠে মায়ের কসম কেটে চিৎকার করে বলেন, এটা তার শেষ রাত।
যুথী দিয়াজকে স্বাভাবিক করার জন্য পা পর্যন্ত জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু দিয়াজ কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছিল না। দিয়াজ বারবার গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। যুথীকে প্রিয়াংকা ফোন করে বলে, ‘মামুন আসতেছে, দিয়াজকে ম্যানেজ করবে’। তখন রাত সাড়ে ১১টা মামুনকে বালুচরার মোড়ে আসতে বলেন প্রিয়াংকা। প্রিয়াংকা আসার খবরে দিয়াজ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মামুন তাঁর পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী উজ্জ্বলকে বালুচড়ায় নিয়ে যান।
মামুন দিয়াজকে জিজ্ঞেস করেন ‘তোমার এই অবস্থা, কি হয়েছে। তার প্রতিউত্তরে দিয়াজ বলে ‘তুমি এখানে কেন এসেছ?। তখন মামুন বলেন, ‘তোমার এই অবস্থার কথা জানলাম তাই এসেছি’। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দিয়াজ মামুনের গালে থাপ্পড় মারে। বিষয়টি অন্য পর্যায়ে চলে যাওয়ায় দ্রুত প্রিয়াংকা দিয়াজ, যুথী ও ফয়সালকে নিয়ে দিয়াজের বাসায় চলে যান। ড্রয়িং রুমে যুথী ও ফয়সাল। প্রিয়াংকা ও দিয়াজ মায়ের রুমে বসে কথা বলছিল। এ সময় দিয়াজ একটার পর একটা সিগারেট টানছিল। তখন রাত সাড়ে ১২ টা। পরে রাত ২টার দিকে দিয়াজ তাঁর রুমে যাওয়ার আগে প্রিয়াংকার মোবাইলে রোজি খালা নামে একজন ফোন করেন। পরে দিয়াজ জানতে পারেন, ছেলেটি প্রিয়াংকার আগের প্রেমিক সাকিব।
সিআইডি প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, রেগে গিয়ে দিয়াজ ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে নিজ রুমে চলে যান। প্রিয়াংকা দিয়াজের মায়ের রুমে এবং যুথী ও ফয়সাল পশ্চিম পাশের রুমে চলে যান। ভোর ৫টার দিকে দিয়াজের সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশের রুমের দিকে এসে জোরে জোরে ধাক্কাধাক্কি করেন তারা। অনেকভাবেই বুঝিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করেন প্রিয়াংকা। কিন্তু দিয়াজের রুমের ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া যায়নি। তখন ফয়সাল ও যুথী তাদের বাসায় চলে যাবেন বলে জানান প্রিয়াংকাকে। প্রিয়াংকাও সিদ্ধান্ত নেয় যে, তিনিও চলে যাবেন। এরপর তারা সবাই প্রিয়াংকার বাসায় চলে যান। যাওয়ার সময় দিয়াজের বাসার প্রধান ফটক বাইরে থেকে সিটকিনি বন্ধ করে চলে যান।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রিয়াংকা বাসায় গিয়ে তার বড় ভাইকে সকালের নাশতা দিয়ে এবং বুয়াকে রান্নার বিষয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যুথী ও ফয়সালকে রাজি করিয়ে আবার দিয়াজের বাসায় আসেন। কারণ দিয়াজের বাসা বাইরে থেকে সিটকিনি দিয়ে রেখে গিয়েছিল এবং দিয়াজ অনেক রেগে আছে। তা, সমাধানের জন্য প্রিয়াংকা সিদ্ধান্ত নেন পুনরায় দিয়াজের বাসায় আসার। সিটকিনি খুলে দিয়াজের বাসায় ঢুকে দেখেন দিয়াজের রুম ভেতর থেকে আটকানো। পরে পাশের একটি রুম থেকে দিয়াজের জানালা দিয়ে তাকালে দেখেন, দিয়াজ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন। প্রিয়াংকা তখন কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসের নিজ বাসা থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ। ঘটনার তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।
গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার তিন মাসের মধ্যে কোনো ছেলে চাকরি না পেলে, তাকে সমাজ অপদার্থ বলে। শুধু সমাজ না, তার পরিবারও তাকে অপদার্থ ভাবে। এমনকি তার প্রেমিকাও তাকে ভুল বোঝেন। কথাগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর। মৃত্যুর ১৫ দিন আগে দিয়াজ তাঁর ফেসবুক পেজে এই স্ট্যাটাস দেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাবি—প্রেমিকা, পরিবার আর রাজনীতি এই তিন কারণে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন। আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সিআইডি মামলার এজাহারে আনা খুনের অভিযোগকে ‘তথ্যগত ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।
দীর্ঘ ছয় বছর পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন চট্টগ্রাম সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (মেট্রো ও জেলা) আব্দুস সালাম মিয়া।
মোট ২৭ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। চারজন সাক্ষী ঘটনার দিন পুরোটা সময় দিয়াজের সঙ্গে ছিলেন। সাক্ষীর মধ্যে একজন প্রেমিকা, আরেকজন গোপনে বিয়ে করা দিয়াজের স্ত্রী রয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের আত্মহত্যার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা জানতেন। জেনেও দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে প্রতিপক্ষ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সায়মা জেরিন প্রিয়াংকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অবস্থায় প্রিয়াংকা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে দিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হয়। দিয়াজের মাধ্যমে তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান। পদ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায়ও যান একত্রে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং এক সঙ্গে কাজ করার কারণে প্রিয়াংকার সঙ্গে দিয়াজের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। দুই পরিবারও বিষয়টি জানতেন।
দিয়াজ হাটহাজারীর বালুচরা প্রিয়াংকার বাসায় যেতেন, প্রিয়াংকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন দিয়াজের ভাড়া বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। প্রেমের সম্পর্ক যখন গভীর, ঠিক তখন ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের দিকে প্রিয়াংকা জানতে পারেন দিয়াজের এক বিয়ে হয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাজিয়া আফরিন কুহেলী নামের একটি মেয়ের সঙ্গে রোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে হয়। সেই থেকে প্রিয়াংকা দিয়াজের স্ত্রী কুহেলীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে কুহেলীর সঙ্গে প্রিয়াংকার কথা বলে বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন।
প্রতিবেদন মতে, প্রিয়াংকা আরও জানতে পারেন, ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর কুহেলীকে দিয়াজ ডিভোর্স দেন। ডিভোর্স কারণ হিসেবে কুহেলী জানান-দিয়াজ তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করত না। রাজনৈতিক কারণে তাদের মধ্যে বিয়ের কথা গোপন রাখার জন্য দিয়াজ উপদেশ দিতেন। দীর্ঘ সময়ে গোপন রাখার পরও দিয়াজ তার স্ত্রী কুহেলীর সঙ্গে যোগাযোগ না করায় এবং মোবাইল নম্বর ব্লক লিস্টে দেওয়ায় দিয়াজকে ডিভোর্স দেন কুহেলী।
বিষয়টি জানার পরে প্রিয়াংকার মন ভেঙে যায়। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। বিয়ের বিষয়টি দিয়াজ অনেকভাবে প্রিয়াংকাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে দিয়াজের পরিবার প্রিয়াংকার পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও প্রিয়াংকার পরিবার তা গ্রহণ করেনি।
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রিয়াংকা তাঁর বান্ধবী ও বন্ধুদের নিয়ে ১৯ নভেম্বর বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে দিয়াজ সেই অনুষ্ঠানে যায়নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে দিয়াজ প্রিয়াংকাকে ফোন করে তাঁর অবস্থান জানতে চান। প্রিয়াংকা তাঁর বন্ধুরাসহ জিরো পয়েন্টে আছেন বলে জানান। দিয়াজ জিরো পয়েন্টে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বলেন, ‘চল আমরা সবাই মিলে শহরে গিয়ে ডিনার করি এবং আমার বাসায় আজকে মুভি দেখে সারা রাত কাটাব।’ কিন্তু প্রিয়াংকা রাজি হননি।
পরে প্রিয়াংকা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ডেকে বন্ধু যুথী ও ফয়সালকে বালুচরায় নামিয়ে দিয়ে শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন দিয়াজ খুবই রাগান্বিত অবস্থায় ছিলেন। একপর্যায়ে দিয়াজ সিএনজিতে উঠে বসেন। কিন্তু প্রিয়াংকা বিষয়টিকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি।
দিয়াজ কোনো কথা না বলে রাগে ক্ষোভে বালুচরার আগে লালিয়ার হাট এলাকায় যাওয়ার পরে চালককে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামাতে বলেন। পরনের ব্লেজার, সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন প্রিয়াংকার হাতে রেখে নেমে যান দিয়াজ। পরে দিয়াজের রেখে যাওয়া মোবাইলটি ফয়সালকে দিয়ে দেন প্রিয়াংকা। প্রিয়াংকা ও যুথী বালুচড়ার দিকে যেতে থাকেন।
ফয়সাল রাস্তার অপর পাড়ে দিয়াজের কাছে গিয়ে মোবাইলটি তার হাতে দেন। তখন দিয়াজ আরও রাগান্বিত হয়ে বলেন-‘তুই আসছিস, প্রিয়াংকা আসল না কেন? ওর কাছে আমার জীবনের কোনো মূল্যই নেই’। এই বলে মোবাইলটি ছুড়ে ফেলে দেয়।
সিআইডি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, যুথী ও ফয়সাল দিয়াজের কাছে যাওয়ার পর দিয়াজ চিৎকার করে বলতে ছিল ‘তোরা আসলি কিন্তু ও (প্রিয়াংকা) আসল না? আমাকে কি তোরা চিনিস না, আমার সঙ্গে থাকলে তোরা বেচে যাবি।’ এই বলে দিয়াজ পাশের একটি কবরস্থানে কবরের ওপর উঠে মায়ের কসম কেটে চিৎকার করে বলেন, এটা তার শেষ রাত।
যুথী দিয়াজকে স্বাভাবিক করার জন্য পা পর্যন্ত জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু দিয়াজ কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছিল না। দিয়াজ বারবার গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। যুথীকে প্রিয়াংকা ফোন করে বলে, ‘মামুন আসতেছে, দিয়াজকে ম্যানেজ করবে’। তখন রাত সাড়ে ১১টা মামুনকে বালুচরার মোড়ে আসতে বলেন প্রিয়াংকা। প্রিয়াংকা আসার খবরে দিয়াজ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মামুন তাঁর পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী উজ্জ্বলকে বালুচড়ায় নিয়ে যান।
মামুন দিয়াজকে জিজ্ঞেস করেন ‘তোমার এই অবস্থা, কি হয়েছে। তার প্রতিউত্তরে দিয়াজ বলে ‘তুমি এখানে কেন এসেছ?। তখন মামুন বলেন, ‘তোমার এই অবস্থার কথা জানলাম তাই এসেছি’। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দিয়াজ মামুনের গালে থাপ্পড় মারে। বিষয়টি অন্য পর্যায়ে চলে যাওয়ায় দ্রুত প্রিয়াংকা দিয়াজ, যুথী ও ফয়সালকে নিয়ে দিয়াজের বাসায় চলে যান। ড্রয়িং রুমে যুথী ও ফয়সাল। প্রিয়াংকা ও দিয়াজ মায়ের রুমে বসে কথা বলছিল। এ সময় দিয়াজ একটার পর একটা সিগারেট টানছিল। তখন রাত সাড়ে ১২ টা। পরে রাত ২টার দিকে দিয়াজ তাঁর রুমে যাওয়ার আগে প্রিয়াংকার মোবাইলে রোজি খালা নামে একজন ফোন করেন। পরে দিয়াজ জানতে পারেন, ছেলেটি প্রিয়াংকার আগের প্রেমিক সাকিব।
সিআইডি প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, রেগে গিয়ে দিয়াজ ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে নিজ রুমে চলে যান। প্রিয়াংকা দিয়াজের মায়ের রুমে এবং যুথী ও ফয়সাল পশ্চিম পাশের রুমে চলে যান। ভোর ৫টার দিকে দিয়াজের সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশের রুমের দিকে এসে জোরে জোরে ধাক্কাধাক্কি করেন তারা। অনেকভাবেই বুঝিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করেন প্রিয়াংকা। কিন্তু দিয়াজের রুমের ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া যায়নি। তখন ফয়সাল ও যুথী তাদের বাসায় চলে যাবেন বলে জানান প্রিয়াংকাকে। প্রিয়াংকাও সিদ্ধান্ত নেয় যে, তিনিও চলে যাবেন। এরপর তারা সবাই প্রিয়াংকার বাসায় চলে যান। যাওয়ার সময় দিয়াজের বাসার প্রধান ফটক বাইরে থেকে সিটকিনি বন্ধ করে চলে যান।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রিয়াংকা বাসায় গিয়ে তার বড় ভাইকে সকালের নাশতা দিয়ে এবং বুয়াকে রান্নার বিষয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যুথী ও ফয়সালকে রাজি করিয়ে আবার দিয়াজের বাসায় আসেন। কারণ দিয়াজের বাসা বাইরে থেকে সিটকিনি দিয়ে রেখে গিয়েছিল এবং দিয়াজ অনেক রেগে আছে। তা, সমাধানের জন্য প্রিয়াংকা সিদ্ধান্ত নেন পুনরায় দিয়াজের বাসায় আসার। সিটকিনি খুলে দিয়াজের বাসায় ঢুকে দেখেন দিয়াজের রুম ভেতর থেকে আটকানো। পরে পাশের একটি রুম থেকে দিয়াজের জানালা দিয়ে তাকালে দেখেন, দিয়াজ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন। প্রিয়াংকা তখন কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসের নিজ বাসা থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ। ঘটনার তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ।
নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদসহ আশপাশের সড়কে বড় জমায়েত করে গতকাল শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাবলিগ জামায়াতের সাদপন্থীরা। নামাজ শেষে যাওয়ার আগে আগামী ৭ ডিসেম্বর বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
১ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুম হত্যায় আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে রুকু আক্তার নামের ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়
২ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত বুধবার উদ্ধার হওয়া খণ্ডবিখণ্ড লাশটি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২)। তিনি ফতুল্লার চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রুমা আক্তার নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২ ঘণ্টা আগেরাজশাহীতে মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
৩ ঘণ্টা আগে