লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ০৫
লক্ষ্মীপুরে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরে একটি তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও ইসলামি সংগীত সন্ধ্যা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে এই আয়োজন করা হয়েছিল। মাহফিলে জামায়াত নেতাকে প্রধান অতিথি করায় বিএনপি সেটি বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন ব্যানারে তাঁর না দেওয়ায় মাহফিলে বাধা দেন। এ কারণে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জামাল উদ্দিন কবির ও মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদের খতিব আহছান হাবিব এ কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাহবুবুর রহমান, জামাল উদ্দিন কবির ও আহছান হাবিব বলেন, আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর কমিশনার বাড়ির সামনে মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও ইসলামি সংগীত সন্ধ্যা হওয়ার কথা ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আলমগীর কমিশনার এসে মাহফিল বন্ধ রাখতে বলেন। এ সময় তিনি মাহফিলের প্যান্ডেলের কাপড় খুলে ফেলেন। বিদ্যুতের সংযোগ ও মাইকের জন্য লাগানো তার কেটে দেওয়া হয়। এ কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমকে মাহফিলে প্রধান অতিথি করা হয়। এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে প্রতি বছর দাওয়াত দেওয়া হয়। এবার আমাকে কিছুই বলা হয়নি। আমি যেহেতু বিএনপির রাজনীতি করি, এ জন্য আমাকে বিষয়টি জানাতে পারত। তখন কাকে রাখা যায়, তা নিয়ে সমন্বয় করা যেত। তবে মাহফিলের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছি।’

জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মহসিন কবির মুরাদ বলেন, ‘মাহফিল বন্ধ করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। যাঁরা করেছেন, তাঁরা অন্যায় করেছেন। এই মাহফিলের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. রেজাউল করিম।’

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান বলেন, ‘মাহফিলের বিষয়টি স্থানীয় বিষয়। কিন্তু যারা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে জড়িয়ে কথা বলছেন, এটা ঠিক নয়। কারণ বিষয়টি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বা বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী জানেন না। মাহফিলের স্থান নিয়ে কোনো ঝামেলা থাকলে সেটা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা উচিত।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাহফিল বন্ধের বিষয়টি কেউ জানায়নি। কী কারণে মাহফিল বন্ধ, সেটা জানি না। আজ সন্ধ্যায় বিষয়টি জানার পর খোঁজখবর নিচ্ছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লক্ষ্মীপুরে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
লক্ষ্মীপুরে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন একে অপরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা করছেন।

নুর আলম জিকু নামের একজন নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘যারা তাফসির মাহফিল বন্ধ করে বাধা দিচ্ছেন, তাদের ওপর আল্লার গজব পড়ুক।’ সৌরভ হোসেন নামের একজন লিখেন, ‘যারা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন, তারা ঠিক করেননি। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী একজন জাতীয় নেতা। তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না।’ ওমর ফারুক সেলিম লিখেন, ‘ওয়াজ মাহফিল পাবলিকের টাকায় হয়, এইখানে কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রধান অতিথি বানানো কি প্রয়োজন। আলেমরাই তাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন।’

জাকির হোসেন নামের একজন লিখেন, ‘মাহফিল বন্ধ করে নয়, আগে আদর্শিকভাবে নিজেদের তৈরি করুন।’ আবার অনেকে লিখেন জামায়াত নেতা ড. রেজাউল করিমকে প্রধান অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ। কেউ বলেন, ‘ড. রেজাউল করিম অসুস্থ থাকায় মাহফিলে আসতে পারবেন না বলে মাহফিল বন্ধ করে দেয় আয়োজক কমিটি। যাদের কাছ থেকে মাহফিলের নামে কালেকশন করেছেন, তাদের টাকাগুলো ফিরিয়ে না দেওয়ার এটি একটি কৌশল।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত