৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ, আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২২, ১৮: ৫৬

পটুয়াখালী দশমিনা থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনের অপব্যবহার, বিচার প্রার্থীদের হয়রানি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তুলে আজ বুধবার বেলা ১১টায় দশমিনা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আইনজীবীরা। 

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন, দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান, ওসি (তদন্ত) মো. ফজলুল আলম ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান। 

সংবাদ সম্মেলনে দশমিনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. মো. সিকদার গোলাম মোস্তফা আইনজীবীদের পক্ষে ১৫ জন আইনজীবীদের স্বাক্ষরিত লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য পাঠ করেন। 

লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে আইনজীবীরা বলেন, ‘মামলা করতে না চাইলেও দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান ২০২১ সালের অক্টোবরের ২০ তারিখ ১৬ বছরের এক কিশোরীকে সারা রাত থানায় রেখেছেন। এ সময় কিশোরীকে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে মামলা ও জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন। ৩৪ থেকে ৩৫ ঘণ্টা পর কোর্টে হাজির করেন। ওই এজাহারকারী কিশোরী দশমিনা কোর্টে নারী শিশু আদালতে দরখাস্ত দিয়ে এসব কথা বলেছেন। 

আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘ওসি (তদন্ত) মো. ফজলুল আলম ইতিপূর্বেই একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি ওসি প্রদীপের লোক এবং ১০০ মার্ডার করে তাঁর কিছুই হয়নি ও দশমিনা থানা তাঁর কথায় চলে বলেও দাবি করেন। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষকে গালিগালাজ ও হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন তিনি।’ 


আইনজীবীরা বলেন, ‘উপপরিদর্শক (এস আই) মো. মেহেদী হাসান আসামি ধরতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেপরোয়া ও ভীতিকর আচরণ করেন এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসতে চান। পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে ছেড়ে দেন। এ ছাড়াও দশমিনা পুলিশ তাঁদের এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আদালতের আদেশ ব্যতিরেকেই ঘরের কাজ বন্ধ থেকে শুরু করে ধান কাটা বন্ধ, গাছ কাটা বন্ধ ও চাষাবাদ করতে নিষেধ করেন। এভাবে তাঁরা অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করেন। দশমিনা থানার ওসি মেহেদীও ফজলুল আলম নিজেদেরকে দেশের রাজা ভাবেন, আর সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রজা।’ 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেহ মো. জাফরকে থানার গোল ঘরে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে স্ট্রোক করে এবং প্রায় মৃত্যু অবস্থা থেকে ফিরে আসেন। কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এজাহার নিয়ে থানায় গেলে ওই এজাহার কেটে অভিযোগ আকারে নিয়ে থানার গোল ঘরে সালিস নিয়ে বসেন। গোল ঘরের ওই সালিশিতে উভয় পক্ষ মারামারি করলে তখন পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।’ 

এ ছাড়াও ১০ এপ্রিল অ্যাড. আবু তাহের জুয়েলের চেম্বারে ঢুকে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা করে ভাঙচুর করে। এরপর ১১ এপ্রিল থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু মামলার ৭ থেকে ৮ দিন হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তারের উদ্যোগ দেখা যায়নি। অথচ দশমিনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইকবাল মাহমুদ লিটন দশমিনার বাইরে থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমান ওসি একটি মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনজন আসামি গ্রেপ্তারর করেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে দশমিনা থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান, ওসি (তদন্ত) মো. ফজলুল আলম ও এসআই মো. মেহেদী হাসানকে দ্রুত প্রত্যাহার করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় বিচার প্রার্থী মানুষ ও জনসাধারণ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করার ঘোষণা দেওয়া হবে। 

এ ব্যাপারে দশমিনা থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ১১ এপ্রিল অ্যাড. আবু তাহের জুয়েল একটি মামলা করেন। ওই মামলার আসামিরা পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারিনি। কেন গ্রেপ্তার হয়নি-এর জন্য তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমরা আসামি গ্রেপ্তার করতে তৎপর রয়েছি। তবে আইনজীবীদের করা সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য সঠিক নয়।’ 
 
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত