বরিশালের মুলাদীতে গরু-বাছুরের লাম্পি স্কিন ডিজিজের (এলএসডি) প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে এ রোগে তিন শতাধিক গরু-বাছুর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মারা গেছে অন্তত ১০টি গরু-বাছুর।

এদিকে এলএসডিতে আক্রান্ত গরু-বাছুরের পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান কৃষকেরা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা প্রাণী হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস) মো. নজরুল ইসলাম। তবে তাঁর দাবি, জনবল সংকটে প্রাণী চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের শূন্য পদ পূরণের জন্য বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা খামার মালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী মাসুদ বলেন, উপজেলায় গত এক মাসে তিন শতাধিক গরু-বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলার পৈক্ষা হোসনাবাদ গ্রামের রিপন ব্যাপারীর একটি, পৌরসভার ইউসুফ খানের দুটি গরু, শাহজাহান হাওলাদারের একটি, জব্বার হাওলাদারের দুটি, মিরাজ ব্যাপারীর একটিসহ অন্তত ১০টি গরু-বাছুর মারা গেছে। উপজেলায় খামারের চেয়ে সাধারণ কৃষকের গরু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় খামারি ও কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রোগ শুরুর আগে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে প্রকোপ অনেকটা কমানো সম্ভব হতো।

উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের চরপৈক্ষা গ্রামের আব্দুল কাদের ব্যাপারী বলেন, তাঁর খামারে পাঁচটি গরুর মধ্যে তিনটি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গত এক মাসে ওই গ্রামে আরও দুই শতাধিক গরুর এ রোগ হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় চিকিৎসক বাড়ি নিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। প্রতিবার বাড়িতে চিকিৎসক নিতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক মিরাজ ব্যাপারী বলেন, সপ্তাহ দুই আগে তাঁর তিনটি গরুর লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু মারা গেছে। সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় গরু-বাছুরের চিকিৎসায় বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৭৩৩টি গরু এবং ১৮২টি ছাগলের খামার রয়েছে। এসব খামারের পাশাপাশি সাধারণ কৃষকের অনেক গরু-ছাগল রয়েছে। এসব পশুর চিকিৎসার জন্য উপজেলায় একজন ভেটেরিনারি সার্জন এবং একজন উপসহকারী কৃষিসম্পদ কর্মকর্তা রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং ৭টি উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদশূন্য থাকায় প্রাণী চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলএসডি বর্তমানে মহামারি আকার ধারণ করছে এবং একেক এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলায় এলএসডি প্রতিরোধে সাধ্যমতো চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া এলএসডি মশা-মাছির কামড়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। ছোট গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তাই মশা-মাছি মুক্ত পরিবেশে পশু পালন করে ভাইরাল রোগ এড়ানোর জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।