বরিশালে চাঁদাবাজি বন্ধে জামায়াতের মাইকিং, উদ্দেশ্য জানতে চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ৩০

বরিশালের বানারীপাড়া পৌর শহরের ফেরিঘাটসংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী বন্দর বাজারে ইজারার নামে চাঁদাবাজি বন্ধে মাইকিং করেছেন স্থানীয় জামায়াতের নেতা–কর্মীরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা–কর্মীরা। তাঁরা জামায়াতের কাছে এর উদ্দেশ্য জানতে চাইছেন।

গতকাল রোববার রাতে মাইকিংয়ের জেরে আজ সোমবার সকালে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এবং থানার ওসির কাছে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। সহস্রাধিক দোকানপাটের এ বাজারে বর্তমানে ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় জামায়াতের মাইকিংয়ে বলা হয়, ‘আমরা শুনতে পেরেছি, ফেরিঘাটে অবৈধ চাঁদাবাজি চলে। কিছুক্ষণ আগে ওসি ও এসি ল্যান্ড বাজারে এসেছিলেন। বানারীপাড়া বাজারের ফুটপাথের ভাইদের কাছ থেকে কয়েক দিন ধরে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। আপনারা রসিদ ছাড়া কাউকে কোনো টাকা দেবেন না। রসিদ ছাড়া টাকা নিলে সেটি হবে চাঁদাবাজি।’

পৌর জামায়াতের পক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় ওই মাইকিংয়ের পর ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা–কর্মীরা। জানা গেছে, সন্ধ্যায় স্থানীয় বিএনপি নেতা–কর্মীরা একটি মিছিল করেন। তাতে স্লোগানে দেওয়া হয়, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান।’

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে বিএনপির নেতা–কর্মীরা বানারীপাড়া মাছবাজার, ফুটপাত, কাঁচাবাজার, চাল বাজার পৃথক পৃথকভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাজনা তুলছে। বন্দর বাজারে চাঁদা তুলছে ১০ টাকা কিংবা তার অধিক। এ নিয়ে পৌর শহরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে বানারীপাড়া পৌর জামায়াতের আমির কাওছার হোসেন বলেন, কারা যেন ফেরিঘাটের বন্দর বাজার থেকে টাকা তোলে। এটা যদি চাঁদাবাজি হয়, তাহলে তা বন্ধে রোববার সন্ধ্যায় তাঁরা মাইকিং করেছেন। এমনকি উপজেলার ইউএনও, ওসিকে চাঁদাবাজি বন্ধে বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘বন্দর বাজার ইজারা নেওয়ার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। তাঁরা চাঁদাবাজি বন্ধে জনগণকে সচেতন করছেন মাত্র। বিএনপির ভাইরাও রোববার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করেছেন। কি নিয়ে করেছেন তা তাঁদের জানা নেই। এখানে বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো মতপার্থক্য নেই।’

তবে বানারীপাড়া পৌর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁরা সোমবার এসি ল্যান্ড এবং ওসির কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছেন যে জামায়াত কী করে চাঁদাবাজির মাইকিং করল। জামায়াত যেহেতু মাইকিং করেছে, তাহলে মনে হবে বিএনপি চাঁদাবাজি করেছে? তিনি বলেন, ‘বন্দর বাজার আগে থেকেই ইজারা দেওয়া আছে। সেখানে ২ টাকা করে খাজনা নেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু কোথাও তো নিয়ম অনুযায়ী খাজনা তোলে না। এখানে ৫ থেকে ১০টা নেয়। আমরা প্রশাসনকে বলেছি যে বাজারের খাজনা তোলা যদি বন্ধ থাকে তাহলে নদীর পাড়ের যে শতাধিক দোকান আছে সেগুলোও বন্ধ করে দিন। প্রশাসন বলেছে সময় লাগবে।’

বিএনপি নেতা হাবিব বলেন, ‘আমরা থানা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের মাইকিং করার কারণ জানতে চাইব।’

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসতাহসিন তাসমিম রহমান অনিদ্রকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বরিশাল থেকে বানারীপাড়ায় গিয়ে কথা বলতে বলেন।

এ ব্যাপারে বানারীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোমিন উদ্দিন বলেন, ‘ইজারাদার দাবি করে বন্দর ও ফেরিঘাট এলাকায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে—এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই দিন আগে শিবিরের কর্মীরা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্রর কাছে গিয়ে এ অভিযোগ জানান। রোববার পৌর প্রশাসক বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চান। তবে কেউ চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি।’

ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, বাজার কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। চাঁদা না দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত