মীর্জা গালিব, ঢাকা
প্রায় ১৪ বছর আগে মিরপুর বিহারি কলোনিতে আবু সুফিয়ান নামে প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। ঢাকায় বসবাসকারী উর্দুভাষী মানুষদের নিয়ে একটি গবেষণাকর্মে সহযোগিতার কাজ করছিলাম তখন। আবু সুফিয়ানের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। তিনি ছিলেন বাংলাভাষী। কিন্তু ১৯৪৭ সালের উত্তাল তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল মিরপুর বিহারি কলোনিতে। ভগ্নস্বাস্থ্য, প্রৌঢ়ত্ব, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ইত্যাদি যে তাঁর প্রায় ৭০ বছর বয়সী মনটিকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, চোখ দেখে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আবু সুফিয়ান কি এত দিনে বেঁচে আছেন? সে খবর আমি জানি না।
‘মননরেখা’র দশম সংখ্যা হাতে পাওয়ার পর প্রথমেই আবু সুফিয়ানের কথা মনে পড়েছিল। মনে পড়েছিল তাঁর প্রায় নিভে যাওয়া চোখের দৃষ্টিতে লেখা না বলা অনেক কথা। মনে পড়েছিল, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে নিজের রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়দের দেখতে যাওয়া আমার এক লেখক বন্ধুর কথা। সীমান্ত পার হয়ে তার পিসতুতো ভাইকে জড়িয়ে ধরে আমার বন্ধুটি যে তার ভাইয়ের ধমনিতে রক্তপ্রবাহের শব্দ শুনেছিল, সে গল্প মনে পড়ে গেল ‘মননরেখা’য় প্রকাশিত মো. আশরাফ হোসেনের সাক্ষাৎকার পড়তে পড়তে। কে এই মো. আশরাফ হোসেন? ব্রিটিশ ভারতের আলিপুর দুয়ার জেলার মজিদখানা গ্রামে জন্ম নেওয়া মো. আশরাফ হোসেন নামের এই মানুষটি স্বাধীন বাংলাদেশের রংপুর শহরে বড়দা নামে পরিচিত। কেন? কারণ ১৯৪৭ সালে দেশভাগ নামে একটি রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছিল এ ভূখণ্ডে।
মননরেখার এবারের সংখ্যাটি দেশভাগ নিয়ে। তবে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় যে, সংখ্যাটি করা হয়েছে ‘উত্তরবঙ্গে দেশভাগ’ নামে। বাংলাদেশের পুরোনো রাজশাহী বিভাগ এবং ভারতের পুর্ণিয়া, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্স, কোচবিহার এবং আসামের নিচের অংশ নিয়ে যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল, সেটিই মূল উত্তরবঙ্গ। তবে এখনকার রংপুর বিভাগ আর ভারতের শিলিগুড়ি থেকে লোয়ার আসাম হলো ক্ল্যাসিক উত্তরবঙ্গ। অবিভক্ত ভারতবর্ষের এই অঞ্চলটি দেশভাগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর এক অংশ চলে গেছে বিহারে, এক অংশ পশ্চিমবঙ্গে, এক অংশ আসামে আরেক অংশ বাংলাদেশে। অথচ দেশভাগের আলোচনায় এই অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। কারণ কী?
এর একটি বড় কারণ সম্ভবত উত্তরবঙ্গে দেশভাগের ‘সাইড এফেক্ট’ হিসেবে ধর্মীয় বা জাতিগত দাঙ্গা হয়নি বা হলেও সেটা খুবই সামান্য, যার প্রভাব পড়েনি লিখিত ইতিহাসে। কিন্তু লিখিত প্রভাব না পড়লেও এর ব্যবহারিক প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের ওপর। বিশেষ করে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ওপর। এ বিভাগের যে আটটি জেলা, সেগুলোর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ ছিল মূলত নেপাল, ভুটান, আসাম কিংবা দিল্লির সঙ্গে। সে কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে উত্তরবঙ্গের মাঝামাঝি কাঁটাতার বসার পরে। কাঁটাতারের দুই পারে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সচল থাকলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলা হয়ে গেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রান্তীয় জনপদ। এ গল্প গত ৭৫ বছরে কোথাও আলোচিত হয়নি।
এই অনালোচিত বিষয়টি আলোচনায় এনেছে মননরেখা। মফিদুল হক, মাহবুব সিদ্দিকী, ড. আনন্দগোপাল ঘোষ, ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমানসহ দুই বাংলার প্রায় ৫০জন লেখক লিখেছেন এ সংখ্যায়। লেখকতালিকা যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এ সংখ্যার জন্য প্রচ্ছদ করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী গণেশ হালুই।
মননরেখা
ষাণ্মাসিক সাহিত্যপত্র
সম্পাদক
ড. মিজানুর রহমান নাসিম
পৃষ্ঠাসংখ্যা
৫৫৯
দাম
৫০০ টাকা
প্রায় ১৪ বছর আগে মিরপুর বিহারি কলোনিতে আবু সুফিয়ান নামে প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। ঢাকায় বসবাসকারী উর্দুভাষী মানুষদের নিয়ে একটি গবেষণাকর্মে সহযোগিতার কাজ করছিলাম তখন। আবু সুফিয়ানের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। তিনি ছিলেন বাংলাভাষী। কিন্তু ১৯৪৭ সালের উত্তাল তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল মিরপুর বিহারি কলোনিতে। ভগ্নস্বাস্থ্য, প্রৌঢ়ত্ব, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ইত্যাদি যে তাঁর প্রায় ৭০ বছর বয়সী মনটিকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, চোখ দেখে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আবু সুফিয়ান কি এত দিনে বেঁচে আছেন? সে খবর আমি জানি না।
‘মননরেখা’র দশম সংখ্যা হাতে পাওয়ার পর প্রথমেই আবু সুফিয়ানের কথা মনে পড়েছিল। মনে পড়েছিল তাঁর প্রায় নিভে যাওয়া চোখের দৃষ্টিতে লেখা না বলা অনেক কথা। মনে পড়েছিল, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে নিজের রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়দের দেখতে যাওয়া আমার এক লেখক বন্ধুর কথা। সীমান্ত পার হয়ে তার পিসতুতো ভাইকে জড়িয়ে ধরে আমার বন্ধুটি যে তার ভাইয়ের ধমনিতে রক্তপ্রবাহের শব্দ শুনেছিল, সে গল্প মনে পড়ে গেল ‘মননরেখা’য় প্রকাশিত মো. আশরাফ হোসেনের সাক্ষাৎকার পড়তে পড়তে। কে এই মো. আশরাফ হোসেন? ব্রিটিশ ভারতের আলিপুর দুয়ার জেলার মজিদখানা গ্রামে জন্ম নেওয়া মো. আশরাফ হোসেন নামের এই মানুষটি স্বাধীন বাংলাদেশের রংপুর শহরে বড়দা নামে পরিচিত। কেন? কারণ ১৯৪৭ সালে দেশভাগ নামে একটি রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছিল এ ভূখণ্ডে।
মননরেখার এবারের সংখ্যাটি দেশভাগ নিয়ে। তবে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় যে, সংখ্যাটি করা হয়েছে ‘উত্তরবঙ্গে দেশভাগ’ নামে। বাংলাদেশের পুরোনো রাজশাহী বিভাগ এবং ভারতের পুর্ণিয়া, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্স, কোচবিহার এবং আসামের নিচের অংশ নিয়ে যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল, সেটিই মূল উত্তরবঙ্গ। তবে এখনকার রংপুর বিভাগ আর ভারতের শিলিগুড়ি থেকে লোয়ার আসাম হলো ক্ল্যাসিক উত্তরবঙ্গ। অবিভক্ত ভারতবর্ষের এই অঞ্চলটি দেশভাগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর এক অংশ চলে গেছে বিহারে, এক অংশ পশ্চিমবঙ্গে, এক অংশ আসামে আরেক অংশ বাংলাদেশে। অথচ দেশভাগের আলোচনায় এই অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। কারণ কী?
এর একটি বড় কারণ সম্ভবত উত্তরবঙ্গে দেশভাগের ‘সাইড এফেক্ট’ হিসেবে ধর্মীয় বা জাতিগত দাঙ্গা হয়নি বা হলেও সেটা খুবই সামান্য, যার প্রভাব পড়েনি লিখিত ইতিহাসে। কিন্তু লিখিত প্রভাব না পড়লেও এর ব্যবহারিক প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের ওপর। বিশেষ করে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ওপর। এ বিভাগের যে আটটি জেলা, সেগুলোর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ ছিল মূলত নেপাল, ভুটান, আসাম কিংবা দিল্লির সঙ্গে। সে কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে উত্তরবঙ্গের মাঝামাঝি কাঁটাতার বসার পরে। কাঁটাতারের দুই পারে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সচল থাকলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলা হয়ে গেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রান্তীয় জনপদ। এ গল্প গত ৭৫ বছরে কোথাও আলোচিত হয়নি।
এই অনালোচিত বিষয়টি আলোচনায় এনেছে মননরেখা। মফিদুল হক, মাহবুব সিদ্দিকী, ড. আনন্দগোপাল ঘোষ, ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমানসহ দুই বাংলার প্রায় ৫০জন লেখক লিখেছেন এ সংখ্যায়। লেখকতালিকা যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এ সংখ্যার জন্য প্রচ্ছদ করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী গণেশ হালুই।
মননরেখা
ষাণ্মাসিক সাহিত্যপত্র
সম্পাদক
ড. মিজানুর রহমান নাসিম
পৃষ্ঠাসংখ্যা
৫৫৯
দাম
৫০০ টাকা
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪