মঈনুস সুলতান
থাইল্যান্ডের তরুণী প্রেমজাই। ওর সঙ্গে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে সাক্ষরতাবিষয়ক দুই মাসের প্রশিক্ষণে শামিল হই। প্রশিক্ষণে দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে আগত পার্টিসিপেন্টরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলেও আমরা দুজন থেকে যাই যুক্তরাষ্ট্রে। চেষ্টা করি, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে। তখন গোল বাঁধে আমি ও প্রেমজাই টোফেল পরীক্ষা পাস করতে ব্যর্থ হলে। তো আমরা দুজনে নন-ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হই, যেখানে ক্লাস করার জন্য টোফেল ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন ছিল না।
জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টবিষয়ক একটি নন-ডিগ্রি ক্লাসে সপ্তাহে বার দুই আমরা মিলিত হতাম। এ ছাড়া কোনো না কোনো কারণে ক্যাম্পাসে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ প্রতিদিনই হতো। তখন আমি অত্যন্ত আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিলাম। কিছুতেই স্বল্প বাজেটে বসবাসের জন্য একটি কামরা পাচ্ছিলাম না। তাই চেনাজানা বন্ধুবান্ধবদের অ্যাপার্টমেন্টে—কখনো কাউচে আবার কখনো ফ্লোরে বেডরোল পেতে বাতাসভরা বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম। তিন বেলা যথেষ্ট পরিমাণে খাবারদাবার জোটানোও মুশকিল হয়ে পড়েছিল।
আমি যেদিন অনাহারে থাকতাম, প্রেমজাই কীভাবে তা যেন টের পেয়ে যেত। ক্লাসের বিরতিতে তার ঢাউস পার্স থেকে একটি প্লাস্টিকের কৌটা বের করে দিয়ে বলত—ক্যাফেটেরিয়ার বুফে-লাঞ্চে প্রচুর বেক করা ফিশ দিয়েছিল, আমি তো অত খেতে পারি না, এক টুকরা এক্সট্রা মাছ সেভ করেছি।
তত দিনে প্রেমজাইয়ের হালচাল ও চেহারাসুরতে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। সে চুল কাঁচি দিয়ে এবড়োখেবড়ো করে নিজ হাতে ছেঁটে মুখে এনেছে ঈষৎ কর্কশ লুক। রেশমি স্কার্ট টার্ট বাদ দিয়ে পরতে শুরু করেছে পুরুষালি ঢঙের ঢোলা র্যাগেড্ শার্ট-প্যান্ট। আমার সঙ্গে দেখা হলে আর আগের মতো সুইট করে হাসে না। খোঁচা মেরে খানিক ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে। আর আমি না চাইলেও খুব ইনডাইরেক্টলি এক-আধটু সাহায্যও করে।
আমার বাতাসভরা বালিশ ফুটো হয়ে যাওয়াতে আমি উইলিয়াম ফোকনারের ঢাউস রচনাবলিতে মাথা রেখে দিন কয়েক ঘুমাই। তাতে ঘাড় বাঁকা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, আর ব্যাকপেন বাড়ে বিঘতভাবে। তখন প্রেমজাই নিয়ে আসে চিলেকোঠায় বসবাসের সম্ভাবনার সংবাদ। সে আরও চারটি আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের সঙ্গে মিলেঝুলে একটি ভিক্টোরীয় ধাঁচের খুব পুরোনো দোতলা বাড়িতে শেয়ারে বাস করছে। ওই বাড়িতে চিলেকোঠার এক চিলতে কামরা নামকাওয়াস্তে টাকায় ভাড়া দিচ্ছে। চাইলে আমিও ওখানে বাস করতে পারি।
ওই দিন সন্ধ্যাবেলা আমার বেডরোল, ব্যাকপ্যাক ও ফুটোবালিশ নিয়ে ওখানে এসে উঠি। চিলেকোঠায় পৌঁছাতে হয় হিলহিলে একটি আলগা মই বেয়ে। পরিসর পা লম্বা করে ঘুমানোর মতো প্রশস্ত। পাশে জামাকাপড়, জুতাছাতা, গোটা বিশেক বইপত্র ও কফি মগ রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা আছে। বৈদ্যুতিক বাতির কোনো বন্দোবস্ত নেই। তার প্রয়োজনও নেই, টর্চ জ্বেলে অনায়াসে মই বাওয়া যাবে। আর খুব দরকার পড়লে জ্বালানো যাবে মোমবাতি। তখন গ্রীষ্মকাল চলছে। আমি দিন তিনেক চিলেকোঠায় বসবাস করে এক রাতে গরমে ঘেমে-নেয়ে মই বেয়ে নেমে আসি দোতলায়।
করিডরে একটি পুরোনো জ্যাম্পেস কাউচে স্কার্ট হাঁটু অবধি গুটিয়ে পা ছড়িয়ে বসে প্রেমজাই। সে ডিকশনারি দেখে মৃদুস্বরে দুলে দুলে ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ মশকো করছে। আমার ঘর্মাক্ত হালত দেখে বোধ করি তার কৃপা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে বেজমেন্ট থেকে সে নিয়ে আসে একটি মাকড়সার জালে জড়ানো টেবিল ফ্যান। ঘণ্টাখানেকের পরিশ্রমে তাতে এক্সট্রা ইলেকট্রিক তার জুড়ে দিয়ে চিলেকোঠার ঠিক নিচে তার কামরায় প্লাগ-ইন করে মই বেয়ে তা আমার বেডরোলের পাশে রেখে যায়।
তারপর থেকে টেবিল ফ্যানের বাতাসে আমার শরীর জুড়ালেও, গভীর রাতে আমি দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে থাকি। কারণ, টেবিল ফ্যানটিতে কোনো ঢাকনা ছিল না। তাই আধো ঘুমে কেবলই মনে হতো—যদি ডানায় হাত লেগেটেগে যায়।
প্রেমজাই তখন কেবলই মুখভার করে থাকত বলে এ নিয়ে অভিযোগও করতে সাহস পেতাম না। তার মন খারাপের কারণ আমার জানা ছিল। আমি দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় টোফেল পাস করেছি, সঙ্গে সঙ্গে মাস্টার্স প্রোগ্রামে অ্যাডমিশনের বিষয়টিও সম্মানজনকভাবে সুরাহা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে পরীক্ষায় বসে প্রেমজাই টোফেল উত্তীর্ণ হতে পারেনি। আমার সফলতায় আমি বড় বিব্রতবোধ করি। তার দিকে ভালো করে চোখ তুলে তাকাতেও পারি না আর।
উইকয়েন্ড শুরু হলে শনিবারে আমি একটু রাত করে বাড়ি ফিরতাম। ওই দিন ভিক্টোরীয় ধাঁচের পুরোনো দোতলা বাড়িটির যেন রূপ বদলে যেতো। চার-চারটি শ্বেতাঙ্গ যুবতী সন্ধ্যার পর সাজগোজ করত। আসত তাদের বয়ফ্রেন্ডরা। আমি মুখচোরা বিলাইয়ের মতো বেশ রাতে পা টিপে টিপে লিভিং রুমের লাগোয়া করিডর ধরে হেঁটে যেতে যেতে দেখি, মোমের আলোয় স্কার্টের ঘূর্ণি তুলে নাচছে একটি মেয়ে। আর তার বয়ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজাচ্ছে চেলো।
সিঁড়ির তলায় ফয়ারেও খুব কাছাকাছি হয়ে দাঁড়িয়ে আরেকটি কাপল। তারা চাকোস চাকোস করে চুমো খাওয়ার ফাঁকে আমাকে ‘গুড নাইট’, ও ‘হ্যাভ অ্যা নাইস ইভিনিং’ বলে। দোতলার করিডরের কোনায় দেখি, জ্যাম্পেস কাউচে পা ছড়িয়ে বসে প্রেমজাই, যথারীতি ডিকশনারি ঘেঁটে ঘেঁটে মশকো করছে ইংরেজি রিডিং প্যাসেজ।
আমাকে দেখতে পেয়ে অনেক দিন পর তার মুখে ফিরে আসে সুপারসুইট হাসিটি। ফিক করে ঠোঁট ঈষৎ বাঁকিয়ে বলে, ‘টেল মি হাউ অ্যাম আই গোনা গেট অ্যা বয়ফ্রেন্ড?’ জবাবে আমি নির্লিপ্ত থাকলে সে টুসকি দিয়ে একটি মিন্টগাম আমার দিকে ছুড়ে দেয়। ঠিক তখনই পাশের লাগোয়া কামরা থেকে ভেসে আসে শরীরিভাবে অন্তরঙ্গ হওয়ার আলামত। এ ধরনের আধো অস্ফুট আওয়াজকে বিশুদ্ধ বাংলায় বলা হয় শীৎকার। তাতে প্রেমজাইয়ের চোখমুখ লাজরক্তিম হয়ে উঠলে, আমি এ সুযোগে তাকে ‘গুড নাইট’ বলে মইয়ে পা রেখে চিলেকোঠায় উঠে পড়ি।
মাসখানেকের ভেতর প্রেমজাইয়ের জীবনে মোড় ফিরে। কীভাবে যেন তারও জুটে যায় একটি বয়ফ্রেন্ড। চাঁছাছোলা মস্তকের পুরুষটি বারান্দাঅলা হ্যাট পরে এসে হাজির হতো দিনদুপুরে। রাতবিরাতে আমি চিলেকোঠা থেকে নেমে করিডরের কোনার কমন বাথরুম ব্যবহার করতে গেলে, চোখে পড়ত, প্রেমজাইয়ের বয়ফ্রেন্ড সানগ্লাসে চোখ ঢেকে ছায়ামূর্তির মতো টাকিলার বোতল আর লেবু হাতে যাচ্ছে কিচেনের দিকে।
একদিন ভোরবেলা মই বেয়ে নামতেই দেখি, জ্যাম্পেস কাউচে দৈহিকভাবে অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে প্রেমজাই ও তার পুরুষবন্ধুটি। আমি চোখ ফেরাতে গেলে প্রেমজাই ‘ওয়েট অ্যা মিনিট’ বলে উঠে দাঁড়ায়। কার্পেটে পড়ে থাকা ড্রেসিং গাউন তুলে কাঁধে জড়িয়ে, কোমরে ফিতা বাঁধতে বাঁধতে সে বলে,‘আই লাইক ইউ টু মিট মাই বয়ফ্রেন্ড।’
তো আমি হাতটাত মিলিয়ে পরিচিত হই তার পুরুষবন্ধু হেক্টরের সঙ্গে। ছেলেটির ঊর্ধ্বাঙ্গ আদুল, লোমভরা বুকে অসংখ্য কাটাকুটি ও জখমের দাগ। ইংরেজি সে বলে খুবই সামান্য। তবে আমাকে আন্তরিকভাবে টাকিলা পানের আমন্ত্রণ জানায়, এবং জানতে চায় কী কাজ করি?
মাস্টার্স প্রোগ্রামের ছাত্রত্ব ছাড়া আমি মূলত বেকার জানতে পেরে, মেক্সিকো থেকে ফার্ম ওয়ার্কার হিসেবে আগত হেক্টর চুকচুক করে আফসোস প্রকাশ করে। বলে, চলে এসো আমার সঙ্গে, ফার্মে আপেল কুড়াবে, ঘণ্টাওয়ারি মাইনে এরা মন্দ দেয় না।
আমি রাজি না হলে হেক্টর একটু হতাশ হয়ে টিপয়ের তলা থেকে টেনে বার করে ছোট্ট একটি পিঞ্জিরা। তার আগল খুলে দিয়ে ঠোঁট সুচালো করে শিস দিতেই ডানা ঝটপটিয়ে খানিক উড়ে এসে তার কাঁধে বসে বর্ণিল একটি পাখি। প্রেমজাই উৎসাহের সঙ্গে ধূসরে সাদাটে হলুদ মাখানো খেচরের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ান কাকাটিয়েল।
জুটিঅলা কাকাতুয়ার চোখের নিচে অরেঞ্জ বর্ণের দুটি কিউট বৃত্ত। পাখিটি হেক্টরের কাঁধ ছেড়ে উড়ে এসে ল্যান্ড করে প্রেমজাইয়ের ড্রেসিং গাউনের ঢোলা পকেটে। ওখানে পা রেখে সে বোতাম খুঁটতে শুরু করলে, আমি তাদের গুডবাই বলি।
সিঁড়ি ধরে একতলায় নেমে আসতে আসতে কেন জানি একটু ঈর্ষা হয়। কিন্তু হেক্টরের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আমাকে গলায় গোখরা সাপ পেঁচিয়ে ঘোরাফেরা করতে হয়। সে যোগ্যতা আমার নেই, তারপর নীরবে কপাট খুলে নেমে আসি ফুটপাতে।
কিছুদিনের মধ্যে প্রেমজাই লেখাপড়াতে আগ্রহ হারায়। নন-ডিগ্রি কোর্সের ক্লাসগুলোতে সে আর রেগুলার অ্যাটেন্ড করছে না। মাঝেমধ্যে দুপুরবেলা বাড়ি ফিরলে দেখি, সে কিচেনে রান্নাবান্না করছে, আর বারস্টুলে সানগ্লাস পরে বসে হেক্টর। কাকাতুয়াকে সে খাওয়াচ্ছে এক-দুটি করে সূর্যমুখী ফুলের বীজ।
প্রেমজাই আমার সঙ্গে আর কথাবার্তা তেমন বলে না। তবে ভালোমন্দ কিছু রান্না করলে বিড়ালকে খাবার দেওয়ার মতো করে চিলেকোঠার দোরগোড়ায় রেখে যায় এক বাটি থাই গ্রীন কারি, বা তম-ইয়াম-কুঙ বলে চিংড়ি মাছের স্যুপ, সঙ্গে পিরিচে একদলা জেসমিন রাইস।
হেক্টর সপ্তাহখানেকের জন্য মেক্সিকো সিটিতে ফিরে গেলে, কাকাতুয়ার হেফাজতের পুরো কাস্টডি পায় প্রেমজাই। কিন্তু সপ্তা তিন গড়িয়ে মাসখানেক হতে চলল হেক্টর আর ফিরে না। সে কোনো ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বর দিয়ে যায়নি যে প্রেমজাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পরবে—তার হয়েছে কী?
তো কাকাতুয়াটি প্রেমজাইয়ের সঙ্গেই আছে। সে শিখে নিচ্ছে এক-দুটি থাই শব্দ বা বাক্য। একাকী উড়ে বেড়ায় খেচরটি দোতলার সর্বত্র। প্রেমজাই আজকাল জ্যাম্পেস কাউচে হামেশা মন খারাপ করে বসে থাকে। মিনি বুমবক্সে সে অহরহ শুনে আলবার্ট থংচাই বলে এক থাই পপ সিংগারের বিষণ্ন লিরিক।
টেবিল-ল্যাম্পের শেডের প্রান্তে বসে মৃদু সিঙসঙ স্বরে কাকাতুয়া অনুকরণ করে থাই গায়কের সেরেনাদ। আমি পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ‘ওয়েট অ্যা মিনিট’ বলে আমাকে দাঁড় করিয়ে প্রেমজাই পাখিটি দেখিয়ে বলে, ‘ইজ নট হি অ্যা ডার্লিং বার্ড?’
‘অবকোর্স হি ইজ,’ বলে আমি সায় দিই। সে উৎসাহিত হয়ে বলে, ‘আমি তার নাম দিয়েছি পাকপাও। থাই ভাষায় পাকপাও এর অর্থ হচ্ছে ঘুড়ি। সারাক্ষণ উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে তো।’ কাকাতুয়াটি যেন তার কথা বুঝতে পেরেছে, এমন ভঙ্গিতে গ্রীবা বাঁকা করে থাই ভাষায় বলে, ‘কবচাই জিং জিং’ বা ‘থ্যাংক ইউ ট্রুলি’। পাখির পাকামিতে প্রেমজাই হেসে ফেলে ফিক করে।
পরদিন এ রকম করিডর ধরে হেঁটে যাচ্ছি। প্রেমজাই আবার আমাকে থামায়। বলে, ‘লুক পাকপাও চমৎকার একটি ট্রিক শিখেছে।’ বিষয় কী? পাখি আবার কী শিখল?
প্রেমজাই কাঠের সুদর্শন কারুকাজ করা ফ্রেমের একটি আয়না তুলে ধরে। আয়নাটির নিচের দিকে মেকআপের টুকিটাকি রাখার জন্য ছোট্ট একটি ট্রে আটকানো। ‘কিস দ্যা শ্যাডো-বার্ড ইন দি মিরর’, বলতেই পাকপাও ট্রে-তে পা রেখে বসে আরশিতে তার প্রতিবিম্ব মনোযোগ দিয়ে দেখে। খানিক নিরিখ করে সে অবশেষে প্রতিবিম্বের ঠোঁটে রাখে তার ঠোঁট। প্রেমজাই খুশি হয়ে তাকে কয়েকটি সূর্যমুখী ফুলের বীজ খেতে দেয়।
হেক্টর আর ফিরে আসেনি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেমজাইয়ের বসবাসের মেয়াদ শেষ হয়ে আসে। সে টোফেল পরীক্ষায় চতুর্থবারের মতো অসফল হয়েছে। তার ভিসা এক্সটেনশন হচ্ছে না। আর এখনই ব্যাংকক রিটার্ন গেলে, আগে যেখানে সে চাকরি করত তা-ও হয়তো ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
খুব দোলাচলের ভেতর এক সন্ধ্যায় সে মই বেয়ে উঠে আসে চিলেকোঠায়। পিরিচে করে সে নিয়ে এসেছে শুকনো কিছু ঝরা গোলাপের পাপড়ি। লাল গোলাপটি হেক্টর তাকে দিয়েছিল। শুকনো পাপড়িগুলো সিল্কের রুমালে পেঁচিয়ে পুঁটলি বাঁধতে গিয়ে প্রেমজাই আকুল হয়ে কাঁদে। সে ফিরে যাচ্ছে ব্যাংককে দিন তিনেক পর। এই শুকনো কটি পাপড়ি ছাড়া তার কাছে হেক্টরের আর কোনো স্মৃতিই নেই।
একটি সমস্যা দেখা দেয় কাকাতুয়া পাকপাওকে নিয়ে। তাকে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি প্রেমজাইকে পরামর্শ দিই—প্যাটস্টোরে গিয়ে হয় পাখিটিকে বিক্রি করে দিতে, অথবা খুঁজে দেখতে, জানাশোনা কেউ যদি পাকপাওকে দত্তক নিয়ে লালনপালন করতে রাজি হয়।
এই দুই প্রস্তাবের কোনটাতেই প্রেমজাই রাজি হয় না। সে কেঁদে বলে, তার ধারণা কিছুদিন পর হেক্টর ফিরে আসবে। আর পাকপাও এর সন্ধানে এ বাড়িতে তার ফিরে আসা খুবই যুক্তিসংগত। তার দাবি আমি কিছুদিন পাকপাওয়ের তত্ত্বতালাবি করব, ইতিমধ্যে হেক্টর ফিরে এলে পাখিটি তাকে ফেরত দেব।
আমি ভেবেচিন্তে নিমরাজি হই। তখন প্রেমজাই আমাকে কাঠের কারুকাজ করা আয়নাটি দেখিয়ে বলে, পাকপাও আয়নায় মুখ দেখতে ও প্রতিবিম্বের পাখিকে চুমো খেতে খুবই ভালোবাসে। আমি যেন প্রতিদিন দুই-তিনবার আরশিতে পাকপাওয়ের মুখ দেখার ব্যবস্থা করি। এতে কাকাতুয়ার মন ভালো থাকবে।
এই প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে প্রেমজাইয়ের কাছে আয়নাটি চাই। কিন্তু সে কপাল কুঁচকে বলে, ‘সরি, এই আয়নাটি আমি আমার দিদিমার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছি। এটি তোমাকে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে শহরের একটি দোকানে সাউথ ইস্ট এশিয়ান আর্ট অবজেক্ট বিক্রি হয়। ওখানে এ ধরনের আয়না আছে কয়েকটি। তুমি কাইন্ডলি একটি কিনে নিও।’
প্রস্তাব শুনে আমি নীরব থাকি। তো উদ্বিগ্ন স্বরে সে ফের কথা বলে, ‘তুমি কি আমার পাকপাওয়ের জন্য একটি থাই স্টাইলের আয়না কিনতে পারবে না? আই অ্যাম রিয়েলি স্যরি, দিদিমার কাছ থেকে পাওয়া আয়নাটা যে দিতে চাচ্ছি না।’ আমি তার মুখের দিকে তাকাই। প্রেমজাইয়ের চোখমুখে ফুটে ওঠা বিষণ্ন অভিব্যক্তি আমাকে ছুঁয়ে যায়। তো একটি আয়না কেনার প্রতিশ্রুতি দিই। প্রেমজাই মৃদু হাসে, কিন্তু হাসিতেও মুছে যায় না বিষণ্নতার গাঢ় ছায়া।
মাস দুই কেটে যায়। হেক্টর ফিরে আসেনি। তবে কাকাতুয়া পাকপাওয়ের সঙ্গে আমার বন্ধন গাঢ় হয়েছে। এখন সে অবলীলায় আমার হাতে বসে তালু থেকে খুঁটে খায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ। মাঝেসাজে পাখিটির মন ভালো থাকলে থাই ভাষায় আলবার্ট থংসাইয়ের পপ গানের লিরিকও শোনায় এক-আধটু। আমি সারা দিন নানা ধান্দায় বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াই। তাই পাকপাওকে খাঁচায় থাকতে হয়। তাকে পিঞ্জিরায় বন্দী করে রাখছি বলে একটু গ্লানিও হয়।
অবশেষে প্রেমজাইয়ের কাছ থেকে চিঠি আসে। সে জানতে চেয়েছে, আমি পাকপাওকে থাই স্টাইলের আয়না কিনে দিয়েছি কি না? বিষয়টি আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার নিজের কোনো আয়না ছিল না। আর চুলদাড়িতে ভবসব নিজস্ব সুরত দেখার কোনো প্রয়োজনও ছিল না। তাই প্রেমজাইয়ের চিঠি পড়ামাত্র পাকপাওকে কমন বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিই। কাকতুয়াটির আরশি-প্রীতি সত্যিই অসাধারণ। সে উড়ে উড়ে কেবলই দেয়ালের আয়নায় মুখ দেখে। চেষ্টা করে, আয়নাতে পা ঠেকিয়ে পালক ছড়িয়ে বসে পড়ার। আমি তার পায়ের নিচে বাহু পেতে দিলে সে তাতে বসে তাকিয়ে থাকে প্রতিবিম্বের পাখিটির দিকে। তারপর ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দেয় ছায়া-পাখির ওষ্ঠ।
বিষয়টি আর অবহেলা করা যায় না। সুতরাং পাকপাওকে পিঞ্জিরায় পুরে নিয়ে রওনা হই শহরের দিকে। সাউথ ইস্ট এশিয়ান আর্ট অবজেক্টের দোকানে সত্যিই পাওয়া যায়, থাই স্টাইলের কয়েকটি আয়না। এই আরশিগুলো অবিকল প্রেমজাইয়ের দিদিমার দেওয়া আয়নার মতো। দাম উনচল্লিশ ডলার নাইটিনাইন সেন্ট। দামের দিকে তাকিয়ে পিঞ্জিরাসহ বেরিয়ে আসি দোকান থেকে।
শহরের পার্কের প্রান্তে এসে বনানীর নিবিড় ছায়ায় একটি বেঞ্চে বসে পিঞ্জিরা খুলে দিই। পাকপাও বেরিয়ে এসে আমার কাঁধে বসে। অবাক হয়ে সে দেখে, চারদিকের ঝিরিঝিরি সবুজ পত্রালি। আমি থাই স্টাইলের আরশির দামের বিষয়টি ভাবি। আমার উপার্জন নেই বললেই চলে। কষ্টেসৃষ্টে ডলার চল্লিশেক হয়তো জোগাড় করতে পারব। কিন্তু চল্লিশ ডলারে ইউজড্ বুক স্টোর থেকে কেনা যাবে গোটা চারেক টেক্সট্ বুকস্, সস্তা রেস্তোরাঁয় খাওয়া যাবে অন্তত দু-তিনটি ডিনার। একটি আরশি কিনে এতগুলো টাকা খরচ করব?
পাকপাও উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসে। মৃদু হাওয়ায় খানিক দুলতে দুলতে আমার দিকে তাকিয়ে একটু শিস দিয়ে কিছু গায়। ফিরে এসে আবার কাঁধে বসে, টুকটাক কিছু শব্দ করে পরিষ্কার থাই ভাষায় বলে, ‘কপচাই জিংজিং’ বা ‘থ্যাংক ইউ ট্রুলি।’ তারপর উড়ে যায় সে। কিছুক্ষণ গাছপালার উঁচু ডালে ঝোলাঝুলি করে কীভাবে যেন হাওয়া হয়ে যায়। আমি অনেকক্ষণ বেঞ্চে বসে থাকি। শূন্য পিঞ্জিরা হাতে অপেক্ষা করি, সন্ধ্যা হয় কিন্তু পাকপাও আর ফিরে আসে না।
(চলবে)
থাইল্যান্ডের তরুণী প্রেমজাই। ওর সঙ্গে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে সাক্ষরতাবিষয়ক দুই মাসের প্রশিক্ষণে শামিল হই। প্রশিক্ষণে দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে আগত পার্টিসিপেন্টরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলেও আমরা দুজন থেকে যাই যুক্তরাষ্ট্রে। চেষ্টা করি, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে। তখন গোল বাঁধে আমি ও প্রেমজাই টোফেল পরীক্ষা পাস করতে ব্যর্থ হলে। তো আমরা দুজনে নন-ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হই, যেখানে ক্লাস করার জন্য টোফেল ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন ছিল না।
জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টবিষয়ক একটি নন-ডিগ্রি ক্লাসে সপ্তাহে বার দুই আমরা মিলিত হতাম। এ ছাড়া কোনো না কোনো কারণে ক্যাম্পাসে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ প্রতিদিনই হতো। তখন আমি অত্যন্ত আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিলাম। কিছুতেই স্বল্প বাজেটে বসবাসের জন্য একটি কামরা পাচ্ছিলাম না। তাই চেনাজানা বন্ধুবান্ধবদের অ্যাপার্টমেন্টে—কখনো কাউচে আবার কখনো ফ্লোরে বেডরোল পেতে বাতাসভরা বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম। তিন বেলা যথেষ্ট পরিমাণে খাবারদাবার জোটানোও মুশকিল হয়ে পড়েছিল।
আমি যেদিন অনাহারে থাকতাম, প্রেমজাই কীভাবে তা যেন টের পেয়ে যেত। ক্লাসের বিরতিতে তার ঢাউস পার্স থেকে একটি প্লাস্টিকের কৌটা বের করে দিয়ে বলত—ক্যাফেটেরিয়ার বুফে-লাঞ্চে প্রচুর বেক করা ফিশ দিয়েছিল, আমি তো অত খেতে পারি না, এক টুকরা এক্সট্রা মাছ সেভ করেছি।
তত দিনে প্রেমজাইয়ের হালচাল ও চেহারাসুরতে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। সে চুল কাঁচি দিয়ে এবড়োখেবড়ো করে নিজ হাতে ছেঁটে মুখে এনেছে ঈষৎ কর্কশ লুক। রেশমি স্কার্ট টার্ট বাদ দিয়ে পরতে শুরু করেছে পুরুষালি ঢঙের ঢোলা র্যাগেড্ শার্ট-প্যান্ট। আমার সঙ্গে দেখা হলে আর আগের মতো সুইট করে হাসে না। খোঁচা মেরে খানিক ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে। আর আমি না চাইলেও খুব ইনডাইরেক্টলি এক-আধটু সাহায্যও করে।
আমার বাতাসভরা বালিশ ফুটো হয়ে যাওয়াতে আমি উইলিয়াম ফোকনারের ঢাউস রচনাবলিতে মাথা রেখে দিন কয়েক ঘুমাই। তাতে ঘাড় বাঁকা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, আর ব্যাকপেন বাড়ে বিঘতভাবে। তখন প্রেমজাই নিয়ে আসে চিলেকোঠায় বসবাসের সম্ভাবনার সংবাদ। সে আরও চারটি আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের সঙ্গে মিলেঝুলে একটি ভিক্টোরীয় ধাঁচের খুব পুরোনো দোতলা বাড়িতে শেয়ারে বাস করছে। ওই বাড়িতে চিলেকোঠার এক চিলতে কামরা নামকাওয়াস্তে টাকায় ভাড়া দিচ্ছে। চাইলে আমিও ওখানে বাস করতে পারি।
ওই দিন সন্ধ্যাবেলা আমার বেডরোল, ব্যাকপ্যাক ও ফুটোবালিশ নিয়ে ওখানে এসে উঠি। চিলেকোঠায় পৌঁছাতে হয় হিলহিলে একটি আলগা মই বেয়ে। পরিসর পা লম্বা করে ঘুমানোর মতো প্রশস্ত। পাশে জামাকাপড়, জুতাছাতা, গোটা বিশেক বইপত্র ও কফি মগ রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা আছে। বৈদ্যুতিক বাতির কোনো বন্দোবস্ত নেই। তার প্রয়োজনও নেই, টর্চ জ্বেলে অনায়াসে মই বাওয়া যাবে। আর খুব দরকার পড়লে জ্বালানো যাবে মোমবাতি। তখন গ্রীষ্মকাল চলছে। আমি দিন তিনেক চিলেকোঠায় বসবাস করে এক রাতে গরমে ঘেমে-নেয়ে মই বেয়ে নেমে আসি দোতলায়।
করিডরে একটি পুরোনো জ্যাম্পেস কাউচে স্কার্ট হাঁটু অবধি গুটিয়ে পা ছড়িয়ে বসে প্রেমজাই। সে ডিকশনারি দেখে মৃদুস্বরে দুলে দুলে ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ মশকো করছে। আমার ঘর্মাক্ত হালত দেখে বোধ করি তার কৃপা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে বেজমেন্ট থেকে সে নিয়ে আসে একটি মাকড়সার জালে জড়ানো টেবিল ফ্যান। ঘণ্টাখানেকের পরিশ্রমে তাতে এক্সট্রা ইলেকট্রিক তার জুড়ে দিয়ে চিলেকোঠার ঠিক নিচে তার কামরায় প্লাগ-ইন করে মই বেয়ে তা আমার বেডরোলের পাশে রেখে যায়।
তারপর থেকে টেবিল ফ্যানের বাতাসে আমার শরীর জুড়ালেও, গভীর রাতে আমি দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে থাকি। কারণ, টেবিল ফ্যানটিতে কোনো ঢাকনা ছিল না। তাই আধো ঘুমে কেবলই মনে হতো—যদি ডানায় হাত লেগেটেগে যায়।
প্রেমজাই তখন কেবলই মুখভার করে থাকত বলে এ নিয়ে অভিযোগও করতে সাহস পেতাম না। তার মন খারাপের কারণ আমার জানা ছিল। আমি দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় টোফেল পাস করেছি, সঙ্গে সঙ্গে মাস্টার্স প্রোগ্রামে অ্যাডমিশনের বিষয়টিও সম্মানজনকভাবে সুরাহা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে পরীক্ষায় বসে প্রেমজাই টোফেল উত্তীর্ণ হতে পারেনি। আমার সফলতায় আমি বড় বিব্রতবোধ করি। তার দিকে ভালো করে চোখ তুলে তাকাতেও পারি না আর।
উইকয়েন্ড শুরু হলে শনিবারে আমি একটু রাত করে বাড়ি ফিরতাম। ওই দিন ভিক্টোরীয় ধাঁচের পুরোনো দোতলা বাড়িটির যেন রূপ বদলে যেতো। চার-চারটি শ্বেতাঙ্গ যুবতী সন্ধ্যার পর সাজগোজ করত। আসত তাদের বয়ফ্রেন্ডরা। আমি মুখচোরা বিলাইয়ের মতো বেশ রাতে পা টিপে টিপে লিভিং রুমের লাগোয়া করিডর ধরে হেঁটে যেতে যেতে দেখি, মোমের আলোয় স্কার্টের ঘূর্ণি তুলে নাচছে একটি মেয়ে। আর তার বয়ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজাচ্ছে চেলো।
সিঁড়ির তলায় ফয়ারেও খুব কাছাকাছি হয়ে দাঁড়িয়ে আরেকটি কাপল। তারা চাকোস চাকোস করে চুমো খাওয়ার ফাঁকে আমাকে ‘গুড নাইট’, ও ‘হ্যাভ অ্যা নাইস ইভিনিং’ বলে। দোতলার করিডরের কোনায় দেখি, জ্যাম্পেস কাউচে পা ছড়িয়ে বসে প্রেমজাই, যথারীতি ডিকশনারি ঘেঁটে ঘেঁটে মশকো করছে ইংরেজি রিডিং প্যাসেজ।
আমাকে দেখতে পেয়ে অনেক দিন পর তার মুখে ফিরে আসে সুপারসুইট হাসিটি। ফিক করে ঠোঁট ঈষৎ বাঁকিয়ে বলে, ‘টেল মি হাউ অ্যাম আই গোনা গেট অ্যা বয়ফ্রেন্ড?’ জবাবে আমি নির্লিপ্ত থাকলে সে টুসকি দিয়ে একটি মিন্টগাম আমার দিকে ছুড়ে দেয়। ঠিক তখনই পাশের লাগোয়া কামরা থেকে ভেসে আসে শরীরিভাবে অন্তরঙ্গ হওয়ার আলামত। এ ধরনের আধো অস্ফুট আওয়াজকে বিশুদ্ধ বাংলায় বলা হয় শীৎকার। তাতে প্রেমজাইয়ের চোখমুখ লাজরক্তিম হয়ে উঠলে, আমি এ সুযোগে তাকে ‘গুড নাইট’ বলে মইয়ে পা রেখে চিলেকোঠায় উঠে পড়ি।
মাসখানেকের ভেতর প্রেমজাইয়ের জীবনে মোড় ফিরে। কীভাবে যেন তারও জুটে যায় একটি বয়ফ্রেন্ড। চাঁছাছোলা মস্তকের পুরুষটি বারান্দাঅলা হ্যাট পরে এসে হাজির হতো দিনদুপুরে। রাতবিরাতে আমি চিলেকোঠা থেকে নেমে করিডরের কোনার কমন বাথরুম ব্যবহার করতে গেলে, চোখে পড়ত, প্রেমজাইয়ের বয়ফ্রেন্ড সানগ্লাসে চোখ ঢেকে ছায়ামূর্তির মতো টাকিলার বোতল আর লেবু হাতে যাচ্ছে কিচেনের দিকে।
একদিন ভোরবেলা মই বেয়ে নামতেই দেখি, জ্যাম্পেস কাউচে দৈহিকভাবে অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে প্রেমজাই ও তার পুরুষবন্ধুটি। আমি চোখ ফেরাতে গেলে প্রেমজাই ‘ওয়েট অ্যা মিনিট’ বলে উঠে দাঁড়ায়। কার্পেটে পড়ে থাকা ড্রেসিং গাউন তুলে কাঁধে জড়িয়ে, কোমরে ফিতা বাঁধতে বাঁধতে সে বলে,‘আই লাইক ইউ টু মিট মাই বয়ফ্রেন্ড।’
তো আমি হাতটাত মিলিয়ে পরিচিত হই তার পুরুষবন্ধু হেক্টরের সঙ্গে। ছেলেটির ঊর্ধ্বাঙ্গ আদুল, লোমভরা বুকে অসংখ্য কাটাকুটি ও জখমের দাগ। ইংরেজি সে বলে খুবই সামান্য। তবে আমাকে আন্তরিকভাবে টাকিলা পানের আমন্ত্রণ জানায়, এবং জানতে চায় কী কাজ করি?
মাস্টার্স প্রোগ্রামের ছাত্রত্ব ছাড়া আমি মূলত বেকার জানতে পেরে, মেক্সিকো থেকে ফার্ম ওয়ার্কার হিসেবে আগত হেক্টর চুকচুক করে আফসোস প্রকাশ করে। বলে, চলে এসো আমার সঙ্গে, ফার্মে আপেল কুড়াবে, ঘণ্টাওয়ারি মাইনে এরা মন্দ দেয় না।
আমি রাজি না হলে হেক্টর একটু হতাশ হয়ে টিপয়ের তলা থেকে টেনে বার করে ছোট্ট একটি পিঞ্জিরা। তার আগল খুলে দিয়ে ঠোঁট সুচালো করে শিস দিতেই ডানা ঝটপটিয়ে খানিক উড়ে এসে তার কাঁধে বসে বর্ণিল একটি পাখি। প্রেমজাই উৎসাহের সঙ্গে ধূসরে সাদাটে হলুদ মাখানো খেচরের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ান কাকাটিয়েল।
জুটিঅলা কাকাতুয়ার চোখের নিচে অরেঞ্জ বর্ণের দুটি কিউট বৃত্ত। পাখিটি হেক্টরের কাঁধ ছেড়ে উড়ে এসে ল্যান্ড করে প্রেমজাইয়ের ড্রেসিং গাউনের ঢোলা পকেটে। ওখানে পা রেখে সে বোতাম খুঁটতে শুরু করলে, আমি তাদের গুডবাই বলি।
সিঁড়ি ধরে একতলায় নেমে আসতে আসতে কেন জানি একটু ঈর্ষা হয়। কিন্তু হেক্টরের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আমাকে গলায় গোখরা সাপ পেঁচিয়ে ঘোরাফেরা করতে হয়। সে যোগ্যতা আমার নেই, তারপর নীরবে কপাট খুলে নেমে আসি ফুটপাতে।
কিছুদিনের মধ্যে প্রেমজাই লেখাপড়াতে আগ্রহ হারায়। নন-ডিগ্রি কোর্সের ক্লাসগুলোতে সে আর রেগুলার অ্যাটেন্ড করছে না। মাঝেমধ্যে দুপুরবেলা বাড়ি ফিরলে দেখি, সে কিচেনে রান্নাবান্না করছে, আর বারস্টুলে সানগ্লাস পরে বসে হেক্টর। কাকাতুয়াকে সে খাওয়াচ্ছে এক-দুটি করে সূর্যমুখী ফুলের বীজ।
প্রেমজাই আমার সঙ্গে আর কথাবার্তা তেমন বলে না। তবে ভালোমন্দ কিছু রান্না করলে বিড়ালকে খাবার দেওয়ার মতো করে চিলেকোঠার দোরগোড়ায় রেখে যায় এক বাটি থাই গ্রীন কারি, বা তম-ইয়াম-কুঙ বলে চিংড়ি মাছের স্যুপ, সঙ্গে পিরিচে একদলা জেসমিন রাইস।
হেক্টর সপ্তাহখানেকের জন্য মেক্সিকো সিটিতে ফিরে গেলে, কাকাতুয়ার হেফাজতের পুরো কাস্টডি পায় প্রেমজাই। কিন্তু সপ্তা তিন গড়িয়ে মাসখানেক হতে চলল হেক্টর আর ফিরে না। সে কোনো ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বর দিয়ে যায়নি যে প্রেমজাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পরবে—তার হয়েছে কী?
তো কাকাতুয়াটি প্রেমজাইয়ের সঙ্গেই আছে। সে শিখে নিচ্ছে এক-দুটি থাই শব্দ বা বাক্য। একাকী উড়ে বেড়ায় খেচরটি দোতলার সর্বত্র। প্রেমজাই আজকাল জ্যাম্পেস কাউচে হামেশা মন খারাপ করে বসে থাকে। মিনি বুমবক্সে সে অহরহ শুনে আলবার্ট থংচাই বলে এক থাই পপ সিংগারের বিষণ্ন লিরিক।
টেবিল-ল্যাম্পের শেডের প্রান্তে বসে মৃদু সিঙসঙ স্বরে কাকাতুয়া অনুকরণ করে থাই গায়কের সেরেনাদ। আমি পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ‘ওয়েট অ্যা মিনিট’ বলে আমাকে দাঁড় করিয়ে প্রেমজাই পাখিটি দেখিয়ে বলে, ‘ইজ নট হি অ্যা ডার্লিং বার্ড?’
‘অবকোর্স হি ইজ,’ বলে আমি সায় দিই। সে উৎসাহিত হয়ে বলে, ‘আমি তার নাম দিয়েছি পাকপাও। থাই ভাষায় পাকপাও এর অর্থ হচ্ছে ঘুড়ি। সারাক্ষণ উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে তো।’ কাকাতুয়াটি যেন তার কথা বুঝতে পেরেছে, এমন ভঙ্গিতে গ্রীবা বাঁকা করে থাই ভাষায় বলে, ‘কবচাই জিং জিং’ বা ‘থ্যাংক ইউ ট্রুলি’। পাখির পাকামিতে প্রেমজাই হেসে ফেলে ফিক করে।
পরদিন এ রকম করিডর ধরে হেঁটে যাচ্ছি। প্রেমজাই আবার আমাকে থামায়। বলে, ‘লুক পাকপাও চমৎকার একটি ট্রিক শিখেছে।’ বিষয় কী? পাখি আবার কী শিখল?
প্রেমজাই কাঠের সুদর্শন কারুকাজ করা ফ্রেমের একটি আয়না তুলে ধরে। আয়নাটির নিচের দিকে মেকআপের টুকিটাকি রাখার জন্য ছোট্ট একটি ট্রে আটকানো। ‘কিস দ্যা শ্যাডো-বার্ড ইন দি মিরর’, বলতেই পাকপাও ট্রে-তে পা রেখে বসে আরশিতে তার প্রতিবিম্ব মনোযোগ দিয়ে দেখে। খানিক নিরিখ করে সে অবশেষে প্রতিবিম্বের ঠোঁটে রাখে তার ঠোঁট। প্রেমজাই খুশি হয়ে তাকে কয়েকটি সূর্যমুখী ফুলের বীজ খেতে দেয়।
হেক্টর আর ফিরে আসেনি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেমজাইয়ের বসবাসের মেয়াদ শেষ হয়ে আসে। সে টোফেল পরীক্ষায় চতুর্থবারের মতো অসফল হয়েছে। তার ভিসা এক্সটেনশন হচ্ছে না। আর এখনই ব্যাংকক রিটার্ন গেলে, আগে যেখানে সে চাকরি করত তা-ও হয়তো ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
খুব দোলাচলের ভেতর এক সন্ধ্যায় সে মই বেয়ে উঠে আসে চিলেকোঠায়। পিরিচে করে সে নিয়ে এসেছে শুকনো কিছু ঝরা গোলাপের পাপড়ি। লাল গোলাপটি হেক্টর তাকে দিয়েছিল। শুকনো পাপড়িগুলো সিল্কের রুমালে পেঁচিয়ে পুঁটলি বাঁধতে গিয়ে প্রেমজাই আকুল হয়ে কাঁদে। সে ফিরে যাচ্ছে ব্যাংককে দিন তিনেক পর। এই শুকনো কটি পাপড়ি ছাড়া তার কাছে হেক্টরের আর কোনো স্মৃতিই নেই।
একটি সমস্যা দেখা দেয় কাকাতুয়া পাকপাওকে নিয়ে। তাকে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি প্রেমজাইকে পরামর্শ দিই—প্যাটস্টোরে গিয়ে হয় পাখিটিকে বিক্রি করে দিতে, অথবা খুঁজে দেখতে, জানাশোনা কেউ যদি পাকপাওকে দত্তক নিয়ে লালনপালন করতে রাজি হয়।
এই দুই প্রস্তাবের কোনটাতেই প্রেমজাই রাজি হয় না। সে কেঁদে বলে, তার ধারণা কিছুদিন পর হেক্টর ফিরে আসবে। আর পাকপাও এর সন্ধানে এ বাড়িতে তার ফিরে আসা খুবই যুক্তিসংগত। তার দাবি আমি কিছুদিন পাকপাওয়ের তত্ত্বতালাবি করব, ইতিমধ্যে হেক্টর ফিরে এলে পাখিটি তাকে ফেরত দেব।
আমি ভেবেচিন্তে নিমরাজি হই। তখন প্রেমজাই আমাকে কাঠের কারুকাজ করা আয়নাটি দেখিয়ে বলে, পাকপাও আয়নায় মুখ দেখতে ও প্রতিবিম্বের পাখিকে চুমো খেতে খুবই ভালোবাসে। আমি যেন প্রতিদিন দুই-তিনবার আরশিতে পাকপাওয়ের মুখ দেখার ব্যবস্থা করি। এতে কাকাতুয়ার মন ভালো থাকবে।
এই প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে প্রেমজাইয়ের কাছে আয়নাটি চাই। কিন্তু সে কপাল কুঁচকে বলে, ‘সরি, এই আয়নাটি আমি আমার দিদিমার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছি। এটি তোমাকে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে শহরের একটি দোকানে সাউথ ইস্ট এশিয়ান আর্ট অবজেক্ট বিক্রি হয়। ওখানে এ ধরনের আয়না আছে কয়েকটি। তুমি কাইন্ডলি একটি কিনে নিও।’
প্রস্তাব শুনে আমি নীরব থাকি। তো উদ্বিগ্ন স্বরে সে ফের কথা বলে, ‘তুমি কি আমার পাকপাওয়ের জন্য একটি থাই স্টাইলের আয়না কিনতে পারবে না? আই অ্যাম রিয়েলি স্যরি, দিদিমার কাছ থেকে পাওয়া আয়নাটা যে দিতে চাচ্ছি না।’ আমি তার মুখের দিকে তাকাই। প্রেমজাইয়ের চোখমুখে ফুটে ওঠা বিষণ্ন অভিব্যক্তি আমাকে ছুঁয়ে যায়। তো একটি আয়না কেনার প্রতিশ্রুতি দিই। প্রেমজাই মৃদু হাসে, কিন্তু হাসিতেও মুছে যায় না বিষণ্নতার গাঢ় ছায়া।
মাস দুই কেটে যায়। হেক্টর ফিরে আসেনি। তবে কাকাতুয়া পাকপাওয়ের সঙ্গে আমার বন্ধন গাঢ় হয়েছে। এখন সে অবলীলায় আমার হাতে বসে তালু থেকে খুঁটে খায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ। মাঝেসাজে পাখিটির মন ভালো থাকলে থাই ভাষায় আলবার্ট থংসাইয়ের পপ গানের লিরিকও শোনায় এক-আধটু। আমি সারা দিন নানা ধান্দায় বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াই। তাই পাকপাওকে খাঁচায় থাকতে হয়। তাকে পিঞ্জিরায় বন্দী করে রাখছি বলে একটু গ্লানিও হয়।
অবশেষে প্রেমজাইয়ের কাছ থেকে চিঠি আসে। সে জানতে চেয়েছে, আমি পাকপাওকে থাই স্টাইলের আয়না কিনে দিয়েছি কি না? বিষয়টি আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার নিজের কোনো আয়না ছিল না। আর চুলদাড়িতে ভবসব নিজস্ব সুরত দেখার কোনো প্রয়োজনও ছিল না। তাই প্রেমজাইয়ের চিঠি পড়ামাত্র পাকপাওকে কমন বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিই। কাকতুয়াটির আরশি-প্রীতি সত্যিই অসাধারণ। সে উড়ে উড়ে কেবলই দেয়ালের আয়নায় মুখ দেখে। চেষ্টা করে, আয়নাতে পা ঠেকিয়ে পালক ছড়িয়ে বসে পড়ার। আমি তার পায়ের নিচে বাহু পেতে দিলে সে তাতে বসে তাকিয়ে থাকে প্রতিবিম্বের পাখিটির দিকে। তারপর ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দেয় ছায়া-পাখির ওষ্ঠ।
বিষয়টি আর অবহেলা করা যায় না। সুতরাং পাকপাওকে পিঞ্জিরায় পুরে নিয়ে রওনা হই শহরের দিকে। সাউথ ইস্ট এশিয়ান আর্ট অবজেক্টের দোকানে সত্যিই পাওয়া যায়, থাই স্টাইলের কয়েকটি আয়না। এই আরশিগুলো অবিকল প্রেমজাইয়ের দিদিমার দেওয়া আয়নার মতো। দাম উনচল্লিশ ডলার নাইটিনাইন সেন্ট। দামের দিকে তাকিয়ে পিঞ্জিরাসহ বেরিয়ে আসি দোকান থেকে।
শহরের পার্কের প্রান্তে এসে বনানীর নিবিড় ছায়ায় একটি বেঞ্চে বসে পিঞ্জিরা খুলে দিই। পাকপাও বেরিয়ে এসে আমার কাঁধে বসে। অবাক হয়ে সে দেখে, চারদিকের ঝিরিঝিরি সবুজ পত্রালি। আমি থাই স্টাইলের আরশির দামের বিষয়টি ভাবি। আমার উপার্জন নেই বললেই চলে। কষ্টেসৃষ্টে ডলার চল্লিশেক হয়তো জোগাড় করতে পারব। কিন্তু চল্লিশ ডলারে ইউজড্ বুক স্টোর থেকে কেনা যাবে গোটা চারেক টেক্সট্ বুকস্, সস্তা রেস্তোরাঁয় খাওয়া যাবে অন্তত দু-তিনটি ডিনার। একটি আরশি কিনে এতগুলো টাকা খরচ করব?
পাকপাও উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসে। মৃদু হাওয়ায় খানিক দুলতে দুলতে আমার দিকে তাকিয়ে একটু শিস দিয়ে কিছু গায়। ফিরে এসে আবার কাঁধে বসে, টুকটাক কিছু শব্দ করে পরিষ্কার থাই ভাষায় বলে, ‘কপচাই জিংজিং’ বা ‘থ্যাংক ইউ ট্রুলি।’ তারপর উড়ে যায় সে। কিছুক্ষণ গাছপালার উঁচু ডালে ঝোলাঝুলি করে কীভাবে যেন হাওয়া হয়ে যায়। আমি অনেকক্ষণ বেঞ্চে বসে থাকি। শূন্য পিঞ্জিরা হাতে অপেক্ষা করি, সন্ধ্যা হয় কিন্তু পাকপাও আর ফিরে আসে না।
(চলবে)
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪