জাহীদ রেজা নূর
বায়ান্ন সাল থেকে আমার নিজেরই আরও কিছু জিনিসপত্তর ছিল: এর একটি হলো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একটা সাদা-কালো ছবি। ছবিটা আমাকে উপহার দিয়েছিল লা হাভরে পরিবারের মেয়েটি। ওরা রানির সিংহাসনে আরোহণের সময় ক্লাসসুদ্ধ সবাই লন্ডনে গিয়েছিল। যখন ছবিটা পেয়েছিলাম, তখন থেকেই ছবির উল্টোপিঠে একটা খয়েরি রঙের দাগ আমি খেয়াল করেছিলাম। সে দাগটা আমার মেজাজ খারাপ করে দিত। যখনই ছবিটা আমার চোখে পড়ত, তখনই মনে ভেসে উঠত ওই খয়েরি রঙের দাগটা।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবিটা তোলা হয়েছিল সামনাসামনি, প্রোফাইল। তার চোখের দৃষ্টি মনে হচ্ছিল অনেক গভীর থেকে উঠে আসছে, ছোট চুলগুলো ছিল পেছন দিকে শক্ত করে বাঁধা, মোটা ঠোঁটটা আরও মোটা লাগছিল গাঢ় লিপস্টিকের কারণে। বাঁ হাতটা ছিল পশমের ওপর, ডান হাতে ছিল পাখা। এখন মনে পড়ছে না, রানিকে তখন সুশ্রী নাকি কুশ্রী লাগছিল। সম্ভবত আমি সে রকম করে ভেবেও দেখিনি। রানি সুশ্রী না কুশ্রী, সেটা কি কোনো প্রশ্ন হতে পারে, রানি তো রানিই; আমার আরও ছিল লাল রঙের একটা চামড়ার ব্যাগ। এর মধ্যে ছিল কাঁচি, একটা হুক, ছিদ্র সেলাই করার জন্য মুচিদের ব্যবহার্য একটা সুঁই ইত্যাদি। সেটা হারিয়ে গেছে। ক্রিসমাস ডেতে আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল ব্যাগটা, সেটা আরাম করে ব্যবহার করা যেত। এটির মধ্যে আমি আমার লেখালেখির কাগজপত্র রাখতাম, লিমোজেস ক্যাথিড্রালের ছবিওয়ালা পোস্টকার্ড ছিল তাতে। আমি আর বাবা যখন লুর্দসে গিয়েছিলাম, তখন সেখান থেকে মাকে পাঠিয়েছিলাম এই পোস্টকার্ডটি। পোস্টকার্ডের উল্টো পিঠে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘লিমোজেস হোটেলটা অনেক বড়, অনেক বিদেশি পর্যটক আছে এখানে। তোমার জন্য চুমু।’ নিচে আমার নাম লেখা আর ‘বাবা’। ঠিকানা লিখে দিয়েছিল বাবা। পোস্টাপিসের সিল ছিল ২২-০৮-৫২; আরও ছিল লুর্দেস ক্যাসেলের এক সেট আর পাইরেনিয়ান জাদুঘরের এক সেট পোস্টকার্ড। বোঝাই যাচ্ছে, এগুলো আমি কিনেছিলাম ওখানে যাওয়ার পর। ‘কিউবা ভ্রমণ’ গানের কথা ও নোটেশন কিনেছিলাম। সেটা লেখা ছিল আকাশি রঙে দুই পৃষ্ঠাজুড়ে। প্রথম পাতায় চলমান নৌকার ছবি ছিল, আর তাতে লেখা ছিল কণ্ঠশিল্পীদের নাম। যারা গানটি করেছিলেন, তারা হলেন: পাত্রিস আর মারিও, ইতেন ভগ্নীদ্বয়, মার্সেল আজ্জোলা, ঝান সাবলোন প্রমুখ।
মনে হয় গানটি আমার খুব প্রিয় ছিল, কারণ এই গানের লিরিক কেনার জন্য আমি মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়েছিলাম। মা অবশ্য বলেছিলেন, তুচ্ছ এ জিনিস পড়াশোনার কোনো কাজে আসবে না। তবে সেই গ্রীষ্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘আমার ছোট্ট পাগল করা ভালোবাসা’ আর ‘মেক্সিকো’ গান দুটি। গান দুটি লুর্দেসে যাওয়ার পথে একজন গাড়িচালকের মুখে শুনেছিলাম। আমার হাতের নিচে চাপা পড়ে ছিল প্রার্থনাবিষয়ক বইটি। ‘রোমান মিসাল উইথ টেক্সট অব দ্য সার্ভিসেস’ নাম বইটির। ব্রুজেস থেকে ছাপা হওয়া। প্রতিটি পৃষ্ঠায় দুটো কলাম। এক কলামে লেখা ফরাসি ভাষায়, অন্য কলামে লাতিন। তবে বইয়ের মাঝামাঝি এসে ‘প্রতিদিনের প্রার্থনা’ পাতায় এসে দেখা যাচ্ছে পুরো ডান দিকের পাতায় ফরাসি, বাঁ দিকের পাতায় লাতিন। প্রার্থনার বইটির শুরুতেই ছিল ১৯৫২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কোন কোন উৎসব হবে এবং কোন কোন উৎসব হবে না, এর দীর্ঘ একটি ক্যালেন্ডার।
বইটিতে তারিখগুলো আজব, দেখে মনে হয় বইটি বুঝি কয়েক শতাব্দী আগে লেখা। রহস্যময় কত শব্দ তাতে! স্যাক্রামেন্ট, গ্রাজুয়াল, অ্যান্টিফোন (আমার মনে নেই, সে সময় আমি এই শব্দগুলোর অর্থ জানার চেষ্টা করেছিলাম কি না)। বইটি আমাকে শান্তি দিত না, বরং ভয় ধরাত। মনে হতো আমার সামনে অবোধ্য, রহস্যময় এক ভাষা!
শব্দগুলো মোটামুটি পরিচিত, আমি বিনা বাধায় পড়ে ফেলতে পারি ‘অ্যাগনাস ডে’ (ঈশ্বরের মেষশাবক) কিংবা ছোটখাটো কোনো প্রার্থনা, কিন্তু বাল্যকালে আমি নিজের ইচ্ছায় রোববার বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবে প্রার্থনা না করলে মনে করতাম না যে আমার পাপ হবে।
ছবিগুলো প্রমাণ করে, ১৯৫২ সালে আমি শারীরিকভাবে এখানে ছিলাম আর প্রার্থনার বইটি প্রমাণ করে, ছোটবেলায় (না হলে কেন আমি এতবার স্থান পরিবর্তনের পরও বইটি সংরক্ষণ করেছি) ধর্মীয় বইয়ের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল, যা আজ অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু ওই গানটা! ভ্রমণ আর ভালোবাসা দিয়ে মোড়া ‘কিউবায় ভ্রমণ’ গানটি এখনো মনে হয় আমার খুব কাছের একটা ব্যাপার। খুবই আনন্দের সঙ্গে আমি গানের পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই:
দুই কিশোর আর দুই কিশোরী
ঢেউ তুমি খেলতে থাক, উল্লাসে মাতো
ছোট্ট এক তরিই সম্বল
তাতে করেই কিউবার পথে…
সেই রবিবারের কথাটাই ভাবছিলাম শেষ কয়েক দিন ধরে। ঘটনাগুলো লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে কতটা রঙিন হয়ে, কণ্ঠস্বর হয়ে, অঙ্গভঙ্গি হয়ে তা আমার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। এখন অবশ্য আবার তা স্তিমিত হয়ে গেছে আর কণ্ঠটাও মিইয়ে গেছে সেই চলচ্চিত্রের মতো, যেটা এনক্রিপ্টেড চ্যানেলে ডেকোডার না বসিয়েই যেমন দেখা হয়। আমি সেই সত্যকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারি কি না পারি, তাতে কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে না। সেটা সব সময়ই পাগলামি আর মৃত্যুর সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকছে। আর এই দৃশ্যের সঙ্গেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাময় ঘটনাগুলো মিলিয়ে নিচ্ছিলাম, যেগুলো একটার চেয়ে আরেকটা আরও বেশি বেদনাদায়ক ছিল।
যেহেতু আমাকে আবার আমার লেখালেখির মধ্যে ফিরে আসতে হবে এবং আমি এ ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না এবং সবাই যখন বলছে যে, আমি আবার নতুন বই লেখা শুরু করছি, তখন আমাকে আবার সবকিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নিরেট কিছু বাস্তব ঘটনাই শুধু আমার মনে আছে। এই দৃশ্যটা আমার মধ্যে ছিল একেবারে স্থিরচিত্রের মতো, আর আমি সে দৃশ্যটাকে গতিশীল করতে চাইছি, যেন তা আইকনিক পবিত্রতা অর্জন করে উঠতে না পারে (এবং আমি নিশ্চিত, এই দৃশ্যটাই আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং কোনো না কোনোভাবে তা আমার বইগুলোতে সুপ্তভাবে বিরাজ করছে)।
বহুদিন হয়ে গেছে আমি মনোবিশ্লেষণ কিংবা পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীর দেওয়া পরিকল্পনামাফিক চলি না: বশ্যতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আমার মা ও বাবা কত কীই না করেছেন। ‘পারিবারিক আঘাত’, ‘শৈশবের দয়ালু মনটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে’ এই ধরনের কথা আমার জন্য জুতসই নয়। যে অনুভূতিটা সব সময় আমাকে ঘিরে রেখেছে, সে অনুভূতিকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছি, এবং সেটা আমি পেয়েছি সেই দিনটি থেকেই, ‘জীবনের জন্য পাগল হও।’—এ ছাড়া আর কোনো বাক্যই আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।
* * *
কাল আমি রুয়েনস আর্কাইভে গিয়েছিলাম ‘প্যারিস-নরমান্দি’ পত্রিকায় ১৯৫২ সালে কী লেখা হয়েছে, তা দেখার জন্য। এই পত্রিকাটি একজন হকার সব সময় আমার মা-বাবার কাছে দিয়ে যেত। এর আগপর্যন্ত আমি সাহসে ভর করে ১৯৫২ সালের জুন মাসের পত্রিকা দেখার কথা ভাবতে পারিনি। সিঁড়ি বেয়ে আর্কাইভে উঠছিলাম যখন, তখন বীভৎস কিছু একটা দেখব মনে করে আমার শরীর বেয়ে শীতল আতঙ্ক নেমে আসছিল। আর্কাইভটা ছিল মেয়রের অফিসে, সেখানকার একজন কর্মচারী আমার জন্য নিয়ে এলেন ১৯৫২ সালের দুটো বড় ফাইল। আমি পহেলা জানুয়ারি থেকে দেখতে শুরু করলাম। আমি জুন মাস পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে কিছু সময় নিচ্ছিলাম। আগের তারিখগুলোর সুখকর সংবাদগুলোতে নিবিষ্ট হচ্ছিলাম।
প্রথম পাতার একেবারে ডান দিকের ওপরের অংশে অ্যাবট গ্যাব্রিয়েলের করা আবহাওয়ার প্রতিবেদনগুলো থাকত। আমার এখন একেবারেই মনে পড়ে না, কেমন ছিল সে দিনগুলোর আবহাওয়া। আমি তখন কী খেলতাম? আমি কি ঘুরতে বের হতাম? সূর্যের আলোময় দিন কিংবা মেঘে ঢাকা আকাশ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠা, দমকা হাওয়া ইত্যাদি এখন আমাকে আর কোনো কথা মনে করিয়ে দেয় না। যে ঘটনাগুলোর কথা আমার মনে আছে, তা হলো ইন্দোচীনে আর কোরিয়ায় যুদ্ধ, অরলিয়ানে বিক্ষোভ, পিনের পরিকল্পনা, কিন্তু আমি এ ঘটনাগুলোকে ৫২ সালের সঙ্গেই যুক্ত করেছিলাম বলে মনে পড়ে না। তখন নয়, পরে এগুলো আমার কাছে কোনো না কোনো অর্থ পেয়েছিল। ‘সাইগনে ৬টি বাইসাইকেল বিস্ফোরণ হয়েছে’, কিংবা ‘ফ্রেনে দ্যুকলো’র (ফ্রান্সের কমিউনিস্ট নেতা—অনুবাদক) সঙ্গে ১৯৫২ সালের সেই কিশোরীকে কোনোভাবেই মেলাতে পারি না। অবাক কাণ্ড হচ্ছে, স্তালিন, চার্চিল, আইজেনহাওয়ারকে আমার ঠিক তেমনই লাগত, যেমন এখন লাগে ইয়েলৎসিন, ক্লিনটন বা কোহলকে। আমি কিছুই জানতে পারি না, যেন আমি সে সময়টা এই পৃথিবীতে কাটাইনি।
পিনের ছবি দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম তার সঙ্গে ঝিসকার দ্য’এস্তেনের চেহারার মিল দেখে। আমি এখনকার টেকোমাথা ঝিসকারের কথা বলছি না, বলছি আজ থেকে কুড়ি বছর আগে সে যেমন ছিল, তার কথা। ‘আয়রন কার্টেন’ বা লৌহপর্দা বিষয়টি মনে এলেই আমার মনে পড়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ার সময় নারী শিক্ষক আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘খ্রিষ্টধর্মে দশ পুঁতির জপমালা দিয়ে কী বোঝায়’, আর আমার তখন মনে হতো একটি লোহার খাঁচায় অনেকগুলো পুরুষ এবং নারী বন্দী হয়ে খাঁচাটিকে প্রবলভাবে নাড়াচ্ছেন। তবে বলতেই পারি, আমি অবলীলায় মনে করতে পারলাম, কৌতুক স্ট্রিপ ‘পুস্তিক’-এর কথা। এই স্ট্রিপ বহু বহুদিন ধরে ‘ফ্রান্স-সুয়ার’ পত্রিকার শেষের পাতায় প্রকাশ হয়েছে। সে সময় কৌতুক পড়ে আমি মজা পেতাম কি পেতাম না, তা মনে করতে পারি না। যেমন একটা কৌতুক ছিল:
‘কী হে মৎস্যশিকারি, কামড়াচ্ছে?’
‘না না, এরা খুব ছোট। কামড়ালেও ব্যথা লাগছে না।’
আমি সিনেমার বিজ্ঞাপন এবং যে সিনেমাগুলো আসত প্রথমে রুয়ান শহরে, পরে আমাদের শহরে, সেগুলো সম্পর্কে জানতাম। ‘মিশর থেকে আসা প্রেমিকেরা’ ‘দারুণ বউ আমার’ ইত্যাদি সিনেমার কথা মনে আছে।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটত: দুই বছর বয়সী এক শিশু ক্রসাঁ খেয়ে আকস্মিকভাবে মারা গেছে, খেত পরিষ্কার করতে গিয়ে গমের খেতে খেলতে খেলতে লুকিয়ে পড়া ছেলের পা কেটে ফেলেছে এক কৃষক, ক্রেইলে মাইন বিস্ফোরণে তিন শিশু নিহত। এ ধরনের ঘটনায় আমার মনে আগ্রহ জাগত।
খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়—মাখন আর দুধের দাম। সে সময় গ্রামকে বেশ দাম দেওয়া হতো। পা ও মুখের রোগ সম্পর্কে খবর বের হতো, থাকত কৃষকদের বউদের নিয়ে প্রতিবেদন, পশু চিকিৎসা নিয়ে লেখালেখি, লাপিক্রিন কিংবা ওসপোরৎসিন নিয়ে প্রতিবেদন থেকে তা ঢের বোঝা যেত।
কাশির লজেন্স আর সিরাপের এত বেশি বিজ্ঞাপন বের হতো যে মনে হতো, সব মানুষই কাশিতে ভুগছে এবং তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে এসব লজেন্স আর সিরাপ খেয়েই সেরে উঠছে।
শনিবারের পত্রিকায় ছিল ফিচার, ‘নারী, আপনার জন্য’। আমি সে পাতায় যে জ্যাকেট দেখেছি, এর সঙ্গে আমার বিয়ারিৎসে নিয়ে যাওয়া জ্যাকেটের মিল খুঁজে পাই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আমি বা মা কেউই এইটুকু ছাড়া আর কোনোভাবেই সে সময়ের ফ্যাশন অনুযায়ী সাজগোজ করিনি। আর চুলের যে কার্লগুলো দেখেছি, এর সঙ্গে আমার টুপিওয়ালা চুলের স্টাইলের কোনো মিল ছিল না।
আমি পত্রিকার ১৪-১৫ তারিখের শনি-রবিবারের পাতায় চোখ রাখলাম। প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা ছিল:
শস্যের ফলন প্রত্যাশার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে
২৪ ঘণ্টার গাড়ির প্রতিযোগিতায় প্যারিসে কোনো ফেবারিট নেই
মি. ঝ্যাক দ্যুকলো দীর্ঘ জেরার পরও অপরাধ স্বীকার করেননি
১০ দিন খোঁজাখুঁজির পর জোয়েল নামের শিশুটির মরদেহ তার বাড়ির পাশ থেকেই উদ্ধার:
স্বীকারোক্তি—প্রতিবেশিনী তাকে নর্দমায় ফেলে দেয়
এসব দেখে আর পত্রিকার পাতা ওল্টাতে ইচ্ছে হলো না। আর্কাইভ থেকে বের হয়ে, সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে আমি হঠাৎ বুঝতে পারলাম, আর একটু হলেই ১৯৫২ সালের সেই দিনটির, সেই খবরটির দেখা বুঝি পেয়ে যেতাম! পরে আমি বিস্মিত হয়ে ভেবেছি, ঘটনাটা তো সেই দিনটিতে ঘটেছিল, যে দিনে লে-মানে’তে সারা দিন ক্রমাগত গাড়ির গর্জন শোনা গিয়েছিল। দুটো ঘটনার এত সাদৃশ্য আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। সেই রোববার পৃথিবীতে যত ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন, আমি ওই একটি ঘটনার সঙ্গে আর কোনো ঘটনাকে মেলাতে পারি না। শুধু সেটা আমার জন্য ছিল এক বাস্তব অভিজ্ঞতা।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
বায়ান্ন সাল থেকে আমার নিজেরই আরও কিছু জিনিসপত্তর ছিল: এর একটি হলো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একটা সাদা-কালো ছবি। ছবিটা আমাকে উপহার দিয়েছিল লা হাভরে পরিবারের মেয়েটি। ওরা রানির সিংহাসনে আরোহণের সময় ক্লাসসুদ্ধ সবাই লন্ডনে গিয়েছিল। যখন ছবিটা পেয়েছিলাম, তখন থেকেই ছবির উল্টোপিঠে একটা খয়েরি রঙের দাগ আমি খেয়াল করেছিলাম। সে দাগটা আমার মেজাজ খারাপ করে দিত। যখনই ছবিটা আমার চোখে পড়ত, তখনই মনে ভেসে উঠত ওই খয়েরি রঙের দাগটা।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবিটা তোলা হয়েছিল সামনাসামনি, প্রোফাইল। তার চোখের দৃষ্টি মনে হচ্ছিল অনেক গভীর থেকে উঠে আসছে, ছোট চুলগুলো ছিল পেছন দিকে শক্ত করে বাঁধা, মোটা ঠোঁটটা আরও মোটা লাগছিল গাঢ় লিপস্টিকের কারণে। বাঁ হাতটা ছিল পশমের ওপর, ডান হাতে ছিল পাখা। এখন মনে পড়ছে না, রানিকে তখন সুশ্রী নাকি কুশ্রী লাগছিল। সম্ভবত আমি সে রকম করে ভেবেও দেখিনি। রানি সুশ্রী না কুশ্রী, সেটা কি কোনো প্রশ্ন হতে পারে, রানি তো রানিই; আমার আরও ছিল লাল রঙের একটা চামড়ার ব্যাগ। এর মধ্যে ছিল কাঁচি, একটা হুক, ছিদ্র সেলাই করার জন্য মুচিদের ব্যবহার্য একটা সুঁই ইত্যাদি। সেটা হারিয়ে গেছে। ক্রিসমাস ডেতে আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল ব্যাগটা, সেটা আরাম করে ব্যবহার করা যেত। এটির মধ্যে আমি আমার লেখালেখির কাগজপত্র রাখতাম, লিমোজেস ক্যাথিড্রালের ছবিওয়ালা পোস্টকার্ড ছিল তাতে। আমি আর বাবা যখন লুর্দসে গিয়েছিলাম, তখন সেখান থেকে মাকে পাঠিয়েছিলাম এই পোস্টকার্ডটি। পোস্টকার্ডের উল্টো পিঠে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘লিমোজেস হোটেলটা অনেক বড়, অনেক বিদেশি পর্যটক আছে এখানে। তোমার জন্য চুমু।’ নিচে আমার নাম লেখা আর ‘বাবা’। ঠিকানা লিখে দিয়েছিল বাবা। পোস্টাপিসের সিল ছিল ২২-০৮-৫২; আরও ছিল লুর্দেস ক্যাসেলের এক সেট আর পাইরেনিয়ান জাদুঘরের এক সেট পোস্টকার্ড। বোঝাই যাচ্ছে, এগুলো আমি কিনেছিলাম ওখানে যাওয়ার পর। ‘কিউবা ভ্রমণ’ গানের কথা ও নোটেশন কিনেছিলাম। সেটা লেখা ছিল আকাশি রঙে দুই পৃষ্ঠাজুড়ে। প্রথম পাতায় চলমান নৌকার ছবি ছিল, আর তাতে লেখা ছিল কণ্ঠশিল্পীদের নাম। যারা গানটি করেছিলেন, তারা হলেন: পাত্রিস আর মারিও, ইতেন ভগ্নীদ্বয়, মার্সেল আজ্জোলা, ঝান সাবলোন প্রমুখ।
মনে হয় গানটি আমার খুব প্রিয় ছিল, কারণ এই গানের লিরিক কেনার জন্য আমি মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়েছিলাম। মা অবশ্য বলেছিলেন, তুচ্ছ এ জিনিস পড়াশোনার কোনো কাজে আসবে না। তবে সেই গ্রীষ্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘আমার ছোট্ট পাগল করা ভালোবাসা’ আর ‘মেক্সিকো’ গান দুটি। গান দুটি লুর্দেসে যাওয়ার পথে একজন গাড়িচালকের মুখে শুনেছিলাম। আমার হাতের নিচে চাপা পড়ে ছিল প্রার্থনাবিষয়ক বইটি। ‘রোমান মিসাল উইথ টেক্সট অব দ্য সার্ভিসেস’ নাম বইটির। ব্রুজেস থেকে ছাপা হওয়া। প্রতিটি পৃষ্ঠায় দুটো কলাম। এক কলামে লেখা ফরাসি ভাষায়, অন্য কলামে লাতিন। তবে বইয়ের মাঝামাঝি এসে ‘প্রতিদিনের প্রার্থনা’ পাতায় এসে দেখা যাচ্ছে পুরো ডান দিকের পাতায় ফরাসি, বাঁ দিকের পাতায় লাতিন। প্রার্থনার বইটির শুরুতেই ছিল ১৯৫২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কোন কোন উৎসব হবে এবং কোন কোন উৎসব হবে না, এর দীর্ঘ একটি ক্যালেন্ডার।
বইটিতে তারিখগুলো আজব, দেখে মনে হয় বইটি বুঝি কয়েক শতাব্দী আগে লেখা। রহস্যময় কত শব্দ তাতে! স্যাক্রামেন্ট, গ্রাজুয়াল, অ্যান্টিফোন (আমার মনে নেই, সে সময় আমি এই শব্দগুলোর অর্থ জানার চেষ্টা করেছিলাম কি না)। বইটি আমাকে শান্তি দিত না, বরং ভয় ধরাত। মনে হতো আমার সামনে অবোধ্য, রহস্যময় এক ভাষা!
শব্দগুলো মোটামুটি পরিচিত, আমি বিনা বাধায় পড়ে ফেলতে পারি ‘অ্যাগনাস ডে’ (ঈশ্বরের মেষশাবক) কিংবা ছোটখাটো কোনো প্রার্থনা, কিন্তু বাল্যকালে আমি নিজের ইচ্ছায় রোববার বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবে প্রার্থনা না করলে মনে করতাম না যে আমার পাপ হবে।
ছবিগুলো প্রমাণ করে, ১৯৫২ সালে আমি শারীরিকভাবে এখানে ছিলাম আর প্রার্থনার বইটি প্রমাণ করে, ছোটবেলায় (না হলে কেন আমি এতবার স্থান পরিবর্তনের পরও বইটি সংরক্ষণ করেছি) ধর্মীয় বইয়ের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল, যা আজ অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু ওই গানটা! ভ্রমণ আর ভালোবাসা দিয়ে মোড়া ‘কিউবায় ভ্রমণ’ গানটি এখনো মনে হয় আমার খুব কাছের একটা ব্যাপার। খুবই আনন্দের সঙ্গে আমি গানের পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই:
দুই কিশোর আর দুই কিশোরী
ঢেউ তুমি খেলতে থাক, উল্লাসে মাতো
ছোট্ট এক তরিই সম্বল
তাতে করেই কিউবার পথে…
সেই রবিবারের কথাটাই ভাবছিলাম শেষ কয়েক দিন ধরে। ঘটনাগুলো লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে কতটা রঙিন হয়ে, কণ্ঠস্বর হয়ে, অঙ্গভঙ্গি হয়ে তা আমার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। এখন অবশ্য আবার তা স্তিমিত হয়ে গেছে আর কণ্ঠটাও মিইয়ে গেছে সেই চলচ্চিত্রের মতো, যেটা এনক্রিপ্টেড চ্যানেলে ডেকোডার না বসিয়েই যেমন দেখা হয়। আমি সেই সত্যকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারি কি না পারি, তাতে কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে না। সেটা সব সময়ই পাগলামি আর মৃত্যুর সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকছে। আর এই দৃশ্যের সঙ্গেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাময় ঘটনাগুলো মিলিয়ে নিচ্ছিলাম, যেগুলো একটার চেয়ে আরেকটা আরও বেশি বেদনাদায়ক ছিল।
যেহেতু আমাকে আবার আমার লেখালেখির মধ্যে ফিরে আসতে হবে এবং আমি এ ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না এবং সবাই যখন বলছে যে, আমি আবার নতুন বই লেখা শুরু করছি, তখন আমাকে আবার সবকিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নিরেট কিছু বাস্তব ঘটনাই শুধু আমার মনে আছে। এই দৃশ্যটা আমার মধ্যে ছিল একেবারে স্থিরচিত্রের মতো, আর আমি সে দৃশ্যটাকে গতিশীল করতে চাইছি, যেন তা আইকনিক পবিত্রতা অর্জন করে উঠতে না পারে (এবং আমি নিশ্চিত, এই দৃশ্যটাই আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং কোনো না কোনোভাবে তা আমার বইগুলোতে সুপ্তভাবে বিরাজ করছে)।
বহুদিন হয়ে গেছে আমি মনোবিশ্লেষণ কিংবা পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীর দেওয়া পরিকল্পনামাফিক চলি না: বশ্যতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আমার মা ও বাবা কত কীই না করেছেন। ‘পারিবারিক আঘাত’, ‘শৈশবের দয়ালু মনটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে’ এই ধরনের কথা আমার জন্য জুতসই নয়। যে অনুভূতিটা সব সময় আমাকে ঘিরে রেখেছে, সে অনুভূতিকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছি, এবং সেটা আমি পেয়েছি সেই দিনটি থেকেই, ‘জীবনের জন্য পাগল হও।’—এ ছাড়া আর কোনো বাক্যই আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।
* * *
কাল আমি রুয়েনস আর্কাইভে গিয়েছিলাম ‘প্যারিস-নরমান্দি’ পত্রিকায় ১৯৫২ সালে কী লেখা হয়েছে, তা দেখার জন্য। এই পত্রিকাটি একজন হকার সব সময় আমার মা-বাবার কাছে দিয়ে যেত। এর আগপর্যন্ত আমি সাহসে ভর করে ১৯৫২ সালের জুন মাসের পত্রিকা দেখার কথা ভাবতে পারিনি। সিঁড়ি বেয়ে আর্কাইভে উঠছিলাম যখন, তখন বীভৎস কিছু একটা দেখব মনে করে আমার শরীর বেয়ে শীতল আতঙ্ক নেমে আসছিল। আর্কাইভটা ছিল মেয়রের অফিসে, সেখানকার একজন কর্মচারী আমার জন্য নিয়ে এলেন ১৯৫২ সালের দুটো বড় ফাইল। আমি পহেলা জানুয়ারি থেকে দেখতে শুরু করলাম। আমি জুন মাস পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে কিছু সময় নিচ্ছিলাম। আগের তারিখগুলোর সুখকর সংবাদগুলোতে নিবিষ্ট হচ্ছিলাম।
প্রথম পাতার একেবারে ডান দিকের ওপরের অংশে অ্যাবট গ্যাব্রিয়েলের করা আবহাওয়ার প্রতিবেদনগুলো থাকত। আমার এখন একেবারেই মনে পড়ে না, কেমন ছিল সে দিনগুলোর আবহাওয়া। আমি তখন কী খেলতাম? আমি কি ঘুরতে বের হতাম? সূর্যের আলোময় দিন কিংবা মেঘে ঢাকা আকাশ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠা, দমকা হাওয়া ইত্যাদি এখন আমাকে আর কোনো কথা মনে করিয়ে দেয় না। যে ঘটনাগুলোর কথা আমার মনে আছে, তা হলো ইন্দোচীনে আর কোরিয়ায় যুদ্ধ, অরলিয়ানে বিক্ষোভ, পিনের পরিকল্পনা, কিন্তু আমি এ ঘটনাগুলোকে ৫২ সালের সঙ্গেই যুক্ত করেছিলাম বলে মনে পড়ে না। তখন নয়, পরে এগুলো আমার কাছে কোনো না কোনো অর্থ পেয়েছিল। ‘সাইগনে ৬টি বাইসাইকেল বিস্ফোরণ হয়েছে’, কিংবা ‘ফ্রেনে দ্যুকলো’র (ফ্রান্সের কমিউনিস্ট নেতা—অনুবাদক) সঙ্গে ১৯৫২ সালের সেই কিশোরীকে কোনোভাবেই মেলাতে পারি না। অবাক কাণ্ড হচ্ছে, স্তালিন, চার্চিল, আইজেনহাওয়ারকে আমার ঠিক তেমনই লাগত, যেমন এখন লাগে ইয়েলৎসিন, ক্লিনটন বা কোহলকে। আমি কিছুই জানতে পারি না, যেন আমি সে সময়টা এই পৃথিবীতে কাটাইনি।
পিনের ছবি দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম তার সঙ্গে ঝিসকার দ্য’এস্তেনের চেহারার মিল দেখে। আমি এখনকার টেকোমাথা ঝিসকারের কথা বলছি না, বলছি আজ থেকে কুড়ি বছর আগে সে যেমন ছিল, তার কথা। ‘আয়রন কার্টেন’ বা লৌহপর্দা বিষয়টি মনে এলেই আমার মনে পড়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ার সময় নারী শিক্ষক আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘খ্রিষ্টধর্মে দশ পুঁতির জপমালা দিয়ে কী বোঝায়’, আর আমার তখন মনে হতো একটি লোহার খাঁচায় অনেকগুলো পুরুষ এবং নারী বন্দী হয়ে খাঁচাটিকে প্রবলভাবে নাড়াচ্ছেন। তবে বলতেই পারি, আমি অবলীলায় মনে করতে পারলাম, কৌতুক স্ট্রিপ ‘পুস্তিক’-এর কথা। এই স্ট্রিপ বহু বহুদিন ধরে ‘ফ্রান্স-সুয়ার’ পত্রিকার শেষের পাতায় প্রকাশ হয়েছে। সে সময় কৌতুক পড়ে আমি মজা পেতাম কি পেতাম না, তা মনে করতে পারি না। যেমন একটা কৌতুক ছিল:
‘কী হে মৎস্যশিকারি, কামড়াচ্ছে?’
‘না না, এরা খুব ছোট। কামড়ালেও ব্যথা লাগছে না।’
আমি সিনেমার বিজ্ঞাপন এবং যে সিনেমাগুলো আসত প্রথমে রুয়ান শহরে, পরে আমাদের শহরে, সেগুলো সম্পর্কে জানতাম। ‘মিশর থেকে আসা প্রেমিকেরা’ ‘দারুণ বউ আমার’ ইত্যাদি সিনেমার কথা মনে আছে।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটত: দুই বছর বয়সী এক শিশু ক্রসাঁ খেয়ে আকস্মিকভাবে মারা গেছে, খেত পরিষ্কার করতে গিয়ে গমের খেতে খেলতে খেলতে লুকিয়ে পড়া ছেলের পা কেটে ফেলেছে এক কৃষক, ক্রেইলে মাইন বিস্ফোরণে তিন শিশু নিহত। এ ধরনের ঘটনায় আমার মনে আগ্রহ জাগত।
খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়—মাখন আর দুধের দাম। সে সময় গ্রামকে বেশ দাম দেওয়া হতো। পা ও মুখের রোগ সম্পর্কে খবর বের হতো, থাকত কৃষকদের বউদের নিয়ে প্রতিবেদন, পশু চিকিৎসা নিয়ে লেখালেখি, লাপিক্রিন কিংবা ওসপোরৎসিন নিয়ে প্রতিবেদন থেকে তা ঢের বোঝা যেত।
কাশির লজেন্স আর সিরাপের এত বেশি বিজ্ঞাপন বের হতো যে মনে হতো, সব মানুষই কাশিতে ভুগছে এবং তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে এসব লজেন্স আর সিরাপ খেয়েই সেরে উঠছে।
শনিবারের পত্রিকায় ছিল ফিচার, ‘নারী, আপনার জন্য’। আমি সে পাতায় যে জ্যাকেট দেখেছি, এর সঙ্গে আমার বিয়ারিৎসে নিয়ে যাওয়া জ্যাকেটের মিল খুঁজে পাই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আমি বা মা কেউই এইটুকু ছাড়া আর কোনোভাবেই সে সময়ের ফ্যাশন অনুযায়ী সাজগোজ করিনি। আর চুলের যে কার্লগুলো দেখেছি, এর সঙ্গে আমার টুপিওয়ালা চুলের স্টাইলের কোনো মিল ছিল না।
আমি পত্রিকার ১৪-১৫ তারিখের শনি-রবিবারের পাতায় চোখ রাখলাম। প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা ছিল:
শস্যের ফলন প্রত্যাশার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে
২৪ ঘণ্টার গাড়ির প্রতিযোগিতায় প্যারিসে কোনো ফেবারিট নেই
মি. ঝ্যাক দ্যুকলো দীর্ঘ জেরার পরও অপরাধ স্বীকার করেননি
১০ দিন খোঁজাখুঁজির পর জোয়েল নামের শিশুটির মরদেহ তার বাড়ির পাশ থেকেই উদ্ধার:
স্বীকারোক্তি—প্রতিবেশিনী তাকে নর্দমায় ফেলে দেয়
এসব দেখে আর পত্রিকার পাতা ওল্টাতে ইচ্ছে হলো না। আর্কাইভ থেকে বের হয়ে, সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে আমি হঠাৎ বুঝতে পারলাম, আর একটু হলেই ১৯৫২ সালের সেই দিনটির, সেই খবরটির দেখা বুঝি পেয়ে যেতাম! পরে আমি বিস্মিত হয়ে ভেবেছি, ঘটনাটা তো সেই দিনটিতে ঘটেছিল, যে দিনে লে-মানে’তে সারা দিন ক্রমাগত গাড়ির গর্জন শোনা গিয়েছিল। দুটো ঘটনার এত সাদৃশ্য আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। সেই রোববার পৃথিবীতে যত ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন, আমি ওই একটি ঘটনার সঙ্গে আর কোনো ঘটনাকে মেলাতে পারি না। শুধু সেটা আমার জন্য ছিল এক বাস্তব অভিজ্ঞতা।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪