জাহীদ রেজা নূর
আমার সামনেই ছিল অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র আর বিজ্ঞাপনের তালিকা, আমি সেগুলো দ্রুতগতিতে ‘প্যারিস নরম্যান্ডি’ পত্রিকা থেকে লিখে নিচ্ছিলাম। এই তালিকা থেকে আমার কোনো নির্দিষ্ট চাওয়া-পাওয়া নেই। বলে রাখি, সে সময় গাড়ি আর রেফ্রিজারেটরের সংখ্যা ছিল খুব কম। সে সময় বিজ্ঞাপন-তারকা ছিল ‘লাক্স’ সাবান। নব্বই দশকের কম্পিউটার, ওভেন, হিমায়িত খাবার রাখার বাক্সের চেয়ে তা বেশি আকর্ষণীয় ছিল না। পণ্যের বণ্টন পণ্য প্রাপ্তির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ’৫২ সালে কারও কারও বাড়িতে বেসিনও ছিল না, আবার কারও কারও বাড়িতে অপরিহার্য ছিল বাথটাব। এটাই হচ্ছে তখনকার অবস্থা। এখনো তো কেউ কেউ পোশাকের জন্য বেছে নেয় ফ্রগি, কেউ কেউ বেছে নেয় অ্যাগনেস বি। পত্রিকা একসঙ্গে ধরে রাখে বিভিন্ন যুগের সেরা লক্ষণগুলোকেই।
আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে শব্দগুলো দিয়ে আমি নিজেকে এবং অন্যকে চিনতাম, সে শব্দগুলো খুঁজে বের করা, যে শব্দগুলোকে সে সময় মনে হয়েছিল খুবই সাধারণ এবং অগ্রহণযোগ্য। অথবা মনে হয়েছিল একেবারেই অসম্ভব কিছু। কিন্তু আমি তো এখন ’৯৫-এ বাস করা এক নারী, যে কিনা ’৫২-এর সেই কিশোরী হিসেবে পুনর্জন্ম নিতে পারবে না কখনো, যে কিনা চেনে শুধু নিজের ছোট্ট শহরটিকে, চেনে নিজের পরিবারকে, স্কুলটাকে এবং যার শব্দভান্ডারে শব্দের সংখ্যা নিতান্তই কম। তখন আমি সেই কিশোরীটা—যার সামনে রয়েছে পুরোটা জীবন। নিজের জীবনের সবকিছুই তো আর সত্যি সত্যি মনে রাখা যায় না।
আমার শৈশবের দিনগুলোকে নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই সেই সময়ের নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার, বিশ্বাস, সে সময়ের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো, আমাদের স্কুলে, পরিবারে, শহরতলিতে মান্য করা রীতিগুলোকে স্মরণে আনতে হবে—সেগুলোই আসলে আমার জীবনকে গড়ে নিয়েছে, প্রশ্নহীনভাবে আমার অস্তিত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমি যে আমার মতো হলাম, তার সবকিছুই আমাকে মনে করে দেখতে হবে: আঞ্চলিক ভাষা, ধর্মীয় ধারণা, বাবা-মার বলা কথায় ব্যবহৃত শব্দাবলি, শরীর ও আশপাশের বস্তু থেকে খাপ খাওয়ানো তাদের অঙ্গভঙ্গি, মেয়েদের ম্যাগাজিনে পড়া উপন্যাস ‘পেটিট ইকো দ্য লা ফ্যাশন’ বা ‘ভিয়েনে দ্য শোমের’। এসব ভিন্ন ভিন্ন শব্দের কোনো কোনোটি এখনো আমার জীবন থেকে অর্থ হারিয়ে ফেলেনি—এবং সে শব্দগুলোই সেই ভয়ংকর দৃশ্যটি ঘিরে তৈরি করেছিল এর প্রেক্ষাপট, যা বারো বছর বয়সী একটি মেয়ের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল এবং মেয়েটি একদিন মনে করল, আতঙ্কে সে পাগল হয়ে গেছে।
তাহলে বলি। যা দাঁড়াচ্ছে, তা কোনো কারণেই একটি কল্পনার আশ্রয়ে গড়ে ওঠা কোনো ছোটগল্প হবে না। বাস্তবতার ছোঁয়াহীন কোনো গল্প এটা নয়। আমি শুধু কাগজে আমার শৈশবের ছবি আঁকতে চাই না, বরং আমি জীবনের নানা দৃষ্টিকোণ থেকে সে ছবিটি দেখতে চাই, যে ছবিটি তার আলোকে পরিষ্কার হয়ে উঠতে পারে। সংক্ষেপে, আমি সেভাবেই নিজের জীবনটি দেখতে চাই, যেভাবে দেখে একজন নৃতাত্ত্বিক।
(এটা অবশ্য বলার কোনো প্রয়োজনই ছিল না, কিন্তু আমি চাই আমার কাজকে একদম স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে, নইলে আমি কাজটা করে উঠতে পারব না।)
আমি হয়তো আমার শৈশবের নিত্য কথামালা ও দৈনন্দিন জীবনের প্রেক্ষাপটে ওই ভয়ংকর দৃশ্যটি তুলে ধরার চেষ্টা করব। অথবা এমনও হতে পারে, আমাকে চালিত করবে উন্মত্ত—প্রতারক কোনো শক্তি, যাকে মনে হতে পারে আমার অচেনা গসপেলের মতোই অভিশপ্ত। এমন এক অভিশাপ, যা আমাকে ভুডু আচারধর্মের কথা মনে করিয়ে দেয়।
মেনে নিন এবং পাঠ করুন: ইহা আমার দেহ, যাহা আপনার নিকট অর্পণ করা হইবে, ইহা আমার রক্তপূর্ণ বাটি, যাহা আপনার এবং আরও অনেকের মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইবে।
১৯৫২ সালের জুন মাসের আগে অবধি আমি কোনো দিন আমার শহর ছেড়ে আর কোথাও যাইনি। আমার শহরটাকে সবখানে একটু ধোঁয়াশাঘেরা অদ্ভুত নামে ডাকা হয়, অথচ সেই নামটিই সবার কাছে পরিচিত, ‘কো অঞ্চল’। এটাকে আমরা ‘এখানে’ বলে থাকি। এই শহর দাঁড়িয়ে আছে সেন নদীর ডান পারে, লে হাভরে ও রুয়ান শহর দুটোর মাঝখানে এর অবস্থান। এবং এই দুই শহরের পর আর কী আছে, তা আমার একেবারেই জানা নেই। আসলে এরপর যা আছে, তা হলো ফ্রান্সের বাকি অংশ, আসলে রয়েছে বাদবাকি পুরো পৃথিবীটা। এই অজানা জায়গা সম্পর্কে ‘সেখানে’ শব্দটি ব্যবহার করি আমরা। আর সে শব্দ ব্যবহার করার সময় দিগন্তের দিকে এমনভাবে হাত নাড়া হয়, যা দেখে মনে হবে, এ এক উদাসীনতার প্রকাশ কিংবা ওই বাদবাকি পৃথিবী সম্পর্কে জানার কোনো উপায় নেই বলেই এমনটা করা হচ্ছে। আমাদের শহর থেকে কেউই আমাদের দেশের রাজধানীমুখো হবে না। তখনই তারা রাজধানীমুখো হবে, যখন কোনো ট্যুরিস্ট গ্রুপের সঙ্গে যাবে অথবা নিশ্চিতভাবেই প্যারিসে তাদের কোনো কাছের মানুষ আছে, যারা সেখানে তার দায়িত্ব নেবে। ট্রামে করে নিজ এলাকার মেলায় যাওয়ার চেয়ে মেট্রোতে করে চলাচল করা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, মেট্রোতে উঠতে হলে দীর্ঘসময়ের প্রস্তুতি প্রয়োজন। সবাই বিশ্বাস করে, যেখানে সবাই অচেনা, সেখানে যাওয়া ঠিক নয়। আর সেখানে গেলেই আনন্দ লাগবে, যেখানে মানুষ যখন ইচ্ছে যেতে পারে।
আমাদের ‘এখানে’ শব্দটি দিয়ে আমরা আমাদের পাশের সেই দুটো শহর লা হাভরে ও রুয়ানকেও নির্ভয়ে বোঝাই, আমাদের পরিবারগুলোয় প্রায়ই এই শহর দুটি নিয়ে কথা হয়। আমাদের শহরের অনেক শ্রমিক রেলকারে করে কাজে যায়। রুয়ান শহরটি আমাদের শহরের বেশি কাছে, তুলনামূলকভাবে শহরটা বড়। এখানে দোকানপাট রয়েছে, সর্বরোগের চিকিৎসকেরা আছেন, কয়েকটি সিনেমা হল আছে, ইনডোর সুইমিং পুল আছে, সেখানে সাঁতার শেখা যায়, সেঁ রোমেঁ নামে মেলা আছে—পুরো নভেম্বরজুড়েই যে মেলাটি বসে, আছে ট্রাম, চা-খানা, আছে হাসপাতাল, যেখানে মানুষের শরীরে জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। এখানে ইলেকট্রিক শক দেওয়া অথবা বিষনাশক কোর্সেরও ব্যবস্থা আছে।
আমাদের শহর থেকে কেউই ভুলেও রুয়ান শহরে যাবে না, যদি সে সেখানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ না করে। মা আমাকে বছরে দুবার রুয়ানে নিয়ে যেত। সেখানে গিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে আমার চোখ পরীক্ষা করাতো আর নতুন চশমা বানিয়ে দিত। আর সেই সুবাদে মা সেখান থেকে কসমেটিকস আর প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনত, যেগুলো আমাদের শহরে পাওয়া যেত না। এই রুয়ান শহরটিকে আমরা ‘নিজের ঘর’ বলে মনে করতাম না, কারণ এই শহরের কেউই আমাদের পরিচিতজন ছিল না। এ শহরে যারা বসবাস করে, তারা আমাদের শহরের লোকেদের চেয়ে ভালো কাপড়চোপড় পরে, তাদের কথায় আঞ্চলিকতার টান আমাদের চেয়ে কম।
রুয়ানে এলেই আমরা বুঝতে পারতাম, কোথায় কোথায় আমরা পিছিয়ে আছি। বুদ্ধিতে, যোগাযোগ করার ক্ষমতায়, কথা বলার পারঙ্গমতায়, সামগ্রিক অগ্রসরমানতায় আমাদের দুর্বলতা ছিল।
১৯৫২ সালে আমি আমার শহরের বাইরে নিজেকে কল্পনাও করিনি। আমাকে যারা ‘আনি’ নামে চিনত, শুধু তাদের দোকানে, তাদের বাড়িতে যাওয়ার মধ্যেই আমার চলাচল ছিল সীমাবদ্ধ। অন্য পৃথিবীর কোনো কিশোরের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হওয়ার সুযোগই ছিল না। সে সময় আমার সকল ভাবনা ছিল আমার ছোট শহরটিকে ঘিরে। এই শহরের স্কুল, গির্জা, ফ্যাশনেবল কাপড়ের দোকানঘর এবং উৎসব ছিল আমার নিজের। ল হাভরে ও রুয়ানের মাঝখানে সাত হাজার মানুষের এই শহরটি ছিল পৃথিবীতে একমাত্র জায়গা, যার প্রায় সব মানুষ সম্পর্কে আমরা বলতে পারতাম, কোথায় কার বাড়ি, কার কজন ছেলেমেয়ে, কে কোথায় কাজ করে। আমরা মুখস্থ বলতে পারতাম গির্জার সময়সূচি, লেরুয়া সিনেমা হলে কটার সময় কোন সিনেমার শো আছে, কোনটা সেরা পেস্ট্রিশপ কিংবা কোন কসাইয়ের কাছ থেকে মাংস কিনলে সে মাপে কম চুরি করবে। এই শহরেই জন্মেছে আমার বাবা আর মা, কাছের কোনো গ্রামেই জন্মেছিল তাদের বাবা মা, এবং তাদেরও বাবা-মা। পৃথিবীতে কোথাও আর কোনো জায়গা নেই, যে জায়গাটিকে আমি এই শহরটির মতো এ রকম আপন করে চিনে নিতে পারি। আমি জানি, আমাদের পাশের বাড়িতে পঞ্চাশ বছর আগে কারা থাকত এবং স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার কিশোরী মা কাদের কাছ থেকে পাউরুটি কিনে আনতেন। রাস্তাঘাটে চলাচল করতে গিয়ে এমন নারী বা পুরুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়, যাদের কারও কারও সঙ্গে একটুর জন্য বাবা বা মায়ের এনগেজমেন্ট হয়নি। এরপরই কেবল বাবা আর মায়ের দেখা হয়েছে। যাদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না, তাদের বলি ‘আগন্তুক’।
আমরা তাদের অতীত সম্পর্কে জানি না, তারাও আমাদের অতীত সম্পর্কে কিছু জানে না। ব্রিটেনবাসী, মার্সেলবাসী, স্প্যানিশ, যেকোনো লোক, যারা আমাদের ভাষায় কথা বলে না, তারা সবাই আমাদের চোখে ‘বিদেশি’।
(অন্যান্য উপন্যাসে আমি যেভাবে এই শহরের নাম করেছি, এখানে তার দরকার নেই। কারণ রুয়ান বা ল হাভরে থেকে রেলগাড়ি চেপে কিংবা ১৫ নম্বর হাইওয়ে দিয়ে যেখানে পৌঁছানো যায়, এখানে মানচিত্রে স্থান পাওয়া সেই ভৌগোলিক স্থান হিসেবে শহরটাকে দেখানো হচ্ছে না, এটা না হয় থাকুক নামহীন আমার জন্মশহর হিসেবে, যার কাছে ফিরলে আমি হতাশা আর বিষণ্নতায় ভুগতে থাকি, আর তা আমার সব ভাবনা আর স্মৃতিকে গ্রাস করে নেয়।)
চল্লিশের দশকে জার্মান বাহিনীর আক্রমণের পর আগুনে পোড়া নগরের কেন্দ্রস্থলে নরম্যান্ডির মতোই পরে বোমা হামলা হয়, সেখানেই পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। সবকিছুই একের পর এক সাজানো আছে: নির্মাণকাজ চলছে, খালি জায়গাও আছে পাশে, ইটের নতুন ত্রিতল ভবন গড়ে উঠেছে, যার প্রথম তলায় জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশনেবল দোকানপাট, আর পাশেই রয়েছে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ব্যারাক আর পুরোনো ভবন: মেয়র ভবন, সিনেমা হল লেরুয়া, পোস্ট অফিস, মার্কেটের প্যাভিলিয়ন। গির্জাটা পুড়ে গিয়েছিল এবং এর নিচে তৈরি হয়েছিল ক্লাব, যা মেয়র ভবনের চত্বরের সঙ্গে জায়গা ভাগ করে নিয়েছিল। ধার্মিক মানুষ সেখানে এসে হাজির হয়, সাধারণ মানুষেরা বসে সেই স্টলগুলোয় অথবা গ্যালারিতে।
কেন্দ্রীয় সড়ক থেকে অ্যাসফাল্টে গড়া রাস্তা বা ফুটপাত ছড়িয়ে গেছে চারদিকে, ইট আর পাথরে গড়া ব্যক্তিগত বাড়িগুলো সুবিন্যস্ত হয়ে লুকিয়ে আছে প্রাচীরের আড়ালে এবং সেখানে গড়ে উঠেছে নোটারি পাবলিক, ডাক্তারখানা, বড় চাকুরেদের বাড়ি। একটু দূরেই রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল। এ জায়গাটাকে অবশ্য ঠিক শহরের কেন্দ্র বলা যাবে না, তবে একে শহরতলি বলারও কোনো কারণ নেই।
এরপর রয়েছে শহরতলি, যেখানকার বাসিন্দারা শহরের কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার কালে বলে, ‘শহরে যাই’ কিংবা শহরের নাম করে বলে ‘অমুক শহরে যাই।’ তবে সত্যের খাতিরে বলতে হয় শহরের কেন্দ্র আর শহরতলির মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নেই। তবে এখানে এসে শেষ হয়েছে ফুটপাত, বেশির ভাগ বাড়িই কাদালেপা কুঁড়ে (দু-তিনটা ঘর তাতে, পানির ব্যবস্থা নেই, টয়লেট আছে বাড়ি থেকে কিছু দূরে আর বাড়ির সঙ্গে রয়েছে বাগান)। দোকানপাট অনেক দূরে দূরে, তবে ঐতিহ্যবাহী মুদির দোকান, কফি কর্নার রয়েছে এই শহরতলিতে, যাকে ‘গ্রাম’ বলা যায়। তবে সবাই জানে, এসব দোকানে যেতে হলে ভারী জুতো কিংবা ভালো পোশাক পরার দরকার নেই। কেন্দ্র থেকে যতই দূরে যাওয়া, ততই প্রাসাদোপম বাড়ির সংখ্যা কমতে থাকে, একসময় শুধু মাটির কুঁড়ের দেখা পাওয়া যায়। শহরের প্রান্তে এসে রাস্তাগুলো হয়ে গেছে কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টি হলেই সে রাস্তায় কাদা জমে। আর ঠিক এর পেছন থেকেই শুরু হয়েছে খামারবাড়িগুলি—এখান থেকেই আসলে গ্রামের শুরু।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
আমার সামনেই ছিল অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র আর বিজ্ঞাপনের তালিকা, আমি সেগুলো দ্রুতগতিতে ‘প্যারিস নরম্যান্ডি’ পত্রিকা থেকে লিখে নিচ্ছিলাম। এই তালিকা থেকে আমার কোনো নির্দিষ্ট চাওয়া-পাওয়া নেই। বলে রাখি, সে সময় গাড়ি আর রেফ্রিজারেটরের সংখ্যা ছিল খুব কম। সে সময় বিজ্ঞাপন-তারকা ছিল ‘লাক্স’ সাবান। নব্বই দশকের কম্পিউটার, ওভেন, হিমায়িত খাবার রাখার বাক্সের চেয়ে তা বেশি আকর্ষণীয় ছিল না। পণ্যের বণ্টন পণ্য প্রাপ্তির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ’৫২ সালে কারও কারও বাড়িতে বেসিনও ছিল না, আবার কারও কারও বাড়িতে অপরিহার্য ছিল বাথটাব। এটাই হচ্ছে তখনকার অবস্থা। এখনো তো কেউ কেউ পোশাকের জন্য বেছে নেয় ফ্রগি, কেউ কেউ বেছে নেয় অ্যাগনেস বি। পত্রিকা একসঙ্গে ধরে রাখে বিভিন্ন যুগের সেরা লক্ষণগুলোকেই।
আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে শব্দগুলো দিয়ে আমি নিজেকে এবং অন্যকে চিনতাম, সে শব্দগুলো খুঁজে বের করা, যে শব্দগুলোকে সে সময় মনে হয়েছিল খুবই সাধারণ এবং অগ্রহণযোগ্য। অথবা মনে হয়েছিল একেবারেই অসম্ভব কিছু। কিন্তু আমি তো এখন ’৯৫-এ বাস করা এক নারী, যে কিনা ’৫২-এর সেই কিশোরী হিসেবে পুনর্জন্ম নিতে পারবে না কখনো, যে কিনা চেনে শুধু নিজের ছোট্ট শহরটিকে, চেনে নিজের পরিবারকে, স্কুলটাকে এবং যার শব্দভান্ডারে শব্দের সংখ্যা নিতান্তই কম। তখন আমি সেই কিশোরীটা—যার সামনে রয়েছে পুরোটা জীবন। নিজের জীবনের সবকিছুই তো আর সত্যি সত্যি মনে রাখা যায় না।
আমার শৈশবের দিনগুলোকে নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই সেই সময়ের নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার, বিশ্বাস, সে সময়ের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো, আমাদের স্কুলে, পরিবারে, শহরতলিতে মান্য করা রীতিগুলোকে স্মরণে আনতে হবে—সেগুলোই আসলে আমার জীবনকে গড়ে নিয়েছে, প্রশ্নহীনভাবে আমার অস্তিত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমি যে আমার মতো হলাম, তার সবকিছুই আমাকে মনে করে দেখতে হবে: আঞ্চলিক ভাষা, ধর্মীয় ধারণা, বাবা-মার বলা কথায় ব্যবহৃত শব্দাবলি, শরীর ও আশপাশের বস্তু থেকে খাপ খাওয়ানো তাদের অঙ্গভঙ্গি, মেয়েদের ম্যাগাজিনে পড়া উপন্যাস ‘পেটিট ইকো দ্য লা ফ্যাশন’ বা ‘ভিয়েনে দ্য শোমের’। এসব ভিন্ন ভিন্ন শব্দের কোনো কোনোটি এখনো আমার জীবন থেকে অর্থ হারিয়ে ফেলেনি—এবং সে শব্দগুলোই সেই ভয়ংকর দৃশ্যটি ঘিরে তৈরি করেছিল এর প্রেক্ষাপট, যা বারো বছর বয়সী একটি মেয়ের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল এবং মেয়েটি একদিন মনে করল, আতঙ্কে সে পাগল হয়ে গেছে।
তাহলে বলি। যা দাঁড়াচ্ছে, তা কোনো কারণেই একটি কল্পনার আশ্রয়ে গড়ে ওঠা কোনো ছোটগল্প হবে না। বাস্তবতার ছোঁয়াহীন কোনো গল্প এটা নয়। আমি শুধু কাগজে আমার শৈশবের ছবি আঁকতে চাই না, বরং আমি জীবনের নানা দৃষ্টিকোণ থেকে সে ছবিটি দেখতে চাই, যে ছবিটি তার আলোকে পরিষ্কার হয়ে উঠতে পারে। সংক্ষেপে, আমি সেভাবেই নিজের জীবনটি দেখতে চাই, যেভাবে দেখে একজন নৃতাত্ত্বিক।
(এটা অবশ্য বলার কোনো প্রয়োজনই ছিল না, কিন্তু আমি চাই আমার কাজকে একদম স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে, নইলে আমি কাজটা করে উঠতে পারব না।)
আমি হয়তো আমার শৈশবের নিত্য কথামালা ও দৈনন্দিন জীবনের প্রেক্ষাপটে ওই ভয়ংকর দৃশ্যটি তুলে ধরার চেষ্টা করব। অথবা এমনও হতে পারে, আমাকে চালিত করবে উন্মত্ত—প্রতারক কোনো শক্তি, যাকে মনে হতে পারে আমার অচেনা গসপেলের মতোই অভিশপ্ত। এমন এক অভিশাপ, যা আমাকে ভুডু আচারধর্মের কথা মনে করিয়ে দেয়।
মেনে নিন এবং পাঠ করুন: ইহা আমার দেহ, যাহা আপনার নিকট অর্পণ করা হইবে, ইহা আমার রক্তপূর্ণ বাটি, যাহা আপনার এবং আরও অনেকের মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইবে।
১৯৫২ সালের জুন মাসের আগে অবধি আমি কোনো দিন আমার শহর ছেড়ে আর কোথাও যাইনি। আমার শহরটাকে সবখানে একটু ধোঁয়াশাঘেরা অদ্ভুত নামে ডাকা হয়, অথচ সেই নামটিই সবার কাছে পরিচিত, ‘কো অঞ্চল’। এটাকে আমরা ‘এখানে’ বলে থাকি। এই শহর দাঁড়িয়ে আছে সেন নদীর ডান পারে, লে হাভরে ও রুয়ান শহর দুটোর মাঝখানে এর অবস্থান। এবং এই দুই শহরের পর আর কী আছে, তা আমার একেবারেই জানা নেই। আসলে এরপর যা আছে, তা হলো ফ্রান্সের বাকি অংশ, আসলে রয়েছে বাদবাকি পুরো পৃথিবীটা। এই অজানা জায়গা সম্পর্কে ‘সেখানে’ শব্দটি ব্যবহার করি আমরা। আর সে শব্দ ব্যবহার করার সময় দিগন্তের দিকে এমনভাবে হাত নাড়া হয়, যা দেখে মনে হবে, এ এক উদাসীনতার প্রকাশ কিংবা ওই বাদবাকি পৃথিবী সম্পর্কে জানার কোনো উপায় নেই বলেই এমনটা করা হচ্ছে। আমাদের শহর থেকে কেউই আমাদের দেশের রাজধানীমুখো হবে না। তখনই তারা রাজধানীমুখো হবে, যখন কোনো ট্যুরিস্ট গ্রুপের সঙ্গে যাবে অথবা নিশ্চিতভাবেই প্যারিসে তাদের কোনো কাছের মানুষ আছে, যারা সেখানে তার দায়িত্ব নেবে। ট্রামে করে নিজ এলাকার মেলায় যাওয়ার চেয়ে মেট্রোতে করে চলাচল করা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, মেট্রোতে উঠতে হলে দীর্ঘসময়ের প্রস্তুতি প্রয়োজন। সবাই বিশ্বাস করে, যেখানে সবাই অচেনা, সেখানে যাওয়া ঠিক নয়। আর সেখানে গেলেই আনন্দ লাগবে, যেখানে মানুষ যখন ইচ্ছে যেতে পারে।
আমাদের ‘এখানে’ শব্দটি দিয়ে আমরা আমাদের পাশের সেই দুটো শহর লা হাভরে ও রুয়ানকেও নির্ভয়ে বোঝাই, আমাদের পরিবারগুলোয় প্রায়ই এই শহর দুটি নিয়ে কথা হয়। আমাদের শহরের অনেক শ্রমিক রেলকারে করে কাজে যায়। রুয়ান শহরটি আমাদের শহরের বেশি কাছে, তুলনামূলকভাবে শহরটা বড়। এখানে দোকানপাট রয়েছে, সর্বরোগের চিকিৎসকেরা আছেন, কয়েকটি সিনেমা হল আছে, ইনডোর সুইমিং পুল আছে, সেখানে সাঁতার শেখা যায়, সেঁ রোমেঁ নামে মেলা আছে—পুরো নভেম্বরজুড়েই যে মেলাটি বসে, আছে ট্রাম, চা-খানা, আছে হাসপাতাল, যেখানে মানুষের শরীরে জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। এখানে ইলেকট্রিক শক দেওয়া অথবা বিষনাশক কোর্সেরও ব্যবস্থা আছে।
আমাদের শহর থেকে কেউই ভুলেও রুয়ান শহরে যাবে না, যদি সে সেখানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ না করে। মা আমাকে বছরে দুবার রুয়ানে নিয়ে যেত। সেখানে গিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে আমার চোখ পরীক্ষা করাতো আর নতুন চশমা বানিয়ে দিত। আর সেই সুবাদে মা সেখান থেকে কসমেটিকস আর প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনত, যেগুলো আমাদের শহরে পাওয়া যেত না। এই রুয়ান শহরটিকে আমরা ‘নিজের ঘর’ বলে মনে করতাম না, কারণ এই শহরের কেউই আমাদের পরিচিতজন ছিল না। এ শহরে যারা বসবাস করে, তারা আমাদের শহরের লোকেদের চেয়ে ভালো কাপড়চোপড় পরে, তাদের কথায় আঞ্চলিকতার টান আমাদের চেয়ে কম।
রুয়ানে এলেই আমরা বুঝতে পারতাম, কোথায় কোথায় আমরা পিছিয়ে আছি। বুদ্ধিতে, যোগাযোগ করার ক্ষমতায়, কথা বলার পারঙ্গমতায়, সামগ্রিক অগ্রসরমানতায় আমাদের দুর্বলতা ছিল।
১৯৫২ সালে আমি আমার শহরের বাইরে নিজেকে কল্পনাও করিনি। আমাকে যারা ‘আনি’ নামে চিনত, শুধু তাদের দোকানে, তাদের বাড়িতে যাওয়ার মধ্যেই আমার চলাচল ছিল সীমাবদ্ধ। অন্য পৃথিবীর কোনো কিশোরের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হওয়ার সুযোগই ছিল না। সে সময় আমার সকল ভাবনা ছিল আমার ছোট শহরটিকে ঘিরে। এই শহরের স্কুল, গির্জা, ফ্যাশনেবল কাপড়ের দোকানঘর এবং উৎসব ছিল আমার নিজের। ল হাভরে ও রুয়ানের মাঝখানে সাত হাজার মানুষের এই শহরটি ছিল পৃথিবীতে একমাত্র জায়গা, যার প্রায় সব মানুষ সম্পর্কে আমরা বলতে পারতাম, কোথায় কার বাড়ি, কার কজন ছেলেমেয়ে, কে কোথায় কাজ করে। আমরা মুখস্থ বলতে পারতাম গির্জার সময়সূচি, লেরুয়া সিনেমা হলে কটার সময় কোন সিনেমার শো আছে, কোনটা সেরা পেস্ট্রিশপ কিংবা কোন কসাইয়ের কাছ থেকে মাংস কিনলে সে মাপে কম চুরি করবে। এই শহরেই জন্মেছে আমার বাবা আর মা, কাছের কোনো গ্রামেই জন্মেছিল তাদের বাবা মা, এবং তাদেরও বাবা-মা। পৃথিবীতে কোথাও আর কোনো জায়গা নেই, যে জায়গাটিকে আমি এই শহরটির মতো এ রকম আপন করে চিনে নিতে পারি। আমি জানি, আমাদের পাশের বাড়িতে পঞ্চাশ বছর আগে কারা থাকত এবং স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার কিশোরী মা কাদের কাছ থেকে পাউরুটি কিনে আনতেন। রাস্তাঘাটে চলাচল করতে গিয়ে এমন নারী বা পুরুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়, যাদের কারও কারও সঙ্গে একটুর জন্য বাবা বা মায়ের এনগেজমেন্ট হয়নি। এরপরই কেবল বাবা আর মায়ের দেখা হয়েছে। যাদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না, তাদের বলি ‘আগন্তুক’।
আমরা তাদের অতীত সম্পর্কে জানি না, তারাও আমাদের অতীত সম্পর্কে কিছু জানে না। ব্রিটেনবাসী, মার্সেলবাসী, স্প্যানিশ, যেকোনো লোক, যারা আমাদের ভাষায় কথা বলে না, তারা সবাই আমাদের চোখে ‘বিদেশি’।
(অন্যান্য উপন্যাসে আমি যেভাবে এই শহরের নাম করেছি, এখানে তার দরকার নেই। কারণ রুয়ান বা ল হাভরে থেকে রেলগাড়ি চেপে কিংবা ১৫ নম্বর হাইওয়ে দিয়ে যেখানে পৌঁছানো যায়, এখানে মানচিত্রে স্থান পাওয়া সেই ভৌগোলিক স্থান হিসেবে শহরটাকে দেখানো হচ্ছে না, এটা না হয় থাকুক নামহীন আমার জন্মশহর হিসেবে, যার কাছে ফিরলে আমি হতাশা আর বিষণ্নতায় ভুগতে থাকি, আর তা আমার সব ভাবনা আর স্মৃতিকে গ্রাস করে নেয়।)
চল্লিশের দশকে জার্মান বাহিনীর আক্রমণের পর আগুনে পোড়া নগরের কেন্দ্রস্থলে নরম্যান্ডির মতোই পরে বোমা হামলা হয়, সেখানেই পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। সবকিছুই একের পর এক সাজানো আছে: নির্মাণকাজ চলছে, খালি জায়গাও আছে পাশে, ইটের নতুন ত্রিতল ভবন গড়ে উঠেছে, যার প্রথম তলায় জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশনেবল দোকানপাট, আর পাশেই রয়েছে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ব্যারাক আর পুরোনো ভবন: মেয়র ভবন, সিনেমা হল লেরুয়া, পোস্ট অফিস, মার্কেটের প্যাভিলিয়ন। গির্জাটা পুড়ে গিয়েছিল এবং এর নিচে তৈরি হয়েছিল ক্লাব, যা মেয়র ভবনের চত্বরের সঙ্গে জায়গা ভাগ করে নিয়েছিল। ধার্মিক মানুষ সেখানে এসে হাজির হয়, সাধারণ মানুষেরা বসে সেই স্টলগুলোয় অথবা গ্যালারিতে।
কেন্দ্রীয় সড়ক থেকে অ্যাসফাল্টে গড়া রাস্তা বা ফুটপাত ছড়িয়ে গেছে চারদিকে, ইট আর পাথরে গড়া ব্যক্তিগত বাড়িগুলো সুবিন্যস্ত হয়ে লুকিয়ে আছে প্রাচীরের আড়ালে এবং সেখানে গড়ে উঠেছে নোটারি পাবলিক, ডাক্তারখানা, বড় চাকুরেদের বাড়ি। একটু দূরেই রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল। এ জায়গাটাকে অবশ্য ঠিক শহরের কেন্দ্র বলা যাবে না, তবে একে শহরতলি বলারও কোনো কারণ নেই।
এরপর রয়েছে শহরতলি, যেখানকার বাসিন্দারা শহরের কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার কালে বলে, ‘শহরে যাই’ কিংবা শহরের নাম করে বলে ‘অমুক শহরে যাই।’ তবে সত্যের খাতিরে বলতে হয় শহরের কেন্দ্র আর শহরতলির মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নেই। তবে এখানে এসে শেষ হয়েছে ফুটপাত, বেশির ভাগ বাড়িই কাদালেপা কুঁড়ে (দু-তিনটা ঘর তাতে, পানির ব্যবস্থা নেই, টয়লেট আছে বাড়ি থেকে কিছু দূরে আর বাড়ির সঙ্গে রয়েছে বাগান)। দোকানপাট অনেক দূরে দূরে, তবে ঐতিহ্যবাহী মুদির দোকান, কফি কর্নার রয়েছে এই শহরতলিতে, যাকে ‘গ্রাম’ বলা যায়। তবে সবাই জানে, এসব দোকানে যেতে হলে ভারী জুতো কিংবা ভালো পোশাক পরার দরকার নেই। কেন্দ্র থেকে যতই দূরে যাওয়া, ততই প্রাসাদোপম বাড়ির সংখ্যা কমতে থাকে, একসময় শুধু মাটির কুঁড়ের দেখা পাওয়া যায়। শহরের প্রান্তে এসে রাস্তাগুলো হয়ে গেছে কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টি হলেই সে রাস্তায় কাদা জমে। আর ঠিক এর পেছন থেকেই শুরু হয়েছে খামারবাড়িগুলি—এখান থেকেই আসলে গ্রামের শুরু।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪