মনিজা রহমান
শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।
রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।
সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’
‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।
দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’
‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!
জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!
উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!
ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।
ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।
‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’
আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।
‘কার কথা বলছেন?’
‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’
‘তারপর কি নেয়নি?’
‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’
‘ছাতালি কী জিনিস?’
‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।
তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’
‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’
‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’
হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’
‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’
বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।
রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।
‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’
‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’
‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’
‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’
‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’
‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’
‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’
‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।
‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’
‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’
‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’
‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’
‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।
‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’
রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।
মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।
‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’
শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।
রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।
সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’
‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।
দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’
‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!
জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!
উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!
ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।
ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।
‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’
আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।
‘কার কথা বলছেন?’
‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’
‘তারপর কি নেয়নি?’
‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’
‘ছাতালি কী জিনিস?’
‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।
তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’
‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’
‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’
হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’
‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’
বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।
রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।
‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’
‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’
‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’
‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’
‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’
‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’
‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’
‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।
‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’
‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’
‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’
‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’
‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।
‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’
রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।
মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।
‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪