নকিব ফিরোজ
সকালে ঘুম থেকে উঠে, খোলা জানালার বাইরে চোখ পড়তেই দেখে সাদা মশারির মতো কুয়াশাঘেরা চারপাশ, যদিও গ্রীষ্মে এমনটা দেখা যায় না প্রায়, কৌতূহলে দরজা খুলে উঠোনে এসে দাঁড়ায় ইখতিয়ার। কোনো দিকে বেশি দূর দেখা যায় না, মনের মধ্যে শিরশির করে ওঠে। কয়েক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়ে, থেকে ঘরে ফিরে যেতে যেতে স্মৃতি হাতড়ায়। এমন কখনো কি দেখেছে আগে? মনে পড়ে না। যদিও পঁয়ত্রিশ বছর গ্রামছাড়া, কৈশোরে বা যৌবনে—কখনো এমনটা চোখে পড়েনি, কাঠফাটা গ্রীষ্মে প্রকৃতির এমন আচরণ অস্বাভাবিকই মনে হয় তার কাছে।
ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে পেছনের রুমে টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢেলে এক গ্লাস পানি খেয়ে গম্ভীর মুখে পায়চারি করে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত হালকা-পাতলা লম্বা, দুই সন্তানের জনক ইখতিয়ার।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পূর্বাভাস, করোনা অতিমারি অথবা নিজের জীবনের নৈরাশ্যকর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার এমন অশুভ আশঙ্কা হচ্ছে, তা-ও বুঝতে পারছে সে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা ইখতিয়ার আহমেদ, যে কিনা চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পর অভাবিত এ জীবন বেছে নিয়েছে এবং হয়তো একটি মর্মান্তিক পরিণতি নেমে আসছে তার জীবনে।
গ্রামে থাকার ইচ্ছা একসময় মনে সুপ্ত থাকলেও, নীলিমার সাথে সম্পর্কের পর সেই ইচ্ছা মন থেকে মুছে ফেলেছিল ইখতিয়ার। কারণ, নীলিমার চাকরি শহরে, তাকে বিয়ে করলে আর গ্রামে ফেরা সম্ভব হতো না, কিন্তু নীলিমার সাথে তার থাকা হলো না, বরং ছাড়তে হলো পরিবার। এখন গ্রামের বাড়িতে তার একার বসবাস।
প্রক্ষালন সেরে এসে পেছনের রুমের কোণে বসানো গ্যাসের চুলায় পেঁয়াজ-মরিচ মিশিয়ে ডিম ভেজে নিয়ে পান্তাভাত খেতে খেতে জানালায় বসা দুটো শালিক দেখে, পাশের লিচুগাছের ডালে আরও কয়েকটা, জানালার পাশে সবুজ ঝোপের ভেতর কালো-খয়েরি-সাদায় মেলানো ডাহুকটাও এসেছে, ঘরের পেছনের মজা ডোবার দিকে গুইসাপগুলো এখন চোখে না পড়লেও হয়তো আশপাশেই আছে সে জানে, ঘুম ভেঙে প্রতিদিন প্রথমেই দেখা হয় ওদের সাথে। খাওয়া শেষ করে জানালা দিয়ে একমুঠো ভাত ছুড়ে দেয় সে শালিকগুলোর উদ্দেশে। কড়া লিকার চা নিয়ে বেডরুমে এসে খাটে বসে কাপে চুমুক দিতে দিতে সেলফোনে নেটে সংবাদ পড়ায় মনোযোগ দেয়, চা শেষে খালি কাপটি পাশের ছোট টেবিলে রেখে সিগারেট ধরায়। রুমের জানালা খোলা, সব সময় খোলাই থাকে, কুয়াশার ভেতর গাছপালা ক্রমে দৃশ্যমান, প্রকৃতির কুয়াশাবিষণ্নতা শুষে নিয়েছে সূর্য, দূরে গাছগাছালির মাথায় পাগলা বুড়ির উড়ুউড়ু সাদা চুলের মতো লেগে আছে কিছুটা।
আধা পাকা ঘরের দেয়ালগুলো রংচটা, মেটে তেল মাজা কাঠের পাটাতন এখনো মজবুত, ওপরে একটা বেডরুমও আছে, দক্ষিণে জানালা, বোনেরা থাকত, পোকামাকড়ের দখলে চলে গিয়েছিল, লোক দিয়ে সব পরিচ্ছন্ন করেছে, এখন ভালোই বাসযোগ্য হয়েছে। দেশভাগের সময় হিন্দুদের থেকে সস্তায় বাবার কেনা কাঠের পুরোনো কিছু আসবাব যা টিকে আছে, সেগুলো রিপেয়ার করে কাজ চলার মতো হয়ে গেছে, শুধু একটা অ্যাটাচ্ড বাথরুম বানিয়ে ও এলপি গ্যাসে রান্নার আয়োজন করে একার সংসার শুরু হয়েছে তার।
পত্রিকাগুলো করোনা সংবাদে ভরা, ফেসবুকেও আতঙ্ক উত্তেজনা, নভেল করোনার স্পাইকের মতো নানামুখী খবর, দুঃসংবাদ, লকডাউন, শহর ছেড়ে পালানোর হিড়িক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, চিকিৎসা সংকট, গুজব—সব মিলিয়ে উত্তপ্ত সামাজিক মাধ্যম। ফোন রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে বিষণ্ন মনে ঘরের ভেতরেই আবার পায়চারি করে ইখতিয়ার। মনের অস্থিরতা বেড়ে যায় তার, পরিবারের সাথে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থা তৈরি হয়েছে, নীলিমার সাথে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে, ছেলেমেয়ে এবং তাদের মায়ের সাথে যে অনতিক্রম্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে আগেই, আর নীলিমাহীন তাঁর জীবনও যখন অচল হয়ে ওঠে, কোনো কিছুই যখন আর ভালো লাগছিল না। সে গ্রামে চলে আসে, পরপরই দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হলে এখানেই থাকতে শুরু করে। লকডাউনের ফলে একটা অজুহাতও মেলে, আর অনেকটা স্বস্তিও বোধ করে।
পায়চারির মাঝে এক গ্লাস পানি খায়, আবার সিগারেট ধরায়, বেলা প্রায় দশটা বেজে এসেছে, গ্রামের ছায়াঢাকা পথে একটু হেঁটে আসবে কি না ভাবে, আবার ভাবে, বাড়িতেই কিছু একটা কাজ করা যায়, কাজে থাকলে যন্ত্রণামুক্ত থাকা যায়, আর ডাক্তার মানে, কিছুদিন আগে যখন তার ঘুম উবে গিয়েছিল, আর আত্মহননেচ্ছাটা প্রবল হয়ে উঠেছিল, তখন যে সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখায়, সে বলেছে, দৈনন্দিন কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকতে হবে, কিন্তু তার তো তেমন কিছু করার নেই এখন, হাঁটাহাটি তো বিকেলবেলা করবে, ঘরের ভেতরেই পায়চারি করতে থাকে। ক্ষোভে অভিমানে মনটা অতি ফোলানো বেলুনের মতো হয়ে আছে, একটু চাপও আর নিতে পারছে না, নীলিমা এখন অতীত কিন্তু বর্তমান যে গভীর শূন্যতা, একাকিত্ব, অনিশ্চয়তা গ্রাস করছে, তা থেকে কীভাবে রেহাই মিলবে, সে জানে না।
সিগারেট শেষ করে কোমরে গামছা জড়িয়ে, সামনের রুমে খাটের নিচে রাখা দা খানা নিয়ে বাড়ির আঙিনায় জন্মানো আগাছার জঙ্গল সাফ করতে নামে সে, বছরখানেক ধরে এ কাজটাই করে চলেছে। বাড়িটা প্রায় এক একরজুড়ে, পাশাপাশি দুখানা ঘর, অন্য ঘর চাচাতো ভাইয়ের, বাড়ির আরও কয়েক শরিক শহরে সেটেলড, কেউ তেমন আর আসে না, খেয়ালও রাখে না, ফলে আগাছা লতাপাতায় একটা জঙ্গলের মতো হয়ে উঠেছে পুরো বাড়ি।
এ বাড়ির অন্য বাসিন্দা চাচাতো ভাই, সৌদি আরব গিয়ে দোকান কর্মচারীর কাজ করে সামান্য সচ্ছলতা পেলে তার পরিবারও শহরে চলে গিয়েছিল, কিন্তু করোনার লকডাউনের কবলে পড়ে সেখানে কাজ চলে যাওয়ায় দেশে ফিরে পরিবার নিয়ে গ্রামে এসেই আশ্রয় নেয়। অনেক দিন কেউ ছিল না বলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটা জংলা ভুতুড়ে হয়ে উঠেছিল। ইখতিয়ার ঝোপজঙ্গল সাফ করে বাড়ির রাস্তাটা মেরামত করায় ভুতুড়ে ভাব একটু দূর হয়েছে। যখন বাবা-চাচারা ছিলেন, তখন গ্রামের একটা পরিচ্ছন্ন সুন্দর বাড়ি ছিল, এখন অন্য শরিকেরা অনাবাসী, আগের সেই শ্রী নেই।
আগাছা সাফ করতে করতে ঘেমে ওঠে ইখতিয়ার, তাতে একটু ভালো লাগে, যদিও বিষাদে আচ্ছন্ন তার মনে সেটি সামান্যই প্রভাব ফেলতে পারে, শিরীষগাছের ছায়ায় বসে গামছা দিয়ে গেঞ্জির নিচে ঘেমে যাওয়া শরীর মোছে।
সারা জীবন সৎ থেকে টাকার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সে মাতেনি, মোটামুটি খেয়েপরে সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে, মেয়ে বিয়ে দিয়ে বেশি টাকা আর তার হাতে নেই, তবে সব সময় মনে একটা সাহস ছিল, যেকোনোভাবে চলে যাবে জীবন, কিন্তু এখন যেন একটা দুশ্চিন্তা ক্রমে চেপে বসছে। বাদবাকি জীবনটা সে এখানে কী করে কাটাবে।
দুপুরের রান্নার সময়ও হয়ে আসছে, অবশ্য ঝামেলা বেশি করে না ইখতিয়ার। পারেও না। রাইসকুকারে ভাত রাঁধে, শাকসবজি ভর্তা ভাজি ডাল ডিম খেয়ে কাটে তার দিন, কষ্টকর হলেও একমুঠো খেতে পারছে ঠিক, কিন্তু এ বয়সে এভাবে খেয়ে বেশি দিন চলা কঠিন হবে বুঝতে পারলেও আপাতত কিছু করার নেই, যদিও বেঁচে থাকা না থাকা তার কাছে এখন সমান, তা সত্ত্বেও বাঁচতে সে ভালোবাসে, তবে মরতেও ভয় নেই, কিন্তু বাস্তবতা হলো, আত্মহননেচ্ছা যা কিছুদিন থেকেই হঠাৎ হঠাৎ কালো শুশুকের মতো বারবার জেগে ওঠে মনের অতল থেকে, তা থেকে মুক্তি পেতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রতিদিন দুটি ট্যাবলেট খেতে হয় তাকে।
নীলিমার সাথে এক যুগব্যাপী গভীরতর অতল সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মনের ভেতরে যে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়েছে, তা তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে, শূন্যতা, হতাশা, যন্ত্রণা নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এ থেকে কেমন করে মুক্ত হবে, সেই চিন্তায় অস্থির সে, তবে মনে হয়, গ্রামে এসে যেন একটু নিশ্বাস নিতে পারছে, ডুবন্ত কেউ যেমন পানির ওপরে একটুখানি নাক তুলে বাঁচার চেষ্টা করে।
নানা রকমের পাখি ডাকছে, কাঠঠোকরা শালিক দোয়েল কোকিল, একদল বাদামি ফিঙে ভীষণ ঝগড়া করতে করতে ঝোপে-জঙ্গলে হুমড়ি খেয়ে উড়ে যায়, এর মাঝে একটু শীতল হাওয়া এলে দেহকোষ পর্যন্ত জুড়িয়ে যায়। তেষট্টি বছর বয়সেও ইখতিয়ারের শরীর শক্ত আছে, ছোটখাটো পরিশ্রমের কাজ অনায়াসে করতে পারে, কিন্তু মনটা যেন একখানা ভাঙা আয়না, ফ্রেম থেকে দু-এক টুকরো খসে পড়েছে, আলাদা আলাদা টুকরোয় বিম্বিত বিখণ্ডিত নীলিমা, ছেলেমেয়েদের বিষণ্ন মুখ, ব্যথিত অতীত, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মিলিয়ে এক উদ্ভট দৃশ্য।
ঘরে ফিরে বারান্দার চেয়ারে বসে ফ্যান ছেড়ে শরীরটা একটু জুড়িয়ে নেয়, তারপর উঠে হাত ধুয়ে গ্যাসের চুলায় চা বানায়, মুড়ি-চা খেয়ে রান্নার কাজ শুরু করবে, ভাত, মিক্সড সবজি আলু ভর্তা, ডাল আজকের মেনু।
গেঞ্জি খুলে ঘেমে যাওয়া শরীরটা গামছা দিয়ে ভালো করে মুছে নেয়, যাতে শরীরে ঠান্ডা বসে না যায়, কেননা ধূমপানের কারণে বুকে ভালোই একটু ঝামেলা আছে, যা ক্রমে বাড়ছে।
শালিকগুলো জানালার পাশে লিচুগাছের শাখায় কিচিরমিচির শুরু করেছে, প্লাস্টিকের বয়াম খুলে এক মুঠো মুড়ি ছিটিয়ে দেয় ওদের উদ্দেশে আর নিজেও খায়, বাড়িতে নানা রকমের পাখি আসে, কচি কামরাঙা খেতে আসে একঝাঁক টিয়া, বসন্তবাউরি আসে পাকা পেঁপের খোঁজে, ভরদুপুরে কয়েকটা হরিয়াল পুকুর পারের অশ্বত্থগাছের ডালে নাচানাচি করে আর দুটো দোয়েল তো সারা দিন সুর করে গাইতেই থাকে, ঘুঘু আর কাঠঠোকরার ডাক সেই ঐকতানে আলাদা মাত্রা আনে, এর মাঝে পেছনের ডোবার ধারে হেলে পড়া বাতাবিলেবু গাছের ডালে মাছরাঙা, পাড়ে একটা গুজিবক গভীর মগ্নতা নিয়ে বসে থাকে। চারপাশে প্রাণের এ উপস্থিতি ইখতিয়ারের বিবশ মনে একটু একটু সাড়া জাগায়। যদিও নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার গভীর বেদনায় হৃদয় চুপসে গেছে, ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে সে, হতাশা অনিশ্চয়তা চেপে বসেছে ব্ল্যাকআউট রাতের মতো।
হয়তো এভাবে জীবন্মৃত হয়ে বাঁচতে হবে, অথবা মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করতে হবে নিজেকে। জীবনের এমন পরিণতি কিছুতেই মানতে পারে না ইখতিয়ার, তা ছাড়া জীবনের দায়িত্বও তো শেষ হয়নি। ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তাই এখনই স্বেচ্ছায় জীবনের সমাপ্তি টানার কথা ভাবতে পারছে না। এ-ও ভাবে, জীবন তো একদিন এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। সুখ বলো, দুঃখ বলো—চূড়ান্তে অর্থহীন, কিন্তু যে চেতনাসত্তার ধারক সে। তা যে অনন্য, একক, মহাজাগতিক বিশ্বে বিরল, স্বেচ্ছায় তা ধ্বংসের কোনো ইচ্ছা তার নেই। তাই হননের চাপটাকে প্রাণপণে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। যেকোনোভাবেই হোক, সে বেঁচে থাকতে চায়।
বারো বছর আগে যখন সে বুঝতে পারে, স্ত্রীর সঙ্গে শরীর ও মনের সংযোগ সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়েছে, শুধু সংসারের ঘানি টেনে যাওয়াই তার কাজ, তখনই মারাত্মক অসহায়তা তাকে গ্রাস করে। গভীর হতাশায় আচ্ছন্ন হয় মন, ঠিক সে সময়েই নীলিমার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে দশ বছর ধরে তারা একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করলেও কখনো এমনটা ঘটবে কেউ ভাবেনি, অবশ্য সহকর্মী হিসেবে সুসম্পর্ক ছিল। একে অন্যকে পছন্দও করত, কিন্তু নীলিমার সাথে এমন জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে, তা কখনো কল্পনাও করেনি। নীলিমাও এর আগে কখনো এমনটা চিন্তা করেনি। সিনিয়র হিসেবে সমীহ সম্মান করত। নিত্য দেখা হওয়ার দশ বছর পর হঠাৎ যেন দুজন দুজনকে প্রিয়তম মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে বাঁধভাঙা আবেগের বন্যায় ভেসে যায়।
এ বেলার রান্নায় রাতও চলে যাবে ইখতিয়ারের, কিছু ভাত রেখে দেবে কাল সকালে খাওয়ার জন্য। এভাবে খেয়ে তার ওয়েটলস বেড়েই চলেছে। রান্না করার লোক গ্রামে পাওয়া কঠিন, চড়ামূল্যে পাওয়া গেলেও সে রান্না খেতে পারবে না। সে বরং নিজ হাতে যা করে, তাতে পেট না ভরলেও অন্তত ভক্তি করে খেতে পারে, কিন্তু এভাবে কত দিন চলতে পারবে সে?
গোসল করে খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ইখতিয়ার।
প্রচণ্ড গরম, ফ্যানের বাতাসও গরম, মোবাইলে তাপমাত্রা দেখে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু নীলিমার চিন্তা তার পিছু ছাড়ে না। অফিসে একসাথে বসে দুজনের বাসা থেকে আনা খাবার ভাগ করে খেত। আশপাশে অন্য সহকর্মীরা না থাকলে মুখে তুলে খাওয়াত নীলিমা। তাতে সে আনন্দ পেত। বাসা থেকে নিজ হাতে বানানো সুস্বাদু সব নাশতাও নিয়ে আসত প্রায়ই। নিষেধ করলে বলত, তোমাকে ছাড়া যে খেতে পারি না। তুমি না খেলে আমার খাওয়া হয় না বন্ধু। অফিস ছুটির দিনেও তাদের দেখা হওয়া বন্ধ থাকত না। তখনো সে কোনো না কোনো খাবার নিয়েই আসত। এসব মনে পড়তেই হাত-পা সোজা করে ছড়িয়ে দিয়ে চিত হয়ে মড়ার মতো পড়ে থাকে ইখতিয়ার। বুকের ভেতর যন্ত্রণা, সে ভাবতেই পারে না। নীলিমা কেমন করে তাকে ছাড়া থাকে এখন? এক দিন এক বেলা দেখা না হলে সে পাগল হয়ে যেত, লাজলজ্জা ফেলে ছুটে আসত বাসা পর্যন্ত, কিন্তু ইখতিয়ারের অফিস যাওয়া বন্ধ হতেই কেমন যেন সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। যদিও প্রথম প্রথম অফিসের পর দেখা করত বাইরে, সময় কাটাতে চাইত একসাথে। কিন্তু অফিসের সময় কোনো যোগাযোগ করত না। পারতপক্ষে ফোন ধরত না, কিন্তু দেখা হলে তার মুখের সেই মধুর হাসি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেত ইখতিয়ারের। কোনো অভিযোগ আর থাকত না, বিয়ের কথা তুললে বলত, বছরখানেক সময় লাগবে। মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলেই সে ফ্রি হয়ে যাবে, না হয় এখন কিছু করলে তার সেন্টিমেন্টাল মেয়ে যদি খারাপ কিছু ঘটিয়ে বসে, সেই ভয় তাকে তাড়া করত। কিন্তু ইখতিয়ার তাকে তাগাদা দিতে দিতে কেমন করে প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেল। আর ক্রমে ইখতিয়ার টের পেতে থাকে, একটু একটু করে নীলিমা যেন তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, নীলিমার ভালোবাসার রং ফিকে হয়ে আসতে থাকে। শেষ দিকে বলতে শুরু করে সে, আমাদের ভালোবাসা চিরকাল এভাবেই অটুট থাকবে। তোমার কাছে যাই বা না যাই, কাছে থাকি কিংবা দূরে থাকি—তুমিই আমার ভালোবাসার মানুষ, আমার হৃদয়ের রাজা।
নীলিমাকে সে এক শ ভাগ বিশ্বাস করত, তাই তার কথার ইঙ্গিত বুঝতে কিছুটা সময় লাগে ইখতিয়ারের, পরে খুব রেগে যেত, নীলিমা চুপ করে থাকত। তবে মুখে বলে যেত, ইখতিয়ারকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে সে, কিন্তু এখনই বিয়ে করা সম্ভব না।
এসবে হতাশ হয়ে পড়ে ইখতিয়ার, দেখা করতে যায় না। আর না গেলেও নীলিমা তেমন আর অনুযোগও করে না, অথচ এমন দিন ছিল, দেখা না হলে ভয়ানক খেপে যেত নীলিমা। যেকোনোভাবেই হোক, আঠার মতো তার সাথে লেগে থাকতে চাইত। এমনকি অনেক রাত হয়ে গেলেও বাসায় যেতে মন চাইত না। এমনকি কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে আসত, তখন বাসার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসত ইখতিয়ার। এসব নিয়ে তার বাসায় ঝামেলাও হতো, স্বামী রাগারাগি করত, এমনকি তার ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত জেনে গিয়েছিল, কিন্তু সে ফিরতে পারেনি। অথচ অবসর নিয়ে চোখের আড়াল হতেই কিছুদিনেই কেমন দূরের হয়ে গেল নীলিমা। এমনটা কেন হলো, তার কারণ খুঁজে পায় না ইখতিয়ার। কেননা কিছুদিন আগেও সে ছিল নীলিমার সব, নীলিমা তাকে বলত, বিয়ে করার পর তারা কীভাবে সংসার সাজাবে। দুজনে কীভাবে থাকবে, ধবধবে সাদা বিছানায় ইখতিয়ারকে জড়িয়ে ধরে কীভাবে ঘুমাবে—সবকিছু ভাবত সে। কিন্তু একটু চোখের আড়াল হতেই সে এত দ্রুত পাল্টে গেল!
সম্পর্কের প্রথম দিকে এতটা ঘনিষ্ঠ হতে চায়নি ইখতিয়ার। কারণ, পরকীয়া সে করবে না। এটা অনৈতিক, কাপুরুষতা। এসবে সে নেই। কিন্তু নীলিমা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল, এটা পরকীয়া নয়। এটা প্রেম, এটা ভালোবাসা, ইখতিয়ারকে ছাড়া সে বাঁচবে না। তারা বিয়ে করে ঘর বাঁধবে। এসব কি নীলিমার অভিনয় ছিল? মানুষ এত নিখুঁত অভিনয় করতে পারে!
একটু শুয়ে থেকে আবার বিছানা ছেড়ে উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘরের ভেতর পায়চারি শুরু করে। সাগরে লাস্যময় হাঙরের মতো নীলিমার মুখ ভেসে ওঠে ভাবনায় আর একটা কষ্ট, ঘৃণা, আক্রোশ তাকে গ্রাস করে। আজ তার জীবন কক্ষচ্যুত হওয়ার উপক্রম, অজানা আতঙ্কে দম আটকে আসতে চায়, অথচ সাধারণ সুখ-দুঃখের একটা জীবন ছিল তার। নীলিমার সাহচর্যে সেই তুচ্ছ জীবনটা কী মহার্ঘই-না হয়ে উঠেছিল, স্বপ্নের মতো, কিন্তু হঠাৎ যেন স্বর্গ থেকে পতন!
ব্যথাবিবশ মন নিয়ে আবার বিছানায় বসে পড়ে ইখতিয়ার। নিশ্বাস ঘন হয়ে ওঠে, দাঁতে দাঁতে চাপ খেয়ে চোয়াল শক্ত হয়, ইচ্ছে জাগে চরম একটা প্রতিশোধ নেওয়ার অথচ তা পারবে না। সে যে ক্ষমায় বিশ্বাসী, তার পরিণতি যা হোক নীলিমার সাথে ভালোমন্দ কোনো সম্পর্কই রাখবে না। কোনো দিন কথাও বলবে না, মুখও দেখাবে না, এতটুকুই সে পারবে।
বিছানায় ছটফট করতে করতে তপ্ত দুপুর পার হয়ে যায়। একটু ঝিমুনির মতো আসে, তার মধ্যেই শাড়ি পরা নীলিমাকে দেখে, দুজনে হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাচ্ছে রমনার সবুজে। সব সময়ই তারা হাত ধরাধরি করে হাঁটত। কখন যে একজনের হাতটা অন্যজনের হাতের ভেতর চলে যেত, টের পেত না। যখন সচেতনভাবে হাত ধরা এড়াতে চাইত, তখনো হঠাৎ আবিষ্কার করত, কখন যে একে অন্যের হাতটা ধরে ফেলেছে, টেরও পায়নি। ওর হাতটা ধরলেই অপার ভালো লাগা, এক অন্য রকম সুখানুভূতি হতো। অফিস থেকে বের হয়েই হাত ধরে হাঁটত তারা, সেই অনুভূতি কোনো দিন ভুলবার নয়।
কিন্তু যেভাবে নীলিমা দূরে সরে গেল, ভুলে গেল, তাতে ঘৃণায় মন রি রি করে ওঠে। হয়তো সবই ছিল ওর পরিকল্পিত, অভিনয়, ছলচাতুরী। দশটা বছর তার জীবনটাকে দখল করে নিয়ে নিজের ইচ্ছেপূরণের খেলা।
ইখতিয়ারের বুকের ভেতর থেকে শীতল জলের তোড় উঠে আসতে চায়। মনে হয় চিৎকার করে কাঁদে, কিন্তু গলার কাছে আটকে যায়, দম বন্ধ হয়ে আসে যেন, বমির মতো উগরে ওঠা অদৃশ্য চাপে নাকমুখ ফেটে পড়তে চায়। জোর করে বালিশে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ পড়ে থাকে সে।
পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে বের হয় ইখতিয়ার। বছরখানেক ধরে গ্রামে একা ইখতিয়ারের উপস্থিতি মানুষের মনে নানা কৌতূহল জন্ম দিয়েছে। পথেঘাটে কারও সাথে দেখা হলে বাড়িতে একা থাকার কারণ জানতে চায়, তখন সে শহরের দূষণযুক্ত পরিবেশের অজুহাত দেখায়, বাড়িঘরও দেখাশোনা দরকার ইত্যাদি কথা বলে, অনেকেই স্বাগত জানায় এ জন্য যে বাবা-মায়ের কবর এখানে, তার যত্ন নেওয়া, পিতৃপুরুষের ভিটেয় বাতি দেওয়া অবশ্যকর্তব্য তার, সে বিবেচনায় ভালো হয়েছে, তবে একা একা কষ্ট না করে বউকে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয়। ইখতিয়ার তখন, দেখি কী করি...ছেলেকে একা রেখে আসবে কী করে...ইত্যাদি বলে পাশ কাটিয়ে যায়। যদিও বিকেলে হাঁটতে বের হলে অথবা দোকানে গেলে তখনই শুধু দেখা হয় কারো সাথে, এ ছাড়া অধিকাংশ সময়টা বাড়িতেই কাটে, যেন কিছুটা লুকিয়েই থাকতে চায় সে।
বড় রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে হাঁটতে থাকে ইখতিয়ার, পথে নানা জনের সাথে দেখা হয়, তারা কুশল বিনিময় করতে চায়, কিন্তু ভারী বিষণ্নতায় তার মন ডুবে আছে, কথা বলতে ইচ্ছে হয় না, মানুষের মুখোমুখি হতে ভালো লাগে না, তাই রাস্তা ছেড়ে মাঠের পথ ধরে।
বৈশাখী জোয়ারে আসা পানি নেমে গিয়ে মাঠের কান্দাগুলো শুকিয়ে উঠেছে, হাঁটতে হাঁটতে মাঠ পেরিয়ে বড় খালের ধারে এসে বুনো ঘাসের জমিনে বসে আরাম করে, জায়গাটা বেশ ফাঁকা, খালের ওপারেও বিশাল মাঠ, কাছাকাছি বাড়িঘর নেই, নির্জনতা ঘন হয়ে জমাট বেঁধে আছে যেন, সেই নির্জনতায় ডুবে যায় সে।
বাহ্যত যা-ই করুক, মনের ভেতরে তার অনুসন্ধান চলে, কীভাবে বাদবাকি জীবন কাটাবে সে, যে যন্ত্রণা তাকে কুরে খাচ্ছে, কীভাবে উদ্ধার মিলবে তা থেকে, পরিবারের সাথেই-বা সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে জানে না!
নীলিমার সাথে সম্পর্কটা টের পাওয়ার পর তার স্ত্রী ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, প্রচণ্ড ঝামেলা হয়, ভাইবোনদের ডেকে এনে নালিশ করে, সালিস বৈঠক বসায়, কিন্তু ইখতিয়ার সেসব পাত্তা দেয়নি তখন। তার মনে হতো, নীলিমার জন্য, তার ভালোবাসার জন্য সবকিছু জলাঞ্জলি দিতে পারবে সে, তখন মনে হয়েছিল, ভালোবাসার কাছে সবকিছুই তুচ্ছ, সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সে নীলিমাকেই চায়। তবু ভেতরে ভেতরে আত্মদ্বন্দ্বে বিক্ষত হয় সে, কিন্তু নীলিমার সাথে সম্পর্কের ইতি টানার কথা ভাবতেই পারেনি। একটা স্বপ্নের ঘোরের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল সে, যেখানে সে আর নীলিমা ছাড়া কেউ ছিল না।
এখন সে কীভাবে বাঁচবে ভেবে কূল পায় না। মাঝে মাঝে ভাবতে চায়, তার জীবন কি উদ্দেশ্যবিহীন হয়ে গেল? পরিসমাপ্তি ঘনিয়ে এল? তার করার কি কিছু নেই? উত্তর মেলে না অথবা যে উত্তর পায়, তাতে সমাধান মেলে না।
সাধারণ লেখাপড়া করে, বেঁচে থাকার জন্য একটা পেশা বেছে নিয়ে যেটুকু যা করেছে, তাতেই সন্তুষ্ট ছিল সে। সততার সাথে সাধারণ একটা জীবন যাপন করতে পেরেই আপাতসুখী ছিল সে। মনে মনে ভাবত, দেশের অধিকাংশ মানুষের চেয়ে তার জীবন যে ভালোভাবে চলছে, এ-ই যথেষ্ট, এর বেশি প্রত্যাশা ছিল না, শুধু অতৃপ্ত ছিল দাম্পত্য জীবন নিয়ে, সেই অতৃপ্তির ছিদ্রপথে নতুন বাসনার সাপ ঢুকে যে যন্ত্রণায় আজ জর্জরিত করে তুলেছে তাকে, তার শেষ কোথায়, সে জানে না। হয় এখানেই চিরসমাপ্তি, আধপোড়া কাগজের মতো ছুড়ে ফেলে দিতে হবে, না হয় বাঁচতে হলে নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে, কিন্তু কোন পথ, সেই পথের হদিস কীভাবে পাবে, সে জানে না।
চারদিকে মায়াবী জাদুর মতো সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবুজ গ্রামগুলো ঝাপসা হয়ে উঠছে, একদল শামুকভাঙা পাখি তাদের লম্বা পা পেছনের দিকে ঝুলিয়ে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে আস্তানার খোঁজে, খালের পানি কালো হয়ে উঠছে, ইখতিয়ার পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরায় আর ভাবে, এই গভীর নির্জনতায় বিলীন হয়ে যেতে পারলেই ভালো হতো। সন্ধ্যা আরও ঘনিয়ে এলে সেখান থেকে উঠে বাড়ির পথ ধরে ইখতিয়ার।
বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে চা বানায়, বিস্কিট খায়, মোবাইলে ইউটিউব থেকে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে শুনতে বারান্দার সোফায় বসে বিশ্রাম নেয়। আলো নিভিয়ে খোলা জানালায় বাইরের অন্ধকারে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গভীর বিষণ্নতা গ্রাস করে তাকে।
সারাক্ষণ কাঁটার মতো বিঁধতে থাকা অসংখ্য চিন্তা রাতের ওড়নায় গা ঢাকা দিয়ে আবার ফিরে আসে, ঝিমধরা লাটিমের মতো ঝিঁঝিপোকার তান। কিছু জোনাকির এলোমেলো উড়ে যাওয়া, বুকের ভেতরে গভীর বিষাদ, এর মাঝে নীলিমা ঠিক ফিরে আসে, যদিও ইখতিয়ার নিশ্চিত, ভুলতে না পারলেও হয়তো ক্ষমা করতে পারবে সে নীলিমাকে। ভীরুকে কী দণ্ড দেবে সে? নীলিমা ভালোই জানে, অমৃত ত্যাগ করেছে সে, আমাকেও বঞ্চিত করেছে। দুজনের ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গিয়েছিল, আমাদের ছেড়েও হয়তো ভালো থাকতে পারত ওরা, কিন্তু আমাদের জীবনে হতো গভীর গভীর এক পাওয়া। যার সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম, পরম প্রেম, যা পেয়ে অর্ধমৃত আমাদের আত্মা জেগে উঠেছিল। পৃথিবীর সব কলুষ গিয়েছিল মুছে। ক্ষমা ও ভালোবাসায় হৃদয় পূর্ণ হয়েছিল, প্রকৃতির সাথে আমরা মিশে গিয়েছিলাম, অফুরন্ত ভালো লাগা, অসীম প্রাণশক্তিতে ভরপুর মন, সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেল...
এখন মনে হয়, ডুবে যাচ্ছে সে গভীর গভীরতর হিমশীতল অন্ধকারে, হয়তো আর কোনো দিন জেগে উঠবে না সে...।
সকালে ঘুম থেকে উঠে, খোলা জানালার বাইরে চোখ পড়তেই দেখে সাদা মশারির মতো কুয়াশাঘেরা চারপাশ, যদিও গ্রীষ্মে এমনটা দেখা যায় না প্রায়, কৌতূহলে দরজা খুলে উঠোনে এসে দাঁড়ায় ইখতিয়ার। কোনো দিকে বেশি দূর দেখা যায় না, মনের মধ্যে শিরশির করে ওঠে। কয়েক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়ে, থেকে ঘরে ফিরে যেতে যেতে স্মৃতি হাতড়ায়। এমন কখনো কি দেখেছে আগে? মনে পড়ে না। যদিও পঁয়ত্রিশ বছর গ্রামছাড়া, কৈশোরে বা যৌবনে—কখনো এমনটা চোখে পড়েনি, কাঠফাটা গ্রীষ্মে প্রকৃতির এমন আচরণ অস্বাভাবিকই মনে হয় তার কাছে।
ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে পেছনের রুমে টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢেলে এক গ্লাস পানি খেয়ে গম্ভীর মুখে পায়চারি করে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত হালকা-পাতলা লম্বা, দুই সন্তানের জনক ইখতিয়ার।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পূর্বাভাস, করোনা অতিমারি অথবা নিজের জীবনের নৈরাশ্যকর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার এমন অশুভ আশঙ্কা হচ্ছে, তা-ও বুঝতে পারছে সে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা ইখতিয়ার আহমেদ, যে কিনা চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পর অভাবিত এ জীবন বেছে নিয়েছে এবং হয়তো একটি মর্মান্তিক পরিণতি নেমে আসছে তার জীবনে।
গ্রামে থাকার ইচ্ছা একসময় মনে সুপ্ত থাকলেও, নীলিমার সাথে সম্পর্কের পর সেই ইচ্ছা মন থেকে মুছে ফেলেছিল ইখতিয়ার। কারণ, নীলিমার চাকরি শহরে, তাকে বিয়ে করলে আর গ্রামে ফেরা সম্ভব হতো না, কিন্তু নীলিমার সাথে তার থাকা হলো না, বরং ছাড়তে হলো পরিবার। এখন গ্রামের বাড়িতে তার একার বসবাস।
প্রক্ষালন সেরে এসে পেছনের রুমের কোণে বসানো গ্যাসের চুলায় পেঁয়াজ-মরিচ মিশিয়ে ডিম ভেজে নিয়ে পান্তাভাত খেতে খেতে জানালায় বসা দুটো শালিক দেখে, পাশের লিচুগাছের ডালে আরও কয়েকটা, জানালার পাশে সবুজ ঝোপের ভেতর কালো-খয়েরি-সাদায় মেলানো ডাহুকটাও এসেছে, ঘরের পেছনের মজা ডোবার দিকে গুইসাপগুলো এখন চোখে না পড়লেও হয়তো আশপাশেই আছে সে জানে, ঘুম ভেঙে প্রতিদিন প্রথমেই দেখা হয় ওদের সাথে। খাওয়া শেষ করে জানালা দিয়ে একমুঠো ভাত ছুড়ে দেয় সে শালিকগুলোর উদ্দেশে। কড়া লিকার চা নিয়ে বেডরুমে এসে খাটে বসে কাপে চুমুক দিতে দিতে সেলফোনে নেটে সংবাদ পড়ায় মনোযোগ দেয়, চা শেষে খালি কাপটি পাশের ছোট টেবিলে রেখে সিগারেট ধরায়। রুমের জানালা খোলা, সব সময় খোলাই থাকে, কুয়াশার ভেতর গাছপালা ক্রমে দৃশ্যমান, প্রকৃতির কুয়াশাবিষণ্নতা শুষে নিয়েছে সূর্য, দূরে গাছগাছালির মাথায় পাগলা বুড়ির উড়ুউড়ু সাদা চুলের মতো লেগে আছে কিছুটা।
আধা পাকা ঘরের দেয়ালগুলো রংচটা, মেটে তেল মাজা কাঠের পাটাতন এখনো মজবুত, ওপরে একটা বেডরুমও আছে, দক্ষিণে জানালা, বোনেরা থাকত, পোকামাকড়ের দখলে চলে গিয়েছিল, লোক দিয়ে সব পরিচ্ছন্ন করেছে, এখন ভালোই বাসযোগ্য হয়েছে। দেশভাগের সময় হিন্দুদের থেকে সস্তায় বাবার কেনা কাঠের পুরোনো কিছু আসবাব যা টিকে আছে, সেগুলো রিপেয়ার করে কাজ চলার মতো হয়ে গেছে, শুধু একটা অ্যাটাচ্ড বাথরুম বানিয়ে ও এলপি গ্যাসে রান্নার আয়োজন করে একার সংসার শুরু হয়েছে তার।
পত্রিকাগুলো করোনা সংবাদে ভরা, ফেসবুকেও আতঙ্ক উত্তেজনা, নভেল করোনার স্পাইকের মতো নানামুখী খবর, দুঃসংবাদ, লকডাউন, শহর ছেড়ে পালানোর হিড়িক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, চিকিৎসা সংকট, গুজব—সব মিলিয়ে উত্তপ্ত সামাজিক মাধ্যম। ফোন রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে বিষণ্ন মনে ঘরের ভেতরেই আবার পায়চারি করে ইখতিয়ার। মনের অস্থিরতা বেড়ে যায় তার, পরিবারের সাথে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থা তৈরি হয়েছে, নীলিমার সাথে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে, ছেলেমেয়ে এবং তাদের মায়ের সাথে যে অনতিক্রম্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে আগেই, আর নীলিমাহীন তাঁর জীবনও যখন অচল হয়ে ওঠে, কোনো কিছুই যখন আর ভালো লাগছিল না। সে গ্রামে চলে আসে, পরপরই দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হলে এখানেই থাকতে শুরু করে। লকডাউনের ফলে একটা অজুহাতও মেলে, আর অনেকটা স্বস্তিও বোধ করে।
পায়চারির মাঝে এক গ্লাস পানি খায়, আবার সিগারেট ধরায়, বেলা প্রায় দশটা বেজে এসেছে, গ্রামের ছায়াঢাকা পথে একটু হেঁটে আসবে কি না ভাবে, আবার ভাবে, বাড়িতেই কিছু একটা কাজ করা যায়, কাজে থাকলে যন্ত্রণামুক্ত থাকা যায়, আর ডাক্তার মানে, কিছুদিন আগে যখন তার ঘুম উবে গিয়েছিল, আর আত্মহননেচ্ছাটা প্রবল হয়ে উঠেছিল, তখন যে সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখায়, সে বলেছে, দৈনন্দিন কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকতে হবে, কিন্তু তার তো তেমন কিছু করার নেই এখন, হাঁটাহাটি তো বিকেলবেলা করবে, ঘরের ভেতরেই পায়চারি করতে থাকে। ক্ষোভে অভিমানে মনটা অতি ফোলানো বেলুনের মতো হয়ে আছে, একটু চাপও আর নিতে পারছে না, নীলিমা এখন অতীত কিন্তু বর্তমান যে গভীর শূন্যতা, একাকিত্ব, অনিশ্চয়তা গ্রাস করছে, তা থেকে কীভাবে রেহাই মিলবে, সে জানে না।
সিগারেট শেষ করে কোমরে গামছা জড়িয়ে, সামনের রুমে খাটের নিচে রাখা দা খানা নিয়ে বাড়ির আঙিনায় জন্মানো আগাছার জঙ্গল সাফ করতে নামে সে, বছরখানেক ধরে এ কাজটাই করে চলেছে। বাড়িটা প্রায় এক একরজুড়ে, পাশাপাশি দুখানা ঘর, অন্য ঘর চাচাতো ভাইয়ের, বাড়ির আরও কয়েক শরিক শহরে সেটেলড, কেউ তেমন আর আসে না, খেয়ালও রাখে না, ফলে আগাছা লতাপাতায় একটা জঙ্গলের মতো হয়ে উঠেছে পুরো বাড়ি।
এ বাড়ির অন্য বাসিন্দা চাচাতো ভাই, সৌদি আরব গিয়ে দোকান কর্মচারীর কাজ করে সামান্য সচ্ছলতা পেলে তার পরিবারও শহরে চলে গিয়েছিল, কিন্তু করোনার লকডাউনের কবলে পড়ে সেখানে কাজ চলে যাওয়ায় দেশে ফিরে পরিবার নিয়ে গ্রামে এসেই আশ্রয় নেয়। অনেক দিন কেউ ছিল না বলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটা জংলা ভুতুড়ে হয়ে উঠেছিল। ইখতিয়ার ঝোপজঙ্গল সাফ করে বাড়ির রাস্তাটা মেরামত করায় ভুতুড়ে ভাব একটু দূর হয়েছে। যখন বাবা-চাচারা ছিলেন, তখন গ্রামের একটা পরিচ্ছন্ন সুন্দর বাড়ি ছিল, এখন অন্য শরিকেরা অনাবাসী, আগের সেই শ্রী নেই।
আগাছা সাফ করতে করতে ঘেমে ওঠে ইখতিয়ার, তাতে একটু ভালো লাগে, যদিও বিষাদে আচ্ছন্ন তার মনে সেটি সামান্যই প্রভাব ফেলতে পারে, শিরীষগাছের ছায়ায় বসে গামছা দিয়ে গেঞ্জির নিচে ঘেমে যাওয়া শরীর মোছে।
সারা জীবন সৎ থেকে টাকার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সে মাতেনি, মোটামুটি খেয়েপরে সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে, মেয়ে বিয়ে দিয়ে বেশি টাকা আর তার হাতে নেই, তবে সব সময় মনে একটা সাহস ছিল, যেকোনোভাবে চলে যাবে জীবন, কিন্তু এখন যেন একটা দুশ্চিন্তা ক্রমে চেপে বসছে। বাদবাকি জীবনটা সে এখানে কী করে কাটাবে।
দুপুরের রান্নার সময়ও হয়ে আসছে, অবশ্য ঝামেলা বেশি করে না ইখতিয়ার। পারেও না। রাইসকুকারে ভাত রাঁধে, শাকসবজি ভর্তা ভাজি ডাল ডিম খেয়ে কাটে তার দিন, কষ্টকর হলেও একমুঠো খেতে পারছে ঠিক, কিন্তু এ বয়সে এভাবে খেয়ে বেশি দিন চলা কঠিন হবে বুঝতে পারলেও আপাতত কিছু করার নেই, যদিও বেঁচে থাকা না থাকা তার কাছে এখন সমান, তা সত্ত্বেও বাঁচতে সে ভালোবাসে, তবে মরতেও ভয় নেই, কিন্তু বাস্তবতা হলো, আত্মহননেচ্ছা যা কিছুদিন থেকেই হঠাৎ হঠাৎ কালো শুশুকের মতো বারবার জেগে ওঠে মনের অতল থেকে, তা থেকে মুক্তি পেতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রতিদিন দুটি ট্যাবলেট খেতে হয় তাকে।
নীলিমার সাথে এক যুগব্যাপী গভীরতর অতল সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মনের ভেতরে যে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়েছে, তা তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে, শূন্যতা, হতাশা, যন্ত্রণা নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এ থেকে কেমন করে মুক্ত হবে, সেই চিন্তায় অস্থির সে, তবে মনে হয়, গ্রামে এসে যেন একটু নিশ্বাস নিতে পারছে, ডুবন্ত কেউ যেমন পানির ওপরে একটুখানি নাক তুলে বাঁচার চেষ্টা করে।
নানা রকমের পাখি ডাকছে, কাঠঠোকরা শালিক দোয়েল কোকিল, একদল বাদামি ফিঙে ভীষণ ঝগড়া করতে করতে ঝোপে-জঙ্গলে হুমড়ি খেয়ে উড়ে যায়, এর মাঝে একটু শীতল হাওয়া এলে দেহকোষ পর্যন্ত জুড়িয়ে যায়। তেষট্টি বছর বয়সেও ইখতিয়ারের শরীর শক্ত আছে, ছোটখাটো পরিশ্রমের কাজ অনায়াসে করতে পারে, কিন্তু মনটা যেন একখানা ভাঙা আয়না, ফ্রেম থেকে দু-এক টুকরো খসে পড়েছে, আলাদা আলাদা টুকরোয় বিম্বিত বিখণ্ডিত নীলিমা, ছেলেমেয়েদের বিষণ্ন মুখ, ব্যথিত অতীত, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মিলিয়ে এক উদ্ভট দৃশ্য।
ঘরে ফিরে বারান্দার চেয়ারে বসে ফ্যান ছেড়ে শরীরটা একটু জুড়িয়ে নেয়, তারপর উঠে হাত ধুয়ে গ্যাসের চুলায় চা বানায়, মুড়ি-চা খেয়ে রান্নার কাজ শুরু করবে, ভাত, মিক্সড সবজি আলু ভর্তা, ডাল আজকের মেনু।
গেঞ্জি খুলে ঘেমে যাওয়া শরীরটা গামছা দিয়ে ভালো করে মুছে নেয়, যাতে শরীরে ঠান্ডা বসে না যায়, কেননা ধূমপানের কারণে বুকে ভালোই একটু ঝামেলা আছে, যা ক্রমে বাড়ছে।
শালিকগুলো জানালার পাশে লিচুগাছের শাখায় কিচিরমিচির শুরু করেছে, প্লাস্টিকের বয়াম খুলে এক মুঠো মুড়ি ছিটিয়ে দেয় ওদের উদ্দেশে আর নিজেও খায়, বাড়িতে নানা রকমের পাখি আসে, কচি কামরাঙা খেতে আসে একঝাঁক টিয়া, বসন্তবাউরি আসে পাকা পেঁপের খোঁজে, ভরদুপুরে কয়েকটা হরিয়াল পুকুর পারের অশ্বত্থগাছের ডালে নাচানাচি করে আর দুটো দোয়েল তো সারা দিন সুর করে গাইতেই থাকে, ঘুঘু আর কাঠঠোকরার ডাক সেই ঐকতানে আলাদা মাত্রা আনে, এর মাঝে পেছনের ডোবার ধারে হেলে পড়া বাতাবিলেবু গাছের ডালে মাছরাঙা, পাড়ে একটা গুজিবক গভীর মগ্নতা নিয়ে বসে থাকে। চারপাশে প্রাণের এ উপস্থিতি ইখতিয়ারের বিবশ মনে একটু একটু সাড়া জাগায়। যদিও নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার গভীর বেদনায় হৃদয় চুপসে গেছে, ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে সে, হতাশা অনিশ্চয়তা চেপে বসেছে ব্ল্যাকআউট রাতের মতো।
হয়তো এভাবে জীবন্মৃত হয়ে বাঁচতে হবে, অথবা মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করতে হবে নিজেকে। জীবনের এমন পরিণতি কিছুতেই মানতে পারে না ইখতিয়ার, তা ছাড়া জীবনের দায়িত্বও তো শেষ হয়নি। ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তাই এখনই স্বেচ্ছায় জীবনের সমাপ্তি টানার কথা ভাবতে পারছে না। এ-ও ভাবে, জীবন তো একদিন এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। সুখ বলো, দুঃখ বলো—চূড়ান্তে অর্থহীন, কিন্তু যে চেতনাসত্তার ধারক সে। তা যে অনন্য, একক, মহাজাগতিক বিশ্বে বিরল, স্বেচ্ছায় তা ধ্বংসের কোনো ইচ্ছা তার নেই। তাই হননের চাপটাকে প্রাণপণে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। যেকোনোভাবেই হোক, সে বেঁচে থাকতে চায়।
বারো বছর আগে যখন সে বুঝতে পারে, স্ত্রীর সঙ্গে শরীর ও মনের সংযোগ সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়েছে, শুধু সংসারের ঘানি টেনে যাওয়াই তার কাজ, তখনই মারাত্মক অসহায়তা তাকে গ্রাস করে। গভীর হতাশায় আচ্ছন্ন হয় মন, ঠিক সে সময়েই নীলিমার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে দশ বছর ধরে তারা একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করলেও কখনো এমনটা ঘটবে কেউ ভাবেনি, অবশ্য সহকর্মী হিসেবে সুসম্পর্ক ছিল। একে অন্যকে পছন্দও করত, কিন্তু নীলিমার সাথে এমন জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে, তা কখনো কল্পনাও করেনি। নীলিমাও এর আগে কখনো এমনটা চিন্তা করেনি। সিনিয়র হিসেবে সমীহ সম্মান করত। নিত্য দেখা হওয়ার দশ বছর পর হঠাৎ যেন দুজন দুজনকে প্রিয়তম মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে বাঁধভাঙা আবেগের বন্যায় ভেসে যায়।
এ বেলার রান্নায় রাতও চলে যাবে ইখতিয়ারের, কিছু ভাত রেখে দেবে কাল সকালে খাওয়ার জন্য। এভাবে খেয়ে তার ওয়েটলস বেড়েই চলেছে। রান্না করার লোক গ্রামে পাওয়া কঠিন, চড়ামূল্যে পাওয়া গেলেও সে রান্না খেতে পারবে না। সে বরং নিজ হাতে যা করে, তাতে পেট না ভরলেও অন্তত ভক্তি করে খেতে পারে, কিন্তু এভাবে কত দিন চলতে পারবে সে?
গোসল করে খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ইখতিয়ার।
প্রচণ্ড গরম, ফ্যানের বাতাসও গরম, মোবাইলে তাপমাত্রা দেখে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু নীলিমার চিন্তা তার পিছু ছাড়ে না। অফিসে একসাথে বসে দুজনের বাসা থেকে আনা খাবার ভাগ করে খেত। আশপাশে অন্য সহকর্মীরা না থাকলে মুখে তুলে খাওয়াত নীলিমা। তাতে সে আনন্দ পেত। বাসা থেকে নিজ হাতে বানানো সুস্বাদু সব নাশতাও নিয়ে আসত প্রায়ই। নিষেধ করলে বলত, তোমাকে ছাড়া যে খেতে পারি না। তুমি না খেলে আমার খাওয়া হয় না বন্ধু। অফিস ছুটির দিনেও তাদের দেখা হওয়া বন্ধ থাকত না। তখনো সে কোনো না কোনো খাবার নিয়েই আসত। এসব মনে পড়তেই হাত-পা সোজা করে ছড়িয়ে দিয়ে চিত হয়ে মড়ার মতো পড়ে থাকে ইখতিয়ার। বুকের ভেতর যন্ত্রণা, সে ভাবতেই পারে না। নীলিমা কেমন করে তাকে ছাড়া থাকে এখন? এক দিন এক বেলা দেখা না হলে সে পাগল হয়ে যেত, লাজলজ্জা ফেলে ছুটে আসত বাসা পর্যন্ত, কিন্তু ইখতিয়ারের অফিস যাওয়া বন্ধ হতেই কেমন যেন সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। যদিও প্রথম প্রথম অফিসের পর দেখা করত বাইরে, সময় কাটাতে চাইত একসাথে। কিন্তু অফিসের সময় কোনো যোগাযোগ করত না। পারতপক্ষে ফোন ধরত না, কিন্তু দেখা হলে তার মুখের সেই মধুর হাসি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেত ইখতিয়ারের। কোনো অভিযোগ আর থাকত না, বিয়ের কথা তুললে বলত, বছরখানেক সময় লাগবে। মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলেই সে ফ্রি হয়ে যাবে, না হয় এখন কিছু করলে তার সেন্টিমেন্টাল মেয়ে যদি খারাপ কিছু ঘটিয়ে বসে, সেই ভয় তাকে তাড়া করত। কিন্তু ইখতিয়ার তাকে তাগাদা দিতে দিতে কেমন করে প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেল। আর ক্রমে ইখতিয়ার টের পেতে থাকে, একটু একটু করে নীলিমা যেন তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, নীলিমার ভালোবাসার রং ফিকে হয়ে আসতে থাকে। শেষ দিকে বলতে শুরু করে সে, আমাদের ভালোবাসা চিরকাল এভাবেই অটুট থাকবে। তোমার কাছে যাই বা না যাই, কাছে থাকি কিংবা দূরে থাকি—তুমিই আমার ভালোবাসার মানুষ, আমার হৃদয়ের রাজা।
নীলিমাকে সে এক শ ভাগ বিশ্বাস করত, তাই তার কথার ইঙ্গিত বুঝতে কিছুটা সময় লাগে ইখতিয়ারের, পরে খুব রেগে যেত, নীলিমা চুপ করে থাকত। তবে মুখে বলে যেত, ইখতিয়ারকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে সে, কিন্তু এখনই বিয়ে করা সম্ভব না।
এসবে হতাশ হয়ে পড়ে ইখতিয়ার, দেখা করতে যায় না। আর না গেলেও নীলিমা তেমন আর অনুযোগও করে না, অথচ এমন দিন ছিল, দেখা না হলে ভয়ানক খেপে যেত নীলিমা। যেকোনোভাবেই হোক, আঠার মতো তার সাথে লেগে থাকতে চাইত। এমনকি অনেক রাত হয়ে গেলেও বাসায় যেতে মন চাইত না। এমনকি কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে আসত, তখন বাসার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসত ইখতিয়ার। এসব নিয়ে তার বাসায় ঝামেলাও হতো, স্বামী রাগারাগি করত, এমনকি তার ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত জেনে গিয়েছিল, কিন্তু সে ফিরতে পারেনি। অথচ অবসর নিয়ে চোখের আড়াল হতেই কিছুদিনেই কেমন দূরের হয়ে গেল নীলিমা। এমনটা কেন হলো, তার কারণ খুঁজে পায় না ইখতিয়ার। কেননা কিছুদিন আগেও সে ছিল নীলিমার সব, নীলিমা তাকে বলত, বিয়ে করার পর তারা কীভাবে সংসার সাজাবে। দুজনে কীভাবে থাকবে, ধবধবে সাদা বিছানায় ইখতিয়ারকে জড়িয়ে ধরে কীভাবে ঘুমাবে—সবকিছু ভাবত সে। কিন্তু একটু চোখের আড়াল হতেই সে এত দ্রুত পাল্টে গেল!
সম্পর্কের প্রথম দিকে এতটা ঘনিষ্ঠ হতে চায়নি ইখতিয়ার। কারণ, পরকীয়া সে করবে না। এটা অনৈতিক, কাপুরুষতা। এসবে সে নেই। কিন্তু নীলিমা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল, এটা পরকীয়া নয়। এটা প্রেম, এটা ভালোবাসা, ইখতিয়ারকে ছাড়া সে বাঁচবে না। তারা বিয়ে করে ঘর বাঁধবে। এসব কি নীলিমার অভিনয় ছিল? মানুষ এত নিখুঁত অভিনয় করতে পারে!
একটু শুয়ে থেকে আবার বিছানা ছেড়ে উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘরের ভেতর পায়চারি শুরু করে। সাগরে লাস্যময় হাঙরের মতো নীলিমার মুখ ভেসে ওঠে ভাবনায় আর একটা কষ্ট, ঘৃণা, আক্রোশ তাকে গ্রাস করে। আজ তার জীবন কক্ষচ্যুত হওয়ার উপক্রম, অজানা আতঙ্কে দম আটকে আসতে চায়, অথচ সাধারণ সুখ-দুঃখের একটা জীবন ছিল তার। নীলিমার সাহচর্যে সেই তুচ্ছ জীবনটা কী মহার্ঘই-না হয়ে উঠেছিল, স্বপ্নের মতো, কিন্তু হঠাৎ যেন স্বর্গ থেকে পতন!
ব্যথাবিবশ মন নিয়ে আবার বিছানায় বসে পড়ে ইখতিয়ার। নিশ্বাস ঘন হয়ে ওঠে, দাঁতে দাঁতে চাপ খেয়ে চোয়াল শক্ত হয়, ইচ্ছে জাগে চরম একটা প্রতিশোধ নেওয়ার অথচ তা পারবে না। সে যে ক্ষমায় বিশ্বাসী, তার পরিণতি যা হোক নীলিমার সাথে ভালোমন্দ কোনো সম্পর্কই রাখবে না। কোনো দিন কথাও বলবে না, মুখও দেখাবে না, এতটুকুই সে পারবে।
বিছানায় ছটফট করতে করতে তপ্ত দুপুর পার হয়ে যায়। একটু ঝিমুনির মতো আসে, তার মধ্যেই শাড়ি পরা নীলিমাকে দেখে, দুজনে হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাচ্ছে রমনার সবুজে। সব সময়ই তারা হাত ধরাধরি করে হাঁটত। কখন যে একজনের হাতটা অন্যজনের হাতের ভেতর চলে যেত, টের পেত না। যখন সচেতনভাবে হাত ধরা এড়াতে চাইত, তখনো হঠাৎ আবিষ্কার করত, কখন যে একে অন্যের হাতটা ধরে ফেলেছে, টেরও পায়নি। ওর হাতটা ধরলেই অপার ভালো লাগা, এক অন্য রকম সুখানুভূতি হতো। অফিস থেকে বের হয়েই হাত ধরে হাঁটত তারা, সেই অনুভূতি কোনো দিন ভুলবার নয়।
কিন্তু যেভাবে নীলিমা দূরে সরে গেল, ভুলে গেল, তাতে ঘৃণায় মন রি রি করে ওঠে। হয়তো সবই ছিল ওর পরিকল্পিত, অভিনয়, ছলচাতুরী। দশটা বছর তার জীবনটাকে দখল করে নিয়ে নিজের ইচ্ছেপূরণের খেলা।
ইখতিয়ারের বুকের ভেতর থেকে শীতল জলের তোড় উঠে আসতে চায়। মনে হয় চিৎকার করে কাঁদে, কিন্তু গলার কাছে আটকে যায়, দম বন্ধ হয়ে আসে যেন, বমির মতো উগরে ওঠা অদৃশ্য চাপে নাকমুখ ফেটে পড়তে চায়। জোর করে বালিশে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ পড়ে থাকে সে।
পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে বের হয় ইখতিয়ার। বছরখানেক ধরে গ্রামে একা ইখতিয়ারের উপস্থিতি মানুষের মনে নানা কৌতূহল জন্ম দিয়েছে। পথেঘাটে কারও সাথে দেখা হলে বাড়িতে একা থাকার কারণ জানতে চায়, তখন সে শহরের দূষণযুক্ত পরিবেশের অজুহাত দেখায়, বাড়িঘরও দেখাশোনা দরকার ইত্যাদি কথা বলে, অনেকেই স্বাগত জানায় এ জন্য যে বাবা-মায়ের কবর এখানে, তার যত্ন নেওয়া, পিতৃপুরুষের ভিটেয় বাতি দেওয়া অবশ্যকর্তব্য তার, সে বিবেচনায় ভালো হয়েছে, তবে একা একা কষ্ট না করে বউকে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয়। ইখতিয়ার তখন, দেখি কী করি...ছেলেকে একা রেখে আসবে কী করে...ইত্যাদি বলে পাশ কাটিয়ে যায়। যদিও বিকেলে হাঁটতে বের হলে অথবা দোকানে গেলে তখনই শুধু দেখা হয় কারো সাথে, এ ছাড়া অধিকাংশ সময়টা বাড়িতেই কাটে, যেন কিছুটা লুকিয়েই থাকতে চায় সে।
বড় রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে হাঁটতে থাকে ইখতিয়ার, পথে নানা জনের সাথে দেখা হয়, তারা কুশল বিনিময় করতে চায়, কিন্তু ভারী বিষণ্নতায় তার মন ডুবে আছে, কথা বলতে ইচ্ছে হয় না, মানুষের মুখোমুখি হতে ভালো লাগে না, তাই রাস্তা ছেড়ে মাঠের পথ ধরে।
বৈশাখী জোয়ারে আসা পানি নেমে গিয়ে মাঠের কান্দাগুলো শুকিয়ে উঠেছে, হাঁটতে হাঁটতে মাঠ পেরিয়ে বড় খালের ধারে এসে বুনো ঘাসের জমিনে বসে আরাম করে, জায়গাটা বেশ ফাঁকা, খালের ওপারেও বিশাল মাঠ, কাছাকাছি বাড়িঘর নেই, নির্জনতা ঘন হয়ে জমাট বেঁধে আছে যেন, সেই নির্জনতায় ডুবে যায় সে।
বাহ্যত যা-ই করুক, মনের ভেতরে তার অনুসন্ধান চলে, কীভাবে বাদবাকি জীবন কাটাবে সে, যে যন্ত্রণা তাকে কুরে খাচ্ছে, কীভাবে উদ্ধার মিলবে তা থেকে, পরিবারের সাথেই-বা সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে জানে না!
নীলিমার সাথে সম্পর্কটা টের পাওয়ার পর তার স্ত্রী ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, প্রচণ্ড ঝামেলা হয়, ভাইবোনদের ডেকে এনে নালিশ করে, সালিস বৈঠক বসায়, কিন্তু ইখতিয়ার সেসব পাত্তা দেয়নি তখন। তার মনে হতো, নীলিমার জন্য, তার ভালোবাসার জন্য সবকিছু জলাঞ্জলি দিতে পারবে সে, তখন মনে হয়েছিল, ভালোবাসার কাছে সবকিছুই তুচ্ছ, সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সে নীলিমাকেই চায়। তবু ভেতরে ভেতরে আত্মদ্বন্দ্বে বিক্ষত হয় সে, কিন্তু নীলিমার সাথে সম্পর্কের ইতি টানার কথা ভাবতেই পারেনি। একটা স্বপ্নের ঘোরের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল সে, যেখানে সে আর নীলিমা ছাড়া কেউ ছিল না।
এখন সে কীভাবে বাঁচবে ভেবে কূল পায় না। মাঝে মাঝে ভাবতে চায়, তার জীবন কি উদ্দেশ্যবিহীন হয়ে গেল? পরিসমাপ্তি ঘনিয়ে এল? তার করার কি কিছু নেই? উত্তর মেলে না অথবা যে উত্তর পায়, তাতে সমাধান মেলে না।
সাধারণ লেখাপড়া করে, বেঁচে থাকার জন্য একটা পেশা বেছে নিয়ে যেটুকু যা করেছে, তাতেই সন্তুষ্ট ছিল সে। সততার সাথে সাধারণ একটা জীবন যাপন করতে পেরেই আপাতসুখী ছিল সে। মনে মনে ভাবত, দেশের অধিকাংশ মানুষের চেয়ে তার জীবন যে ভালোভাবে চলছে, এ-ই যথেষ্ট, এর বেশি প্রত্যাশা ছিল না, শুধু অতৃপ্ত ছিল দাম্পত্য জীবন নিয়ে, সেই অতৃপ্তির ছিদ্রপথে নতুন বাসনার সাপ ঢুকে যে যন্ত্রণায় আজ জর্জরিত করে তুলেছে তাকে, তার শেষ কোথায়, সে জানে না। হয় এখানেই চিরসমাপ্তি, আধপোড়া কাগজের মতো ছুড়ে ফেলে দিতে হবে, না হয় বাঁচতে হলে নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে, কিন্তু কোন পথ, সেই পথের হদিস কীভাবে পাবে, সে জানে না।
চারদিকে মায়াবী জাদুর মতো সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবুজ গ্রামগুলো ঝাপসা হয়ে উঠছে, একদল শামুকভাঙা পাখি তাদের লম্বা পা পেছনের দিকে ঝুলিয়ে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে আস্তানার খোঁজে, খালের পানি কালো হয়ে উঠছে, ইখতিয়ার পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরায় আর ভাবে, এই গভীর নির্জনতায় বিলীন হয়ে যেতে পারলেই ভালো হতো। সন্ধ্যা আরও ঘনিয়ে এলে সেখান থেকে উঠে বাড়ির পথ ধরে ইখতিয়ার।
বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে চা বানায়, বিস্কিট খায়, মোবাইলে ইউটিউব থেকে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে শুনতে বারান্দার সোফায় বসে বিশ্রাম নেয়। আলো নিভিয়ে খোলা জানালায় বাইরের অন্ধকারে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গভীর বিষণ্নতা গ্রাস করে তাকে।
সারাক্ষণ কাঁটার মতো বিঁধতে থাকা অসংখ্য চিন্তা রাতের ওড়নায় গা ঢাকা দিয়ে আবার ফিরে আসে, ঝিমধরা লাটিমের মতো ঝিঁঝিপোকার তান। কিছু জোনাকির এলোমেলো উড়ে যাওয়া, বুকের ভেতরে গভীর বিষাদ, এর মাঝে নীলিমা ঠিক ফিরে আসে, যদিও ইখতিয়ার নিশ্চিত, ভুলতে না পারলেও হয়তো ক্ষমা করতে পারবে সে নীলিমাকে। ভীরুকে কী দণ্ড দেবে সে? নীলিমা ভালোই জানে, অমৃত ত্যাগ করেছে সে, আমাকেও বঞ্চিত করেছে। দুজনের ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গিয়েছিল, আমাদের ছেড়েও হয়তো ভালো থাকতে পারত ওরা, কিন্তু আমাদের জীবনে হতো গভীর গভীর এক পাওয়া। যার সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম, পরম প্রেম, যা পেয়ে অর্ধমৃত আমাদের আত্মা জেগে উঠেছিল। পৃথিবীর সব কলুষ গিয়েছিল মুছে। ক্ষমা ও ভালোবাসায় হৃদয় পূর্ণ হয়েছিল, প্রকৃতির সাথে আমরা মিশে গিয়েছিলাম, অফুরন্ত ভালো লাগা, অসীম প্রাণশক্তিতে ভরপুর মন, সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেল...
এখন মনে হয়, ডুবে যাচ্ছে সে গভীর গভীরতর হিমশীতল অন্ধকারে, হয়তো আর কোনো দিন জেগে উঠবে না সে...।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪