রজত কান্তি রায়, ঢাকা
কেন জানি না, গত বছর পূজায় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষদের ছবি তুলে রেখেছিলাম। এর মধ্যে একজন গোলেনুর বেগম। যাঁদের ছবি তুলেছিলাম, তাঁদের মধ্যে দুজন গত পূজার তিন মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃতদের একজনও গোলেনুর।
গল্পটা মৃত্যুর নয়। গল্পটা জীবনের। গত ৩৩ বছরের এক অবিচ্ছেদ্য গল্প। গত তিন দশকের বেশি সময় আমাদের বাড়িতে যত বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, যতবার পূজা হয়েছে, যতবার কেউ মারা গেছেন, যতবার কেউ জন্মেছে, ততবারই গোলেনুর উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যের মতো। তিনি কেঁদেছেন, হেসেছেন, খেয়েছেন এবং আশীর্বাদ করেছেন। কিন্তু এবার আসেননি। গোলেনুর মারা গেছেন।
গোলেনুর একজন অতিসাধারণ নারীর নাম, যার কথা তাঁর পরিবারের মানুষেরাই মনে রাখেননি। ১৯৮৮ সালের বন্যায় বাড়িঘর সব হারিয়ে উলিপুর থেকে গোলেনুর কীভাবে যেন আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সপরিবারে। সেই থেকে শুরু। তিনি আমাদের প্রায় সব ভাইবোনকে কোলেপিঠে মানুষ করেছেন। আমার প্র্যাকটিসিং বৈষ্ণব ঠাকুরদার জন্য সকালের খাবার বানাতেন। আমার বোনদের বিয়ের বিদায়ে তিনি হাপুস নয়নে কেঁদেছেন। তাদের সন্তান জন্মের খবরে মিষ্টিতে ভাগ বসিয়েছেন।
গোলেনুরের কথা আজ কেন?
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা এবং বোরকা পরা গোলেনুর গত ৩৩ বছর আমাদের সঙ্গে থেকেছেন। তাতে তাঁর কিংবা আমাদের ধর্মে বাধেনি। আজ যখন ধর্ম নিয়ে বেশ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে আমাদের সবাইকে, তখন মনে পড়ে গেল, গোলেনুর এবার পূজায় অনুপস্থিত ছিলেন তাঁর মৃত্যুজনিত কারণে।
গোলেনুরকে আমরা বেটি বলে ডাকতাম। বেটি মানে উত্তরবঙ্গে বিশেষত রংপুরে ফুফু; অর্থাৎ, পিসিমা মানে বাবার বোন। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো এ সম্পর্কে আবদ্ধ। গোলেনুর বেগম আমার ঠাকুরদাকে ধর্ম বাবা বানিয়েছিলেন। সেই সূত্রে তিনি আমার বাবা-কাকার বোন আর আমাদের বেটি বা পিসিমা কিংবা ফুফু।
এর বেশি কিছু আমাদের জানা ছিল না, গোলেনুরও জানতেন না সম্ভবত। সে জন্য পূজার মতো ঈদে আমাদের বাড়িতে আসত সেমাই, চিনি আর দুধ। কোরবানির ঈদে আসত খাসির মাংস।
সবকিছু এখন অতীত। ধূসর অতীত। তুচ্ছাতিতুচ্ছ মানুষ গোলেনুর বেগম এবার পূজায় আসেননি। আসবেন না কোনো দিন। শুধু যখন সংকট আসবে, যখন আমাদের সবাইকে ধর্মের পরীক্ষা দিতে হবে, তখন গোলেনুর বেগমকে আমার মনে পড়বে।
না, উলিপুরের কোনো এক গ্রামের লেখাপড়া না জানা এক অতি তুচ্ছ নারী গোলেনুর বেগম আমাদের অসাম্প্রদায়িক হওয়া শেখাননি। শিখিয়েছিলেন জীবনযাপন। যে জীবনে ধর্ম ছিল, প্রাণ ছিল, মানুষ ছিল। গোলেনুর বেগমের কাছে এই জীবনযাপনের শিক্ষা পেয়েছিলাম বলেই হয়তো তাঁর মৃত্যুসংবাদে ‘পরাণের গহীন ভিতর’ থেকে উঠে এসেছিল কান্না। আমি খুব কম মানুষের মৃত্যুতে কেঁদেছি।
কেন জানি না, গত বছর পূজায় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষদের ছবি তুলে রেখেছিলাম। এর মধ্যে একজন গোলেনুর বেগম। যাঁদের ছবি তুলেছিলাম, তাঁদের মধ্যে দুজন গত পূজার তিন মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃতদের একজনও গোলেনুর।
গল্পটা মৃত্যুর নয়। গল্পটা জীবনের। গত ৩৩ বছরের এক অবিচ্ছেদ্য গল্প। গত তিন দশকের বেশি সময় আমাদের বাড়িতে যত বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, যতবার পূজা হয়েছে, যতবার কেউ মারা গেছেন, যতবার কেউ জন্মেছে, ততবারই গোলেনুর উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যের মতো। তিনি কেঁদেছেন, হেসেছেন, খেয়েছেন এবং আশীর্বাদ করেছেন। কিন্তু এবার আসেননি। গোলেনুর মারা গেছেন।
গোলেনুর একজন অতিসাধারণ নারীর নাম, যার কথা তাঁর পরিবারের মানুষেরাই মনে রাখেননি। ১৯৮৮ সালের বন্যায় বাড়িঘর সব হারিয়ে উলিপুর থেকে গোলেনুর কীভাবে যেন আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সপরিবারে। সেই থেকে শুরু। তিনি আমাদের প্রায় সব ভাইবোনকে কোলেপিঠে মানুষ করেছেন। আমার প্র্যাকটিসিং বৈষ্ণব ঠাকুরদার জন্য সকালের খাবার বানাতেন। আমার বোনদের বিয়ের বিদায়ে তিনি হাপুস নয়নে কেঁদেছেন। তাদের সন্তান জন্মের খবরে মিষ্টিতে ভাগ বসিয়েছেন।
গোলেনুরের কথা আজ কেন?
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা এবং বোরকা পরা গোলেনুর গত ৩৩ বছর আমাদের সঙ্গে থেকেছেন। তাতে তাঁর কিংবা আমাদের ধর্মে বাধেনি। আজ যখন ধর্ম নিয়ে বেশ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে আমাদের সবাইকে, তখন মনে পড়ে গেল, গোলেনুর এবার পূজায় অনুপস্থিত ছিলেন তাঁর মৃত্যুজনিত কারণে।
গোলেনুরকে আমরা বেটি বলে ডাকতাম। বেটি মানে উত্তরবঙ্গে বিশেষত রংপুরে ফুফু; অর্থাৎ, পিসিমা মানে বাবার বোন। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো এ সম্পর্কে আবদ্ধ। গোলেনুর বেগম আমার ঠাকুরদাকে ধর্ম বাবা বানিয়েছিলেন। সেই সূত্রে তিনি আমার বাবা-কাকার বোন আর আমাদের বেটি বা পিসিমা কিংবা ফুফু।
এর বেশি কিছু আমাদের জানা ছিল না, গোলেনুরও জানতেন না সম্ভবত। সে জন্য পূজার মতো ঈদে আমাদের বাড়িতে আসত সেমাই, চিনি আর দুধ। কোরবানির ঈদে আসত খাসির মাংস।
সবকিছু এখন অতীত। ধূসর অতীত। তুচ্ছাতিতুচ্ছ মানুষ গোলেনুর বেগম এবার পূজায় আসেননি। আসবেন না কোনো দিন। শুধু যখন সংকট আসবে, যখন আমাদের সবাইকে ধর্মের পরীক্ষা দিতে হবে, তখন গোলেনুর বেগমকে আমার মনে পড়বে।
না, উলিপুরের কোনো এক গ্রামের লেখাপড়া না জানা এক অতি তুচ্ছ নারী গোলেনুর বেগম আমাদের অসাম্প্রদায়িক হওয়া শেখাননি। শিখিয়েছিলেন জীবনযাপন। যে জীবনে ধর্ম ছিল, প্রাণ ছিল, মানুষ ছিল। গোলেনুর বেগমের কাছে এই জীবনযাপনের শিক্ষা পেয়েছিলাম বলেই হয়তো তাঁর মৃত্যুসংবাদে ‘পরাণের গহীন ভিতর’ থেকে উঠে এসেছিল কান্না। আমি খুব কম মানুষের মৃত্যুতে কেঁদেছি।
বারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
১১ ঘণ্টা আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৩ দিন আগেআব্দুল করিম খাঁ ছিলেন হিন্দুস্তানি ধ্রুপদি সংগীতের অন্যতম কিংবদন্তি। কিরানা ঘরানারও তিনি কিংবদন্তি ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত—তিনি গান গাওয়ার সময় এমনভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন যে, শ্রোতারাও সেই সুরের মায়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন।
৪ দিন আগেমানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মুক্তির আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা। তিনি এম এন লারমা নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। ডাকনাম ছিল মঞ্জু। তাঁর নেতৃত্বেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫ দিন আগে