বিভুরঞ্জন সরকার
আজ পয়লা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছর ১৪৩১-এর প্রথম দিন। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বৈশাখবন্দনা, নতুন বছরকে বরণ করার আয়োজন। পয়লা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন, আনন্দের দিন, সম্প্রীতির দিন, সৌহার্দ্যের দিন।
পয়লা বৈশাখ মানে হালখাতা, পয়লা বৈশাখ মানে গ্রাম্য মেলা। নাগরদোলা, হাওয়াই মিঠাই, বাতাসা, পুতুল নাচ, গান, সার্কাস, মুখোশনৃত্য—আরও কত কী! আজকাল আয়োজনে ব্যাপকতা এসেছে, এসেছে কিছুটা পরিবর্তনও। কিন্তু পয়লা বৈশাখ বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসা আছে চির জাগরুক। শুভ নববর্ষ বলে একে অপরের শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় কোনো পরিবর্তন নেই, ব্যত্যয় নেই।
ঈদ কিংবা পূজাও উৎসব। ওই উৎসবেও আনন্দ হয়। আর আমাদের আনন্দ মানেই তো খাওয়াদাওয়া, নতুন পোশাক পরা, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডায় মেতে ওঠা। ঈদ-পূজার উৎসব আয়োজন সর্বজনীন নয়। তাতে ধর্মবিশ্বাসের গণ্ডি আছে। মুখে বলা হয়, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কিন্তু বাস্তবে তা আচরিত হওয়া কঠিন। হিন্দু যাবেন না ঈদের নামাজের মাঠে। মুসলমান মন্দিরে করবেন না নৈবেদ্য নিবেদন। কিন্তু পয়লা বৈশাখের উৎসবটা প্রকৃত অর্থেই সবার, সব বাঙালির, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালির উৎসব বর্ষবরণ।
সে হিসেবে বর্ষবরণের উৎসবই হওয়ার কথা বাঙালির প্রধান জাতীয় উৎসব। কিন্তু হয়েছে কী? না, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন নিয়েও বিভেদ-বিভ্রান্তির অপচেষ্টা আছে, ছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির কৃষ্টি-ঐতিহ্যকে অবদমনের চেষ্টা করেছে। একে ‘হিন্দুয়ানি’ বলে প্রচার করেছে। তবে বাঙালি সেটা মানেনি। পয়লা বৈশাখকে একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব হিসেবেই পালন করে আসা হচ্ছে। বাধা দিলে বাধা না মানাই হলো বাঙালির এক সহজাত প্রবণতা। পয়লা বৈশাখ পালনে বাধা দিয়ে পাকিস্তানিরা বাঙালিকে হারাতে পারেনি, নিজেরাই হেরেছে।
এখনো যারা বাঙালির বর্ষবরণের উৎসবের বিরোধিতা করছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের চিহ্ন দেখছেন, তাদেরও পিছু হঠতে হবে। কারণ, বাঙালির রক্তে আছে দ্রোহ, এ রক্ত পরাভব মানে না। ‘জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ বাঙালি বিশ্বাস করে—মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হবে ধরা।
আমাদের জীবনে দুঃখ-বেদনা আছে। জয়ের আনন্দের পাশাপাশি, সাময়িক পরাজয়ের কাতরতাও আছে। আমরা পাই, আবার পেয়েও হারাই। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অবদমিত হয় না। পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে আমরা বরণ করি এই আশা নিয়ে যে নতুন বছরে আমরা ‘পুরাতন অপরাধ’-এর পুনরাবৃত্তি করব না।
বৈশাখ চির নতুনকেই ডাক দিতে এসেছে। আমরা নতুন করে সংকল্পবদ্ধ হব, দুবেলা মরার আগে মরব না, আমরা ভয় করব না। আমরা মানুষ হয়ে ওঠার সাধনা করব। মনুষ্যত্বের জয়গান গাইব। ধর্ম যেন আমাদের যুক্তিবোধ ও শুভবোধকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। আমরা যেন ভুলে না যাই, মানুষের জন্যই ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। ‘মানুষ এনেছে ধর্ম যেন, ধর্ম আনেনি মানুষ কোনো।’ যেকোনো পশ্চাৎগামিতাকে প্রতিরোধ করে, আঁধারের বুকে আলো জ্বালানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমরা আবাহন করব নতুন বছরকে, ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে। শুভ নববর্ষ। জয় হোক বাঙালির। জয় হোক মানুষের।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজ পয়লা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছর ১৪৩১-এর প্রথম দিন। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বৈশাখবন্দনা, নতুন বছরকে বরণ করার আয়োজন। পয়লা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন, আনন্দের দিন, সম্প্রীতির দিন, সৌহার্দ্যের দিন।
পয়লা বৈশাখ মানে হালখাতা, পয়লা বৈশাখ মানে গ্রাম্য মেলা। নাগরদোলা, হাওয়াই মিঠাই, বাতাসা, পুতুল নাচ, গান, সার্কাস, মুখোশনৃত্য—আরও কত কী! আজকাল আয়োজনে ব্যাপকতা এসেছে, এসেছে কিছুটা পরিবর্তনও। কিন্তু পয়লা বৈশাখ বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসা আছে চির জাগরুক। শুভ নববর্ষ বলে একে অপরের শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় কোনো পরিবর্তন নেই, ব্যত্যয় নেই।
ঈদ কিংবা পূজাও উৎসব। ওই উৎসবেও আনন্দ হয়। আর আমাদের আনন্দ মানেই তো খাওয়াদাওয়া, নতুন পোশাক পরা, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডায় মেতে ওঠা। ঈদ-পূজার উৎসব আয়োজন সর্বজনীন নয়। তাতে ধর্মবিশ্বাসের গণ্ডি আছে। মুখে বলা হয়, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কিন্তু বাস্তবে তা আচরিত হওয়া কঠিন। হিন্দু যাবেন না ঈদের নামাজের মাঠে। মুসলমান মন্দিরে করবেন না নৈবেদ্য নিবেদন। কিন্তু পয়লা বৈশাখের উৎসবটা প্রকৃত অর্থেই সবার, সব বাঙালির, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালির উৎসব বর্ষবরণ।
সে হিসেবে বর্ষবরণের উৎসবই হওয়ার কথা বাঙালির প্রধান জাতীয় উৎসব। কিন্তু হয়েছে কী? না, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন নিয়েও বিভেদ-বিভ্রান্তির অপচেষ্টা আছে, ছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির কৃষ্টি-ঐতিহ্যকে অবদমনের চেষ্টা করেছে। একে ‘হিন্দুয়ানি’ বলে প্রচার করেছে। তবে বাঙালি সেটা মানেনি। পয়লা বৈশাখকে একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব হিসেবেই পালন করে আসা হচ্ছে। বাধা দিলে বাধা না মানাই হলো বাঙালির এক সহজাত প্রবণতা। পয়লা বৈশাখ পালনে বাধা দিয়ে পাকিস্তানিরা বাঙালিকে হারাতে পারেনি, নিজেরাই হেরেছে।
এখনো যারা বাঙালির বর্ষবরণের উৎসবের বিরোধিতা করছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের চিহ্ন দেখছেন, তাদেরও পিছু হঠতে হবে। কারণ, বাঙালির রক্তে আছে দ্রোহ, এ রক্ত পরাভব মানে না। ‘জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ বাঙালি বিশ্বাস করে—মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হবে ধরা।
আমাদের জীবনে দুঃখ-বেদনা আছে। জয়ের আনন্দের পাশাপাশি, সাময়িক পরাজয়ের কাতরতাও আছে। আমরা পাই, আবার পেয়েও হারাই। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অবদমিত হয় না। পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে আমরা বরণ করি এই আশা নিয়ে যে নতুন বছরে আমরা ‘পুরাতন অপরাধ’-এর পুনরাবৃত্তি করব না।
বৈশাখ চির নতুনকেই ডাক দিতে এসেছে। আমরা নতুন করে সংকল্পবদ্ধ হব, দুবেলা মরার আগে মরব না, আমরা ভয় করব না। আমরা মানুষ হয়ে ওঠার সাধনা করব। মনুষ্যত্বের জয়গান গাইব। ধর্ম যেন আমাদের যুক্তিবোধ ও শুভবোধকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। আমরা যেন ভুলে না যাই, মানুষের জন্যই ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। ‘মানুষ এনেছে ধর্ম যেন, ধর্ম আনেনি মানুষ কোনো।’ যেকোনো পশ্চাৎগামিতাকে প্রতিরোধ করে, আঁধারের বুকে আলো জ্বালানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমরা আবাহন করব নতুন বছরকে, ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে। শুভ নববর্ষ। জয় হোক বাঙালির। জয় হোক মানুষের।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
৫ ঘণ্টা আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৩ দিন আগেআব্দুল করিম খাঁ ছিলেন হিন্দুস্তানি ধ্রুপদি সংগীতের অন্যতম কিংবদন্তি। কিরানা ঘরানারও তিনি কিংবদন্তি ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত—তিনি গান গাওয়ার সময় এমনভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন যে, শ্রোতারাও সেই সুরের মায়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন।
৪ দিন আগেমানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মুক্তির আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা। তিনি এম এন লারমা নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। ডাকনাম ছিল মঞ্জু। তাঁর নেতৃত্বেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫ দিন আগে