মুখে বাঁশি, হাতে টর্চ লাইট। বাঁশিতে ফুঁ দিতে দিতে টর্চ লাইট নিয়ে পরীক্ষা করছেন বাজারের বন্ধ থাকা দোকানগুলোর শাটারের একটার পর একটা তালা। হাত দিয়ে টেনে দেখছেন কোনো তালা খোলা আছে কি না, কেউ তালা লাগাতে ভুলে গেছেন কি না।
বাঁশির সুর যে মানুষকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষ্ণের বাঁশির সুরে বিমোহিত হয়ে যেমন তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন রাধা, তেমনি জার্মানির হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পও আমাদের জানা। এমনই এক বাঁশিওয়ালা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়া গ্রামের ধারশ মনি চাকমা। তাঁর বাঁশির সু
সাপুড়ের ‘বীণের তালে সাপের নাচের’ দৃশ্য বাংলা চলচ্চিত্র সূত্রে মানুষের কাছে খুব পরিচিত। শুধু চলচ্চিত্রই নয়, এক সময় গ্রাম বাংলার মানুষের বিনোদনের অন্যতম এক অনুষঙ্গ ছিল সাপের খেলা। সেখানে দেখা যেত, সাপুড়ের বীণের তালে সাপ ফণা তুলে নাচছে।
‘বাঁশি কেন গায়/ আমারে কাঁদায়’। কিন্নরী লতা মঙ্গেশকরের বেদনার্ত কণ্ঠে ঝরে পড়া সুরের মতো নয়, মহারাজ বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন মনের আনন্দে। পিঞ্জুরী গ্রাম তখন শীতলাপূজার আনন্দে মাতোয়ারা। মেলায় আসা শত শত মানুষের কোলাহল ছাপিয়ে মহারাজের বাঁশির সুর তখন চরাচরে ছড়িয়ে পড়েছে।
হ্রদ-পাহাড়ের শহর রাঙামাটিতে এখন বাঁশির সুর ভাসছে। বৈসাবি আসছে। তাই এই আবাহনী গানের সুর তুমুল আলোড়ন তুলছে হ্রদ আর পাহাড়ে। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা হাতে হাত ধরে পাড়ায় পাড়ায় বেড়াতে শুরু করেছে। মূল ভূরিভোজের আয়োজন দেরি থাকলেও বাড়িতে বাড়িতে চলছে
বয়স ষাটের বেশি। এ বয়সেও নিজ হাতে তৈরি করেন নানা প্রকার বাঁশি। প্রতিদিন সুর তোলেন নিজের বানানো বাঁশিতে। জেলার হাট-বাজার, মেলাসহ পথে পথে ঘুরে সেই বাঁশি বিক্রি করেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবে বাঁশি বেচে জীবিকা নির্বাহ করছেন আমির হোসেন। বাঁশির প্রতি অতি অনুরাগের কারণে অনেকেই তাঁকে ‘বাঁশিপাগল আমির’ বলে
বাঁশির সুর মানেই ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি। গ্রামবাংলায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও ছিল এই বাঁশি। যারা বাঁশি বাজাতে পারত, তাদের কদর ছিল বেশ; কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন মানুষের বিনোদনের মাধ্যম বদলে গেছে। এতে পরিবর্তন এসেছে বাঁশির কারিগর ও বাঁশিওয়ালাদের জীবনে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে ১০টা পেরিয়ে ১১টার দিকে। মো. ইব্রাহীম কখনো বাঁশিতে সুর তুলছিলেন আইয়ুব বাচ্চুর গান। কখনো বা তাঁর বাঁশির সুরে স্বয়ং ‘হাজির’ লতা মঙ্গেশকর–রুনা লায়লার মতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা। ক্লান্তিহীনভাবেই চলছিল বাঁশি বাজানো। আর হ্যামিলনের...
হোমনা পৌরসভায় অবস্থিত উপজেলার সবচেয়ে বড় গ্রাম শ্রীমদ্দি। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত শ্রীমদ্দি গ্রামটি সারা দেশে বাঁশির গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। সারা বছর ধরেই এখানকার কারিগরেরা বাঁশি তৈরি করেন। তবে তাদের উৎপাদন ও বিক্রির প্রধান উদ্দেশ্য থাকে বৈশাখ মাস।
বাঁশির কারিগরেরা জানান, মহামারি করোনার কারণে গত তিন মৌসুমে জন সমাগম নিষিদ্ধ থাকায় ঘরে বসে থেকেছেন বাঁশির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। অভাব অনটনে থেকে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে গেছেন। শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশের বাঁশির সুখ্যাতি দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে। সারা দেশে শ্রীমদ্দি গ্রামটি বাঁশির গ্রাম হিসেবেই পরিচিত।
আব্দুর গফুর কাজী এভাবে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় জানাবেন বুঝতে পারিনি। কারও ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাওয়া ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না বলেই প্রশ্নটা করতে পারছিলাম না। হয়তো তিনি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। আর তাই আপন মনে বলতে শুরু করলেন তাঁর না বলা সব কথা।
মৌলভীবাজারের ফজলুর রহমান বাঁশের বাঁশি বিক্রি করেন। ৭৫ বছরের এই বাঁশি বিক্রেতা শখের বশে বাঁশি বাজান আর বিক্রি করেন। বাঁশি বাজানোর সময় শারীরিক কষ্ট হলেও মনের আনন্দে বাঁশি বাজান তিনি।
‘মুঘল-এ-আজম’ (১৯৬০) ছবিতে মধুবালার ওপর চিত্রায়িত লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘মোহে পনঘাটপে নন্দলাল’ গানটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। এ গানের সঙ্গে বাঁশি বাজানোর জন্য সংগীত পরিচালক নওশাদ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁকে।