যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা ও উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশন (ডিএফসি) তহবিলের অংশ চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে যেসব পোশাকপণ্য তৈরি হয়, সেসবে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে। তবে এর জন্য শ্রম আইন আরও উন্নত করার শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বা জিএসপি সুবিধা এখনো ঝুঁকির মুখেই রয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি ইইউ প্রতিনিধিদল সফর করে যাওয়ার পর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। জিএসপি সুবিধার সঙ্গে শর্ত হিসেবে যুক্ত মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়ে
রপ্তানি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ঢাকা সফররত ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আজ বুধবার সরকারের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে এ কথা জানিয়েছেন।
তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধার আওতায় ইবিএ (অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য) ক্যাটাগরিতে পণ্য রপ্তানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথকে মসৃণ ও টেকসই করতে জিএসপি সুবিধার অধীনে পাওয়া বাণিজ্য সুবিধা তিন বছরের পরিবর্তে আরও ছয় বছর করার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)
আগামী ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠকে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আজ বৃহস্পতিবার ...
জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘে ৩০টিরও অধিক সনদে সই করতে হবে। এর মধ্যে জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নে আমি জোর দিচ্ছি। জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ইইউ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন বাজারে বিশেষ শুল্ক সুবিধা জিএসপির নিষেধাজ্ঞায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ফলে বাংলাদেশ জিএসপি পুনর্বহাল চায় না, বরং বাংলাদেশের যে প্রতিযোগী দেশগুলো রয়েছে, তাদের এ ধরনের শুল্ক সুবিধা ঠেকাতে চায় বাংলাদেশ।
এক শ্রেণির মানুষ ক্রমাগত আমাদের খামচে ধরে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে চায়। বারবার শকুনের হামলা, সেই হামলাতেও কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে বারবার সেই শকুনকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছি।
সফরটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বাংলাদেশ। আগামী ১৪ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে ইইউ প্রতিনিধি দলটি। এতে নেতৃত্ব দেবেন এমপ্লয়মেন্ট, সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইনক্লুশন মহাপরিচালক জর্ডি কুরেল গোতোর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নিয়ে প্রশ্ন করলে এম শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা এটিকে চাপ বলব না। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না কমে তাহলে আমরা কমাবো কেমন করে? সার্বিকভাবে তো কমানো যায় না। তিনি বলেন, আমাদের অধীনে থাকা পণ্য যেমন-তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডাল এগুলো সবই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনতে হয়।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানিকৃত পোশাকের প্রায় ৬২ শতাংশ ও মোট রপ্তানির প্রায় ৫৬ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত দেশ ও যুক্তরাজ্য। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে চলমান শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা বন্ধ হলে তা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে দেখা দিতে পারে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় আরও বিনিয়োগ লাগবে। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করতে হবে। আর এ বিনিয়োগ করতে হবে সুনির্দিষ্ট খাতগুলোকে চিহ্নিত করে। অভ্যন্তরীণ ভাবে এ বিনিয়োগ সম্পূর্ণ সম্ভব নয়। ফলে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইড লাইনে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইইউয়ের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ জোসেপ বররেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
বৈঠকে করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্য খাত যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়। সেই আলোকে জিএসপি সুবিধা ২০২৬ সালের পরও বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। এ সময়ে ২০২৯ পর্যন্ত এ সুবিধা বাড়াতে দুই দেশ সম্মত হয়।
বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ২০২৪ সালের পর আর রাখতে চায় না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে ব্রাসেলসের কাছ থেকে জিএসপি প্লাস পাওয়ার চেষ্টা করছে ঢাকা। আর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উন্নয়ন অংশীদারত্বের থেকে কৌশলগত পর্যায়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।