লক্ষ্মীপুরে গতকালের তুলনায় বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় বিপর্যস্ত জেলার পাঁচ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ৮ লাখের মতো বাসিন্দা। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চারদিকে এখন বানভাসি মানুষের হাহাকার। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রাণ ও সুপেয় পানির সংকট।
সিলেট ও নেত্রকোনায় নামছে বন্যার পানি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরছে অনেকে। কেউ আবার আছে ফেরার অপেক্ষায়। তবে বন্যাকবলিত ওই সব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট।
জীবন ধারণের জন্য পানি একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। অথচ সেই পানি দেশের অনেক মানুষের কাছে দুর্লভ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অনেক এলাকায় সুপেয় পানির সংকট না থাকলেও উপকূলীয় অঞ্চলে এর ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে।
চলতি গ্রীষ্মকালে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি পানের অযোগ্য হয়ে আছে। এ ছাড়া পুকুর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং সরকারি ফিল্টার অকেজো হয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিশুদ্ধ
গ্রীষ্মের শুরু থেকেই সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বান্দরবানের আলীকদমের মানুষকে। বাধ্য হয়ে খাল, ঝিরি ও নদীর দূষিত পানি পান করছে অনেকে। এতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাজবাড়ীতে আশঙ্কাজনক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে জেলার সদর, পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার অধিকাংশ টিউবওয়েলে বন্ধ হয়ে গেছে পানি ওঠা
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া জামে মসজিদের পাশে সুপেয় পানির নলকূপ। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই কলসে পানি নিতে আসলেন নুর নাহার (৪৫) নামের এক গৃহবধূ।
টেপের পানির মধ্যে খুদে প্লাস্টিকের কণা ভাসতে দেখা যায়। এগুলোর কোনো কোনোটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পানিকে পাঁচ মিনিট ফোটালে বেশির ভাগ মাইক্রোপ্লাস্টিকই দূর হয়ে যায়।
বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুটি গ্রামের বাসিন্দারা। দুর্গম এই দুই গ্রামে শতাধিক পরিবারের জন্য নেই কোনো নলকূপ। ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শঙ্খ নদের ঘোলা পানিই তাদের ভরসা।
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা এত বেশি যে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য, তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা এবং সুপেয় পানির চিন্তা সারাক্ষণই উদ্বিগ্ন করছে নীতিনির্ধারকদের। কৃষিনির্ভর ও নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে সময়ের প্রয়োজনেই বিকাশ লাভ করছে শিল্প।
ঢাকা ওয়াসার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে প্রতি লিটার পানি গ্রাহকেরা ৪০ পয়সা দিয়ে কিনতেন। আজ মঙ্গলবার থেকে প্রতি লিটার কিনতে হচ্ছে ৮০ পয়সা করে। প্রতি লিটার পানির মূল্য ৭০ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হবে ১০ পয়সা।
পরিসংখ্যান বলছে, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার অভাব সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার দেশগুলোতে। নিরাপদ পানির অধিকারবঞ্চিত বিপুল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আবার চরম দরিদ্র। প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাস করে গ্রামে। আর সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে শিশুরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া গাছপালা ও ফসলি জমি বিলীন এবং কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্যে নানা প্রভাব পড়ছে
সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে রুরাল পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ওই গ্রামের ২৫০ পরিবার পাচ্ছে সুপেয় পানি।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কালীবাড়ি বেদেপল্লিতে বসবাস দেড় শতাধিক পরিবারের। এসব পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা হাজারের ওপর। সুপেয় পানির জন্য দুর্ভোগের যেন শেষ নেই এসব পরিবারের।
রাজশাহী শহরে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) এই পানি পানযোগ্য নয়। ওয়াসা উদ্যোগী হয়ে পরীক্ষা করালে পানিতে পাওয়া যায় কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। বছরের পর বছর ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত এই পানিই বাধ্য হয়ে পান করে আসছে নগরবাসী।
হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকা। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫ লাখ মানুষ।