‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম.... ’ জনপ্রিয় এই বাংলা সংগীতই যেন মিরপুর টেস্টে জাকির হাসানের প্রতিচ্ছবি। এক প্রান্ত আগলে রেখে অন্য প্রান্তে সতীর্থদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখেছেন তিনি। বলতে গেলে মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকে একাই টেনেছেন। 

মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হয়ে যায়। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ১৮০ রানে। ৮ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে গতকালই টেস্টের তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল। ওপেনিংয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন জাকির। তবে সেই উদ্বোধনী জুটি ছিল ৩ বলে ৩ রানের। এজাজ প্যাটেলের বলে আউট হয়েছেন ওপেনার জয়। এরপর ৩ নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জাকিরের জুটিটা দারুণ জমে গিয়েছিল। তবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্ত নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। সাউদিকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে শান্ত-জাকিরের জুটিটা ছিল ৪৪ বলে ৩৫ রানের। 

৩৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে আজ চতুর্থ দিনে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। চার নম্বরে মুমিনুল হককে নিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন জাকির। ইনিংসের দশম ওভারে বোলিং করতে আসা সাউদিকে ২টি চার মারেন জাকির। মুমিনুলও ২টি চার মেরেছেন। এই জুটি ভেঙেছেন মুমিনুলের বাজে শট নির্বাচনে। এজাজ প্যাটেলকে পুল করতে গেলে এলবিডব্লু হয়েছেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি ব্যাটার। তৃতীয় উইকেটে মুমিনুলের সঙ্গে ৪৩ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন জাকির। ১৯ বলে ১০ রান করা মুমিনুল বিদায় নিলে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ১৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৭১ রান। 

 ৭১ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসে শুরু হয় মড়ক লাগা। মুশফিকুর রহিম, শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান—এই স্বীকৃত চার ব্যাটারের দ্রুত বিদায়ও অসহায়ের মতো দেখেছেন জাকির। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় নিউজিল্যান্ডের বোলারদের যতটা না কৃতিত্ব, তাঁর চেয়ে দায়টা বেশি বাংলাদেশের ব্যাটারদের। অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন স্বাগতিক ব্যাটাররা, যেখানে সোহানকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছেন। ২৫তম ওভারের তৃতীয় বলে তাঁর (সোহান) বিপক্ষে প্যাটেল এলবিডব্লুর আবেদন করলে আম্পায়ার আউট ঘোষণা করেন। রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে যান সোহান। সেটা ছিল তাঁর মোকাবিলা করা দ্বিতীয় বল। ঠিক তার পরের বলেই স্কুপ শট খেলতে গিয়ে প্যাটেলের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন সোহান। 

জাকিরকে একলা রেখে নাঈম হাসান যখন আউট হয়ে যান, তখন বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ১১২ রান। নিঃসঙ্গ শেরপার মতো ব্যাটিং করা জাকির এরপর টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল ওপেনিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নেবেন। সেটা হয়নি ঠিকই, তবে তিনি যেমন ব্যাটিং করেছেন, তাও তো কম কিছু নয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১৪৪ রানে, যার মধ্যে জাকির একাই করেন ৫৯ রান। ৮৬ বলের ইনিংসে ৬ চার ও ১টি ছক্কা মেরেছেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি ওপেনার।