রানা আব্বাস, ঢাকা
‘আফগানিস্তানের টাকা নেই, আছে বুলেট! ওদের কাছেই আমরা হারি। ২০ (২১) বছর হয়ে গেল, এখনো টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে আমরা নয়ে-দশে আছি’—বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অর্থবিত্তে গত এক দশকে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবস্থান যতটা শক্তিশালী হয়েছে, ব্যাটে-বলে সাফল্যের গ্রাফ ততটা ওপরে ওঠেনি। শুধু সৈয়দ আশরাফ কেন, দেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীরই এই আফসোস হবে।
টাকা ও মাঠের পারফরম্যান্সে অদ্ভুত বৈপরীত্য
গত ১০ বছরে বিসিবির পুঞ্জিভূত তহবিল বা স্থিতি বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ফিক্সড ডিপোজিটে (এফডিআর) বিনিয়োগ করে গত তিন অর্থবছরেই বিসিবি সুদ থেকে আয় করেছে ১৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেই বিসিবির এফডিআর ছিল ৫৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের একটি ক্রীড়া সংস্থার তহবিল বিশাল হলেও ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁদের সাফল্য তুলনামূলক কমই। শীর্ষ ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই (ভারত), ইসিবি (ইংল্যান্ড), সিএ (অস্ট্রেলিয়া)-কে যদি বাদও দেওয়া হয়; বাকিদের চেয়ে সাফল্যের বিবেচনায় পিছিয়েই থাকবে বিসিবি।
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রায় ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকার পরও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ক্যাবিনেটে গত এক দশকে উঠেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো শিরোপা। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছে তারা। পাকিস্তান জিতেছে ২০১২ এশিয়া কাপ।
আর্থিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হতে থাকা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) শোকেসে গত এক দশকে উঠেছে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৪ এশিয়া কাপের ট্রফি। শ্রীলঙ্কা খেলেছে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনাল। আর্থিকভাবে বিসিবির চেয়ে স্পষ্ট দূরত্বে থাকা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি) কদিন আগে ভারতকে হারিয়ে জিতেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে (ডব্লউআইসিবি) সিরিজ আয়োজন করতে হাত পাততে হয় বিসিবির কাছে, তারা টানা দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন (২০১২, ২০১৬)।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা এসেছে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে, সেটিও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত ধরে। তার আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নারী দলের এশিয়া কাপ জয়টাই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিসিবির সবচেয়ে বড় সাফল্য। কিন্তু যে দলকে কেন্দ্র করে বিসিবির এত আয়, নামডাক, মানুষের বিপুল আগ্রহ—যে দল গত এক দশকে সমৃদ্ধ হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো বড় বড় তারকার উপস্থিতিতে; সেই দলের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৯ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়। খোদ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও স্বীকার করছেন আর্থিক শক্তি বাড়ার সমানতালে বাড়েনি মাঠের সাফল্য, ‘শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আমরা তো চ্যাম্পিয়ন নই...।’ তবে তিনি টাকার সঙ্গে সাফল্য মেলাতে আগ্রহী নন। নিজাম উদ্দিন বলছেন, ‘টাকার সঙ্গে (মাঠের) সাফল্যের তুলনা হয় না। এটা তো এমন নয় ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন পেলেন। শেয়ার মার্কেটও এটা না। এখানে একটু সময় দিতে হবে। আমরা হয়তো একটু বেশি সময় নিচ্ছি—এটি বলতে পারেন।’
বড় শিরোপা না জিতলেও বাংলাদেশ দল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সাফল্য অবশ্য পেয়েছে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়, ২০১৭ সালে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার মাঠে টেস্ট সিরিজ ড্র; ২০১২, ২০১৬, ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কিংবা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল তো আছেই, ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারত-পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়—এসব সাফল্য বিসিবিকে সহায়তা করেছে বড় অঙ্কের স্পন্সরশিপ মানি পেতে।
শিরোপা জয়েই নয়, আইসিসির তিন সংস্করণের র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশ দলের বড় অগ্রগতি নেই। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে ওঠাই বাংলাদেশের বড় সাফল্য। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে এখনো নয়-দশ নম্বরেই আটকে আছে বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে দুরবস্থার কারণে দুই মাস পর হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বাছাই পর্বের বৈতরণি পেরোতে হবে স্কটল্যান্ড, ওমান আর পাপুয়া নিউগিনির সঙ্গে খেলে। অথচ আর্থিকভাবে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা নবীন আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে সরাসরি।
উন্নয়নে যেভাবে টাকার ব্যবহার
ক্রিকেটের উন্নয়নের চিত্রটা কেমন হওয়া দরকার, আজকের পত্রিকার কাছে সেটি খোলামেলাই ব্যাখ্যা করলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আমরা একটা দিকে (আর্থিক) উন্নত করেছি, এখন আরেকটি দিকে (মাঠের পারফরম্যান্স) উন্নতি করতে হবে। আমরা কৃচ্ছ্র সাধন করছি, তা নয়। প্রচুর ব্যয় করছি। ফল আসতে সময় লাগবে। পাঁচ-সাত বছর আগে আইসিসিতে বলেছিলাম, আমরা বেশি করে খেলতে চাই। এখন আমরা অনেক ম্যাচ পাচ্ছি। উন্নতি করতে হলে আপনাকে প্রচুর খেলতে হবে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলাম, আয়ারল্যান্ডে ট্রফি জিতলাম—এগুলো উন্নয়নে প্রভাব ফেলে না। আমাদের উন্নয়ন তখন বোঝাবে, যখন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ম্যাচ জিতব, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে জিতব।
বিপুল টাকা থাকার পরও বিসিবির সাফল্য কেন কম, এ প্রশ্নে যে উত্তরটা মিলছে—মিরপুরের বাইরে খেলোয়াড় তৈরির ‘কারখানা’য় ক্রিকেট বোর্ডের বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। বিসিবি খুব একটা ব্যয় করে না জেলা কিংবা বিভাগভিত্তিক ক্রিকেট উন্নয়নে। যদিও গেম ডেভেলপমেন্টে বেশ বড় অঙ্কই বরাদ্দ রাখে বিসিবি। চলতি অর্থবছরেও তাদের বরাদ্দ আছে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্রিকেট উন্নয়নে ব্যয় করেছিল ২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত এক দশকে বিসিবি ক্রিকেট উন্নয়নে গড়ে প্রতি অর্থবছরে ১৬-১৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকলেই এর দ্বিগুণ খরচ করে বিসিবি। সৈয়দ আশরাফের প্রশ্ন, ‘আমাদের কোচ, আম্পায়ারিং এমনকি মাঠকর্মীদের উন্নয়নে কতটা খরচ করছি? এত টাকা যখন আছে, যদি পরিকল্পিতভাবে খরচ করা হতো, গত ১৫ বছরে আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নত হয়ে যেত। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্রিকেট উন্নত করা দরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।’
উন্নয়ন যত ঢাকায়
ভুল বলেননি সৈয়দ আশরাফ। গেম ডেভেলপমেন্টে যে ব্যয় হোক, বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক। বয়সভিত্তিক দলের পরিচর্যা, হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) দল, ক্রিকেট সরঞ্জামাদি কেনা, খেলোয়াড়দের চিকিৎসা, মেয়েদের ক্রিকেট উন্নয়ন, মাঠের উন্নয়ন ইত্যাদি খরচ ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অনেকে তাই রসিকতা করে বিসিবিকে ‘ডিসিবি’ বা ‘ঢাকা ক্রিকেট বোর্ড’ বলেন! অথচ বেশির ভাগ ক্রিকেটার উঠে আসে বিভিন্ন জেলা, প্রান্তিক এলাকা আর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে। গত দুই দশকে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটার পেয়েছে খুলনা অঞ্চল থেকে। অথচ এই অঞ্চলে ক্রিকেটীয় কাঠামো কিংবা সুযোগ-সুবিধা কখনোই ঢাকার সঙ্গে তুলনীয় নয়। যে ঢাকায় এত সুযোগ-সুবিধা, বর্তমান জাতীয় দলে এই শহর থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার আছেন মাত্র তিনজন।
আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে বিসিবি
ঢাকার বাইরের খেলাটার উন্নয়নে বিসিবির ব্যয়ও খুব একটা উল্লেখ করার মতো নয়। গত ১০ বছরে বিসিবি জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেট উন্নয়নে অনুদান কিংবা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে মোট ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। সেটিও নিয়মিত নয়। ২০১১ সালে ১৭ লাখ, ২০১২ সালে ১ কোটি ৪২ লাখ, ২০১৬ সালে ১২ লাখ, ২০১৭ সালে ৩২ লাখ আর ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
ঢাকার বাইরের ক্রিকেট উন্নয়নের ব্যয় নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমরা দিই না (টাকা), কথাটা ঠিক না। যেসব জেলা আমাদের কাছে প্রতি বছরের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেয়, তাদেরকে আমরা একটি অঙ্ক দিই। যারা দেয় না, তাদের হয়তো দিতে পারিনি। আমরা তো সঠিক নিরীক্ষা আর পরিকল্পনা ছাড়া দিতে পারব না। বিভাগীয় বিনিয়োগ তখনই হবে, যখন আঞ্চলিক ক্রিকেটের কাঠামো আরও সুসংগঠিত হবে। যখন প্রত্যেকটা অঞ্চলে একটি ‘‘মিনি বিসিবি’’ থাকবে।’
মিনি বিসিবির ধারণাটা নিজাম উদ্দিন আরও স্পষ্ট করছেন এভাবে, ‘যখন আমরা এটি করতে পারব, তখন হয়তো আমাদের বরাদ্দ আরও বেশি হবে। খরচটা তখন কেন্দ্রীয়ভাবে না হয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা যাবে। ইয়ুথ ক্রিকেট, স্কুল ক্রিকেট তারা করবে। কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে সেখানে আমার একজন ম্যানেজার দিতে পারব। পেশাদার কাঠামো না দাঁড় করালে আসলে ফলপ্রসূ হবে না।’
গত তিন বছরে বিসিবি অবশ্য ‘আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা’র নামে কিছু অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। ২০১৯ সালে এই খাতে ১৭ লাখ ৮৯ হাজার, ২০২০ সালে ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিলেও চলতি অর্থবছরে আকস্মিকভাবে ৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
ক্রিকেট অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিসিবি
অবকাঠামোগত ও মাঠ উন্নয়নে অন্যান্য খাতের তুলনায় বিসিবির ব্যয় কমই বলতে হবে। গত তিন অর্থবছরে বোর্ড স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বেশির ভাগ স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতাধীন। তবে বিসিবি নিজ খরচে তৈরি করতে যাচ্ছে ঢাকার পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির মূল নির্মাণকাজ শুরুর আগেই গত চার বছরে বিসিবির খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর আগে বিসিবি সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে তাদের আওতায় থাকা কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। গত ১০ বছরে এই স্টেডিয়ামে খরচ প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
‘বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা আমাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো উন্নত করব, যেন খেলোয়াড়েরা সুফল পায়। কক্সবাজারে যেমন আমরা একটা ইনডোর করার ব্যবস্থা করতে পারি। বরিশালে ভাঙাচোরা ইনডোরকে উন্নত করতে পারি। কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। এত দিন জিমের সরঞ্জামাদি দেওয়ার মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। (গত দেড় বছরে) অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে আমরা যেতে পারিনি শুধুমাত্র মহামারির কারণে। আমাদের পরিকল্পনা কিন্তু আছে’—নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলছিলেন আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে তাঁদের পরিকল্পনার কথা।
খেলোয়াড় তৈরি হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হচ্ছে জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোর টুর্নামেন্ট। প্রতিটি জেলা কিংবা বিভাগে টুর্নামেন্ট আয়োজন বিসিবির পক্ষে সম্ভব নয়, এই যুক্তি সামনে আসতে পারে। কিন্তু বিসিবির অধীনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের মান নিয়ে গত কয়েক বছরে নিয়মিতই উঠেছে প্রশ্ন। সবচেয়ে নিচে থাকা তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগ থেকে ২০১১ ও ২০১২ সালে বিসিবির আয় ছিল ২২ লাখ টাকা। ২০১৯ ও ২০২০ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকায়।
তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগ থেকে আয়টা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা সময় বাছাইটা ছিল ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ৪০-৫০টা ক্লাব নির্ধারিত এন্ট্রি ফি দিয়ে অংশ নিত তৃতীয় বিভাগে ওঠার লড়াইয়ে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই উঠে আসত অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এটিই একজন পেশাদার ক্রিকেটারের প্রথম ধাপ। এখন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা লিগটার মর্যাদা নেই বলে অনেক পৃষ্ঠপোষক আর দল গড়ার আগ্রহ খুঁজে পান না। নামে মাত্র দুটি দল এন্ট্রি ফি দিয়ে চলে আসে তৃতীয় বিভাগে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবশ্য মনে করেন, তৃতীয় বিভাগে না পারলেও প্রতিভার প্রমাণ দেওয়ার আরও মঞ্চ আছে দেশের ক্রিকেটে, ‘আগে ক্লাব বেচা-কেনার সুযোগ ছিল। বোর্ড সেই বেচা-কেনার সুযোগ দেবে কেন? এটি হয়তো থামানো গেছে। আবার এটির অন্য প্রভাবও যে নেই, বলব না। হয়তো আমরা ট্যালেন্ট মিস করছি। কিন্তু ট্যালেন্টদের প্রমাণ করার অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। স্কুল ক্রিকেট আছে। সেখানেও প্রতিভার প্রমাণ হতে পারে।’
এফডিআরের সুদ, আইসিসি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ কিংবা স্পনসরশিপ মানি—সব মিলিয়ে বিপুল অর্থে বিসিবির ওপরের দিকটা উজ্জ্বল। কিন্তু মূল খেলা অবহেলিত থাকলে সৈয়দ আশরাফুল হকদের দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘায়িত হবে।
আরও পড়ুন:
ক্রিকেট বিশ্বে পঞ্চম ধনী বিসিবি
‘আফগানিস্তানের টাকা নেই, আছে বুলেট! ওদের কাছেই আমরা হারি। ২০ (২১) বছর হয়ে গেল, এখনো টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে আমরা নয়ে-দশে আছি’—বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অর্থবিত্তে গত এক দশকে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবস্থান যতটা শক্তিশালী হয়েছে, ব্যাটে-বলে সাফল্যের গ্রাফ ততটা ওপরে ওঠেনি। শুধু সৈয়দ আশরাফ কেন, দেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীরই এই আফসোস হবে।
টাকা ও মাঠের পারফরম্যান্সে অদ্ভুত বৈপরীত্য
গত ১০ বছরে বিসিবির পুঞ্জিভূত তহবিল বা স্থিতি বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ফিক্সড ডিপোজিটে (এফডিআর) বিনিয়োগ করে গত তিন অর্থবছরেই বিসিবি সুদ থেকে আয় করেছে ১৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেই বিসিবির এফডিআর ছিল ৫৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের একটি ক্রীড়া সংস্থার তহবিল বিশাল হলেও ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁদের সাফল্য তুলনামূলক কমই। শীর্ষ ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই (ভারত), ইসিবি (ইংল্যান্ড), সিএ (অস্ট্রেলিয়া)-কে যদি বাদও দেওয়া হয়; বাকিদের চেয়ে সাফল্যের বিবেচনায় পিছিয়েই থাকবে বিসিবি।
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রায় ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকার পরও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ক্যাবিনেটে গত এক দশকে উঠেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো শিরোপা। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছে তারা। পাকিস্তান জিতেছে ২০১২ এশিয়া কাপ।
আর্থিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হতে থাকা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) শোকেসে গত এক দশকে উঠেছে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৪ এশিয়া কাপের ট্রফি। শ্রীলঙ্কা খেলেছে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনাল। আর্থিকভাবে বিসিবির চেয়ে স্পষ্ট দূরত্বে থাকা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি) কদিন আগে ভারতকে হারিয়ে জিতেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে (ডব্লউআইসিবি) সিরিজ আয়োজন করতে হাত পাততে হয় বিসিবির কাছে, তারা টানা দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন (২০১২, ২০১৬)।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা এসেছে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে, সেটিও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত ধরে। তার আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নারী দলের এশিয়া কাপ জয়টাই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিসিবির সবচেয়ে বড় সাফল্য। কিন্তু যে দলকে কেন্দ্র করে বিসিবির এত আয়, নামডাক, মানুষের বিপুল আগ্রহ—যে দল গত এক দশকে সমৃদ্ধ হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো বড় বড় তারকার উপস্থিতিতে; সেই দলের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৯ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়। খোদ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও স্বীকার করছেন আর্থিক শক্তি বাড়ার সমানতালে বাড়েনি মাঠের সাফল্য, ‘শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আমরা তো চ্যাম্পিয়ন নই...।’ তবে তিনি টাকার সঙ্গে সাফল্য মেলাতে আগ্রহী নন। নিজাম উদ্দিন বলছেন, ‘টাকার সঙ্গে (মাঠের) সাফল্যের তুলনা হয় না। এটা তো এমন নয় ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন পেলেন। শেয়ার মার্কেটও এটা না। এখানে একটু সময় দিতে হবে। আমরা হয়তো একটু বেশি সময় নিচ্ছি—এটি বলতে পারেন।’
বড় শিরোপা না জিতলেও বাংলাদেশ দল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সাফল্য অবশ্য পেয়েছে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়, ২০১৭ সালে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার মাঠে টেস্ট সিরিজ ড্র; ২০১২, ২০১৬, ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কিংবা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল তো আছেই, ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারত-পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়—এসব সাফল্য বিসিবিকে সহায়তা করেছে বড় অঙ্কের স্পন্সরশিপ মানি পেতে।
শিরোপা জয়েই নয়, আইসিসির তিন সংস্করণের র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশ দলের বড় অগ্রগতি নেই। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে ওঠাই বাংলাদেশের বড় সাফল্য। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে এখনো নয়-দশ নম্বরেই আটকে আছে বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে দুরবস্থার কারণে দুই মাস পর হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বাছাই পর্বের বৈতরণি পেরোতে হবে স্কটল্যান্ড, ওমান আর পাপুয়া নিউগিনির সঙ্গে খেলে। অথচ আর্থিকভাবে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা নবীন আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে সরাসরি।
উন্নয়নে যেভাবে টাকার ব্যবহার
ক্রিকেটের উন্নয়নের চিত্রটা কেমন হওয়া দরকার, আজকের পত্রিকার কাছে সেটি খোলামেলাই ব্যাখ্যা করলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আমরা একটা দিকে (আর্থিক) উন্নত করেছি, এখন আরেকটি দিকে (মাঠের পারফরম্যান্স) উন্নতি করতে হবে। আমরা কৃচ্ছ্র সাধন করছি, তা নয়। প্রচুর ব্যয় করছি। ফল আসতে সময় লাগবে। পাঁচ-সাত বছর আগে আইসিসিতে বলেছিলাম, আমরা বেশি করে খেলতে চাই। এখন আমরা অনেক ম্যাচ পাচ্ছি। উন্নতি করতে হলে আপনাকে প্রচুর খেলতে হবে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলাম, আয়ারল্যান্ডে ট্রফি জিতলাম—এগুলো উন্নয়নে প্রভাব ফেলে না। আমাদের উন্নয়ন তখন বোঝাবে, যখন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ম্যাচ জিতব, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে জিতব।
বিপুল টাকা থাকার পরও বিসিবির সাফল্য কেন কম, এ প্রশ্নে যে উত্তরটা মিলছে—মিরপুরের বাইরে খেলোয়াড় তৈরির ‘কারখানা’য় ক্রিকেট বোর্ডের বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। বিসিবি খুব একটা ব্যয় করে না জেলা কিংবা বিভাগভিত্তিক ক্রিকেট উন্নয়নে। যদিও গেম ডেভেলপমেন্টে বেশ বড় অঙ্কই বরাদ্দ রাখে বিসিবি। চলতি অর্থবছরেও তাদের বরাদ্দ আছে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্রিকেট উন্নয়নে ব্যয় করেছিল ২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত এক দশকে বিসিবি ক্রিকেট উন্নয়নে গড়ে প্রতি অর্থবছরে ১৬-১৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকলেই এর দ্বিগুণ খরচ করে বিসিবি। সৈয়দ আশরাফের প্রশ্ন, ‘আমাদের কোচ, আম্পায়ারিং এমনকি মাঠকর্মীদের উন্নয়নে কতটা খরচ করছি? এত টাকা যখন আছে, যদি পরিকল্পিতভাবে খরচ করা হতো, গত ১৫ বছরে আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নত হয়ে যেত। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্রিকেট উন্নত করা দরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।’
উন্নয়ন যত ঢাকায়
ভুল বলেননি সৈয়দ আশরাফ। গেম ডেভেলপমেন্টে যে ব্যয় হোক, বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক। বয়সভিত্তিক দলের পরিচর্যা, হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) দল, ক্রিকেট সরঞ্জামাদি কেনা, খেলোয়াড়দের চিকিৎসা, মেয়েদের ক্রিকেট উন্নয়ন, মাঠের উন্নয়ন ইত্যাদি খরচ ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অনেকে তাই রসিকতা করে বিসিবিকে ‘ডিসিবি’ বা ‘ঢাকা ক্রিকেট বোর্ড’ বলেন! অথচ বেশির ভাগ ক্রিকেটার উঠে আসে বিভিন্ন জেলা, প্রান্তিক এলাকা আর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে। গত দুই দশকে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটার পেয়েছে খুলনা অঞ্চল থেকে। অথচ এই অঞ্চলে ক্রিকেটীয় কাঠামো কিংবা সুযোগ-সুবিধা কখনোই ঢাকার সঙ্গে তুলনীয় নয়। যে ঢাকায় এত সুযোগ-সুবিধা, বর্তমান জাতীয় দলে এই শহর থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার আছেন মাত্র তিনজন।
আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে বিসিবি
ঢাকার বাইরের খেলাটার উন্নয়নে বিসিবির ব্যয়ও খুব একটা উল্লেখ করার মতো নয়। গত ১০ বছরে বিসিবি জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেট উন্নয়নে অনুদান কিংবা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে মোট ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। সেটিও নিয়মিত নয়। ২০১১ সালে ১৭ লাখ, ২০১২ সালে ১ কোটি ৪২ লাখ, ২০১৬ সালে ১২ লাখ, ২০১৭ সালে ৩২ লাখ আর ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
ঢাকার বাইরের ক্রিকেট উন্নয়নের ব্যয় নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমরা দিই না (টাকা), কথাটা ঠিক না। যেসব জেলা আমাদের কাছে প্রতি বছরের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেয়, তাদেরকে আমরা একটি অঙ্ক দিই। যারা দেয় না, তাদের হয়তো দিতে পারিনি। আমরা তো সঠিক নিরীক্ষা আর পরিকল্পনা ছাড়া দিতে পারব না। বিভাগীয় বিনিয়োগ তখনই হবে, যখন আঞ্চলিক ক্রিকেটের কাঠামো আরও সুসংগঠিত হবে। যখন প্রত্যেকটা অঞ্চলে একটি ‘‘মিনি বিসিবি’’ থাকবে।’
মিনি বিসিবির ধারণাটা নিজাম উদ্দিন আরও স্পষ্ট করছেন এভাবে, ‘যখন আমরা এটি করতে পারব, তখন হয়তো আমাদের বরাদ্দ আরও বেশি হবে। খরচটা তখন কেন্দ্রীয়ভাবে না হয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা যাবে। ইয়ুথ ক্রিকেট, স্কুল ক্রিকেট তারা করবে। কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে সেখানে আমার একজন ম্যানেজার দিতে পারব। পেশাদার কাঠামো না দাঁড় করালে আসলে ফলপ্রসূ হবে না।’
গত তিন বছরে বিসিবি অবশ্য ‘আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা’র নামে কিছু অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। ২০১৯ সালে এই খাতে ১৭ লাখ ৮৯ হাজার, ২০২০ সালে ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিলেও চলতি অর্থবছরে আকস্মিকভাবে ৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
ক্রিকেট অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিসিবি
অবকাঠামোগত ও মাঠ উন্নয়নে অন্যান্য খাতের তুলনায় বিসিবির ব্যয় কমই বলতে হবে। গত তিন অর্থবছরে বোর্ড স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বেশির ভাগ স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতাধীন। তবে বিসিবি নিজ খরচে তৈরি করতে যাচ্ছে ঢাকার পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির মূল নির্মাণকাজ শুরুর আগেই গত চার বছরে বিসিবির খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর আগে বিসিবি সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে তাদের আওতায় থাকা কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। গত ১০ বছরে এই স্টেডিয়ামে খরচ প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
‘বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা আমাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো উন্নত করব, যেন খেলোয়াড়েরা সুফল পায়। কক্সবাজারে যেমন আমরা একটা ইনডোর করার ব্যবস্থা করতে পারি। বরিশালে ভাঙাচোরা ইনডোরকে উন্নত করতে পারি। কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। এত দিন জিমের সরঞ্জামাদি দেওয়ার মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। (গত দেড় বছরে) অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে আমরা যেতে পারিনি শুধুমাত্র মহামারির কারণে। আমাদের পরিকল্পনা কিন্তু আছে’—নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলছিলেন আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে তাঁদের পরিকল্পনার কথা।
খেলোয়াড় তৈরি হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হচ্ছে জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোর টুর্নামেন্ট। প্রতিটি জেলা কিংবা বিভাগে টুর্নামেন্ট আয়োজন বিসিবির পক্ষে সম্ভব নয়, এই যুক্তি সামনে আসতে পারে। কিন্তু বিসিবির অধীনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের মান নিয়ে গত কয়েক বছরে নিয়মিতই উঠেছে প্রশ্ন। সবচেয়ে নিচে থাকা তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগ থেকে ২০১১ ও ২০১২ সালে বিসিবির আয় ছিল ২২ লাখ টাকা। ২০১৯ ও ২০২০ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকায়।
তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগ থেকে আয়টা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা সময় বাছাইটা ছিল ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ৪০-৫০টা ক্লাব নির্ধারিত এন্ট্রি ফি দিয়ে অংশ নিত তৃতীয় বিভাগে ওঠার লড়াইয়ে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই উঠে আসত অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এটিই একজন পেশাদার ক্রিকেটারের প্রথম ধাপ। এখন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা লিগটার মর্যাদা নেই বলে অনেক পৃষ্ঠপোষক আর দল গড়ার আগ্রহ খুঁজে পান না। নামে মাত্র দুটি দল এন্ট্রি ফি দিয়ে চলে আসে তৃতীয় বিভাগে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবশ্য মনে করেন, তৃতীয় বিভাগে না পারলেও প্রতিভার প্রমাণ দেওয়ার আরও মঞ্চ আছে দেশের ক্রিকেটে, ‘আগে ক্লাব বেচা-কেনার সুযোগ ছিল। বোর্ড সেই বেচা-কেনার সুযোগ দেবে কেন? এটি হয়তো থামানো গেছে। আবার এটির অন্য প্রভাবও যে নেই, বলব না। হয়তো আমরা ট্যালেন্ট মিস করছি। কিন্তু ট্যালেন্টদের প্রমাণ করার অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। স্কুল ক্রিকেট আছে। সেখানেও প্রতিভার প্রমাণ হতে পারে।’
এফডিআরের সুদ, আইসিসি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ কিংবা স্পনসরশিপ মানি—সব মিলিয়ে বিপুল অর্থে বিসিবির ওপরের দিকটা উজ্জ্বল। কিন্তু মূল খেলা অবহেলিত থাকলে সৈয়দ আশরাফুল হকদের দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘায়িত হবে।
আরও পড়ুন:
ক্রিকেট বিশ্বে পঞ্চম ধনী বিসিবি
সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে অ্যান্টিগায় প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে নেমেছে বাংলাদেশ দল। সফরকারী বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার যেন এখনো ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে না
১০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে ক্রীড়াবান্ধব প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। ফুটবল দলের সদস্যসহ কোচিং স্টাফ-সাপোর্ট স্টাফ মিলিয়ে ৩২ জনকে ফ্রিজ উপহার দিয়েছে তারা। আজ বিকেলে মতিঝিলের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১১ ঘণ্টা আগেসরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকদের বেশির ভাগই আড়ালে চলে যান। সভাপতির পদ ছাড়েন নাজমুল হাসান পাপন। পদ হারান আরও ১০ পরিচালক। কয়েকজন করেছেন পদত্যাগ।
১২ ঘণ্টা আগে