চিররঞ্জন সরকার
ধনী হওয়ার বা কোটিপতি হওয়ার ইচ্ছে সব মানুষেরই থাকে। কিন্তু সবাই ধনী হতে পারে না। কেউ চেষ্টা করে সফল হয়, কেউবা বৃথা চেষ্টা করে যায়। সঠিক উপায় জানা না থাকায় ধনী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না তারা। ধনী হওয়ার জন্য কায়দা-কানুন জানতে হয়, কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সঠিক পদ্ধতি বা কায়দা-কানুনের প্রয়োগ করতে পারলে আপনি সহজে ধনী হতে পারবেন। এ জন্য আপনার অপরিসীম লোভ ও টাকার ক্ষুধা থাকতে হবে। লাজলজ্জা, ভয়, বিবেকের দংশন বিসর্জন দিতে হবে। প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
নানা ফিকিরে ধনী হওয়া ব্যক্তিদের অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। এই তালিকায় স্বাস্থ্য বিভাগের ড্রাইভার, আওয়ামী লীগের অফিসের কম্পিউটার অপারেটর, পুলিশের কনস্টেবল, সোনালী ব্যাংকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, শিক্ষা ভবনের কেরানি, বিমানবন্দরের সুইপার, কাস্টম অফিসের পিয়নও আছেন। সর্বশেষ এই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও একজন গুণধর ব্যক্তির নাম। ২০০১ সালে টেকনাফ বন্দরে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি করতেন তিনি। তখন তাঁর বেতন ছিল মাত্র ১৩০ টাকা। ৯ বছর পর চাকরি ছেড়ে দেন। মাঝের এই কয়েক বছরে তাঁর সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৬০ কোটি টাকা। নুরুল ইসলাম তাঁর নাম।
র্যাবের ভাষ্যমতে, নুরুল টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। তাঁর সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছেন। যাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালির কার্যক্রমগুলো করে থাকেন। এই সিন্ডিকেট পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথে অবৈধ মালামাল খালাস করত। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি মাছ, বরইয়ের আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হতো। চক্রের সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাকস্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতেন।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টেকনাফ বন্দরের একসময়কার সামান্য কম্পিউটার অপারেটর থেকে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নুরুল ইসলামের ঢাকায় ৬টি বাড়ি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৭৩ কোটি টাকা। বাড়ির পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি প্লট আছে, যার মূল্য ১৬৫ কোটি টাকা। ৪টি রিকশার গ্যারেজ আছে, যার মূল্য ৩১ কোটি টাকা। সাভারে আছে ৭টি জমি, যার মূল্য ১১৮ কোটি টাকা। টেকনাফ শহরে আছে জমিসহ বাগানবাড়ি, যার দাম ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভালো ২টি জমি আছে, যার দাম ১২ কোটি টাকা। সেন্ট মার্টিনে নুরুলের যে জমি রয়েছে তার দাম ১২ কোটি টাকা। নুরুলের স্ত্রীর রয়েছে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি। আর নুরুলের ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
নুরুল ইসলামের বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভব অর্জনের কাহিনি পড়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, বন্দরের একজন কম্পিউটার অপারেটরই যদি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দালালি, অবৈধ পণ্য আমদানি-রপ্তানি, চোরাচালান ইত্যাদির মাধ্যমে এত টাকার মালিক হতে পারেন, তাহলে বড় বড় ‘স্যার’দের কী অবস্থা? তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ কত? তাঁদের সংখ্যাই বা কত? ‘বড়’দের প্রশ্রয়-সান্নিধ্য-অনুমোদন-যোগসাজশ ছাড়া ‘ছোট’রা কখনো এত বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হতে পারে? দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অবহেলা, অযোগ্যতা, সহযোগিতা, প্রশ্রয়, ঘুষের বিনিময়ে সুবিধা করে দেওয়া ছাড়া
স্রেফ একা একা নিজের বুদ্ধির জোরে কেউ এত টাকার মালিক হতে পারে না, হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের খুঁজে বের করা হবে কি?
আমাদের সমাজে অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষের মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ খুব দ্রুতই ফুলেফেঁপে উঠছে। সরকারি চাকরিজীবীদের কাছে ঘুষ খাওয়া তো এখন পানি পান করার মতো সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অবশ্য ঘুষ নিয়ে তেমন কিছু বলারও নেই। এটা একেবারেই আমাদের মজ্জায় মিশে গেছে এবং অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে জিনিসটার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ দরকার সেই গণতন্ত্র এখনো কেবল বুলিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও ঘুষ-দুর্নীতির পুরোপুরি ‘প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ ঘটে গেছে। এর অবশ্য কারণও আছে। এখানকার মানুষের খাই-খাই স্বভাবটা একটু বেশি। সুযোগও অবারিত। এ দেশে কমবেশি সবাই ঘুষ ও গ্যাস খায়! নেতা টু অভিনেতা, সাদা টু কালো, লম্বু টু বাঁটকুল, গদি টু ফুটপাত, হিজ এক্সেলেন্সি টু হার ম্যাজেস্ট্রি।
দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোরদের অনেকের মধ্যে আবার পরোকালভীতি আছে। তেমন একজনের কাহিনি জানি। ভদ্রলোক প্রচণ্ড রকম আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। সরকারি রাস্তা বানাতেন তিনি। তাই সেই দপ্তরের ওপরওলা ইঞ্জিনিয়ার টু এলাকার জনপ্রতিনিধি কাম সমাজসেবী ভাই— সবাইকে তুষ্ট রাখতে হতো তাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তার কোয়ালিটি চটকে চামচিকে হয়ে যেত দুদিনেই। আবার টেন্ডার ডাকা হতো। আবার তিনি কাজ পেতেন। এ রকমভাবেই চলছিল। কিন্তু ওয়ান ফাইন মর্নিং তাঁর সব কাজের বারোটা বেজে গেল। কারণ, সরকারেরই লালবাতি জ্বলে গেল। কদিন পরে লোকটির চেহারাও পুরো অ্যানিমিয়াটিক হয়ে গেল। চিন্তায় চিন্তায় সুগার এল সুড়সুড় করে। হাইপারটেনশন ধরল হুড়মুড় করে। বেকায়দা পরিস্থিতিতে পড়ে তিনি এক ‘বাবা’র দরবারে কান্নাকাটি করতে বসলেন। কাতরভাবে মানত করলেন, হে বাবা মহারাজ, হারামি ওই অফিসে তিরিশ লাখ টাকার বিল বাকি পড়ে রয়েছে। অন্তত পনেরো লাখ এখনই পাইয়ে দাও বাবা। তা হলে কথা দিয়ে যাচ্ছি, তোমার জন্য আমি অবশ্যই অর্ধেক টাকা, মানে পুরো সাড়ে সাত লাখ টাকা দান করে দেব! এরপর কান্নাকাটি, ধূপ, দীপ ইত্যাদি!
অলৌকিকভাবে ‘বাবা’র কেরামতিতে দুদিন পরেই কন্ট্রাকটর সাহেবের ডাক পড়ল সেই অফিসে। হেড ক্লার্ক তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি সাড়ে সাত লাখ টাকার চেক।
কন্ট্রাকটর সাহেব বিগলিত হলেন। বহুদিন তিনি এত টাকা চোখে দেখেননি। ‘বাবা’কে তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন। তারপর চেকটি নিয়ে অফিসের বারান্দা থেকে তাঁর প্রতি ভক্তি গদগদ হয়ে বললেন, হে মহান বাবা, আমার কথা শুনে তুমি সেই টাকাই দিলে, কিন্তু আমাকে একটুও বিশ্বাস করতে পারলে না? নিজের পুরো সাড়ে সাত লাখ টাকা আগেই কেটে রেখে দিলে?
পুনশ্চ যাঁরা খুব ছোট পদে চাকরি করছেন বলে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন, অল্প বেতন পান বলে হা-হুতাশ করেন, তাঁরা কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামের পথ অবলম্বন করতে পারেন। বড়লোক হওয়ার এমন সহজ সুযোগ বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও পাবেন না! ধরা পড়লে বা ফেঁসে গেলে কী হবে? তেমন কিছুই না! বড়জোর দু-চার বছরের জেল। যাবজ্জীবন হলেই-বা ক্ষতি কী? একদিন তো মরেই যাবেন!
আরেকটি কথা। ১৩০ টাকা দৈনিক মজুরির চাকরি করে যে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক বনে যেতে পারে, তার মাথায় নিশ্চয়ই অনেক বুদ্ধি আছে। তাকে যেকোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলে সে মন্ত্রণালয়ে আর অর্থের অভাব হওয়ার কথা নয়।
লেখক: গবেষক, রম্যলেখক
ধনী হওয়ার বা কোটিপতি হওয়ার ইচ্ছে সব মানুষেরই থাকে। কিন্তু সবাই ধনী হতে পারে না। কেউ চেষ্টা করে সফল হয়, কেউবা বৃথা চেষ্টা করে যায়। সঠিক উপায় জানা না থাকায় ধনী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না তারা। ধনী হওয়ার জন্য কায়দা-কানুন জানতে হয়, কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সঠিক পদ্ধতি বা কায়দা-কানুনের প্রয়োগ করতে পারলে আপনি সহজে ধনী হতে পারবেন। এ জন্য আপনার অপরিসীম লোভ ও টাকার ক্ষুধা থাকতে হবে। লাজলজ্জা, ভয়, বিবেকের দংশন বিসর্জন দিতে হবে। প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
নানা ফিকিরে ধনী হওয়া ব্যক্তিদের অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। এই তালিকায় স্বাস্থ্য বিভাগের ড্রাইভার, আওয়ামী লীগের অফিসের কম্পিউটার অপারেটর, পুলিশের কনস্টেবল, সোনালী ব্যাংকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, শিক্ষা ভবনের কেরানি, বিমানবন্দরের সুইপার, কাস্টম অফিসের পিয়নও আছেন। সর্বশেষ এই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও একজন গুণধর ব্যক্তির নাম। ২০০১ সালে টেকনাফ বন্দরে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি করতেন তিনি। তখন তাঁর বেতন ছিল মাত্র ১৩০ টাকা। ৯ বছর পর চাকরি ছেড়ে দেন। মাঝের এই কয়েক বছরে তাঁর সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৬০ কোটি টাকা। নুরুল ইসলাম তাঁর নাম।
র্যাবের ভাষ্যমতে, নুরুল টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। তাঁর সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছেন। যাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালির কার্যক্রমগুলো করে থাকেন। এই সিন্ডিকেট পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথে অবৈধ মালামাল খালাস করত। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি মাছ, বরইয়ের আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হতো। চক্রের সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাকস্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতেন।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টেকনাফ বন্দরের একসময়কার সামান্য কম্পিউটার অপারেটর থেকে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নুরুল ইসলামের ঢাকায় ৬টি বাড়ি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৭৩ কোটি টাকা। বাড়ির পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি প্লট আছে, যার মূল্য ১৬৫ কোটি টাকা। ৪টি রিকশার গ্যারেজ আছে, যার মূল্য ৩১ কোটি টাকা। সাভারে আছে ৭টি জমি, যার মূল্য ১১৮ কোটি টাকা। টেকনাফ শহরে আছে জমিসহ বাগানবাড়ি, যার দাম ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভালো ২টি জমি আছে, যার দাম ১২ কোটি টাকা। সেন্ট মার্টিনে নুরুলের যে জমি রয়েছে তার দাম ১২ কোটি টাকা। নুরুলের স্ত্রীর রয়েছে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি। আর নুরুলের ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
নুরুল ইসলামের বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভব অর্জনের কাহিনি পড়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, বন্দরের একজন কম্পিউটার অপারেটরই যদি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দালালি, অবৈধ পণ্য আমদানি-রপ্তানি, চোরাচালান ইত্যাদির মাধ্যমে এত টাকার মালিক হতে পারেন, তাহলে বড় বড় ‘স্যার’দের কী অবস্থা? তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ কত? তাঁদের সংখ্যাই বা কত? ‘বড়’দের প্রশ্রয়-সান্নিধ্য-অনুমোদন-যোগসাজশ ছাড়া ‘ছোট’রা কখনো এত বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হতে পারে? দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অবহেলা, অযোগ্যতা, সহযোগিতা, প্রশ্রয়, ঘুষের বিনিময়ে সুবিধা করে দেওয়া ছাড়া
স্রেফ একা একা নিজের বুদ্ধির জোরে কেউ এত টাকার মালিক হতে পারে না, হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের খুঁজে বের করা হবে কি?
আমাদের সমাজে অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষের মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ খুব দ্রুতই ফুলেফেঁপে উঠছে। সরকারি চাকরিজীবীদের কাছে ঘুষ খাওয়া তো এখন পানি পান করার মতো সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অবশ্য ঘুষ নিয়ে তেমন কিছু বলারও নেই। এটা একেবারেই আমাদের মজ্জায় মিশে গেছে এবং অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে জিনিসটার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ দরকার সেই গণতন্ত্র এখনো কেবল বুলিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও ঘুষ-দুর্নীতির পুরোপুরি ‘প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ ঘটে গেছে। এর অবশ্য কারণও আছে। এখানকার মানুষের খাই-খাই স্বভাবটা একটু বেশি। সুযোগও অবারিত। এ দেশে কমবেশি সবাই ঘুষ ও গ্যাস খায়! নেতা টু অভিনেতা, সাদা টু কালো, লম্বু টু বাঁটকুল, গদি টু ফুটপাত, হিজ এক্সেলেন্সি টু হার ম্যাজেস্ট্রি।
দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোরদের অনেকের মধ্যে আবার পরোকালভীতি আছে। তেমন একজনের কাহিনি জানি। ভদ্রলোক প্রচণ্ড রকম আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। সরকারি রাস্তা বানাতেন তিনি। তাই সেই দপ্তরের ওপরওলা ইঞ্জিনিয়ার টু এলাকার জনপ্রতিনিধি কাম সমাজসেবী ভাই— সবাইকে তুষ্ট রাখতে হতো তাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তার কোয়ালিটি চটকে চামচিকে হয়ে যেত দুদিনেই। আবার টেন্ডার ডাকা হতো। আবার তিনি কাজ পেতেন। এ রকমভাবেই চলছিল। কিন্তু ওয়ান ফাইন মর্নিং তাঁর সব কাজের বারোটা বেজে গেল। কারণ, সরকারেরই লালবাতি জ্বলে গেল। কদিন পরে লোকটির চেহারাও পুরো অ্যানিমিয়াটিক হয়ে গেল। চিন্তায় চিন্তায় সুগার এল সুড়সুড় করে। হাইপারটেনশন ধরল হুড়মুড় করে। বেকায়দা পরিস্থিতিতে পড়ে তিনি এক ‘বাবা’র দরবারে কান্নাকাটি করতে বসলেন। কাতরভাবে মানত করলেন, হে বাবা মহারাজ, হারামি ওই অফিসে তিরিশ লাখ টাকার বিল বাকি পড়ে রয়েছে। অন্তত পনেরো লাখ এখনই পাইয়ে দাও বাবা। তা হলে কথা দিয়ে যাচ্ছি, তোমার জন্য আমি অবশ্যই অর্ধেক টাকা, মানে পুরো সাড়ে সাত লাখ টাকা দান করে দেব! এরপর কান্নাকাটি, ধূপ, দীপ ইত্যাদি!
অলৌকিকভাবে ‘বাবা’র কেরামতিতে দুদিন পরেই কন্ট্রাকটর সাহেবের ডাক পড়ল সেই অফিসে। হেড ক্লার্ক তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি সাড়ে সাত লাখ টাকার চেক।
কন্ট্রাকটর সাহেব বিগলিত হলেন। বহুদিন তিনি এত টাকা চোখে দেখেননি। ‘বাবা’কে তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন। তারপর চেকটি নিয়ে অফিসের বারান্দা থেকে তাঁর প্রতি ভক্তি গদগদ হয়ে বললেন, হে মহান বাবা, আমার কথা শুনে তুমি সেই টাকাই দিলে, কিন্তু আমাকে একটুও বিশ্বাস করতে পারলে না? নিজের পুরো সাড়ে সাত লাখ টাকা আগেই কেটে রেখে দিলে?
পুনশ্চ যাঁরা খুব ছোট পদে চাকরি করছেন বলে হীনম্মন্যতায় ভুগছেন, অল্প বেতন পান বলে হা-হুতাশ করেন, তাঁরা কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামের পথ অবলম্বন করতে পারেন। বড়লোক হওয়ার এমন সহজ সুযোগ বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও পাবেন না! ধরা পড়লে বা ফেঁসে গেলে কী হবে? তেমন কিছুই না! বড়জোর দু-চার বছরের জেল। যাবজ্জীবন হলেই-বা ক্ষতি কী? একদিন তো মরেই যাবেন!
আরেকটি কথা। ১৩০ টাকা দৈনিক মজুরির চাকরি করে যে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক বনে যেতে পারে, তার মাথায় নিশ্চয়ই অনেক বুদ্ধি আছে। তাকে যেকোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলে সে মন্ত্রণালয়ে আর অর্থের অভাব হওয়ার কথা নয়।
লেখক: গবেষক, রম্যলেখক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৩ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৪ ঘণ্টা আগে