অজয় দাশগুপ্ত
শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েও তিনি মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাশাপাশি স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বিরোধী পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ কাজ ছিল না। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেই চেষ্টাই করেছিলেন।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: কাছ থেকে দেখা, পৃষ্ঠা ৯৬]
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তিলাভ করেন। এর কিছুদিন পর অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম তাঁর ‘অর্থনৈতিক নীতিমালা রচনা ও সেসবের ব্যাখ্যা দান করা’ টিমের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তিনি লিখেছেন, যেকোনো জটিল নীতিসংক্রান্ত বিষয় তিনি খুব দ্রুত ধরে ফেলতে ও উপলব্ধি করতে পারতেন। কীভাবে কাজটি করতে হবে, সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারতেন।’ [পৃষ্ঠা ৯২]
এমনই একটি বিষয় ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে জেনেছিলাম খ্যাতিমান আইনজীবী ড. কামাল হোসেন এবং ১৯৭৫ সালে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে। সিলেটের হরিপুর তেলক্ষেত্র উন্নয়নের ভার রাষ্ট্রপতি এরশাদ দেন ‘সিমিটার’ নামের একটি বিদেশি কোম্পানিকে। এর পরিবর্তে এ দায়িত্ব বাপেক্সকে অর্পণের দাবি নিয়ে ঢাকা-সিলেট পদযাত্রা শেষে যুব ইউনিয়ন একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। দুজনেই ছিলেন তার সদস্য। ড. কামাল হোসেনের বাসায় কমিশনের বৈঠকে হাবিবুর রহমান কীভাবে বঙ্গবন্ধু শেল অয়েলের গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা বাংলাদেশের অধীনে নিয়ে আসেন, সেটা বলেন এভাবে—শেল অয়েলের লিজ ১৯৭৫ সালের আগস্টের প্রথম দিকে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিজ নবায়নে আবেদন করেনি। বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকে অবগত করার পর সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাবিবুর রহমানসহ পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘লুকিয়ে’ পড়তে বলেন, যাতে শেল অয়েল সময়মতো লিজ নবায়ন করতে না পারে। সে সময় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম চড়া ছিল। ৯ আগস্ট (১৯৭৫) বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন—শেল অয়েলের মালিকানাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির মালিক আজ থেকে বাংলাদেশ।
এইচ টি ইমাম ‘বাংলাদেশ সরকার: ১৯৭১-৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন, শেল অয়েল কোম্পানিকে কিছু ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হয়, যার পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি টাকারও কম। কিন্তু ২০১০ সালে এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা ও ভবিষ্যতে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মূল্য নিরূপণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। [পৃষ্ঠা ১৩৫]
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালিত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে একটি চিঠি লেখেন ১৪ জুন (১৯৫২)। এই চিঠির একটি বাক্য ছিল এভাবে— ‘Please don’t think for me. I have born to suffer.’ [গোয়েন্দা রিপোর্ট, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৮]
কষ্ট সহ্য তিনি করেছেন, যাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভালো থাকে। নিজের জন্য ভাবেননি। পরিবারের জন্যও ভাবেননি। ভেবেছেন দেশের কথা। খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. জিল্লুর রহমান খান লিখেছেন, ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে ঘাতকেরা উদ্যত মারণাস্ত্র নিয়ে তাঁর সামনে এলে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘যদি বাঙালিরা তাদের জাতির পিতাকে হত্যা করতে চায়, তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু এর পরিণতি বাঙালিদের জন্য শুভ হবে না। তাদের জীবন কখনোই আগের মতো হবে না এবং তাঁকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রকেও তারা হত্যা করবে এবং মানবিকতা বিদায় নেবে।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার সংগ্রাম, পৃষ্ঠা ২৬১]
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্তত ২ হাজার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে—এ তথ্য জানিয়েছেন অনলাইনে বই সরবরাহ করে সুনাম অর্জন করেছে, এমন একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এত সব গ্রন্থের ভিড়েও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর একটি নির্ভরযোগ্য জীবনীর অভাব অনুভূত হচ্ছে। আর মূল্যায়ন? অধ্যাপক নুরুল ইসলাম লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বের ‘সার্বিক মূল্যায়নের সময় এখনো এসেছে কি না, আমি জানি না।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: পেছন ফিরে দেখা, পৃষ্ঠা ৯১]
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচুর্যের দেশ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ৩০ লাখ নারী-পুরুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সম্পর্কে চরম তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও অপমানসূচক মন্তব্য করেন—‘Bangladesh is an International Basket Case.’
এর জবাব প্রদানের জন্য তিনি ওয়াশিংটনকেই বেছে নেন। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন—‘ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ কেউ বাংলাদেশকে International Basket Case বলে উপহাস করেন। কিন্তু বাংলাদেশ Basket Case নয়। দুই শ বছর ধরে বাংলাদেশকে লুট করা হয়েছে। বাংলাদেশের সম্পদেই শ্রীবৃদ্ধি করা হয়েছে লন্ডন, ডান্ডি, ম্যানচেস্টার, করাচি, ইসলামাবাদের।.... আজো বাংলাদেশে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে। একদিন আমরা দেখাবো বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’ [পৃষ্ঠা ১৯০]
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। এখন ৪ কোটি টনের বেশি চাল-গম-ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন ব্যাংকগুলোতে জমা অর্থের পরিমাণ ছিল অন্তত ১৪ লাখ কোটি টাকা। ১ কোটি টাকা বা তার বেশি অর্থ জমা আছে এমন বেসরকারি অ্যাকাউন্ট ছিল প্রায় ১ লাখ। ২০০০ সালে ‘ব্যাংকিংয়ের তিন দশক’ নামে একটি বই লিখি, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র উল্লেখ করে বলেছি—ব্যাংকগুলোতে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি জমা আছে ১ হাজার ৮০০ অ্যাকাউন্টে। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কত—এ ঘরের সামনে লেখা ছিল—‘শূন্য’। এখন করোনাকালে রিজার্ভ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
নিঃসন্দেহে বড় ধরনের অগ্রগতি। করোনাকালেও অর্থনীতির চাকা যথেষ্টই সচল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তদের জন্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এর বড় অংশ দেওয়া হবে সহজ শর্তে, নামমাত্র সুদে ব্যাংকঋণ হিসেবে। কিন্তু সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডে যুক্তদের শঙ্কা উল্লেখ করে ৩ আগস্ট বলেছে—‘ঋণের একটি অংশ উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে অন্য খাতে, এমনকি শেয়ারবাজারে খাটানো হতে পারে। কেউ কেউ ঋণ আদৌ ফেরত দেবেন না।’
বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যার চার কর্মসূচির একটি ছিল দুর্নীতির মূলোৎপাটন। করোনাকালেও যারা স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত কিংবা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল ও সবজি কিনে চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতে চাইতেন তিনি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন প্রায় ৫ কোটি ছাত্রছাত্রী, এদের মধ্যে ২ কোটির বেশি ছাত্রী। ১৯৭১ সালে তিনি বলেছিলেন, নির্যাতিত নারীরা যেন সন্তানের পিতৃপরিচয় দেয় ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। নারীশিক্ষার প্রসার এবং দেশের শিল্প খাতের শ্রমিকের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী—এ চিত্র তাঁর জন্য অশেষ আনন্দ নিয়ে আসত, সন্দেহ নেই। করোনাকালেও রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু যে শিল্পের প্রাণ নারী, তাঁদের ধনবানেরা নানাভাবে যে কষ্ট দিচ্ছে, তিনি এর প্রতিকারে কী পদক্ষেপ নিতেন?
এশিয়ায় টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ পদকের লড়াইয়ে নেই। বঙ্গবন্ধু নিজে খেলতেন, জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল ছিলেন অনন্য খেলোয়াড় ও সংগঠক, পুত্রবধূ করে এনেছিলেন কৃতী অ্যাথলেট সুলতানা খুকিকে। বাংলাদেশ এমনকি এশিয়ার দৌড়ে নেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও নেই। এটাও যে বড় কষ্টের বিষয়! আমরা এই কষ্ট লাঘবে কী করতে পারি? স্বাধীনতার সময় অ্যাজেন্ডা ছিল ৬ দফা, ১৯৭৫ সালে ডাক দেন দ্বিতীয় বিপ্লবের। এখন কী অ্যাজেন্ডা হতো জাতির পিতার?
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েও তিনি মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাশাপাশি স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বিরোধী পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ কাজ ছিল না। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেই চেষ্টাই করেছিলেন।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: কাছ থেকে দেখা, পৃষ্ঠা ৯৬]
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তিলাভ করেন। এর কিছুদিন পর অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম তাঁর ‘অর্থনৈতিক নীতিমালা রচনা ও সেসবের ব্যাখ্যা দান করা’ টিমের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তিনি লিখেছেন, যেকোনো জটিল নীতিসংক্রান্ত বিষয় তিনি খুব দ্রুত ধরে ফেলতে ও উপলব্ধি করতে পারতেন। কীভাবে কাজটি করতে হবে, সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারতেন।’ [পৃষ্ঠা ৯২]
এমনই একটি বিষয় ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে জেনেছিলাম খ্যাতিমান আইনজীবী ড. কামাল হোসেন এবং ১৯৭৫ সালে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে। সিলেটের হরিপুর তেলক্ষেত্র উন্নয়নের ভার রাষ্ট্রপতি এরশাদ দেন ‘সিমিটার’ নামের একটি বিদেশি কোম্পানিকে। এর পরিবর্তে এ দায়িত্ব বাপেক্সকে অর্পণের দাবি নিয়ে ঢাকা-সিলেট পদযাত্রা শেষে যুব ইউনিয়ন একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। দুজনেই ছিলেন তার সদস্য। ড. কামাল হোসেনের বাসায় কমিশনের বৈঠকে হাবিবুর রহমান কীভাবে বঙ্গবন্ধু শেল অয়েলের গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা বাংলাদেশের অধীনে নিয়ে আসেন, সেটা বলেন এভাবে—শেল অয়েলের লিজ ১৯৭৫ সালের আগস্টের প্রথম দিকে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিজ নবায়নে আবেদন করেনি। বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকে অবগত করার পর সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাবিবুর রহমানসহ পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘লুকিয়ে’ পড়তে বলেন, যাতে শেল অয়েল সময়মতো লিজ নবায়ন করতে না পারে। সে সময় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম চড়া ছিল। ৯ আগস্ট (১৯৭৫) বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন—শেল অয়েলের মালিকানাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির মালিক আজ থেকে বাংলাদেশ।
এইচ টি ইমাম ‘বাংলাদেশ সরকার: ১৯৭১-৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন, শেল অয়েল কোম্পানিকে কিছু ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হয়, যার পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি টাকারও কম। কিন্তু ২০১০ সালে এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা ও ভবিষ্যতে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মূল্য নিরূপণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। [পৃষ্ঠা ১৩৫]
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালিত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে একটি চিঠি লেখেন ১৪ জুন (১৯৫২)। এই চিঠির একটি বাক্য ছিল এভাবে— ‘Please don’t think for me. I have born to suffer.’ [গোয়েন্দা রিপোর্ট, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৮]
কষ্ট সহ্য তিনি করেছেন, যাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভালো থাকে। নিজের জন্য ভাবেননি। পরিবারের জন্যও ভাবেননি। ভেবেছেন দেশের কথা। খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. জিল্লুর রহমান খান লিখেছেন, ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে ঘাতকেরা উদ্যত মারণাস্ত্র নিয়ে তাঁর সামনে এলে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘যদি বাঙালিরা তাদের জাতির পিতাকে হত্যা করতে চায়, তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু এর পরিণতি বাঙালিদের জন্য শুভ হবে না। তাদের জীবন কখনোই আগের মতো হবে না এবং তাঁকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রকেও তারা হত্যা করবে এবং মানবিকতা বিদায় নেবে।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার সংগ্রাম, পৃষ্ঠা ২৬১]
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্তত ২ হাজার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে—এ তথ্য জানিয়েছেন অনলাইনে বই সরবরাহ করে সুনাম অর্জন করেছে, এমন একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এত সব গ্রন্থের ভিড়েও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর একটি নির্ভরযোগ্য জীবনীর অভাব অনুভূত হচ্ছে। আর মূল্যায়ন? অধ্যাপক নুরুল ইসলাম লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বের ‘সার্বিক মূল্যায়নের সময় এখনো এসেছে কি না, আমি জানি না।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: পেছন ফিরে দেখা, পৃষ্ঠা ৯১]
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচুর্যের দেশ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ৩০ লাখ নারী-পুরুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সম্পর্কে চরম তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও অপমানসূচক মন্তব্য করেন—‘Bangladesh is an International Basket Case.’
এর জবাব প্রদানের জন্য তিনি ওয়াশিংটনকেই বেছে নেন। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন—‘ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ কেউ বাংলাদেশকে International Basket Case বলে উপহাস করেন। কিন্তু বাংলাদেশ Basket Case নয়। দুই শ বছর ধরে বাংলাদেশকে লুট করা হয়েছে। বাংলাদেশের সম্পদেই শ্রীবৃদ্ধি করা হয়েছে লন্ডন, ডান্ডি, ম্যানচেস্টার, করাচি, ইসলামাবাদের।.... আজো বাংলাদেশে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে। একদিন আমরা দেখাবো বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’ [পৃষ্ঠা ১৯০]
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। এখন ৪ কোটি টনের বেশি চাল-গম-ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন ব্যাংকগুলোতে জমা অর্থের পরিমাণ ছিল অন্তত ১৪ লাখ কোটি টাকা। ১ কোটি টাকা বা তার বেশি অর্থ জমা আছে এমন বেসরকারি অ্যাকাউন্ট ছিল প্রায় ১ লাখ। ২০০০ সালে ‘ব্যাংকিংয়ের তিন দশক’ নামে একটি বই লিখি, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র উল্লেখ করে বলেছি—ব্যাংকগুলোতে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি জমা আছে ১ হাজার ৮০০ অ্যাকাউন্টে। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কত—এ ঘরের সামনে লেখা ছিল—‘শূন্য’। এখন করোনাকালে রিজার্ভ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
নিঃসন্দেহে বড় ধরনের অগ্রগতি। করোনাকালেও অর্থনীতির চাকা যথেষ্টই সচল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তদের জন্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এর বড় অংশ দেওয়া হবে সহজ শর্তে, নামমাত্র সুদে ব্যাংকঋণ হিসেবে। কিন্তু সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডে যুক্তদের শঙ্কা উল্লেখ করে ৩ আগস্ট বলেছে—‘ঋণের একটি অংশ উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে অন্য খাতে, এমনকি শেয়ারবাজারে খাটানো হতে পারে। কেউ কেউ ঋণ আদৌ ফেরত দেবেন না।’
বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যার চার কর্মসূচির একটি ছিল দুর্নীতির মূলোৎপাটন। করোনাকালেও যারা স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত কিংবা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল ও সবজি কিনে চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতে চাইতেন তিনি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন প্রায় ৫ কোটি ছাত্রছাত্রী, এদের মধ্যে ২ কোটির বেশি ছাত্রী। ১৯৭১ সালে তিনি বলেছিলেন, নির্যাতিত নারীরা যেন সন্তানের পিতৃপরিচয় দেয় ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। নারীশিক্ষার প্রসার এবং দেশের শিল্প খাতের শ্রমিকের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী—এ চিত্র তাঁর জন্য অশেষ আনন্দ নিয়ে আসত, সন্দেহ নেই। করোনাকালেও রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু যে শিল্পের প্রাণ নারী, তাঁদের ধনবানেরা নানাভাবে যে কষ্ট দিচ্ছে, তিনি এর প্রতিকারে কী পদক্ষেপ নিতেন?
এশিয়ায় টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ পদকের লড়াইয়ে নেই। বঙ্গবন্ধু নিজে খেলতেন, জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল ছিলেন অনন্য খেলোয়াড় ও সংগঠক, পুত্রবধূ করে এনেছিলেন কৃতী অ্যাথলেট সুলতানা খুকিকে। বাংলাদেশ এমনকি এশিয়ার দৌড়ে নেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও নেই। এটাও যে বড় কষ্টের বিষয়! আমরা এই কষ্ট লাঘবে কী করতে পারি? স্বাধীনতার সময় অ্যাজেন্ডা ছিল ৬ দফা, ১৯৭৫ সালে ডাক দেন দ্বিতীয় বিপ্লবের। এখন কী অ্যাজেন্ডা হতো জাতির পিতার?
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৭ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১৮ ঘণ্টা আগে