ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সমাজ, স্বাস্থ্য খাত ও অর্থনীতি যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের মতো কর্মনিষ্ঠ দায়িত্বশীল সমাজসেবকের অভাব অনুভূত হচ্ছে তীব্রভাবে। কারণ, তিনি নিজে চিকিৎসক সমাজের দার্শনিকতূল্য প্রতিনিধি ছিলেন। সমাজসেবার মনোভাব নিয়ে সবাইকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতেন। সর্বোপরি সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে তিনি ছিলেন যথেষ্ট সম্মান ও সমীহের পাত্র। আজ এই মানুষটির জন্মদিন।
দেশের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রবাদ পুরুষ, শিশুবন্ধু, সমাজ হিতৈষী ও শিক্ষাবিদ এম আর খান সমাজসেবায় একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন তাঁর কর্মগুণে। পুরো নাম মোহাম্মদ রফি খান হলেও মানুষের মধ্যে তিনি এম আর খান হিসেবে ছিলেন অতি পরিচিত। সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা আবদুল বারী খান সমাজ হিতৈষী সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে সাতক্ষীরার জনসমাজে পরিচিত ছিলেন। মা জায়েরা খানম ছিলেন সরলমতি বিদুষী নারী। তিনি ছিলেন তৎকালীন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সংবাদপত্র জগতের অন্যতম পথিকৃৎ মাওলানা মো. আকরাম খানের নিকটাত্মীয়।
এম আর খানের প্রাথমিক জীবন শুরু হয় সাতক্ষীরার রসুলপুর প্রাইমারি স্কুলে। এর পর সাতক্ষীরায় পি এন হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করার পর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কলেজে তিনি ড. কুদরত-ই-খুদার ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৫ সালে আইএসসি পাস করেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫২ সালে তিনি সেখান থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ব্রিটেনের এডিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন থেকে ১৯৫৭ সালে ডিটিএমঅ্যান্ডএইচ এবং লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন থেকে ডিসিএইচ ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি এডিনবার্গ থেকে ১৯৬২ সালে এমআরসিপি ও ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এফসিপিএস এবং ১৯৭৮ সালে এফআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে করেন পিএইচডি।
কর্মজীবনে ডা. এম আর খান দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার কেন্ট ও এডিনবার্গ গ্রুপ হাসপাতালে যথাক্রমে সহকারী রেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার পর দেশে ফিরে ১৯৬৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের পর তিনি সেখানে শিশু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর ১৯৬৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন এবং সেখানকার হাসপাতালে শিশু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিশু বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে আইপিজিএমআর-এ পেডিয়াট্রিকস অধ্যাপক হিসেবে বদলি হয়ে আসেন এবং সেখানে ডিসিএইচ ও এফসিপিএস কোর্স চালু করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি যুগ্ম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। এর পর ১৯৭৮ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে আবার আইপিজিএমআরে পেডিয়াট্রিকস বিভাগের প্রধানের পদে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন।
সাতক্ষীরায় নিজের গ্রাম রসুলপুরকে আদর্শ গ্রাম তথা দারিদ্র্যমুক্ত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের স্বপ্ন ও উদ্যোগ দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূয়োদর্শন হিসেবে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। ‘নিজের গ্রামকে আগে দারিদ্র্যমুক্ত করি’ এই প্রত্যাশা ও প্রত্যয়ে দীপ্ত বাংলাদেশের সব সচেতন মানুষ তাঁর মতো কর্মবীরের অনুসরণে একযোগে কাজ করতে পারলে, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সুদূর পরাহত থাকে না আর।
শিশুদের সেবার মানসে তিনি ১৯৮৩ সালে শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি পাঁচটি জেলার ১২টি কর্ম এলাকায় সম্প্রসারিত। চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল ও সাতক্ষীরাতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা ছাড়া অনানুষ্ঠানিক সান্ধ্যকালীন প্রাথমিক শিক্ষা, ভকেশনাল ট্রেনিং, পরিবেশের উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, আর্সেনিক ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ফিল্টার বিতরণ, টিউবওয়েল ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন, গরিব ও দুস্থ চক্ষুরোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য আই ক্যাম্পের আয়োজন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে অন্ন, বস্ত্র ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রদানসহ নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি ঢাকার মিরপুরে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ও শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং যশোরে শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন বাদেও স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি তাঁর পেনশনের টাকা, পৈতৃক জমিজমা ও স্ত্রীর সঞ্চয়ের অর্থে ১৯৮৫ সালে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডা. এম আর খান অ্যান্ড আনোয়ারা ট্রাস্ট, উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ, নিবেদিতা চিলড্রেন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মহৎপ্রাণ মানুষেরা নিজের জন্য নয়, অন্যের কল্যাণে নিবেদন করেন নিজের সব ধন–ধ্যান ও ধারণাকে; উৎসর্গ করেন নিজের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ ভাবনাকে। এম আর খানও তেমনি উৎসর্গ করেছিলেন নিজের সঞ্চয়, সম্পদ ও সামর্থ্য। তাঁর একমাত্র মেয়ে ডা. ম্যান্ডি করিম বর্তমানে কানাডাপ্রবাসী। ২০১১ সালে স্ত্রী আনোয়ারা খানের মৃত্যুর পর এম আর খানের সব পিছুটান যেন ছুটে যায়। একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।
চিকিৎসা ও সমাজসেবা ছাড়াও একজন লেখক ও গবেষক হিসেবে এম আর খানের রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর প্রকাশনাগুলোর মধ্যে’ আপনার শিশুর যত্ন নিন’, ‘মা ও শিশু’, ‘এসেন্স অব এন্ডোস্কোপি’, ‘ড্রাগ থেরাপি ইন চিলড্রেন’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশ–বিদেশের স্বীকৃত বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা অন্তত ৩৭টি উচ্চমানের গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাকে পুষ্টি দিয়ে মননশীল করে সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থভাবে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটি তার অধিকার। ডা. এম আর খান শিশু চিকিৎসার ওপর বিদেশে বড় ডিগ্রি অর্জন করে সেখানে উঁচু মাপের চাকরির সুযোগ ছেড়ে চলে এসেছিলেন নিজ দেশে। দেশে শিশু চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় প্রতিষ্ঠায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন পথিকৃতের ভূমিকায়। জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান শিশুরোগ চিকিৎসা ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে তাঁর কর্মের স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং ঈর্ষণীয় সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালে তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক, সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে একুশে পদক এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদক প্রদান করে। আজকেই এই দুঃসময়ে তাঁর মতো একজন সংগঠকের প্রয়োজন ছিল অনেক। জন্মদিনে তাঁর জন্য ভালোবাসা।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সমাজ, স্বাস্থ্য খাত ও অর্থনীতি যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের মতো কর্মনিষ্ঠ দায়িত্বশীল সমাজসেবকের অভাব অনুভূত হচ্ছে তীব্রভাবে। কারণ, তিনি নিজে চিকিৎসক সমাজের দার্শনিকতূল্য প্রতিনিধি ছিলেন। সমাজসেবার মনোভাব নিয়ে সবাইকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতেন। সর্বোপরি সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে তিনি ছিলেন যথেষ্ট সম্মান ও সমীহের পাত্র। আজ এই মানুষটির জন্মদিন।
দেশের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রবাদ পুরুষ, শিশুবন্ধু, সমাজ হিতৈষী ও শিক্ষাবিদ এম আর খান সমাজসেবায় একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন তাঁর কর্মগুণে। পুরো নাম মোহাম্মদ রফি খান হলেও মানুষের মধ্যে তিনি এম আর খান হিসেবে ছিলেন অতি পরিচিত। সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা আবদুল বারী খান সমাজ হিতৈষী সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে সাতক্ষীরার জনসমাজে পরিচিত ছিলেন। মা জায়েরা খানম ছিলেন সরলমতি বিদুষী নারী। তিনি ছিলেন তৎকালীন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সংবাদপত্র জগতের অন্যতম পথিকৃৎ মাওলানা মো. আকরাম খানের নিকটাত্মীয়।
এম আর খানের প্রাথমিক জীবন শুরু হয় সাতক্ষীরার রসুলপুর প্রাইমারি স্কুলে। এর পর সাতক্ষীরায় পি এন হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করার পর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কলেজে তিনি ড. কুদরত-ই-খুদার ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৫ সালে আইএসসি পাস করেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫২ সালে তিনি সেখান থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ব্রিটেনের এডিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন থেকে ১৯৫৭ সালে ডিটিএমঅ্যান্ডএইচ এবং লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন থেকে ডিসিএইচ ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি এডিনবার্গ থেকে ১৯৬২ সালে এমআরসিপি ও ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এফসিপিএস এবং ১৯৭৮ সালে এফআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে করেন পিএইচডি।
কর্মজীবনে ডা. এম আর খান দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার কেন্ট ও এডিনবার্গ গ্রুপ হাসপাতালে যথাক্রমে সহকারী রেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার পর দেশে ফিরে ১৯৬৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের পর তিনি সেখানে শিশু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর ১৯৬৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন এবং সেখানকার হাসপাতালে শিশু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিশু বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে আইপিজিএমআর-এ পেডিয়াট্রিকস অধ্যাপক হিসেবে বদলি হয়ে আসেন এবং সেখানে ডিসিএইচ ও এফসিপিএস কোর্স চালু করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি যুগ্ম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। এর পর ১৯৭৮ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে আবার আইপিজিএমআরে পেডিয়াট্রিকস বিভাগের প্রধানের পদে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন।
সাতক্ষীরায় নিজের গ্রাম রসুলপুরকে আদর্শ গ্রাম তথা দারিদ্র্যমুক্ত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের স্বপ্ন ও উদ্যোগ দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূয়োদর্শন হিসেবে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। ‘নিজের গ্রামকে আগে দারিদ্র্যমুক্ত করি’ এই প্রত্যাশা ও প্রত্যয়ে দীপ্ত বাংলাদেশের সব সচেতন মানুষ তাঁর মতো কর্মবীরের অনুসরণে একযোগে কাজ করতে পারলে, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সুদূর পরাহত থাকে না আর।
শিশুদের সেবার মানসে তিনি ১৯৮৩ সালে শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি পাঁচটি জেলার ১২টি কর্ম এলাকায় সম্প্রসারিত। চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল ও সাতক্ষীরাতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা ছাড়া অনানুষ্ঠানিক সান্ধ্যকালীন প্রাথমিক শিক্ষা, ভকেশনাল ট্রেনিং, পরিবেশের উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, আর্সেনিক ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ফিল্টার বিতরণ, টিউবওয়েল ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন, গরিব ও দুস্থ চক্ষুরোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য আই ক্যাম্পের আয়োজন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে অন্ন, বস্ত্র ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রদানসহ নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি ঢাকার মিরপুরে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ও শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং যশোরে শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন বাদেও স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি তাঁর পেনশনের টাকা, পৈতৃক জমিজমা ও স্ত্রীর সঞ্চয়ের অর্থে ১৯৮৫ সালে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডা. এম আর খান অ্যান্ড আনোয়ারা ট্রাস্ট, উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ, নিবেদিতা চিলড্রেন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মহৎপ্রাণ মানুষেরা নিজের জন্য নয়, অন্যের কল্যাণে নিবেদন করেন নিজের সব ধন–ধ্যান ও ধারণাকে; উৎসর্গ করেন নিজের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ ভাবনাকে। এম আর খানও তেমনি উৎসর্গ করেছিলেন নিজের সঞ্চয়, সম্পদ ও সামর্থ্য। তাঁর একমাত্র মেয়ে ডা. ম্যান্ডি করিম বর্তমানে কানাডাপ্রবাসী। ২০১১ সালে স্ত্রী আনোয়ারা খানের মৃত্যুর পর এম আর খানের সব পিছুটান যেন ছুটে যায়। একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।
চিকিৎসা ও সমাজসেবা ছাড়াও একজন লেখক ও গবেষক হিসেবে এম আর খানের রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর প্রকাশনাগুলোর মধ্যে’ আপনার শিশুর যত্ন নিন’, ‘মা ও শিশু’, ‘এসেন্স অব এন্ডোস্কোপি’, ‘ড্রাগ থেরাপি ইন চিলড্রেন’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশ–বিদেশের স্বীকৃত বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা অন্তত ৩৭টি উচ্চমানের গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাকে পুষ্টি দিয়ে মননশীল করে সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থভাবে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটি তার অধিকার। ডা. এম আর খান শিশু চিকিৎসার ওপর বিদেশে বড় ডিগ্রি অর্জন করে সেখানে উঁচু মাপের চাকরির সুযোগ ছেড়ে চলে এসেছিলেন নিজ দেশে। দেশে শিশু চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় প্রতিষ্ঠায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন পথিকৃতের ভূমিকায়। জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান শিশুরোগ চিকিৎসা ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে তাঁর কর্মের স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং ঈর্ষণীয় সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালে তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক, সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে একুশে পদক এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদক প্রদান করে। আজকেই এই দুঃসময়ে তাঁর মতো একজন সংগঠকের প্রয়োজন ছিল অনেক। জন্মদিনে তাঁর জন্য ভালোবাসা।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে