সেলিম জাহান
তালেবানরা আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে, সে তো বাসি খবর। কাবুল বিমানবন্দরে অসহায় মানুষের আহাজারি, সেই সংবাদও গা-সহা হয়ে গেছে। তালেবান মানবতাবাদী উদারপন্থী শিল্পী-সাহিত্যিকদের হত্যা করতে শুরু করেছে, সে তথ্যও পুরোনো হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে যে প্রশ্নটি সবার মনে প্রাসঙ্গিকভাবে বিরাট হয় উঠেছে, তা হলো তালেবানি আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক চালচিত্রটি কেমন?
সেই প্রাসঙ্গিক চালচিত্রের দুটো দিক আছে—একটি দেশজ দিক, অন্যটি আন্তর্জাতিক। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে তালেবানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানের দেশজ অর্থনৈতিক চিত্র কী এবং সে ব্যাপারে বিদেশি শক্তিগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা?
বলার অপেক্ষা রাখে না যে আফগানিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে চরম সংকটাপন্ন। অবশ্য এই সংকটের উদ্ভব একদিনে হয়নি, আফগানিস্তানের বিগত সরকারের কর্মকাণ্ডও এ ব্যাপারে দায়ী। ২০০০ সালে তালেবান-পরবর্তী আফগান সরকার প্রথম থেকেই ছিল দুর্বল, নাজুক ও অদক্ষ। বিগত দুই আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনি ছিলেন বহিরাগত এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং আফগানিস্তানের জটিল বাস্তবতা তাঁদের বোধগম্যতার বাইরে ছিল এবং দেশের জীবন ও তার সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনো আত্মিক সংযোগ ছিল না। তাই একটি কার্যকর শাসনব্যবস্থা তাঁরা গড়ে তুলতে পারেননি। গত দুই দশকে আফগান রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল ছিল একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মূলত আঞ্চলিক যুদ্ধপ্রভুরাই (warlords) আফগানিস্তানের আঞ্চলিক প্রশাসন চালিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রশাসন ছিল ভঙ্গুর এবং অঞ্চল পর্যায়ে অক্ষম।
সুতরাং যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। আফগান অর্থনীতি অনগ্রসর ও ভঙ্গুর থেকে গেছে। বিগত বছরগুলোতে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আফগানিস্তান অর্জন করতে পারত, তা অর্জিত হয়নি। কিছু উপাত্তের দিকে তাকানো যেতে পারে।
বর্তমানে আফগানিস্তানের মোট জাতীয় আয় ১৯০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে শুধু ঢাকা শহরেরই আয় ১৬০ বিলিয়ন ডলার। আফগানিস্তান বৈধভাবে প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আর আমদানি করে ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। সুতরাং বাণিজ্য ঘাটতি সেখানে একটি বিরাট সমস্যা।
আফগান অর্থনীতিতে আফিমের উৎপাদন, বিক্রি ও বাণিজ্য একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রতিবছর আফগানিস্তানে প্রায় ১০ হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয় এবং সেটা থেকে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়। যেসব আফগান চাষি আফিম উৎপাদন করেন, তাঁদের মোট আয়ের ৮৭ শতাংশই এই একটি পণ্য থেকে আসে। বিশ্বের মোট আফিম উৎপাদনের ৮০ ভাগই আসে আফগানিস্তান থেকে। অবৈধ আফিম রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর। সুতরাং দেশটির ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় পর্যায়েই আফিমের ভূমিকা বিশাল।
অন্য যে বিষয়টি আফগান অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য, তা হচ্ছে বৈদেশিক সাহায্য। গত বছর দাতাগোষ্ঠী আফগানিস্তানকে ২০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দেশটির সরকারি ব্যয়ের ৮০ শতাংশই আসে বিদেশি অনুদান থেকে। ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও জরুরি ত্রাণকার্যে মোট ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। কোভিড মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তার বিশেষ উত্তোলন অধিকারের আওতায় আফগানিস্তানকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
আর্থসামাজিক সূচকও বলে দেয় যে আফগানিস্তান একটি নাজুক অবস্থায় আছে। দেশটির ৪৭ শতাংশ লোক দৈনিক ১ ডলারের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যাঁরা কর্মে নিয়োজিত, তাঁদেরও এক-তৃতীয়াংশ এই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এ দারিদ্র্যসীমা দৈনিক ২ ডলারে বেঁধে দিলে আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নির্ণায়কে আফগানিস্তানের ৫৫ শতাংশ জনগণ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও আফগানিস্তানের মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৬৪ বছর, গড় শিক্ষাকাল মাত্র ৪ বছর। প্রায় ৫৫ শতাংশ আফগান সাক্ষর।
আফগানিস্তানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীর অবস্থান সবচেয়ে নাজুক। তাঁদের গড় আয়ু মাত্র ৬৬ বছর, গড় শিক্ষাকাল ২ বছর, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নারী মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পাঁচজন নারীর মধ্যে মাত্র একজন শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করেন। আফগানিস্তানে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখে ৬৩৮ জন।
এই যখন আফগানিস্তানের হাল, তখন তালেবান সেই দেশর ক্ষমতা দখল করেছে। মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী এই গোষ্ঠীর ক্ষমতা গ্রহণ গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং এই সরকারকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্য নানা রকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক বাধানিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে সে দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় গচ্ছিত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার আফগান সম্পদ লভ্যতার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কোভিড প্রতিরোধের জন্য প্রতিশ্রুত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিশেষ উত্তোলন অধিকার থেকে আফগানিস্তানকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। বিশ্বব্যাংক এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি, কিন্তু তারাও আফগানিস্তানে তাদের বরাদ্দের ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ করবে। আফগানিস্তানের সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য যে অনুদান দেওয়া হয়, তা গত চার বছরে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দাতাগোষ্ঠী বছরওয়ারি অনুদানেই বেশি আগ্রহী। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য আরোপিত বিধিনিষেধ আফগানিস্তান অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থাকে আরও ভঙ্গুর করে তুলবে।
প্রথমত, এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ। নিষেধাজ্ঞা সব সময়ই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। আফগানিস্তানও ব্যতিক্রম নয়। মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে অর্থনীতিতে, খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এ বছরের জুনের শেষ দিকে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বিদেশি মুদ্রা মজুতের পরিমাণ ছিল ৩৬৬ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি মুদ্রা মজুতের পরিমাণ নিতান্তই কম। এটা দিয়ে দেশের আমদানি চাহিদা বড় একটা মেটানো যাবে না। বিভিন্ন উৎস থেকে তালেবানের বাৎসরিক অর্থ আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য তারা এই অর্থ ব্যয় করবে কি না, তা অনিশ্চিত।
সেই সঙ্গে আরও দুটো ব্যাপার ঘটতে পারে। বৈশ্বিক বিধিনিষেধ আরোপের ফলে তালেবান আফিম উৎপাদন ও রপ্তানির দিকে মন দেবে। আফগান চাষিদের কাছ থেকেও এ কাজের সমর্থন মিলবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড তহবিলের ওপরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগানিস্তানের কোভিড পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
চূড়ান্ত বিচারে তালেবানি আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও নড়বড়ে হবে, সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরও বাড়বে বৈকি। দারিদ্র্যের আপাতন ও গভীরতা বাড়তে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ বিঘ্নিত হতে পারে। নারীর অধিকার আরও ক্ষুণ্ণ হতে পারে। সুতরাং তালেবানি আফগানিস্তানের অর্থনীতির চালচিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
তালেবানরা আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে, সে তো বাসি খবর। কাবুল বিমানবন্দরে অসহায় মানুষের আহাজারি, সেই সংবাদও গা-সহা হয়ে গেছে। তালেবান মানবতাবাদী উদারপন্থী শিল্পী-সাহিত্যিকদের হত্যা করতে শুরু করেছে, সে তথ্যও পুরোনো হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে যে প্রশ্নটি সবার মনে প্রাসঙ্গিকভাবে বিরাট হয় উঠেছে, তা হলো তালেবানি আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক চালচিত্রটি কেমন?
সেই প্রাসঙ্গিক চালচিত্রের দুটো দিক আছে—একটি দেশজ দিক, অন্যটি আন্তর্জাতিক। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে তালেবানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানের দেশজ অর্থনৈতিক চিত্র কী এবং সে ব্যাপারে বিদেশি শক্তিগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা?
বলার অপেক্ষা রাখে না যে আফগানিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে চরম সংকটাপন্ন। অবশ্য এই সংকটের উদ্ভব একদিনে হয়নি, আফগানিস্তানের বিগত সরকারের কর্মকাণ্ডও এ ব্যাপারে দায়ী। ২০০০ সালে তালেবান-পরবর্তী আফগান সরকার প্রথম থেকেই ছিল দুর্বল, নাজুক ও অদক্ষ। বিগত দুই আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনি ছিলেন বহিরাগত এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং আফগানিস্তানের জটিল বাস্তবতা তাঁদের বোধগম্যতার বাইরে ছিল এবং দেশের জীবন ও তার সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনো আত্মিক সংযোগ ছিল না। তাই একটি কার্যকর শাসনব্যবস্থা তাঁরা গড়ে তুলতে পারেননি। গত দুই দশকে আফগান রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল ছিল একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মূলত আঞ্চলিক যুদ্ধপ্রভুরাই (warlords) আফগানিস্তানের আঞ্চলিক প্রশাসন চালিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রশাসন ছিল ভঙ্গুর এবং অঞ্চল পর্যায়ে অক্ষম।
সুতরাং যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। আফগান অর্থনীতি অনগ্রসর ও ভঙ্গুর থেকে গেছে। বিগত বছরগুলোতে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আফগানিস্তান অর্জন করতে পারত, তা অর্জিত হয়নি। কিছু উপাত্তের দিকে তাকানো যেতে পারে।
বর্তমানে আফগানিস্তানের মোট জাতীয় আয় ১৯০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে শুধু ঢাকা শহরেরই আয় ১৬০ বিলিয়ন ডলার। আফগানিস্তান বৈধভাবে প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আর আমদানি করে ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। সুতরাং বাণিজ্য ঘাটতি সেখানে একটি বিরাট সমস্যা।
আফগান অর্থনীতিতে আফিমের উৎপাদন, বিক্রি ও বাণিজ্য একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রতিবছর আফগানিস্তানে প্রায় ১০ হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয় এবং সেটা থেকে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়। যেসব আফগান চাষি আফিম উৎপাদন করেন, তাঁদের মোট আয়ের ৮৭ শতাংশই এই একটি পণ্য থেকে আসে। বিশ্বের মোট আফিম উৎপাদনের ৮০ ভাগই আসে আফগানিস্তান থেকে। অবৈধ আফিম রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর। সুতরাং দেশটির ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় পর্যায়েই আফিমের ভূমিকা বিশাল।
অন্য যে বিষয়টি আফগান অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য, তা হচ্ছে বৈদেশিক সাহায্য। গত বছর দাতাগোষ্ঠী আফগানিস্তানকে ২০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দেশটির সরকারি ব্যয়ের ৮০ শতাংশই আসে বিদেশি অনুদান থেকে। ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও জরুরি ত্রাণকার্যে মোট ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। কোভিড মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তার বিশেষ উত্তোলন অধিকারের আওতায় আফগানিস্তানকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
আর্থসামাজিক সূচকও বলে দেয় যে আফগানিস্তান একটি নাজুক অবস্থায় আছে। দেশটির ৪৭ শতাংশ লোক দৈনিক ১ ডলারের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যাঁরা কর্মে নিয়োজিত, তাঁদেরও এক-তৃতীয়াংশ এই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এ দারিদ্র্যসীমা দৈনিক ২ ডলারে বেঁধে দিলে আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নির্ণায়কে আফগানিস্তানের ৫৫ শতাংশ জনগণ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও আফগানিস্তানের মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৬৪ বছর, গড় শিক্ষাকাল মাত্র ৪ বছর। প্রায় ৫৫ শতাংশ আফগান সাক্ষর।
আফগানিস্তানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীর অবস্থান সবচেয়ে নাজুক। তাঁদের গড় আয়ু মাত্র ৬৬ বছর, গড় শিক্ষাকাল ২ বছর, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নারী মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পাঁচজন নারীর মধ্যে মাত্র একজন শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করেন। আফগানিস্তানে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখে ৬৩৮ জন।
এই যখন আফগানিস্তানের হাল, তখন তালেবান সেই দেশর ক্ষমতা দখল করেছে। মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী এই গোষ্ঠীর ক্ষমতা গ্রহণ গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং এই সরকারকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্য নানা রকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক বাধানিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে সে দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় গচ্ছিত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার আফগান সম্পদ লভ্যতার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কোভিড প্রতিরোধের জন্য প্রতিশ্রুত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিশেষ উত্তোলন অধিকার থেকে আফগানিস্তানকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। বিশ্বব্যাংক এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি, কিন্তু তারাও আফগানিস্তানে তাদের বরাদ্দের ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ করবে। আফগানিস্তানের সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য যে অনুদান দেওয়া হয়, তা গত চার বছরে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দাতাগোষ্ঠী বছরওয়ারি অনুদানেই বেশি আগ্রহী। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য আরোপিত বিধিনিষেধ আফগানিস্তান অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থাকে আরও ভঙ্গুর করে তুলবে।
প্রথমত, এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ। নিষেধাজ্ঞা সব সময়ই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। আফগানিস্তানও ব্যতিক্রম নয়। মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে অর্থনীতিতে, খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এ বছরের জুনের শেষ দিকে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বিদেশি মুদ্রা মজুতের পরিমাণ ছিল ৩৬৬ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি মুদ্রা মজুতের পরিমাণ নিতান্তই কম। এটা দিয়ে দেশের আমদানি চাহিদা বড় একটা মেটানো যাবে না। বিভিন্ন উৎস থেকে তালেবানের বাৎসরিক অর্থ আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য তারা এই অর্থ ব্যয় করবে কি না, তা অনিশ্চিত।
সেই সঙ্গে আরও দুটো ব্যাপার ঘটতে পারে। বৈশ্বিক বিধিনিষেধ আরোপের ফলে তালেবান আফিম উৎপাদন ও রপ্তানির দিকে মন দেবে। আফগান চাষিদের কাছ থেকেও এ কাজের সমর্থন মিলবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড তহবিলের ওপরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগানিস্তানের কোভিড পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
চূড়ান্ত বিচারে তালেবানি আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও নড়বড়ে হবে, সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরও বাড়বে বৈকি। দারিদ্র্যের আপাতন ও গভীরতা বাড়তে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ বিঘ্নিত হতে পারে। নারীর অধিকার আরও ক্ষুণ্ণ হতে পারে। সুতরাং তালেবানি আফগানিস্তানের অর্থনীতির চালচিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১২ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১২ ঘণ্টা আগে