ফারুক মেহেদী
কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ঘুরছে। ভারতের ধনকুবের রতন টাটার একটি বাণী ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘শুধু ১৫০০ কোটি রুপিই নয়; আমার দেশ যদি সংকটে পড়ে, তাহলে আমি আমার সমস্ত সম্পত্তিও দিয়ে দিতে রাজি আছি।’ কখনও কখনও দেশটির আরেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আজিম প্রেমজির বক্তব্যও দেখা যাচ্ছে। তিনিও প্রায় একই রকম মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
তার মানে বিশ্বখ্যাত এসব ভারতীয় ধনী ব্যক্তির দেশের সংকটে নিজেদের বিপুল সম্পদ মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতেও আপত্তি নেই—এটাই বোঝা যাচ্ছে। এবার একটু আমাদের নিজের দেশেরে ধনীদের দিকে তাকানো যাক। আপনি কি এমন কারও নাম মনে করতে পারেন, যিনি এ রকম একটি বিবৃতি দিয়েছেন অথবা অসহায় মানুষের কাছে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন? মোটা দাগে এমন কারও কথা কী আপনার মনে পড়ছে, যিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের কল্যাণে মাঠে নেমেছেন? না, আমার অন্তত চোখে পড়েনি। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ করছেন হয়তো। তবে তাঁরা অত বড় ধনী কেউ নন। সাধারণ বিত্তশালী। পাড়া-মহল্লায় হয়তো কিছু চাল-ডাল দিচ্ছেন। কিন্তু সত্যিকার বিত্তবান বা ধনীদের ওইভাবে দেখা যায়নি, যাচ্ছেও না।
এই করোনার আঘাত বা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, হকার ও দরিদ্র ব্যক্তিরা। তাঁরা এখন অদৃশ্য ভাইরাসের পাশাপাশি খেয়েপরে টিকে থাকার যুদ্ধ করছেন। এ মরণপণ যুদ্ধে তাঁদের পাশে থেকে বলা যায় প্রায় একাই লড়ছে সরকার। সরকারের নগদ সহায়তা, শুল্ক-কর ছাড়, ব্যাংকঋণের সুদের হারে ছাড়সহ নানা রকম প্রণোদনা নিয়ে বেসরকারি খাত ফুলেফেঁপে উঠলেও এ দুর্দিনে সরকারের পাশে তাদের অনেককেই দেখা যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকটি গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান সহায়তা করলেও বেশির ভাগ শীর্ষ শিল্পগ্রুপ, বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানি, সেরা করপোরেট প্রতিষ্ঠান, এনজিওর উপস্থিতি নেই। উল্টো তারা নিজের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য নানা আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা পেতে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যস্ত।
শুধু তা-ই নয়, অনেক বেশি সুবিধা নেওয়া কিছু কিছু খাত কাজ করিয়ে নেওয়া শ্রমিকদের মাসের মজুরি দেওয়ার জন্যও সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের বলতে গেলে এখন খেয়েপরে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁদের জন্য নগদ সহায়তা কিংবা খাবার সাহায্য প্রয়োজন। সব যে সরকারই করবে এমন নয়; সরকার তার সক্ষমতার মধ্যে করে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকার দিতে চাইলেও মাঝপথে নানান অনিয়ম বিশৃঙ্খলার কারণে এ সহায়তা তাঁদের হাতে ঠিকমতো পৌঁছায় না। তাই কথা উঠছে, বড় বড় গ্রুপ বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাইলে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিপত্র জারি করেছে, যাতে বিভিন্ন তপশিলি ব্যাংক তাদের সিএসআরের আওতায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের মুনাফার একটি অংশ সিএসআরের আওতায় তহবিল জোগাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআরও পরিপত্র জারি করে রেখেছে, যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিএসআর করবে তাদের আয়ের একটি অংশ করমুক্ত সুবিধা পাবে। এ রকম নানান ছাড় দেওয়ার পরও এই করোনাকালে ধনী ব্যক্তিদের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার ঘটনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। গেল বছর স্বল্পপরিসরে দেখা গেলেও এবার একেবারেই চোখে পড়ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরিপ বলছে, দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব ছোট একটি অংশ যদি এই দুর্দিনে এগিয়ে আসে, তাতেও সরকারের ওপর চাপ অনেক কমে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন-আইএফসির সর্বশেষ গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের উৎপাদনশীল কারখানার অংশীদারির দিক থেকে ৩৭ শতাংশ ক্ষুদ্র, ১৪ শতাংশ মাঝারি হলেও ৮ শতাংশ বৃহৎ শিল্পের হাতেই বিপুল পরিমাণ পুঁজি।
সংস্থাটির ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, পোশাক, টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক, খাদ্য, স্টিল, মোবাইল, ওষুধ খাতের শীর্ষ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় ১৭০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—এ কে খান গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ। এ ছাড়া আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের আয় সাড়ে ৪ হাজার কোটি থেকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—নোমান গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ, ট্রান্সকম গ্রুপ, ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস, কনফিডেন্স গ্রুপ ও ওয়ালটন গ্রুপ। বর্তমানে করোনার এই দুর্দিনেও একচেটিয়া ব্যবসা করছে দেশের টেলিযোগাযোগ বা মোবাইল অপারেটররা। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদক, বিপণন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসাও বেশ ভালো। তাদের দিক থেকেও এ সময়ে সহায়তার কোনো তথ্য জানা যায়নি।
এনজিওগুলো দরিদ্র মানুষদের নিয়ে কাজ করলেও এই দুর্দিনে তাদের বেশির ভাগেরই বড় কোনো সহায়তার কথা জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিওদের মধ্যে ব্র্যাক গেল বছরে সাহায্য-সহায়তা করেছে। এ ছাড়া আশা, সাজিদা ফাউন্ডেশন কিছু কাজ করেছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ এনজিও গ্রামীণ ব্যাংক, আরডিআরএস, ব্যুরো বাংলাদেশসহ আরও যেসব বড় এনজিও রয়েছে, এ দুর্দিনে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো আর্থিক সহায়তামূলক কার্যক্রমের খবর জানা যায়নি, যার মাধ্যমে একটি বিপুল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা যায়। গ্রামীণ ব্যাংকসহ দেড় ডজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিক থেকেও করোনার এ দুঃসময়ে বড় কোনো আর্থিক সহায়তা বা কার্যক্রম নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁকে কোনো বিবৃতি দিতেও দেখা যায়নি।
জানা যায়, বিশ্বের শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান, শিল্প গ্রুপ, ধনী ব্যক্তিরাও করোনার এই আর্থিক মন্দা মোকাবিলায় নিজ নিজ দেশ, এমনকি অন্য গরিব দেশের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। গেল বছর অনলাইন বাজার আমাজন পাঁচ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে। মাইক্রোসফট, আলাস্কা এয়ারলাইনস, স্টারবাক আড়াই মিলিয়ন ডলার, ফেসবুক ২০ মিলিয়ন ডলার এবং অ্যাপল ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রোচি প্রতি সপ্তাহে ৪ লাখ মানুষের করোনা টেস্ট কিট ফ্রিতে দিয়েছে। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড, ডাইসন, জেনারেল মোটরস গাড়ির বদলে আপাতত জীবন বাঁচাতে ভেন্টিলেটর ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বানিয়ে ফ্রিতে সরবরাহ করেছে। ফ্রান্সের বিশ্বসেরা যন্ত্রপাতি ও প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদক ব্র্যান্ড এলভিএমএইচ মানুষকে সুরক্ষা দিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেছে। আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বিশ্বজুড়ে মাস্ক, পিপিই ফ্রিতে সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের শীর্ষ গ্রুপের উদ্যোক্তারাও দেশের এ দুর্দিনে সাড়া দিয়েছেন। টাটা গ্রুপ, দিয়াগু ইন্ডিয়া গ্রুপ, বেদান্ত রিসোর্সের প্রধান নির্বাহী অনিল আগারওয়াল, রিলায়েন্স গ্রুপের মুকেশ আম্বানি, পাইথন গ্রুপের সিইও শেখর শর্মা, মাহিন্দ্র গ্রুপ, গোদরেজ, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার গেল বছর থেকে সহায়তা দিয়ে আসছে।
সরকারের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। একদিকে মানুষের জীবন বাঁচানো, অন্যদিকে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা। এ লড়াইয়ে সম্ভব সব কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই সরকার অব্যাহতভাবে সবার জন্য সহায়তা দিতে পারবে না। তবে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে আশেপাশের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়; সরকারের ওপর চাপ কমে।
যদি দেশের বেসরকারি খাতের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে তারা সরকারের নানান মুদ্রা ও রাজস্ব সুবিধা নিয়ে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একেকটি খাত কর, শুল্ক, ভ্যাট, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, স্বল্প সুদে ঋণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়, নগদ সহায়তাসহ আরও নানান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এরপরও তারা বলে, কিছু পায় না। তাদের আরও সহায়তা দেওয়া দরকার। আরও ছাড় চাই তাদের। মানুষের সেবায় আসা দূরের কথা, নিজেরাই সরকারের কাছে নানান দাবিদাওয়া নিয়ে তদবিরে ব্যস্ত। ভারতের রতন টাটা বা আজম প্রেমজির মতো বড় মনের ধনী ব্যক্তি বাংলাদেশে কবে হবে—এখন এই আলোচনা সামনে এসেছে। মানুষের বিপদের দিনে যদি বিত্তবানদের না পাওয়া যায়, তবে তাঁরা কবে মানুষের কল্যাণে আসবেন?
কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ঘুরছে। ভারতের ধনকুবের রতন টাটার একটি বাণী ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘শুধু ১৫০০ কোটি রুপিই নয়; আমার দেশ যদি সংকটে পড়ে, তাহলে আমি আমার সমস্ত সম্পত্তিও দিয়ে দিতে রাজি আছি।’ কখনও কখনও দেশটির আরেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আজিম প্রেমজির বক্তব্যও দেখা যাচ্ছে। তিনিও প্রায় একই রকম মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
তার মানে বিশ্বখ্যাত এসব ভারতীয় ধনী ব্যক্তির দেশের সংকটে নিজেদের বিপুল সম্পদ মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতেও আপত্তি নেই—এটাই বোঝা যাচ্ছে। এবার একটু আমাদের নিজের দেশেরে ধনীদের দিকে তাকানো যাক। আপনি কি এমন কারও নাম মনে করতে পারেন, যিনি এ রকম একটি বিবৃতি দিয়েছেন অথবা অসহায় মানুষের কাছে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন? মোটা দাগে এমন কারও কথা কী আপনার মনে পড়ছে, যিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের কল্যাণে মাঠে নেমেছেন? না, আমার অন্তত চোখে পড়েনি। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ করছেন হয়তো। তবে তাঁরা অত বড় ধনী কেউ নন। সাধারণ বিত্তশালী। পাড়া-মহল্লায় হয়তো কিছু চাল-ডাল দিচ্ছেন। কিন্তু সত্যিকার বিত্তবান বা ধনীদের ওইভাবে দেখা যায়নি, যাচ্ছেও না।
এই করোনার আঘাত বা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, হকার ও দরিদ্র ব্যক্তিরা। তাঁরা এখন অদৃশ্য ভাইরাসের পাশাপাশি খেয়েপরে টিকে থাকার যুদ্ধ করছেন। এ মরণপণ যুদ্ধে তাঁদের পাশে থেকে বলা যায় প্রায় একাই লড়ছে সরকার। সরকারের নগদ সহায়তা, শুল্ক-কর ছাড়, ব্যাংকঋণের সুদের হারে ছাড়সহ নানা রকম প্রণোদনা নিয়ে বেসরকারি খাত ফুলেফেঁপে উঠলেও এ দুর্দিনে সরকারের পাশে তাদের অনেককেই দেখা যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকটি গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান সহায়তা করলেও বেশির ভাগ শীর্ষ শিল্পগ্রুপ, বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানি, সেরা করপোরেট প্রতিষ্ঠান, এনজিওর উপস্থিতি নেই। উল্টো তারা নিজের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য নানা আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা পেতে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যস্ত।
শুধু তা-ই নয়, অনেক বেশি সুবিধা নেওয়া কিছু কিছু খাত কাজ করিয়ে নেওয়া শ্রমিকদের মাসের মজুরি দেওয়ার জন্যও সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের বলতে গেলে এখন খেয়েপরে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁদের জন্য নগদ সহায়তা কিংবা খাবার সাহায্য প্রয়োজন। সব যে সরকারই করবে এমন নয়; সরকার তার সক্ষমতার মধ্যে করে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকার দিতে চাইলেও মাঝপথে নানান অনিয়ম বিশৃঙ্খলার কারণে এ সহায়তা তাঁদের হাতে ঠিকমতো পৌঁছায় না। তাই কথা উঠছে, বড় বড় গ্রুপ বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাইলে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিপত্র জারি করেছে, যাতে বিভিন্ন তপশিলি ব্যাংক তাদের সিএসআরের আওতায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের মুনাফার একটি অংশ সিএসআরের আওতায় তহবিল জোগাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআরও পরিপত্র জারি করে রেখেছে, যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিএসআর করবে তাদের আয়ের একটি অংশ করমুক্ত সুবিধা পাবে। এ রকম নানান ছাড় দেওয়ার পরও এই করোনাকালে ধনী ব্যক্তিদের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার ঘটনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। গেল বছর স্বল্পপরিসরে দেখা গেলেও এবার একেবারেই চোখে পড়ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরিপ বলছে, দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব ছোট একটি অংশ যদি এই দুর্দিনে এগিয়ে আসে, তাতেও সরকারের ওপর চাপ অনেক কমে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন-আইএফসির সর্বশেষ গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের উৎপাদনশীল কারখানার অংশীদারির দিক থেকে ৩৭ শতাংশ ক্ষুদ্র, ১৪ শতাংশ মাঝারি হলেও ৮ শতাংশ বৃহৎ শিল্পের হাতেই বিপুল পরিমাণ পুঁজি।
সংস্থাটির ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, পোশাক, টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক, খাদ্য, স্টিল, মোবাইল, ওষুধ খাতের শীর্ষ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় ১৭০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—এ কে খান গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ। এ ছাড়া আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের আয় সাড়ে ৪ হাজার কোটি থেকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—নোমান গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ, ট্রান্সকম গ্রুপ, ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস, কনফিডেন্স গ্রুপ ও ওয়ালটন গ্রুপ। বর্তমানে করোনার এই দুর্দিনেও একচেটিয়া ব্যবসা করছে দেশের টেলিযোগাযোগ বা মোবাইল অপারেটররা। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদক, বিপণন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসাও বেশ ভালো। তাদের দিক থেকেও এ সময়ে সহায়তার কোনো তথ্য জানা যায়নি।
এনজিওগুলো দরিদ্র মানুষদের নিয়ে কাজ করলেও এই দুর্দিনে তাদের বেশির ভাগেরই বড় কোনো সহায়তার কথা জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিওদের মধ্যে ব্র্যাক গেল বছরে সাহায্য-সহায়তা করেছে। এ ছাড়া আশা, সাজিদা ফাউন্ডেশন কিছু কাজ করেছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ এনজিও গ্রামীণ ব্যাংক, আরডিআরএস, ব্যুরো বাংলাদেশসহ আরও যেসব বড় এনজিও রয়েছে, এ দুর্দিনে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো আর্থিক সহায়তামূলক কার্যক্রমের খবর জানা যায়নি, যার মাধ্যমে একটি বিপুল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা যায়। গ্রামীণ ব্যাংকসহ দেড় ডজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিক থেকেও করোনার এ দুঃসময়ে বড় কোনো আর্থিক সহায়তা বা কার্যক্রম নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁকে কোনো বিবৃতি দিতেও দেখা যায়নি।
জানা যায়, বিশ্বের শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান, শিল্প গ্রুপ, ধনী ব্যক্তিরাও করোনার এই আর্থিক মন্দা মোকাবিলায় নিজ নিজ দেশ, এমনকি অন্য গরিব দেশের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। গেল বছর অনলাইন বাজার আমাজন পাঁচ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে। মাইক্রোসফট, আলাস্কা এয়ারলাইনস, স্টারবাক আড়াই মিলিয়ন ডলার, ফেসবুক ২০ মিলিয়ন ডলার এবং অ্যাপল ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রোচি প্রতি সপ্তাহে ৪ লাখ মানুষের করোনা টেস্ট কিট ফ্রিতে দিয়েছে। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড, ডাইসন, জেনারেল মোটরস গাড়ির বদলে আপাতত জীবন বাঁচাতে ভেন্টিলেটর ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বানিয়ে ফ্রিতে সরবরাহ করেছে। ফ্রান্সের বিশ্বসেরা যন্ত্রপাতি ও প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদক ব্র্যান্ড এলভিএমএইচ মানুষকে সুরক্ষা দিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেছে। আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বিশ্বজুড়ে মাস্ক, পিপিই ফ্রিতে সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের শীর্ষ গ্রুপের উদ্যোক্তারাও দেশের এ দুর্দিনে সাড়া দিয়েছেন। টাটা গ্রুপ, দিয়াগু ইন্ডিয়া গ্রুপ, বেদান্ত রিসোর্সের প্রধান নির্বাহী অনিল আগারওয়াল, রিলায়েন্স গ্রুপের মুকেশ আম্বানি, পাইথন গ্রুপের সিইও শেখর শর্মা, মাহিন্দ্র গ্রুপ, গোদরেজ, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার গেল বছর থেকে সহায়তা দিয়ে আসছে।
সরকারের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। একদিকে মানুষের জীবন বাঁচানো, অন্যদিকে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা। এ লড়াইয়ে সম্ভব সব কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই সরকার অব্যাহতভাবে সবার জন্য সহায়তা দিতে পারবে না। তবে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে আশেপাশের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়; সরকারের ওপর চাপ কমে।
যদি দেশের বেসরকারি খাতের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে তারা সরকারের নানান মুদ্রা ও রাজস্ব সুবিধা নিয়ে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একেকটি খাত কর, শুল্ক, ভ্যাট, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, স্বল্প সুদে ঋণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়, নগদ সহায়তাসহ আরও নানান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এরপরও তারা বলে, কিছু পায় না। তাদের আরও সহায়তা দেওয়া দরকার। আরও ছাড় চাই তাদের। মানুষের সেবায় আসা দূরের কথা, নিজেরাই সরকারের কাছে নানান দাবিদাওয়া নিয়ে তদবিরে ব্যস্ত। ভারতের রতন টাটা বা আজম প্রেমজির মতো বড় মনের ধনী ব্যক্তি বাংলাদেশে কবে হবে—এখন এই আলোচনা সামনে এসেছে। মানুষের বিপদের দিনে যদি বিত্তবানদের না পাওয়া যায়, তবে তাঁরা কবে মানুষের কল্যাণে আসবেন?
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
২ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
২ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
২ ঘণ্টা আগে