জাহীদ রেজা নূর
অমিতদার শারীরিক অবস্থার খবর পাচ্ছিলাম উম্মুল ওয়ারা সুইটির ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। আরও অনেকেই লিখছিলেন বটে, কিন্তু শারীরিক খবর জানার জন্য সুইটির পোস্টগুলোই ছিল নির্ভরযোগ্য। কিন্তু আজ ঘুম থেকে উঠে যখন ফেসবুক দেখলাম, তখন আর সুইটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। অনেকেই তখন লিখছেন চলে যাওয়া এই মানুষটিকে নিয়ে।
অমিতদার সঙ্গে আমার পরিচয় তাঁর সাংবাদিকতা জীবন শুরুর অনেক আগে। আমি তখন কেবল এইচএসসি পাস করে অমরজ্যোতিতে ক্রিকেট খেলছি, আর কণ্ঠশীলনে আবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলনে ছিলেন আলতাফ হোসেন। তিনি আমার খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন সে সময়। তাঁতীবাজারে তাঁর বাড়িতে যেতাম আমি, তিনিও জিগাতলায় আমাদের বাড়িতে আসতেন। মূলত আলতাফ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন দুজন—অমিত হাবিব ও যীশু তরফদার। যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমরা সবাই আমাদের ছাত্রজীবন পার করছি। আমি সিটি কলেজে বিকমে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পড়ার পর মনে হলো বিএ পরীক্ষা দেব। আমি যদি ভুল না করে থাকি, তাহলে আমরা এই চারজনই খিলগাঁও কলেজে বিএ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। নাকি শুধু আমি আর আলতাফ ভাই? এখন আর মনে পড়ে না। যদিও অমিতদা জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন আরও আগে, কিন্তু সেখানে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন কি না, তা আমার জানা নেই।
অমিতদার সঙ্গে মূলত কথা হতো টিএসসি থেকে নীলক্ষেতের দিকে হাঁটাহাঁটি করতে করতে। যীশু ভাই আর আলতাফ ভাই ছিলেন চঞ্চল, কিন্তু অমিতদা কথা বলতেন ঠান্ডা মাথায়। সেটা এরশাদের যুগের প্রারম্ভ। আলোচনার অনেকটাজুড়েই থাকত রাজনীতি, তবে সাহিত্য নিয়েও আলোচনা থাকত। হ্যাঁ, অমিতদা সাহিত্য নিয়ে অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন। অনেক কিছুর সমালোচনা করতেন যৌক্তিকভাবে। তাঁর যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে মেজাজও খারাপ হতো, মনে পড়ে। পাল্টা যুক্তি দেওয়ার মতো পড়াশোনা তখন আমার ছিল না।
তখনো আমাদের চারজনের কারও জীবনের লক্ষ্য স্থির হয়নি। পরবর্তী জীবনে বাকি তিনজন বিভিন্ন পেশায় নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছেন। প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি।
১৯৮৬ সালে আমি পড়াশোনা করতে চলে গেলাম সোভিয়েত ইউনিয়নে। এরপর অমিতদা কিংবা যীশু ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। ১৯৮৯ সালে আর ১৯৯১ সালে দুবার দেশে এসেছিলাম। কিন্তু সে সময় অমিতদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে মনে পড়ে না। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে দেখি, অমিতদা সাংবাদিক হয়ে লেখালেখি করছেন। সম্ভবত তখন তিনি আজকের কাগজে কাজ করছেন; অথবা ভোরের কাগজ। আলতাফ ভাই আগে থেকেই ফটো সাংবাদিক হিসেবে নাম করেছিলেন।
এরপর বহুদিন অমিতদার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। দেশে ফেরার পর আমিও বেছে নিয়েছিলাম সাংবাদিকতা। সংবাদ, মুক্তকণ্ঠ হয়ে প্রথম আলোয় স্থিত হয়েছিলাম। সে সময় অমিতদা ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকা নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন। ইস্কাটনে যায়যায়দিনের অস্থায়ী অফিসে (সম্ভবত সেটা ছিল শফিক রেহমানের বাড়ি) প্রথম আলো থেকে বের হয়ে আসা আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। একদিন হঠাৎ অমিতদার ফোন পেলাম। বললেন তাঁর আদাবরের বাড়িতে আসতে। সেই বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন কি না, জানি না। কিন্তু যখন গিয়েছিলাম, তখন একাই ছিলেন। পুরোনো স্মৃতি রোমন্থনের পর সেই বাড়িতে বসেই বললেন, ‘আসুন, বহুদিন পর একসঙ্গে কাজ করা যাবে।’
অমিতদার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও তিনি কেন যেন আমাকে আপনি করে বলতেন। পুরোনোকালের বন্ধু-অগ্রজ যখন আন্তরিকতার সঙ্গে এ রকম প্রস্তাব দেন, তখন এড়িয়ে যাওয়া একটু শক্ত হয়ে ওঠে। তা ছাড়া প্রথম আলোয় তখন একটু অস্বস্তিতে ছিলাম। সে সময়ের হিসাবে যায়যায়দিনের বেতনের অঙ্কটা ছিল স্বাস্থ্যবান। নতুন পত্রিকাটির প্রতি আকর্ষণের আরেকটি বড় কারণ ছিল, প্রথম আলোয় চাকরিরত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেকেই তখন যায়যায়দিনে চলে যাওয়ায় ওদের কাছাকাছি থাকার একটা ইচ্ছে ছিল আমার। ওই বন্ধুরাও চাইছিলেন আমি যেন তাঁদের সঙ্গে যোগ দিই।
অমিতদা একদিন আমাকে নিয়ে ‘যায়যায়দিন’ অফিসে গেলেন। তখনো অফিসটি পুরোপুরি তৈরি হয়নি। কিন্তু কে কোথায় বসবে, কীভাবে বসবে, সেখানে সিনেমা দেখা যাবে, অবসর সময় কীভাবে কাটাবে মানুষ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। একটা আধুনিক অফিস গড়ে তোলার ভাবনা ছিল কর্তৃপক্ষের। অফিসের জন্য একটা ছোটখাটো বিদ্যুৎ স্টেশনও বোধ হয় গড়ে তোলা হয়েছিল।
এরপর অমিতদা আমাকে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে ডেকেছিলেন। সেখানে ওই পত্রিকার একজন ডাকসাইটে কর্মকর্তার বসবাস ছিল। আলাপের এই দুদিনেই আমি লক্ষ করেছিলাম অমিতদার ধূমপান ও পানাসক্তি প্রবল হয়ে উঠেছে। ধানমন্ডির সেই বাড়িতে শুরুতে নতুন পত্রিকার পরিকল্পনাগুলো যখন তাঁরা মেলে ধরছিলেন, বলছিলেন কীভাবে পত্রিকাটিকে অন্য পত্রিকা থেকে আলাদা করবেন, তখন সেই কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগছিল। স্বপ্নগুলো খুব খারাপ ছিল না। কিন্তু আলাপের একপর্যায়ে অমিতদা এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা শুনে আমার মনে হয়েছিল এই পত্রিকায় সাংবাদিকদের মুক্তচিন্তার চেয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবনার প্রতি নতজানু হয়ে থাকতে হবে। এত দিন পর আর তা নিয়ে বিশদ বলতে চাই না। ফলে সেদিন রিকশায় করে বাড়ি ফিরে এসেই অমিতদাকে এসএমএস করে জানিয়েছিলাম যে আমি চাকরি পরিবর্তন করব না।
আমার বন্ধুদের কাছে অমিতদা আক্ষেপ করে নাকি বলেছিলেন, আগেই আমার হাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ধরিয়ে দিলে হয়তো তাঁদের সঙ্গে থাকতাম আমি। যা হোক, যায়যায়দিন পত্রিকার ট্র্যাজিক পরিণতির কথা অনেকেই জানেন। সে কথাও এখানে লেখা বাহুল্য।
এরপর অমিতদার সঙ্গে আমার আর কোনো দিন কোনো কথা হয়নি। কিন্তু অগ্রজ হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা করে এসেছি, এখনো করি। চীনা বেতার, সমকাল, কালের কণ্ঠ হয়ে দেশ রূপান্তরের সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। যারা তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁরা অমিতদার কাজের গভীরতা, সূক্ষ্মতার কথা জানেন। সেটা নিয়ে তাঁরাই বলবেন।
সংবাদপত্রে অমিতদার সঙ্গে একই অফিসে বসে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু প্রথম আলোর অনেকেই, যারা আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ হয়ে নতুন কর্মস্থলে এসেছিলেন, তাঁদের কাছে ফুর্তিবাজ, তর্কপ্রিয় অমিতদার কথা অনেক শুনেছি।
অমিতদা চলে গেলেন। এর আগে আরও কম বয়সে চলে গিয়েছিলেন সঞ্জীবদা। সঞ্জীবদাকে বলা হয়ে থাকে ফিচার মাস্টার। ভোরের কাগজে সঞ্জীবদার কাছে ফিচারে হাতেখড়ি হয়েছে—এমন অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল প্রথম আলোয় কাজ করতে গিয়ে। অমিতদার শিরোনাম লিখন, এডিটিং ইত্যাদি নিয়েও প্রথম আলোর অনেকের কাছে অনেক প্রশংসা শুনেছি।
অমিতদার চলে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছে, আসলে আমাদের প্রজন্মের ডাক এসে গেছে। এই যাওয়াগুলো আকস্মিক কিছু নয়। আমরা কেউ যদি এখন হঠাৎ করে ‘নেই’ হয়ে যাই, তবে তা খুব অস্বাভাবিক ঘটনা হবে না। আমাদের বয়সটা মৃত্যুকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করে।
অমিতদার শারীরিক অবস্থার খবর পাচ্ছিলাম উম্মুল ওয়ারা সুইটির ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। আরও অনেকেই লিখছিলেন বটে, কিন্তু শারীরিক খবর জানার জন্য সুইটির পোস্টগুলোই ছিল নির্ভরযোগ্য। কিন্তু আজ ঘুম থেকে উঠে যখন ফেসবুক দেখলাম, তখন আর সুইটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। অনেকেই তখন লিখছেন চলে যাওয়া এই মানুষটিকে নিয়ে।
অমিতদার সঙ্গে আমার পরিচয় তাঁর সাংবাদিকতা জীবন শুরুর অনেক আগে। আমি তখন কেবল এইচএসসি পাস করে অমরজ্যোতিতে ক্রিকেট খেলছি, আর কণ্ঠশীলনে আবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলনে ছিলেন আলতাফ হোসেন। তিনি আমার খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন সে সময়। তাঁতীবাজারে তাঁর বাড়িতে যেতাম আমি, তিনিও জিগাতলায় আমাদের বাড়িতে আসতেন। মূলত আলতাফ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন দুজন—অমিত হাবিব ও যীশু তরফদার। যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমরা সবাই আমাদের ছাত্রজীবন পার করছি। আমি সিটি কলেজে বিকমে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পড়ার পর মনে হলো বিএ পরীক্ষা দেব। আমি যদি ভুল না করে থাকি, তাহলে আমরা এই চারজনই খিলগাঁও কলেজে বিএ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। নাকি শুধু আমি আর আলতাফ ভাই? এখন আর মনে পড়ে না। যদিও অমিতদা জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন আরও আগে, কিন্তু সেখানে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন কি না, তা আমার জানা নেই।
অমিতদার সঙ্গে মূলত কথা হতো টিএসসি থেকে নীলক্ষেতের দিকে হাঁটাহাঁটি করতে করতে। যীশু ভাই আর আলতাফ ভাই ছিলেন চঞ্চল, কিন্তু অমিতদা কথা বলতেন ঠান্ডা মাথায়। সেটা এরশাদের যুগের প্রারম্ভ। আলোচনার অনেকটাজুড়েই থাকত রাজনীতি, তবে সাহিত্য নিয়েও আলোচনা থাকত। হ্যাঁ, অমিতদা সাহিত্য নিয়ে অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন। অনেক কিছুর সমালোচনা করতেন যৌক্তিকভাবে। তাঁর যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে মেজাজও খারাপ হতো, মনে পড়ে। পাল্টা যুক্তি দেওয়ার মতো পড়াশোনা তখন আমার ছিল না।
তখনো আমাদের চারজনের কারও জীবনের লক্ষ্য স্থির হয়নি। পরবর্তী জীবনে বাকি তিনজন বিভিন্ন পেশায় নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছেন। প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি।
১৯৮৬ সালে আমি পড়াশোনা করতে চলে গেলাম সোভিয়েত ইউনিয়নে। এরপর অমিতদা কিংবা যীশু ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। ১৯৮৯ সালে আর ১৯৯১ সালে দুবার দেশে এসেছিলাম। কিন্তু সে সময় অমিতদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে মনে পড়ে না। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে দেখি, অমিতদা সাংবাদিক হয়ে লেখালেখি করছেন। সম্ভবত তখন তিনি আজকের কাগজে কাজ করছেন; অথবা ভোরের কাগজ। আলতাফ ভাই আগে থেকেই ফটো সাংবাদিক হিসেবে নাম করেছিলেন।
এরপর বহুদিন অমিতদার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। দেশে ফেরার পর আমিও বেছে নিয়েছিলাম সাংবাদিকতা। সংবাদ, মুক্তকণ্ঠ হয়ে প্রথম আলোয় স্থিত হয়েছিলাম। সে সময় অমিতদা ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকা নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন। ইস্কাটনে যায়যায়দিনের অস্থায়ী অফিসে (সম্ভবত সেটা ছিল শফিক রেহমানের বাড়ি) প্রথম আলো থেকে বের হয়ে আসা আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। একদিন হঠাৎ অমিতদার ফোন পেলাম। বললেন তাঁর আদাবরের বাড়িতে আসতে। সেই বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন কি না, জানি না। কিন্তু যখন গিয়েছিলাম, তখন একাই ছিলেন। পুরোনো স্মৃতি রোমন্থনের পর সেই বাড়িতে বসেই বললেন, ‘আসুন, বহুদিন পর একসঙ্গে কাজ করা যাবে।’
অমিতদার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও তিনি কেন যেন আমাকে আপনি করে বলতেন। পুরোনোকালের বন্ধু-অগ্রজ যখন আন্তরিকতার সঙ্গে এ রকম প্রস্তাব দেন, তখন এড়িয়ে যাওয়া একটু শক্ত হয়ে ওঠে। তা ছাড়া প্রথম আলোয় তখন একটু অস্বস্তিতে ছিলাম। সে সময়ের হিসাবে যায়যায়দিনের বেতনের অঙ্কটা ছিল স্বাস্থ্যবান। নতুন পত্রিকাটির প্রতি আকর্ষণের আরেকটি বড় কারণ ছিল, প্রথম আলোয় চাকরিরত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেকেই তখন যায়যায়দিনে চলে যাওয়ায় ওদের কাছাকাছি থাকার একটা ইচ্ছে ছিল আমার। ওই বন্ধুরাও চাইছিলেন আমি যেন তাঁদের সঙ্গে যোগ দিই।
অমিতদা একদিন আমাকে নিয়ে ‘যায়যায়দিন’ অফিসে গেলেন। তখনো অফিসটি পুরোপুরি তৈরি হয়নি। কিন্তু কে কোথায় বসবে, কীভাবে বসবে, সেখানে সিনেমা দেখা যাবে, অবসর সময় কীভাবে কাটাবে মানুষ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। একটা আধুনিক অফিস গড়ে তোলার ভাবনা ছিল কর্তৃপক্ষের। অফিসের জন্য একটা ছোটখাটো বিদ্যুৎ স্টেশনও বোধ হয় গড়ে তোলা হয়েছিল।
এরপর অমিতদা আমাকে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে ডেকেছিলেন। সেখানে ওই পত্রিকার একজন ডাকসাইটে কর্মকর্তার বসবাস ছিল। আলাপের এই দুদিনেই আমি লক্ষ করেছিলাম অমিতদার ধূমপান ও পানাসক্তি প্রবল হয়ে উঠেছে। ধানমন্ডির সেই বাড়িতে শুরুতে নতুন পত্রিকার পরিকল্পনাগুলো যখন তাঁরা মেলে ধরছিলেন, বলছিলেন কীভাবে পত্রিকাটিকে অন্য পত্রিকা থেকে আলাদা করবেন, তখন সেই কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগছিল। স্বপ্নগুলো খুব খারাপ ছিল না। কিন্তু আলাপের একপর্যায়ে অমিতদা এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা শুনে আমার মনে হয়েছিল এই পত্রিকায় সাংবাদিকদের মুক্তচিন্তার চেয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবনার প্রতি নতজানু হয়ে থাকতে হবে। এত দিন পর আর তা নিয়ে বিশদ বলতে চাই না। ফলে সেদিন রিকশায় করে বাড়ি ফিরে এসেই অমিতদাকে এসএমএস করে জানিয়েছিলাম যে আমি চাকরি পরিবর্তন করব না।
আমার বন্ধুদের কাছে অমিতদা আক্ষেপ করে নাকি বলেছিলেন, আগেই আমার হাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ধরিয়ে দিলে হয়তো তাঁদের সঙ্গে থাকতাম আমি। যা হোক, যায়যায়দিন পত্রিকার ট্র্যাজিক পরিণতির কথা অনেকেই জানেন। সে কথাও এখানে লেখা বাহুল্য।
এরপর অমিতদার সঙ্গে আমার আর কোনো দিন কোনো কথা হয়নি। কিন্তু অগ্রজ হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা করে এসেছি, এখনো করি। চীনা বেতার, সমকাল, কালের কণ্ঠ হয়ে দেশ রূপান্তরের সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। যারা তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁরা অমিতদার কাজের গভীরতা, সূক্ষ্মতার কথা জানেন। সেটা নিয়ে তাঁরাই বলবেন।
সংবাদপত্রে অমিতদার সঙ্গে একই অফিসে বসে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু প্রথম আলোর অনেকেই, যারা আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ হয়ে নতুন কর্মস্থলে এসেছিলেন, তাঁদের কাছে ফুর্তিবাজ, তর্কপ্রিয় অমিতদার কথা অনেক শুনেছি।
অমিতদা চলে গেলেন। এর আগে আরও কম বয়সে চলে গিয়েছিলেন সঞ্জীবদা। সঞ্জীবদাকে বলা হয়ে থাকে ফিচার মাস্টার। ভোরের কাগজে সঞ্জীবদার কাছে ফিচারে হাতেখড়ি হয়েছে—এমন অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল প্রথম আলোয় কাজ করতে গিয়ে। অমিতদার শিরোনাম লিখন, এডিটিং ইত্যাদি নিয়েও প্রথম আলোর অনেকের কাছে অনেক প্রশংসা শুনেছি।
অমিতদার চলে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছে, আসলে আমাদের প্রজন্মের ডাক এসে গেছে। এই যাওয়াগুলো আকস্মিক কিছু নয়। আমরা কেউ যদি এখন হঠাৎ করে ‘নেই’ হয়ে যাই, তবে তা খুব অস্বাভাবিক ঘটনা হবে না। আমাদের বয়সটা মৃত্যুকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করে।
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১৬ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১৭ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১৭ ঘণ্টা আগে