মহিউদ্দিন খান মোহন
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাকরিচ্যুত কর্মচারী মো. আবদুল মালেকের সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা। ২০ জুলাই বিভিন্ন দৈনিকে খবরটি দেখে কেউ কেউ বিস্মিত হলেও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়নি। কেননা, আমাদের দেশে এ ধরনের কোটিপতি পিয়ন-দারোয়ান-কেরানি-ড্রাইভারের অভাব নেই। আমরা এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার কথা জেনেছি।
স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর ড্রাইভার আবদুল মালেক কীভাবে রাজধানীতে বাড়ি-গাড়িসহ শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, সে গল্পও আমরা শুনেছি। তাই যখন এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি, আত্মসাৎ-প্রতারণার খবর সংবাদমাধ্যমে বেরোয়, তখন অনেকেই মন্তব্য করেন: এ নিয়ে হইচইয়ের কী আছে? এ রকমই তো হয়। এই যে দুর্নীতি-অনিয়ম তথা চুরি-চামারির খবর আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে, এটা কিন্তু এক দিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ঘটনাগুলো ঘটে আসছে। কিন্তু কার্যকর প্রতিকার হয়নি। সরকারি প্রশাসন বা করপোরেশনের এসব কালো বিড়ালের অন্তরে কম্পন সৃষ্টি করতে পারে, এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি একটাও দেওয়া হয়েছে–এমন নজির নেই। আর সে জন্যই আবজাল, মালেক, সাবরিনা, সাহেদরা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সুযোগ পান।
আলোচ্য আবদুল মালেক দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ২০১৫ সালে। তার আগে ২০১০ সালে তাঁকে করা হয়েছিল সাময়িক বরখাস্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ মূলত চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্নজনকে প্রতারণা। সে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দিয়েছিল ২০০৪ সালে। চাকরিতে যোগ দিয়েই সে প্রতারণা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। ওই সিন্ডিকেটে আরও তিনজন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মালেক গ্রেপ্তার হলেও তাঁরা এখনো নাগালের বাইরে। হয়তো তাঁরাও গ্রেপ্তার হবে। পত্রিকায় মালেকের সম্পদের যে বিবরণ বেরিয়েছে, তা এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি না। তাতে নিবন্ধের কলেবর অনাবশ্যকভাবে বেড়ে যাবে। তবে উল্লেখ্য, ওই সব সম্পদের মধ্যে রাজধানীতে ফ্ল্যাট, প্লট, কুষ্টিয়ায় মার্কেট, জমি, ব্যাংকে এফডিআর, বাস-ট্রাকসহ নানা কিসিমের সম্পত্তি আছে। বলা বাহুল্য, এসব সম্পদ মালেক অবৈধ পথেই অর্জন করেছেন।
অনেকেই আজকাল সরকারি চাকরিজীবীদের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে কটাক্ষ করে থাকেন। কেউ কেউ বলে থাকেন, সরকারি চাকরি মানে দুর্নীতির লাইসেন্স। কথাটি কিন্তু সর্বাংশে সত্যি নয়। কেননা, এখনো অনেক সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
তাঁরা না থাকলে প্রশাসন পুরোপুরিই ভেঙে পড়ত। সততার সঙ্গে সরকারি চাকরি করে অবসরে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই কিন্তু বেশি। কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে আজ গোটা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ললাটে কলঙ্কতিলক ল্যাপ্টে আছে। দুর্নীতি করে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, তিতাস, ডেসা, ডেসকো বা ওয়াসার মিটার রিডারদের যেমন শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার নজির আছে, তেমনি সারা জীবন সরকারি পদস্থ অফিসার থাকার পরও ঢাকায় একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট করতে পারেননি–এমন দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। আমার বন্ধু সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন। তাঁর শেষ পোস্টিং ছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে। এর আগে ছিলেন কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশের ‘চোরাচালানের স্বর্গ’খ্যাত টেকনাফের ইউএনও ছিলেন তিনি। অবৈধ পথের দিকে পা বাড়ালে বিপুল বিত্ত অর্জন কোনো ব্যাপার ছিল না। রিটায়ারমেন্টের পর এখন ঢাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন আমাদের এলাকার এক সাবেক ছাত্রনেতা। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত অনুসারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর চাকরিজীবনে কোনো দুর্নীতি করেননি। এখন তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক। থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে ভাড়া বাড়িতে। আরেকজন, সে-ও আমার বন্ধু, যাঁর চাকরির শেষ পদবি ছিল জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক। এদিক-ওদিক তাকালেই ঢাকায় দু-চারটি বাড়ি করা অসম্ভব কোনো ব্যাপার ছিল না।
অবসরের পর প্রাপ্ত সমুদয় পারিতোষিক দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এখন চলেন পেনশন আর মেয়ের চাকরির টাকায়। তাঁর মুখে একটি মজার ঘটনা শুনেছিলাম। মেয়ের পড়াশোনার জন্য ঢাকার নিকেতনে একটি বাসা ভাড়া করেছিলেন। বাড়ির কেয়ারটেকারের সঙ্গে কথা বলে নাম-ঠিকানা সব দিয়ে অ্যাডভান্সও করে গিয়েছিলেন। দু-তিন দিন পর সেই কেয়ারটেকার তাঁকে ফোন করে বাসাটি ভাড়া দিতে অপারগতা জানান। কারণ কী–জানতে চাইলে বলে, ফোনে বলা যাবে না।
পরের সপ্তাহে সিলেট থেকে ঢাকায় এসে ওই বাড়িতে গেলে কেয়ারটেকার অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে বলল, ‘স্যার, ফ্ল্যাট মালিক আপনার নাম দেখেই না করে দিয়েছেন। কারণ কী–জানার জন্য চেপে ধরলে সে জানায়, স্যার, আপনি যে কোম্পানির জিএম, ফ্ল্যাট মালিক ওই গ্যাস কোম্পানির মিটার রিডার। বন্ধু হতবাক। আসলে গ্যাস-বিদ্যুতের মিটার রিডার, পুলিশের ইন্সপেক্টর কিংবা তদূর্ধ্ব কোনো কোনো কর্মকর্তার এমন সম্পদের মালিক হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশে বিচিত্র কিছু নয়। যাঁরা এমন সহায়-সম্পদের অধিকারী হন, তাঁরা জানেন, কীভাবে নিজের পদ-পদবির ব্যবহার (আসলে অপব্যবহার) করতে হয়। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত একটি শ্রেণি রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠছে কলাগাছের মতো। এরা রাজনৈতিক দলের পরিচয়কে বিত্ত গড়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
রাজনৈতিক পদবি যেন আলাদিনের চেরাগ। এটা হাতে থাকলে টেন্ডার বাগানো যায়, খাসজমি দখল করা যায়, প্রশাসন-পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করে দুই হাতে উপার্জন করা যায়। আর যাঁরা রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নেন, সততাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা বিত্তবৈভবের দেখা পান না। বরং পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হন। টাকা না থাকার কারণে বর্তমানে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শবাদী ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তিরা নির্বাচনে মনোনয়ন পান না। মনোনয়ন বাগিয়ে নেন কালোবাজারি, মুনাফাখোর, ব্যাংক লোপাটকারী, অর্থ পাচারকারী আর গুন্ডাপান্ডাদের গডফাদাররা। না, সবাই এই শ্রেণির তা-ও বলা যাবে না। তবে এদের আধিক্য দিন দিন বাড়ছে। আর ক্রমেই কমে যাচ্ছে দেশ ও জাতির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিকের সংখ্যা।
একটি লোকগীতি হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন: ‘চোরেরা খায় কোরমা-পোলাও, সাধু ঘুরে দ্বারে দ্বারে/তাজ্জব হয়ে গেলাম বাবা দিন-দুনিয়ার ব্যবহারে।’ আধ্যাত্মিক ধাঁচের এ গানটিতে আমাদের বর্তমান সমাজের যথার্থ চিত্রই ফুটে উঠেছে। এখন যে যত বড় চোর, সমাজে তার আসনটি তত উঁচুতে। আর যাঁরা সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা থাকেন অবহেলিত। কোরমা-পোলাও তাঁদের ভাগ্যে জোটে না। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বাস্তবতার নিষ্ঠুর কশাঘাতে তাঁরা ধুঁকে ধুঁকে মরেন। একটি জাতি বা সমাজের জন্য এর চেয়ে আর ট্র্যাজিডি আর কী হতে পারে!
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাকরিচ্যুত কর্মচারী মো. আবদুল মালেকের সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা। ২০ জুলাই বিভিন্ন দৈনিকে খবরটি দেখে কেউ কেউ বিস্মিত হলেও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়নি। কেননা, আমাদের দেশে এ ধরনের কোটিপতি পিয়ন-দারোয়ান-কেরানি-ড্রাইভারের অভাব নেই। আমরা এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার কথা জেনেছি।
স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর ড্রাইভার আবদুল মালেক কীভাবে রাজধানীতে বাড়ি-গাড়িসহ শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, সে গল্পও আমরা শুনেছি। তাই যখন এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি, আত্মসাৎ-প্রতারণার খবর সংবাদমাধ্যমে বেরোয়, তখন অনেকেই মন্তব্য করেন: এ নিয়ে হইচইয়ের কী আছে? এ রকমই তো হয়। এই যে দুর্নীতি-অনিয়ম তথা চুরি-চামারির খবর আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে, এটা কিন্তু এক দিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ঘটনাগুলো ঘটে আসছে। কিন্তু কার্যকর প্রতিকার হয়নি। সরকারি প্রশাসন বা করপোরেশনের এসব কালো বিড়ালের অন্তরে কম্পন সৃষ্টি করতে পারে, এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি একটাও দেওয়া হয়েছে–এমন নজির নেই। আর সে জন্যই আবজাল, মালেক, সাবরিনা, সাহেদরা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সুযোগ পান।
আলোচ্য আবদুল মালেক দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ২০১৫ সালে। তার আগে ২০১০ সালে তাঁকে করা হয়েছিল সাময়িক বরখাস্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ মূলত চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্নজনকে প্রতারণা। সে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দিয়েছিল ২০০৪ সালে। চাকরিতে যোগ দিয়েই সে প্রতারণা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। ওই সিন্ডিকেটে আরও তিনজন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মালেক গ্রেপ্তার হলেও তাঁরা এখনো নাগালের বাইরে। হয়তো তাঁরাও গ্রেপ্তার হবে। পত্রিকায় মালেকের সম্পদের যে বিবরণ বেরিয়েছে, তা এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি না। তাতে নিবন্ধের কলেবর অনাবশ্যকভাবে বেড়ে যাবে। তবে উল্লেখ্য, ওই সব সম্পদের মধ্যে রাজধানীতে ফ্ল্যাট, প্লট, কুষ্টিয়ায় মার্কেট, জমি, ব্যাংকে এফডিআর, বাস-ট্রাকসহ নানা কিসিমের সম্পত্তি আছে। বলা বাহুল্য, এসব সম্পদ মালেক অবৈধ পথেই অর্জন করেছেন।
অনেকেই আজকাল সরকারি চাকরিজীবীদের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে কটাক্ষ করে থাকেন। কেউ কেউ বলে থাকেন, সরকারি চাকরি মানে দুর্নীতির লাইসেন্স। কথাটি কিন্তু সর্বাংশে সত্যি নয়। কেননা, এখনো অনেক সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
তাঁরা না থাকলে প্রশাসন পুরোপুরিই ভেঙে পড়ত। সততার সঙ্গে সরকারি চাকরি করে অবসরে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই কিন্তু বেশি। কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে আজ গোটা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ললাটে কলঙ্কতিলক ল্যাপ্টে আছে। দুর্নীতি করে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, তিতাস, ডেসা, ডেসকো বা ওয়াসার মিটার রিডারদের যেমন শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার নজির আছে, তেমনি সারা জীবন সরকারি পদস্থ অফিসার থাকার পরও ঢাকায় একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট করতে পারেননি–এমন দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। আমার বন্ধু সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন। তাঁর শেষ পোস্টিং ছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে। এর আগে ছিলেন কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশের ‘চোরাচালানের স্বর্গ’খ্যাত টেকনাফের ইউএনও ছিলেন তিনি। অবৈধ পথের দিকে পা বাড়ালে বিপুল বিত্ত অর্জন কোনো ব্যাপার ছিল না। রিটায়ারমেন্টের পর এখন ঢাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন আমাদের এলাকার এক সাবেক ছাত্রনেতা। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত অনুসারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর চাকরিজীবনে কোনো দুর্নীতি করেননি। এখন তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক। থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে ভাড়া বাড়িতে। আরেকজন, সে-ও আমার বন্ধু, যাঁর চাকরির শেষ পদবি ছিল জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক। এদিক-ওদিক তাকালেই ঢাকায় দু-চারটি বাড়ি করা অসম্ভব কোনো ব্যাপার ছিল না।
অবসরের পর প্রাপ্ত সমুদয় পারিতোষিক দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এখন চলেন পেনশন আর মেয়ের চাকরির টাকায়। তাঁর মুখে একটি মজার ঘটনা শুনেছিলাম। মেয়ের পড়াশোনার জন্য ঢাকার নিকেতনে একটি বাসা ভাড়া করেছিলেন। বাড়ির কেয়ারটেকারের সঙ্গে কথা বলে নাম-ঠিকানা সব দিয়ে অ্যাডভান্সও করে গিয়েছিলেন। দু-তিন দিন পর সেই কেয়ারটেকার তাঁকে ফোন করে বাসাটি ভাড়া দিতে অপারগতা জানান। কারণ কী–জানতে চাইলে বলে, ফোনে বলা যাবে না।
পরের সপ্তাহে সিলেট থেকে ঢাকায় এসে ওই বাড়িতে গেলে কেয়ারটেকার অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে বলল, ‘স্যার, ফ্ল্যাট মালিক আপনার নাম দেখেই না করে দিয়েছেন। কারণ কী–জানার জন্য চেপে ধরলে সে জানায়, স্যার, আপনি যে কোম্পানির জিএম, ফ্ল্যাট মালিক ওই গ্যাস কোম্পানির মিটার রিডার। বন্ধু হতবাক। আসলে গ্যাস-বিদ্যুতের মিটার রিডার, পুলিশের ইন্সপেক্টর কিংবা তদূর্ধ্ব কোনো কোনো কর্মকর্তার এমন সম্পদের মালিক হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশে বিচিত্র কিছু নয়। যাঁরা এমন সহায়-সম্পদের অধিকারী হন, তাঁরা জানেন, কীভাবে নিজের পদ-পদবির ব্যবহার (আসলে অপব্যবহার) করতে হয়। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত একটি শ্রেণি রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠছে কলাগাছের মতো। এরা রাজনৈতিক দলের পরিচয়কে বিত্ত গড়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
রাজনৈতিক পদবি যেন আলাদিনের চেরাগ। এটা হাতে থাকলে টেন্ডার বাগানো যায়, খাসজমি দখল করা যায়, প্রশাসন-পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি করে দুই হাতে উপার্জন করা যায়। আর যাঁরা রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নেন, সততাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা বিত্তবৈভবের দেখা পান না। বরং পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হন। টাকা না থাকার কারণে বর্তমানে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শবাদী ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তিরা নির্বাচনে মনোনয়ন পান না। মনোনয়ন বাগিয়ে নেন কালোবাজারি, মুনাফাখোর, ব্যাংক লোপাটকারী, অর্থ পাচারকারী আর গুন্ডাপান্ডাদের গডফাদাররা। না, সবাই এই শ্রেণির তা-ও বলা যাবে না। তবে এদের আধিক্য দিন দিন বাড়ছে। আর ক্রমেই কমে যাচ্ছে দেশ ও জাতির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিকের সংখ্যা।
একটি লোকগীতি হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন: ‘চোরেরা খায় কোরমা-পোলাও, সাধু ঘুরে দ্বারে দ্বারে/তাজ্জব হয়ে গেলাম বাবা দিন-দুনিয়ার ব্যবহারে।’ আধ্যাত্মিক ধাঁচের এ গানটিতে আমাদের বর্তমান সমাজের যথার্থ চিত্রই ফুটে উঠেছে। এখন যে যত বড় চোর, সমাজে তার আসনটি তত উঁচুতে। আর যাঁরা সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা থাকেন অবহেলিত। কোরমা-পোলাও তাঁদের ভাগ্যে জোটে না। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বাস্তবতার নিষ্ঠুর কশাঘাতে তাঁরা ধুঁকে ধুঁকে মরেন। একটি জাতি বা সমাজের জন্য এর চেয়ে আর ট্র্যাজিডি আর কী হতে পারে!
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে