চিররঞ্জন সরকার
‘ঘরর অভাব দূর গইত্তো যাই চ’রি লই লাশ অইয়ে আঁর পোয়া। ইতে আগামীবার দাখিল পরীক্ষা দিবার হথা। ঘরর অভাবও দূর ন -অইল, পরীক্ষাও দিত ন-পারিল আঁর পোয়া। ঘরর এদুগুন কর্জ লই আঁই হন্ডে যাইয়ুম, কী গইজ্জুম (সংসারের অভাব দূর করতে গিয়ে চাকরি নিয়ে লাশ হলো আমার ছেলে। আগামী বছর তার দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার কথা। অভাব দূর হলো না, পরীক্ষাও দিতে পারল না আমার ছেলে। এত ঋণ নিয়ে আমি কোথায় যাব, কী করব)।’ এসব বলে বিলাপ করছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত মাহমুদ রেজা ওরফে মীর খানের (১৮) মা নূরাইন জান্নাত।
একটি দৈনিক পত্রিকায় এ খবর পাঠ করার পর সত্যিই হৃদয়টা মোচড় দিয়ে ওঠে। করোনাভাইরাস মহামারি যখন গোটা দুনিয়ায় মৃত্যুদূত হয়ে দেখা দিয়েছে, প্রতিদিন ভাইরাসের নীরব কিন্তু নিষ্ঠুর আঘাতে শত শত মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে, রুটি-রুজির সঙ্গে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে যখন মানুষ চরম যুদ্ধে লিপ্ত, তখন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে পুলিশের গুলিতে বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিহত হওয়ার খবর সত্যিই দুঃখজনক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে কেন এমন খবর পাঠ করতে হবে? কী দোষ করেছিলেন মাহমুদসহ ওই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিহত শ্রমিকেরা? শ্রমিকেরা তাঁদের প্রাপ্য কাজের মজুরি দাবি করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য শ্রমিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা সম্পূর্ণ অন্যায়, অমানবিক এবং অসাংবিধানিক। এটি কোনো গণতান্ত্রিক দেশে মোটেও কাম্য নয়।
বাঁশখালীর এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা কেন ঘটল, কেন শ্রমিকেরা উত্তেজিত হলেন, কেন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে হত্যা করল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, এই ঘটনায় বাইরের উসকানি ছিল। শ্রমিক নিয়োগের ঠিকাদারি না পাওয়া স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ঘোঁট পাকানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। ঘটনার নেপথ্যে যা-ই থাক, তাই বলে প্রতিবাদী শ্রমিকদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে? তাঁদের রক্তাক্ত করা হবে?
গণমাধ্যমের খবরমতে, ওই কারখানাটিতে কয়েক দিন ধরেই শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের কাছে ১০ দফা দাবিও উত্থাপন করেন। শ্রমিকদের দাবির মধ্যে ছিল মাসের শুরুতে অর্থাৎ ৫-১০ তারিখের মধ্যে বেতন, পবিত্র রমজানে বিকেল ৫টার মধ্যে ছুটি এবং রমজানে ইফতারের জন্য বরাদ্দ, যখন-তখন ছাঁটাই বন্ধ, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা ইত্যাদি। এসব দাবির কোনোটাই অন্যায্য কিংবা বাস্তবায়ন না করার মতো নয়। তবু কেন মালিকপক্ষ এই দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছিল? মালিকপক্ষের উদাসীনতা, লাভ ও লোভের কাছে শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুণœ হবে, তাঁরা যৌক্তিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুললে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হবে? এ কেমন গণতন্ত্র? শ্রমিকের জীবনের কী তবে কোনো মূল্য নেই?
যে কারখানায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, সেখানে অসন্তোষ থাকবে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবে, উসকানি থাকবে, দলাদলি থাকবে, নাশকতার চেষ্টা হবে—এর কোনো কিছুই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এসব ঝুঁকি ম্যানেজ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ যেকোনো কারখানা ব্যবস্থাপনার একেবারে প্রাথমিক শর্ত। সেখানে কেন এমন রক্তারক্তি কা- ঘটল? ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ক্ষোভ প্রশমনে কর্তৃপক্ষ কী উদ্যোগ নিয়েছে? এ হত্যাকা-ের দায় তাই কারখানা কর্তৃপক্ষকেও নিতে হবে। টাকার জোরে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মজুরের রক্ত ঝরানোর খেলা তাদের অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের এই আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে। পুলিশ কেন এমন মারমুখী ভূমিকা পালন করল? এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের প্রথমে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করার কথা। তাতে কাজ না হলে রাবার বুলেট ছোঁড়ার কথা। সব ব্যর্থ হলে, নিজেদের প্রাণ নিয়ে সংশয় দেখা দিলে পরেই কেবল গুলি চালানোর কথা। সেটাও টার্গেট করে নয়, ফাঁকা গুলি যাকে বলে। নিতান্তই অনিবার্য হয়ে উঠলে পুলিশ পায়ে গুলি চালাতে পারে। কিন্তু বুক কিংবা কপাল বরাবর গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি আদৌ হয়েছিল কী? যদি তেমনটা না হয়ে থাকে, তাহলে কেন টার্গেট করে গুলি চালানো হলো?
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে ওই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, এই অভিযোগে ২০১৬ সালেও গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহতসহ বহুসংখ্যক গ্রামবাসী আহত হন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেও সেখানে মতবিনিময় সভা চলাকালে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। কারখানা স্থাপনকারী এস আলম গ্রুপ কিংবা সরকার, কোনো পক্ষ থেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতেই কেন বারবার সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে? এ ব্যাপারে কেন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না? বারবার বঞ্চিত ও প্রতিবাদী শ্রমিকের দিকে পুলিশ বন্দুক তাক করবে, শ্রমিকের রক্তে মাটি ভিজে যাবে; আর সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে—এমনটা হতে পারে না। অসন্তোষ ও বিক্ষোভ দমনের নামে এভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দেশের পুলিশকে অনেক ক্ষেত্রে এত বেশি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যে তারা প্রায়ই এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ধরে আনতে বললে বেঁধে তো আনেই, সঙ্গে চলে লাঠিপেটা। অথচ এসবের কোনো কিছুই আইনসিদ্ধ নয়। পুলিশের কাজ অপরাধ দমন করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কাজটি মোটেও ডান্ডা মেরে ঠান্ডা কিংবা গুলি করে খুলি উড়িয়ে কবরে পাঠিয়ে দেওয়া নয়। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর ধৈর্য্য ও সংযম। কোনো অবস্থাতেই পুলিশ দস্যুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না।
মনে রাখতে হবে, আইনবিরুদ্ধ উপায়ে আইনশৃঙ্খলা ফিরতে পারে না। উপায়টা যদি আইন মোতাবেকও হয়, কিন্তু এমন আইন যা সাধারণ ন্যায়বিচারের বিপ্রতীপ, তবুও নয়। আমাদের দেশে এখনও অনেক ক্ষেত্রে মানুষ অপরাধীদের চেয়ে পুলিশকে বেশি ভয় পায়। এর কারণ, জবাবদিহি না থাকা আর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। এটা মানবধর্ম—কারও হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তুলে দিলে কর্তব্যের আতিশয্যেই হোক আর হাতের সুখ মেটাতেই হোক, বাড়াবাড়ি সে করবেই, পাইকারি স্বৈরাচারের অস্ত্র হবে খুচরো স্বৈরাচার। এখানে হচ্ছেও তাই।
কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ‘আত্মরক্ষা’র অজুহাতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স দেশের সংবিধান তাদের দেয়নি। এ নির্মম হতাকা-ের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে শ্রমিকদের প্রাপ্য ন্যায্য বেতন-ভাতা পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিক হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষকে বন্দুকের নল দিয়ে শায়েস্তা করার চেষ্টা শেষপর্যন্ত খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
‘ঘরর অভাব দূর গইত্তো যাই চ’রি লই লাশ অইয়ে আঁর পোয়া। ইতে আগামীবার দাখিল পরীক্ষা দিবার হথা। ঘরর অভাবও দূর ন -অইল, পরীক্ষাও দিত ন-পারিল আঁর পোয়া। ঘরর এদুগুন কর্জ লই আঁই হন্ডে যাইয়ুম, কী গইজ্জুম (সংসারের অভাব দূর করতে গিয়ে চাকরি নিয়ে লাশ হলো আমার ছেলে। আগামী বছর তার দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার কথা। অভাব দূর হলো না, পরীক্ষাও দিতে পারল না আমার ছেলে। এত ঋণ নিয়ে আমি কোথায় যাব, কী করব)।’ এসব বলে বিলাপ করছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত মাহমুদ রেজা ওরফে মীর খানের (১৮) মা নূরাইন জান্নাত।
একটি দৈনিক পত্রিকায় এ খবর পাঠ করার পর সত্যিই হৃদয়টা মোচড় দিয়ে ওঠে। করোনাভাইরাস মহামারি যখন গোটা দুনিয়ায় মৃত্যুদূত হয়ে দেখা দিয়েছে, প্রতিদিন ভাইরাসের নীরব কিন্তু নিষ্ঠুর আঘাতে শত শত মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে, রুটি-রুজির সঙ্গে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে যখন মানুষ চরম যুদ্ধে লিপ্ত, তখন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে পুলিশের গুলিতে বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিহত হওয়ার খবর সত্যিই দুঃখজনক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে কেন এমন খবর পাঠ করতে হবে? কী দোষ করেছিলেন মাহমুদসহ ওই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিহত শ্রমিকেরা? শ্রমিকেরা তাঁদের প্রাপ্য কাজের মজুরি দাবি করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য শ্রমিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা সম্পূর্ণ অন্যায়, অমানবিক এবং অসাংবিধানিক। এটি কোনো গণতান্ত্রিক দেশে মোটেও কাম্য নয়।
বাঁশখালীর এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা কেন ঘটল, কেন শ্রমিকেরা উত্তেজিত হলেন, কেন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে হত্যা করল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, এই ঘটনায় বাইরের উসকানি ছিল। শ্রমিক নিয়োগের ঠিকাদারি না পাওয়া স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ঘোঁট পাকানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। ঘটনার নেপথ্যে যা-ই থাক, তাই বলে প্রতিবাদী শ্রমিকদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে? তাঁদের রক্তাক্ত করা হবে?
গণমাধ্যমের খবরমতে, ওই কারখানাটিতে কয়েক দিন ধরেই শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের কাছে ১০ দফা দাবিও উত্থাপন করেন। শ্রমিকদের দাবির মধ্যে ছিল মাসের শুরুতে অর্থাৎ ৫-১০ তারিখের মধ্যে বেতন, পবিত্র রমজানে বিকেল ৫টার মধ্যে ছুটি এবং রমজানে ইফতারের জন্য বরাদ্দ, যখন-তখন ছাঁটাই বন্ধ, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা ইত্যাদি। এসব দাবির কোনোটাই অন্যায্য কিংবা বাস্তবায়ন না করার মতো নয়। তবু কেন মালিকপক্ষ এই দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছিল? মালিকপক্ষের উদাসীনতা, লাভ ও লোভের কাছে শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুণœ হবে, তাঁরা যৌক্তিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুললে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হবে? এ কেমন গণতন্ত্র? শ্রমিকের জীবনের কী তবে কোনো মূল্য নেই?
যে কারখানায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, সেখানে অসন্তোষ থাকবে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবে, উসকানি থাকবে, দলাদলি থাকবে, নাশকতার চেষ্টা হবে—এর কোনো কিছুই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এসব ঝুঁকি ম্যানেজ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ যেকোনো কারখানা ব্যবস্থাপনার একেবারে প্রাথমিক শর্ত। সেখানে কেন এমন রক্তারক্তি কা- ঘটল? ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ক্ষোভ প্রশমনে কর্তৃপক্ষ কী উদ্যোগ নিয়েছে? এ হত্যাকা-ের দায় তাই কারখানা কর্তৃপক্ষকেও নিতে হবে। টাকার জোরে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মজুরের রক্ত ঝরানোর খেলা তাদের অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের এই আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে। পুলিশ কেন এমন মারমুখী ভূমিকা পালন করল? এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের প্রথমে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করার কথা। তাতে কাজ না হলে রাবার বুলেট ছোঁড়ার কথা। সব ব্যর্থ হলে, নিজেদের প্রাণ নিয়ে সংশয় দেখা দিলে পরেই কেবল গুলি চালানোর কথা। সেটাও টার্গেট করে নয়, ফাঁকা গুলি যাকে বলে। নিতান্তই অনিবার্য হয়ে উঠলে পুলিশ পায়ে গুলি চালাতে পারে। কিন্তু বুক কিংবা কপাল বরাবর গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি আদৌ হয়েছিল কী? যদি তেমনটা না হয়ে থাকে, তাহলে কেন টার্গেট করে গুলি চালানো হলো?
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে ওই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, এই অভিযোগে ২০১৬ সালেও গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহতসহ বহুসংখ্যক গ্রামবাসী আহত হন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেও সেখানে মতবিনিময় সভা চলাকালে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। কারখানা স্থাপনকারী এস আলম গ্রুপ কিংবা সরকার, কোনো পক্ষ থেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতেই কেন বারবার সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে? এ ব্যাপারে কেন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না? বারবার বঞ্চিত ও প্রতিবাদী শ্রমিকের দিকে পুলিশ বন্দুক তাক করবে, শ্রমিকের রক্তে মাটি ভিজে যাবে; আর সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে—এমনটা হতে পারে না। অসন্তোষ ও বিক্ষোভ দমনের নামে এভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দেশের পুলিশকে অনেক ক্ষেত্রে এত বেশি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যে তারা প্রায়ই এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ধরে আনতে বললে বেঁধে তো আনেই, সঙ্গে চলে লাঠিপেটা। অথচ এসবের কোনো কিছুই আইনসিদ্ধ নয়। পুলিশের কাজ অপরাধ দমন করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কাজটি মোটেও ডান্ডা মেরে ঠান্ডা কিংবা গুলি করে খুলি উড়িয়ে কবরে পাঠিয়ে দেওয়া নয়। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর ধৈর্য্য ও সংযম। কোনো অবস্থাতেই পুলিশ দস্যুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না।
মনে রাখতে হবে, আইনবিরুদ্ধ উপায়ে আইনশৃঙ্খলা ফিরতে পারে না। উপায়টা যদি আইন মোতাবেকও হয়, কিন্তু এমন আইন যা সাধারণ ন্যায়বিচারের বিপ্রতীপ, তবুও নয়। আমাদের দেশে এখনও অনেক ক্ষেত্রে মানুষ অপরাধীদের চেয়ে পুলিশকে বেশি ভয় পায়। এর কারণ, জবাবদিহি না থাকা আর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। এটা মানবধর্ম—কারও হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তুলে দিলে কর্তব্যের আতিশয্যেই হোক আর হাতের সুখ মেটাতেই হোক, বাড়াবাড়ি সে করবেই, পাইকারি স্বৈরাচারের অস্ত্র হবে খুচরো স্বৈরাচার। এখানে হচ্ছেও তাই।
কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ‘আত্মরক্ষা’র অজুহাতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স দেশের সংবিধান তাদের দেয়নি। এ নির্মম হতাকা-ের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে শ্রমিকদের প্রাপ্য ন্যায্য বেতন-ভাতা পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিক হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষকে বন্দুকের নল দিয়ে শায়েস্তা করার চেষ্টা শেষপর্যন্ত খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
৪ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
৪ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
৪ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৪ ঘণ্টা আগে