ভজন সরকার
কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ আমার কাছে সাহিত্যের বাইরেও ভালো লাগার আসনে বসেছিলেন তাঁর গানের জন্য। অসম্ভব সুন্দর টপ্পা গাইতেন বুদ্ধদেব গুহ। অনেক বছর গান শিখেছেন আরেক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী ঋতু গুহ ছিলেন আরেক ভালো লাগা শিল্পী আমার। ঋতু গুহের কণ্ঠের রবীন্দ্রসংগীত পরম প্রশ্রয়ের আসনে বসে আছে সব সময়। বুদ্ধদেব গুহের লেখায় বিচিত্র রকম মানুষের সমাহার। কত আগে পড়েছিলাম ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’। এখনো চরিত্রগুলো মনে দাগ কেটে আছে।
সব মিলিয়ে বুদ্ধদেব গুহের প্রয়াণে বেশ মর্মাহতই হয়েছি। কোভিড হয়েছিল বেশ কিছু আগে। সুস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী জটিলতায় ৮৫ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন।
বুদ্ধদেব গুহ পেশায় খুব নামকরা চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে তিনি পেশাগত কাজে ভ্রমণ করেছেন। এসব অভিজ্ঞতা তাঁর কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের বিচিত্র রকম মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর পরিচয়, যা একজন কথাসাহিত্যিকের জন্য ছিল অপরিহার্য।
এক সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব গুহ বলেছিলেন, ‘সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রতিভা চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন, মাঝেমধ্যে কিছু সাহিত্য লিখতেন। অথচ সাহিত্যিক হিসেবে তিনি আরও অনেক কালজয়ী রচনা লিখে যেতে পারতেন, সে ক্ষমতা ও প্রতিভা সত্যজিৎ রায়ের ছিল। কিন্তু পারেননি তার অন্যতম কারণ, তাঁর জীবনযাত্রা ছিল কিছু নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে আবদ্ধ। সত্যজিৎ রায় সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতেন না, যা একজন সাহিত্যরচয়িতার জন্য অপরিহার্য।’
‘মাধুকরী’ কিংবা ‘কোজাগর’-এর লেখক বুদ্ধদেব গুহের এ কথাটি আমাকে আজও ভাবিয়ে তোলে। যেকোনো সৃষ্টিশীল মানুষকে তাঁর সময়ের ভাবনা ও সমাজের চালচিত্রকে তুলে ধরতে হয় সৃষ্টির মাধ্যমে।
লেখক-সাহিত্যিক-কবি-চিত্রশিল্পী—সবাই তাঁর সময়ের বিবেক বা ধারাবর্ণনাকারী মাত্র। সমসাময়িক ঘটনা সৃজনশীলভাবে প্রকাশ করাই তাঁদের কাজ। আর এ কাজটুকু করতে গিয়ে অনেক সময় অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও আগামীর এক সেতুবন্ধের প্রচেষ্টাও থাকে। এ চেষ্টা বা প্রচেষ্টার সার্থকতার ওপরই নির্ভর করে সৃষ্টির উৎকর্ষ। তাই যেকোনো সৃষ্টির পেছনে সময় এবং সময়ের ধারক-বাহক মানুষের উপস্থিতিই প্রধান। তাই বিচিত্র মানুষকে না-জেনে বহুমুখী সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়।
যাঁরা বুদ্ধদেব গুহের ‘মাধুকরী’ উপন্যাসটি পড়েছেন, তাঁরা জানেন আমাদের চারপাশে মিশে থাকা কত ধরনের মানুষের বসবাস। অথচ তাঁরা কেমন লোকচক্ষুর অন্তরালেই পড়ে আছেন। বুদ্ধদেব গুহ কী নিপুণ দক্ষতায় এসব মানুষের বিচিত্রতর জীবনের বিচিত্ররূপ তুলে ধরেছেন। পেশার জন্যই তাঁকে নানা পেশা ও নানা নেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে বলেই এমন দক্ষতার সঙ্গে চরিত্রগুলো বর্ণনা করেছেন।
একবার মফস্বলের এক কাঠের আড়তের মালিক, যিনি বুদ্ধদেব গুহের মক্কেল, এসে তাঁকে বললেন, ‘বাবু, বলেন তো, কে আপনাকে আপনার বইগুলো লিখে দেন?’
বুদ্ধদেব বাবু বললেন, ‘কেন, তাকে দিয়ে আপনার কী দরকার?’
ভদ্রলোক বললেন, ‘পাড়ার পুজোয় আমাকে ভাষণ দিতে ধরেছে, ভাবছি যিনি আপনার বইগুলো লিখে দেন, যত টাকাই লাগুক তাকে দিয়েই আমার ভাষণটা লিখিয়ে নেব।’
বুদ্ধদেব গুহ মন্তব্য করেছেন, ‘বুঝুন, এ রকম বিচিত্র ধরনের মানুষের সাথেই আমাকে মেলামেশা করতে হয়। আর তাই আমার উপন্যাসের চরিত্রগুলোতেও এ রকম বিচিত্র মানুষের সমাবেশ।’
এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিকের প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের পাঠক একজন প্রতিভাবান লেখককে হারাল। প্রয়াত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহের স্মৃতির প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক: কানাডাপ্রবাসী প্রকৌশলী ও গবেষক
কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ আমার কাছে সাহিত্যের বাইরেও ভালো লাগার আসনে বসেছিলেন তাঁর গানের জন্য। অসম্ভব সুন্দর টপ্পা গাইতেন বুদ্ধদেব গুহ। অনেক বছর গান শিখেছেন আরেক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী ঋতু গুহ ছিলেন আরেক ভালো লাগা শিল্পী আমার। ঋতু গুহের কণ্ঠের রবীন্দ্রসংগীত পরম প্রশ্রয়ের আসনে বসে আছে সব সময়। বুদ্ধদেব গুহের লেখায় বিচিত্র রকম মানুষের সমাহার। কত আগে পড়েছিলাম ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’। এখনো চরিত্রগুলো মনে দাগ কেটে আছে।
সব মিলিয়ে বুদ্ধদেব গুহের প্রয়াণে বেশ মর্মাহতই হয়েছি। কোভিড হয়েছিল বেশ কিছু আগে। সুস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী জটিলতায় ৮৫ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন।
বুদ্ধদেব গুহ পেশায় খুব নামকরা চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে তিনি পেশাগত কাজে ভ্রমণ করেছেন। এসব অভিজ্ঞতা তাঁর কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের বিচিত্র রকম মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর পরিচয়, যা একজন কথাসাহিত্যিকের জন্য ছিল অপরিহার্য।
এক সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব গুহ বলেছিলেন, ‘সত্যজিৎ রায় তাঁর প্রতিভা চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন, মাঝেমধ্যে কিছু সাহিত্য লিখতেন। অথচ সাহিত্যিক হিসেবে তিনি আরও অনেক কালজয়ী রচনা লিখে যেতে পারতেন, সে ক্ষমতা ও প্রতিভা সত্যজিৎ রায়ের ছিল। কিন্তু পারেননি তার অন্যতম কারণ, তাঁর জীবনযাত্রা ছিল কিছু নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে আবদ্ধ। সত্যজিৎ রায় সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতেন না, যা একজন সাহিত্যরচয়িতার জন্য অপরিহার্য।’
‘মাধুকরী’ কিংবা ‘কোজাগর’-এর লেখক বুদ্ধদেব গুহের এ কথাটি আমাকে আজও ভাবিয়ে তোলে। যেকোনো সৃষ্টিশীল মানুষকে তাঁর সময়ের ভাবনা ও সমাজের চালচিত্রকে তুলে ধরতে হয় সৃষ্টির মাধ্যমে।
লেখক-সাহিত্যিক-কবি-চিত্রশিল্পী—সবাই তাঁর সময়ের বিবেক বা ধারাবর্ণনাকারী মাত্র। সমসাময়িক ঘটনা সৃজনশীলভাবে প্রকাশ করাই তাঁদের কাজ। আর এ কাজটুকু করতে গিয়ে অনেক সময় অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও আগামীর এক সেতুবন্ধের প্রচেষ্টাও থাকে। এ চেষ্টা বা প্রচেষ্টার সার্থকতার ওপরই নির্ভর করে সৃষ্টির উৎকর্ষ। তাই যেকোনো সৃষ্টির পেছনে সময় এবং সময়ের ধারক-বাহক মানুষের উপস্থিতিই প্রধান। তাই বিচিত্র মানুষকে না-জেনে বহুমুখী সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়।
যাঁরা বুদ্ধদেব গুহের ‘মাধুকরী’ উপন্যাসটি পড়েছেন, তাঁরা জানেন আমাদের চারপাশে মিশে থাকা কত ধরনের মানুষের বসবাস। অথচ তাঁরা কেমন লোকচক্ষুর অন্তরালেই পড়ে আছেন। বুদ্ধদেব গুহ কী নিপুণ দক্ষতায় এসব মানুষের বিচিত্রতর জীবনের বিচিত্ররূপ তুলে ধরেছেন। পেশার জন্যই তাঁকে নানা পেশা ও নানা নেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে বলেই এমন দক্ষতার সঙ্গে চরিত্রগুলো বর্ণনা করেছেন।
একবার মফস্বলের এক কাঠের আড়তের মালিক, যিনি বুদ্ধদেব গুহের মক্কেল, এসে তাঁকে বললেন, ‘বাবু, বলেন তো, কে আপনাকে আপনার বইগুলো লিখে দেন?’
বুদ্ধদেব বাবু বললেন, ‘কেন, তাকে দিয়ে আপনার কী দরকার?’
ভদ্রলোক বললেন, ‘পাড়ার পুজোয় আমাকে ভাষণ দিতে ধরেছে, ভাবছি যিনি আপনার বইগুলো লিখে দেন, যত টাকাই লাগুক তাকে দিয়েই আমার ভাষণটা লিখিয়ে নেব।’
বুদ্ধদেব গুহ মন্তব্য করেছেন, ‘বুঝুন, এ রকম বিচিত্র ধরনের মানুষের সাথেই আমাকে মেলামেশা করতে হয়। আর তাই আমার উপন্যাসের চরিত্রগুলোতেও এ রকম বিচিত্র মানুষের সমাবেশ।’
এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিকের প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের পাঠক একজন প্রতিভাবান লেখককে হারাল। প্রয়াত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহের স্মৃতির প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক: কানাডাপ্রবাসী প্রকৌশলী ও গবেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৯ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১০ ঘণ্টা আগে