মহিউদ্দিন খান মোহন
ভাশুরের নাম মুখে নেওয়া যায় না—এমন একটি ধারণা আমাদের দেশে বেশ প্রচলিত ছিল। আমাদের মা, খালা, চাচি, ফুফুরা তাঁদের ভাশুরের নাম উচ্চারণ করতেন না। তাঁরা এটাকে বেয়াদবি মনে করতেন। ভাশুর, মানে স্বামীর বড় ভাই শ্রদ্ধেয় ও পূজনীয় ব্যক্তি। তাই তাঁর নাম উচ্চারণ বেয়াদবি এবং পাপকাজ বলেই তাঁরা মনে করতেন। ছোটবেলায় দেখেছি, আমার মা-চাচিরা তাঁদের ভাশুরদের কথা উঠলে ‘সন্তানের চাচা’ বলেই কাজটি চালিয়ে নিতেন। সে সময় স্বামীর নামও স্ত্রীরা উচ্চারণ করতেন না। ‘অমুকের বাপ’ বলেই সম্বোধন করতেন। এখন সময় বদলেছে। স্ত্রীরা এখন স্বামীর নাম অবলীলায় বলেন। এমনকি নাম ধরেও ডাকেন। তবে এখনো ভাশুরেরা শ্রদ্ধার জায়গায়ই আছেন। ছোট ভাইয়ের বউয়েরা তাঁদের নাম ধরে ডাকেন না।
সম্মানিত পাঠকদের মনে নিশ্চয়ই এতক্ষণে প্রশ্ন জেগেছে, দেশে এত বিষয় থাকতে আমি হঠাৎ ভাশুরদের নিয়ে কথা ফেঁদে বসলাম কেন। না, আমি ভাশুর নিয়ে গবেষণা করতে বসিনি। সে রকম ইচ্ছেও নেই। প্রসঙ্গটি মনে উদয় হলো ২০ দলীয় জোটের দুই প্রধান শরিক দলের পরস্পরের নাম উচ্চারণ না করে বিবৃতি দেওয়ার খবর পত্রিকায় পড়ে। ৯ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তার প্রতিবাদে জামায়াতের দেওয়া বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নাম বলা হয়নি। পত্রিকাটি লিখেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তাঁর সে অবদান সরকারি দল অস্বীকার করছে। এমনকি চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে জিয়ার লাশ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই ইস্যুতে বিবৃতি দিলেও জামায়াত সেখানে জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ না করায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। অপরদিকে সম্প্রতি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হলে বিএনপি যে প্রতিবাদ-বিবৃতি দিয়েছে, সেখানেও জামায়াতে ইসলামীর নাম নেওয়া হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রদত্ত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সোমবারও বিরোধী দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ আর জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের সম্মানিত ও মহান ব্যক্তিদের নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে এবং তাঁদের ব্যাপারে অসম্মানজনক ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে, তা দেশের জনগণকে মর্মাহত করেছে।’
একুশ বছর ধরে কাঁধে হাত রেখে পথচলা দুই রাজনৈতিক দলের এহেন বিবৃতি রাজনৈতিক সচেতন মহলে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করেছে। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিরা দল দুটির পরস্পরের নাম নেওয়া থেকে সযত্নে বিরত থাকার নেপথ্য কারণ কী, তা নিয়ে আলোচনা করছেন। বিএনপি-জামায়াতের সখ্য নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটিকে যথেষ্ট ছাড় দিয়ে অনাবশ্যক অনেক দুর্নাম কাঁধে নিয়েছে। বিএনপির বিরোধীপক্ষ এখনো স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য দলটিকে অভিযুক্ত করে থাকে। বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে জামায়াতে ইসলামী বেশ কয়েকটি নির্বাচনী বৈতরণিও পার হয়েছে। দলটির টিকে থাকার পেছনে বিএনপির অবদান কম নয়। অনেকে মনে করেন, নিজেদের সর্বনাশ করেও বিএনপি জামায়াতকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখে চলেছে।
কিন্তু জামায়াত তার প্রতিদানে বিএনপিকে কী দিয়েছে? এটা পরিষ্কার যে, জামায়াত তাদের স্বার্থেই বিএনপিকে ব্যবহার করে চলেছে। জামায়াত প্রচণ্ড স্বার্থপর একটি রাজনৈতিক দল। এর প্রমাণ তারা দিয়েছে ১৯৮৬ সালে বিএনপিকে রেখেই এরশাদের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ১৯৯৬ সালে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা ভেঙে দিয়ে আলাদা নির্বাচন করে। বিএনপি নেতৃত্ব হয়তো সেসব কথা বিস্মৃত হয়েছেন। তাই ২০০০ সালের নির্বাচনী জোটকে রাজনৈতিক জোটে রূপ দিয়ে একুশ বছর ধরে সে বোঝা বয়ে চলেছেন।
নিজেদের স্বার্থে বিএনপিকে ব্যবহার করলেও জামায়াত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতি যে ন্যূনতম শ্রদ্ধাশীল নয়, তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। এর কারণও আছে। রাষ্ট্রপতি জিয়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ‘জামায়াত’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দিতে চাননি। তাই ১৯৭৬ সালে প্রণীত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন (পিপিআর)-এর অধীন জামায়াতিরা গঠন করেছিল ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল)। ওই নামেই তারা মুসলিম লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে আইডিএল বিলুপ্ত করে গঠন করে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
অনেকেই মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের নামের সঙ্গে বাংলাদেশ শব্দটি ব্যবহার করলেও আদতে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। কেননা, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও তারা একাত্তরে তাদের ঘৃণ্য ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন একটি ফোর্সের অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দিয়েছিল। সুতরাং বীর উত্তম জিয়াউর রহমানকে জামায়াত ভালো চোখে দেখবে না–এটাই তো স্বাভাবিক।
এদিকে জামায়াতের সঙ্গে সখ্য নিয়ে বিএনপিতে মতবিরোধের খবর কারও অজানা নয়। কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য দলটির অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে দলের মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল অংশটি মনে করে, জামায়াতের কারণে দেশ-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সময় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে নেতাদের মতামত চেয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত নেতাদের দু-একজন ছাড়া প্রায় সবাই জামায়াত পরিত্যাগের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে পরে দলটি সে অবস্থান থেকে সরে আসে। ২৪ আগস্ট একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতের ছাড়াছাড়ির যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা স্তিমিত হয়ে গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান পত্রিকাটিকে বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, ‘জামায়াত আমাদের সঙ্গে আছে এবং থাকবে।’ এ থেকে এটা পরিষ্কার যে, দলের একটি বড় অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিএনপি জামায়াতের গাঁটছড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। তবে রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, বর্তমান বেকায়দা অবস্থায় জামায়াত বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলেও সুবিধাজনক সময়ে জামায়াতই হয়তো বিএনপিকে পরিত্যাগ করবে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ এক বিএনপিকর্মী বলেন, ‘যে দল আমাদের প্রতিষ্ঠাতার নাম মুখে আনতে চায় না, সে দলকে বগলদাবা করে কেন আমাদের হাঁটতে হবে?’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, বিএনপির এই জামায়াত তোষণ নীতি তাদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ভাশুরের নাম মুখে নেওয়া যায় না—এমন একটি ধারণা আমাদের দেশে বেশ প্রচলিত ছিল। আমাদের মা, খালা, চাচি, ফুফুরা তাঁদের ভাশুরের নাম উচ্চারণ করতেন না। তাঁরা এটাকে বেয়াদবি মনে করতেন। ভাশুর, মানে স্বামীর বড় ভাই শ্রদ্ধেয় ও পূজনীয় ব্যক্তি। তাই তাঁর নাম উচ্চারণ বেয়াদবি এবং পাপকাজ বলেই তাঁরা মনে করতেন। ছোটবেলায় দেখেছি, আমার মা-চাচিরা তাঁদের ভাশুরদের কথা উঠলে ‘সন্তানের চাচা’ বলেই কাজটি চালিয়ে নিতেন। সে সময় স্বামীর নামও স্ত্রীরা উচ্চারণ করতেন না। ‘অমুকের বাপ’ বলেই সম্বোধন করতেন। এখন সময় বদলেছে। স্ত্রীরা এখন স্বামীর নাম অবলীলায় বলেন। এমনকি নাম ধরেও ডাকেন। তবে এখনো ভাশুরেরা শ্রদ্ধার জায়গায়ই আছেন। ছোট ভাইয়ের বউয়েরা তাঁদের নাম ধরে ডাকেন না।
সম্মানিত পাঠকদের মনে নিশ্চয়ই এতক্ষণে প্রশ্ন জেগেছে, দেশে এত বিষয় থাকতে আমি হঠাৎ ভাশুরদের নিয়ে কথা ফেঁদে বসলাম কেন। না, আমি ভাশুর নিয়ে গবেষণা করতে বসিনি। সে রকম ইচ্ছেও নেই। প্রসঙ্গটি মনে উদয় হলো ২০ দলীয় জোটের দুই প্রধান শরিক দলের পরস্পরের নাম উচ্চারণ না করে বিবৃতি দেওয়ার খবর পত্রিকায় পড়ে। ৯ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তার প্রতিবাদে জামায়াতের দেওয়া বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নাম বলা হয়নি। পত্রিকাটি লিখেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তাঁর সে অবদান সরকারি দল অস্বীকার করছে। এমনকি চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে জিয়ার লাশ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই ইস্যুতে বিবৃতি দিলেও জামায়াত সেখানে জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ না করায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। অপরদিকে সম্প্রতি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হলে বিএনপি যে প্রতিবাদ-বিবৃতি দিয়েছে, সেখানেও জামায়াতে ইসলামীর নাম নেওয়া হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রদত্ত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সোমবারও বিরোধী দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ আর জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের সম্মানিত ও মহান ব্যক্তিদের নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে এবং তাঁদের ব্যাপারে অসম্মানজনক ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে, তা দেশের জনগণকে মর্মাহত করেছে।’
একুশ বছর ধরে কাঁধে হাত রেখে পথচলা দুই রাজনৈতিক দলের এহেন বিবৃতি রাজনৈতিক সচেতন মহলে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করেছে। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিরা দল দুটির পরস্পরের নাম নেওয়া থেকে সযত্নে বিরত থাকার নেপথ্য কারণ কী, তা নিয়ে আলোচনা করছেন। বিএনপি-জামায়াতের সখ্য নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটিকে যথেষ্ট ছাড় দিয়ে অনাবশ্যক অনেক দুর্নাম কাঁধে নিয়েছে। বিএনপির বিরোধীপক্ষ এখনো স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য দলটিকে অভিযুক্ত করে থাকে। বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে জামায়াতে ইসলামী বেশ কয়েকটি নির্বাচনী বৈতরণিও পার হয়েছে। দলটির টিকে থাকার পেছনে বিএনপির অবদান কম নয়। অনেকে মনে করেন, নিজেদের সর্বনাশ করেও বিএনপি জামায়াতকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখে চলেছে।
কিন্তু জামায়াত তার প্রতিদানে বিএনপিকে কী দিয়েছে? এটা পরিষ্কার যে, জামায়াত তাদের স্বার্থেই বিএনপিকে ব্যবহার করে চলেছে। জামায়াত প্রচণ্ড স্বার্থপর একটি রাজনৈতিক দল। এর প্রমাণ তারা দিয়েছে ১৯৮৬ সালে বিএনপিকে রেখেই এরশাদের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ১৯৯৬ সালে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা ভেঙে দিয়ে আলাদা নির্বাচন করে। বিএনপি নেতৃত্ব হয়তো সেসব কথা বিস্মৃত হয়েছেন। তাই ২০০০ সালের নির্বাচনী জোটকে রাজনৈতিক জোটে রূপ দিয়ে একুশ বছর ধরে সে বোঝা বয়ে চলেছেন।
নিজেদের স্বার্থে বিএনপিকে ব্যবহার করলেও জামায়াত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতি যে ন্যূনতম শ্রদ্ধাশীল নয়, তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। এর কারণও আছে। রাষ্ট্রপতি জিয়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ‘জামায়াত’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দিতে চাননি। তাই ১৯৭৬ সালে প্রণীত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন (পিপিআর)-এর অধীন জামায়াতিরা গঠন করেছিল ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল)। ওই নামেই তারা মুসলিম লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে আইডিএল বিলুপ্ত করে গঠন করে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
অনেকেই মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের নামের সঙ্গে বাংলাদেশ শব্দটি ব্যবহার করলেও আদতে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। কেননা, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও তারা একাত্তরে তাদের ঘৃণ্য ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন একটি ফোর্সের অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দিয়েছিল। সুতরাং বীর উত্তম জিয়াউর রহমানকে জামায়াত ভালো চোখে দেখবে না–এটাই তো স্বাভাবিক।
এদিকে জামায়াতের সঙ্গে সখ্য নিয়ে বিএনপিতে মতবিরোধের খবর কারও অজানা নয়। কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য দলটির অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে দলের মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল অংশটি মনে করে, জামায়াতের কারণে দেশ-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সময় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে নেতাদের মতামত চেয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত নেতাদের দু-একজন ছাড়া প্রায় সবাই জামায়াত পরিত্যাগের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে পরে দলটি সে অবস্থান থেকে সরে আসে। ২৪ আগস্ট একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতের ছাড়াছাড়ির যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা স্তিমিত হয়ে গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান পত্রিকাটিকে বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, ‘জামায়াত আমাদের সঙ্গে আছে এবং থাকবে।’ এ থেকে এটা পরিষ্কার যে, দলের একটি বড় অংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিএনপি জামায়াতের গাঁটছড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। তবে রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, বর্তমান বেকায়দা অবস্থায় জামায়াত বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলেও সুবিধাজনক সময়ে জামায়াতই হয়তো বিএনপিকে পরিত্যাগ করবে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ এক বিএনপিকর্মী বলেন, ‘যে দল আমাদের প্রতিষ্ঠাতার নাম মুখে আনতে চায় না, সে দলকে বগলদাবা করে কেন আমাদের হাঁটতে হবে?’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, বিএনপির এই জামায়াত তোষণ নীতি তাদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৪ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৪ ঘণ্টা আগে