বিভুরঞ্জন সরকার
নানা উপায়ে চেষ্টা করেও বিএনপির খুলনা সমাবেশ বন্ধ করতে পারেনি সরকার বা আওয়ামী লীগ। বরং সরকার ও সরকার দলের নানামুখী তৎপরতায় এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, বিএনপিকে উজ্জীবিত করার দায়িত্বই বুঝি তারা নিয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের সমাবেশের আগেও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে যানবাহন বন্ধ করাসহ মামলা-গ্রেপ্তার ইত্যাদির মাধ্যমে ভয়ভীতি ছড়িয়ে সমাবেশে জনসমাগম কম দেখানোর চেষ্টায় উল্টো ফল হয়েছে। কোনো সমাবেশ বন্ধ তো হয়ইনি, উল্টো বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সমাবেশ করতে পেরে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা চাঙা হয়ে উঠেছেন। মামলা-হামলার ভয়ে যারা এত দিন সভাসমাবেশ এড়িয়ে চলতেন, এখন তারা নতুন করে আশা পাচ্ছেন এটা ভেবে যে, সরকার চাইলেই বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারবে না।
যারা বিএনপিকে সমর্থন করেন না, কিংবা কোনো দিনই হয়তো বিএনপির কোনো সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি, তাঁরাও সরকারের এই মারমুখী অবস্থান সমর্থন করছেন না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলের অধিকার। সংবিধানেও এই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সভায় উপস্থিত হওয়া বা না-হওয়া যেকোনো মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়। কাউকে কোনো সভায় জোর করে উপস্থিত করা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি কাউকে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়া থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিরত রাখার চেষ্টাও একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা গণতান্ত্রিক চেতনারও পরিপন্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে। অথচ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দলীয় সমর্থকদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কার্যত অসংখ্য সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা দিয়ে তাদের অপূরণীয় সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়ে খুবই বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলতে পারেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও আওয়ামী লীগের বা ১৪ দলের সমাবেশ ভন্ডুল করার জন্য নানা অনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। যদি এটা সত্য হয়েও থাকে, তাহলেও বিএনপির জুতা পায়ে গলিয়ে চলা কি আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের শোভা পায়? বিএনপি যা করেছে, তার পুনরাবৃত্তি যদি আওয়ামী লীগও করে, তাহলে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের তফাত কী থাকল? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলে যারা মনে করেন, তাঁদের বক্তব্য সত্য প্রমাণ করাই কি এখন আওয়ামী লীগের কাজ?
বিএনপি তো বৈধ অনুমতি নিয়েই সমাবেশ করছে। একদিকে সরকার সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে, অন্যদিকে সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার পথের যানবাহন বন্ধ করে দিচ্ছে। এই দ্বিমুখী মনোভাব সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির অনুকূল নয়। বিএনপির সমাবেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকলে এবং এর স্বপক্ষে সরকারের হাতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ থাকলে আগেই সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া বরং ভালো। মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করা সরকারের দায়িত্ব। অথচ সরকারই যদি আগ বাড়িয়ে জনচলাচল বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে দুঃখ রাখার জায়গা কোথায়?
সরকার ও সরকারি দলকে পরিষ্কার করে বলতে হবে, তারা আসলে কী চায়। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে আচরণে অগণতান্ত্রিক হলে মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়। দেশে এমনিতেই তো বিশ্বাসহীনতা চাষাবাদ চলছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। সন্দেহ-সংশয় সর্বব্যাপী। কথায় এবং কাজে অমিল রাজনৈতিক নেতাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থাকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনাই যদি সরকার ও আওয়ামী লীগ নিয়ে থাকে, তাহলে সেটাও পরিষ্কার করে বলা দরকার। আওয়ামী লীগ যদি কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে চলতে চায়, তাহলে গণতন্ত্রের কথা কম বললে মানুষের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একসময় ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’-এর কথা বলা শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগ যদি ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছে থাকে যে, আমরা একনায়কতন্ত্র অথবা সীমিত গণতন্ত্রেরই উপযুক্ত, তাহলে সেটা খোলাখুলি বলা দরকার। আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহবুব কামাল একবার লিখেছিলেন, শেখ হাসিনাকে প্রশ্নটি করলে তিনি বলবেন—ঠিক তাই। আর খালেদা জিয়াকে যদি বলি, তিনি বলবেন—ঠিক আছে, তবে আমার টার্ন শুরু হওয়ার পর থেকে।
মুশকিল হচ্ছে, একনায়কতন্ত্র বলি আর সীমিত গণতন্ত্র—হাসিনা কিংবা খালেদা, যার টার্ন থেকেই শুরু করা যাক না কেন, দেশ আরও গোল্লায় যাবে। কারণ, এদের কারওরই লি কুয়ান কিংবা মাহাথিরের মতো ভিশনারি আউটলুক; অর্থাৎ, দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নেই।
বিনেভোলেন্ট ডিক্টেটর বা জনহিতৈষী একনায়ক বলে একটি শব্দ রাজনীতিতে চালু আছে। তবে বেনেভোলেন্ট ডিক্টেটর হতে হলে সরকারপ্রধানের ভিশনারি আউটলুক বা দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়। সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান কিংবা মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদের মতো নেতার অভাব আমাদের আছে।
শেখ হাসিনা পারতেন, তাঁর সীমিত গণতন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পজিটিভ রেজাল্ট বের করে আনতে, যদি তিনি লি কুয়ানের মতো সুশাসন দিতে সক্ষম হতেন। সুশাসন নেই, গণতন্ত্রও অর্ধেক—এটা তো হয় না। বর্তমান সরকার-সমর্থকেরা মানুষকে গেলাতে চাচ্ছেন যে, গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি। আসলে গণতন্ত্রের বিকল্প উন্নয়ন নয়, গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে সুশাসন। এই সুশাসন উন্নয়ন ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। শুধুই উন্নয়ন, সুশাসন নয়—এমন হলে বিপত্তি। মালয়েশিয়ার মতো রাস্তাঘাট করলাম, মাউন্ট এলিজাবেথের মতো হাসপাতাল বানালাম—তাতে উন্নয়ন হলো বটে, সুশাসন হলো না। এটার জন্য আরও অনেক কিছু অর্জন করতে হবে, বন্ধ করতে হবে ক্রসফায়ার। এই অনেক কিছুর মধ্যে যা যা পড়ে, তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। দুর্নীতি থেকে মুক্তি তার একটি। সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর যথাযথ কার্যকারিতাও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবশ্য কেউ বলতে পারেন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি যথাযথভাবে কাজ করলে তো তা সীমিত গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠবে।
আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অগণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে পরিচিত করতে চায়। কিন্তু তাদের নিজেদের আচরণই মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরতে হলে এবং সেটা যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে অনেক কিছুই পরিষ্কার করে বলতে হবে। বিএনপিকে মোকাবিলা করার রাজনৈতিক পথ না খুঁজে বাঁকা পথে হেঁটে সুফল পাওয়া না-ও যেতে পারে। বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে খুব ভালো অবস্থায় নেই। দলটির প্রধান দুই নেতা আছেন আইনি জটিলতার মধ্যে। এখন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি সম্ভবত সরকার ও সরকারি দলকে ভয় দেখানোর কৌশল নিয়েছে। সরকার ও সরকারি দল মুখে বলছে, আমরা ভয় পাইনি বা পাই না; কিন্তু আচরণে ভয়ের প্রকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তাই খুলনার পথ আওয়ামী লীগকে পরিহার করতেই হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নানা উপায়ে চেষ্টা করেও বিএনপির খুলনা সমাবেশ বন্ধ করতে পারেনি সরকার বা আওয়ামী লীগ। বরং সরকার ও সরকার দলের নানামুখী তৎপরতায় এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, বিএনপিকে উজ্জীবিত করার দায়িত্বই বুঝি তারা নিয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের সমাবেশের আগেও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে যানবাহন বন্ধ করাসহ মামলা-গ্রেপ্তার ইত্যাদির মাধ্যমে ভয়ভীতি ছড়িয়ে সমাবেশে জনসমাগম কম দেখানোর চেষ্টায় উল্টো ফল হয়েছে। কোনো সমাবেশ বন্ধ তো হয়ইনি, উল্টো বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সমাবেশ করতে পেরে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা চাঙা হয়ে উঠেছেন। মামলা-হামলার ভয়ে যারা এত দিন সভাসমাবেশ এড়িয়ে চলতেন, এখন তারা নতুন করে আশা পাচ্ছেন এটা ভেবে যে, সরকার চাইলেই বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারবে না।
যারা বিএনপিকে সমর্থন করেন না, কিংবা কোনো দিনই হয়তো বিএনপির কোনো সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি, তাঁরাও সরকারের এই মারমুখী অবস্থান সমর্থন করছেন না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলের অধিকার। সংবিধানেও এই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সভায় উপস্থিত হওয়া বা না-হওয়া যেকোনো মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়। কাউকে কোনো সভায় জোর করে উপস্থিত করা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি কাউকে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়া থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিরত রাখার চেষ্টাও একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা গণতান্ত্রিক চেতনারও পরিপন্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে। অথচ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দলীয় সমর্থকদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কার্যত অসংখ্য সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা দিয়ে তাদের অপূরণীয় সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়ে খুবই বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলতে পারেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও আওয়ামী লীগের বা ১৪ দলের সমাবেশ ভন্ডুল করার জন্য নানা অনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। যদি এটা সত্য হয়েও থাকে, তাহলেও বিএনপির জুতা পায়ে গলিয়ে চলা কি আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের শোভা পায়? বিএনপি যা করেছে, তার পুনরাবৃত্তি যদি আওয়ামী লীগও করে, তাহলে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের তফাত কী থাকল? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলে যারা মনে করেন, তাঁদের বক্তব্য সত্য প্রমাণ করাই কি এখন আওয়ামী লীগের কাজ?
বিএনপি তো বৈধ অনুমতি নিয়েই সমাবেশ করছে। একদিকে সরকার সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে, অন্যদিকে সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার পথের যানবাহন বন্ধ করে দিচ্ছে। এই দ্বিমুখী মনোভাব সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির অনুকূল নয়। বিএনপির সমাবেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকলে এবং এর স্বপক্ষে সরকারের হাতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ থাকলে আগেই সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া বরং ভালো। মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করা সরকারের দায়িত্ব। অথচ সরকারই যদি আগ বাড়িয়ে জনচলাচল বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে দুঃখ রাখার জায়গা কোথায়?
সরকার ও সরকারি দলকে পরিষ্কার করে বলতে হবে, তারা আসলে কী চায়। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে আচরণে অগণতান্ত্রিক হলে মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়। দেশে এমনিতেই তো বিশ্বাসহীনতা চাষাবাদ চলছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। সন্দেহ-সংশয় সর্বব্যাপী। কথায় এবং কাজে অমিল রাজনৈতিক নেতাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থাকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনাই যদি সরকার ও আওয়ামী লীগ নিয়ে থাকে, তাহলে সেটাও পরিষ্কার করে বলা দরকার। আওয়ামী লীগ যদি কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে চলতে চায়, তাহলে গণতন্ত্রের কথা কম বললে মানুষের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একসময় ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’-এর কথা বলা শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগ যদি ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছে থাকে যে, আমরা একনায়কতন্ত্র অথবা সীমিত গণতন্ত্রেরই উপযুক্ত, তাহলে সেটা খোলাখুলি বলা দরকার। আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহবুব কামাল একবার লিখেছিলেন, শেখ হাসিনাকে প্রশ্নটি করলে তিনি বলবেন—ঠিক তাই। আর খালেদা জিয়াকে যদি বলি, তিনি বলবেন—ঠিক আছে, তবে আমার টার্ন শুরু হওয়ার পর থেকে।
মুশকিল হচ্ছে, একনায়কতন্ত্র বলি আর সীমিত গণতন্ত্র—হাসিনা কিংবা খালেদা, যার টার্ন থেকেই শুরু করা যাক না কেন, দেশ আরও গোল্লায় যাবে। কারণ, এদের কারওরই লি কুয়ান কিংবা মাহাথিরের মতো ভিশনারি আউটলুক; অর্থাৎ, দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নেই।
বিনেভোলেন্ট ডিক্টেটর বা জনহিতৈষী একনায়ক বলে একটি শব্দ রাজনীতিতে চালু আছে। তবে বেনেভোলেন্ট ডিক্টেটর হতে হলে সরকারপ্রধানের ভিশনারি আউটলুক বা দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়। সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান কিংবা মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদের মতো নেতার অভাব আমাদের আছে।
শেখ হাসিনা পারতেন, তাঁর সীমিত গণতন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পজিটিভ রেজাল্ট বের করে আনতে, যদি তিনি লি কুয়ানের মতো সুশাসন দিতে সক্ষম হতেন। সুশাসন নেই, গণতন্ত্রও অর্ধেক—এটা তো হয় না। বর্তমান সরকার-সমর্থকেরা মানুষকে গেলাতে চাচ্ছেন যে, গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি। আসলে গণতন্ত্রের বিকল্প উন্নয়ন নয়, গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে সুশাসন। এই সুশাসন উন্নয়ন ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। শুধুই উন্নয়ন, সুশাসন নয়—এমন হলে বিপত্তি। মালয়েশিয়ার মতো রাস্তাঘাট করলাম, মাউন্ট এলিজাবেথের মতো হাসপাতাল বানালাম—তাতে উন্নয়ন হলো বটে, সুশাসন হলো না। এটার জন্য আরও অনেক কিছু অর্জন করতে হবে, বন্ধ করতে হবে ক্রসফায়ার। এই অনেক কিছুর মধ্যে যা যা পড়ে, তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। দুর্নীতি থেকে মুক্তি তার একটি। সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর যথাযথ কার্যকারিতাও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবশ্য কেউ বলতে পারেন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি যথাযথভাবে কাজ করলে তো তা সীমিত গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠবে।
আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অগণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে পরিচিত করতে চায়। কিন্তু তাদের নিজেদের আচরণই মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরতে হলে এবং সেটা যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে অনেক কিছুই পরিষ্কার করে বলতে হবে। বিএনপিকে মোকাবিলা করার রাজনৈতিক পথ না খুঁজে বাঁকা পথে হেঁটে সুফল পাওয়া না-ও যেতে পারে। বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে খুব ভালো অবস্থায় নেই। দলটির প্রধান দুই নেতা আছেন আইনি জটিলতার মধ্যে। এখন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি সম্ভবত সরকার ও সরকারি দলকে ভয় দেখানোর কৌশল নিয়েছে। সরকার ও সরকারি দল মুখে বলছে, আমরা ভয় পাইনি বা পাই না; কিন্তু আচরণে ভয়ের প্রকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তাই খুলনার পথ আওয়ামী লীগকে পরিহার করতেই হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১১ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১২ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১২ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১২ ঘণ্টা আগে