কৌশিক আহমেদ
সত্যজিৎ রায়ের সময় এক শ্রেণির মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব ছিল, যারা চলচ্চিত্র বুঝত না। তবে তাদের এত বাড়বাড়ন্ত ছিল না। ‘পথের পাঁচালী’র মতো চলচ্চিত্র তাদের ভালো না লাগলেও তারা চুপ থেকেছিল। ভালো না লাগার বিষয়টিকে নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবে মনে করেছিল। এই ধরনের ব্যর্থতাবোধ শিল্পের উৎকর্ষের জন্য জরুরি। এ জাতীয় বোধ থাকলে মানুষ তার বোধের সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে।
বর্তমান সময়ে এসে শিল্পবোধহীন এই শ্রেণির দাপট বেড়েছে। এই শ্রেণি এখন মনে করে ‘আমি বুঝিনি’, তার মানে কিছু হয়নি। হাওয়া চলচ্চিত্রটি যখন দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে, তখন এই চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো আইনি নোটিশ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রটিতে ব্যবহৃত ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
হাওয়া সিনেমায় ব্যবহৃত গালিকে যারা অশ্লীল বলে অভিযোগ তুলেছেন, তারা মূলত শিল্পবোধহীন-মধ্যবিত্ত। এদের অনেকে ভারী ভারী ডিগ্রির সনদধারী হলেও তাদের সে অর্থে ‘শিক্ষিত’ বলা যাবে না। শিক্ষিত হতে হলে ন্যূনতম শিল্পবোধ থাকা জরুরি। কারণ একমাত্র সৃজনশীল বিনোদনের চর্চাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। তবে এদের শিক্ষাটা মাথায় নয়, সার্টিফিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
জগতের প্রতিটি মানুষের ক্ষোভের ভাষা ও অভিব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু শিল্পবোধহীন এই মধ্যবিত্ত সমালোচকেরা, যারা হাওয়া সিনেমায় ব্যবহৃত ‘খানকির পোলা’ (হাওয়া চলচ্চিত্রে পোলা ব্যবহার করলেও খুলনার ভাষা অনুযায়ী ‘ছাওয়াল’ হবে) গালিটিকে অশ্লীল মনে করেন, তাঁরাও পারিবারিক জীবনে বা সামাজিক নানা পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হলে হয়তো ‘বাল’, ‘শুয়োরের বাচ্চা’, ‘কুত্তার বাচ্চা’, বা তাঁদের জানা অন্য কোনো গালি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু মলমূত্রকে যেমন ভালো বা মন্দ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় না, তেমনি গালির কোনো ভালোমন্দ হয় না। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত ক্ষোভের ভাষা অশ্লীল, আর মধ্যবিত্তের ক্ষোভের ভাষা শ্লীল—বিষয়টি এমন নয়।
ধরে নেওয়া যাক, কোনো ব্যক্তি হয়তো একেবারেই গালি জানেন না, বা ব্যবহার করেন না। এ রকম ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হলে তিনি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেন, যা গালি থেকে অশ্লীল। ক্ষোভ কোনো সুখকর বস্তু নয়। এর মধ্যে শালীনতা খুঁজে বেড়ানো অর্থহীন।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বেশি ক্ষুব্ধ থাকে। শিক্ষিত বাবুদের জীবন তাঁরা যাপন করেন না। মাত্রাতিরিক্ত শ্রমঘামের জীবন কখনোই সুখকর নয়। তাই এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে গালির ব্যবহারটাও বেশি। গালি তাদের নিত্যসঙ্গী। ক্ষুব্ধ হলেও তারা গালি ব্যবহার করে, ক্ষোভহীন অবস্থায় থাকলেও এরা গালি ব্যবহার করে। পার্থক্য কেবল অভিব্যক্তিতে। বন্ধুকেও হয়তো তারা আদর করে ‘খানকির ছাওয়াল’ বলে ডাক দিয়ে থাকে।
ভাগ্যিস এই সমালোচকেরা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কালজয়ী উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ পড়ার যোগ্যতা রাখে না। শুরুর ১০-১৫ পাতা উপন্যাসের পটভূমি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এর দু-তিন পাতাও যদি তারা পড়ত, তবে না বুঝেই ‘খোয়াবনামা’র মতো উপন্যাসকে অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলত।
গালির ব্যবহার যখন প্রাসঙ্গিক, তখন সেটা অশ্লীল নয়, অপরিহার্য। কারণ ক্ষোভ জীবনের একটি অনুভূতি, যার বহিঃপ্রকাশ ভাষায় ও অভিব্যক্তিতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গের সংগীত শিল্পী নচিকেতাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনার গানে মাঝেমধ্যে শুয়োরের বাচ্চা, তথা গালি ব্যবহার করা হয়। এই গালি তো আপনার (নচিকেতা) মেয়েও শুনে থাকে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?’
জবাবে নচিকেতা বলেছিলেন, ‘যারা দেশের ক্ষতি করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার করে, ব্যক্তি স্বার্থে দেশের ক্ষতি করে, সেই সব “শুয়োরের বাচ্চাদের” আপনি যদি “শুয়োরের বাচ্চা” না বলেন, তবে আপনার ক্ষোভের প্রকাশ যথাযথ হবে না। কেবল আমার মেয়ে কেন, সব বাচ্চাই স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ জানবে, আল্টিমেটলি জেনে যায়। এর প্রয়োগ তারা কোথায় করছে, সেটাই দেখার বিষয়।’
অঞ্চল ভেদে ক্ষোভ প্রকাশের আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। এসব ভাষা সম্পর্কে ধারণা থাকা মন্দ কিছু নয়, বরং ভালো। এর প্রয়োগ যথাযথ জায়গায় হলেই হলো। তবে কবি-সাহিত্যিক হলে ক্ষোভের তীব্রতা গালি ব্যবহার না করেও প্রকাশ করা সম্ভব। সবাই তো আর কবি-সাহিত্যিক নয়। আবার ব্যক্তিজীবনের তাৎক্ষণিক ক্ষোভের শৈল্পিক উপস্থাপনও সম্ভব নয়।
সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যারা ক্ষোভের যথাযথ প্রকাশ ঘটায় না, তাদের অনেকেই আবার সুবিধাবাদী। তারা ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ শত্রু হতে চায় না, সুবিধা নিতে চায়। তারা জানে চারপাশে হাজারো ‘শুয়োরের বাচ্চা’, তাদের না চটিয়ে বরং তৈল মর্দনই শ্রেয়।
যারা শিল্পে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের প্রাসঙ্গিকতা বোঝেন না, তাঁরা তালে তালে হাওয়া চলচ্চিত্রটি দেখে ফেলায় বেধেছে বিপত্তি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় নিজেকে প্রকাশ করা বেশ সস্তা হওয়ায় তাঁরা তা আবার প্রকাশও করে ফেলছেন। হাওয়া চলচ্চিত্রটি তাদের জন্য নয়। কিন্তু এর একটি গান সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটি চলচ্চিত্রটির প্রমোশনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এ গানের কারণে যারা হাওয়া সিনেমার দর্শক নন, তাঁদের অনেকেই চলচ্চিত্রটি দেখেছেন এবং হতাশ হয়েছেন। এ কারণেই ভাষা নিয়ে বিপত্তি বেধেছে।
কেবল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগই নয়, সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী এই সিনেমার বিরুদ্ধে নারীকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন ও অশ্লীলতার অভিযোগ তুলেছেন। আইনি নোটিশ পর্যন্ত দিয়েছেন। এই ঘটনাটির মধ্য দিয়ে দেশের উচ্চতর পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাট বিরাট সব শিল্পবোধসম্পন্ন মানুষের যে আধিক্য রয়েছে, তার একটা উদাহরণ সৃষ্টি হলো।
বাংলাদেশের ‘চলচ্চিত্র’ তথা নিম্নমানের যাত্রাপালায় দীর্ঘদিন বক্ষ-দোলানো অপ্রাসঙ্গিক নাচ, অতি নিম্নমানের সংলাপ এবং গৎবাঁধা কাহিনি রাজত্ব করেছে। এসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কখনো বাধার মুখে পড়েননি। এমনকি এখনো নিম্নমানের যাত্রাপালার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এগুলোকে নিম্নমানের যাত্রাপালা বলাটাই শ্রেয়। কারণ, এগুলোকে যদি আমরা চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিই, তবে বাঙালি জাতি যে চলচ্চিত্র বোঝে না, বিশ্ব দরবারে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো কখনোই চলচ্চিত্র হয়ে ওঠেনি।
দুই হাজারের দশকের শেষের দিকে স্মার্টফোন এবং তথ্যপ্রযুক্তি যখন সহজলভ্য হয়ে গেল, তখন ‘বক্ষ দোলানো’ নাচসমৃদ্ধ নিম্নমানের যাত্রাপালার চাহিদাও থাকল না। হাতের মুঠোয় পর্নো ছবি দেখার সুযোগ চলে আসায় কাটপিসযুক্ত সিনেমার বাজার শেষ হয়ে গেল। হলগুলো একে একে বন্ধ হতে থাকল। চলচ্চিত্র শিল্প দীর্ঘদিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করল। এই সময়ের মধ্যে দেশের অসংখ্য তরুণ নেটফ্লিক্সসহ অনলাইন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন দেশের ভালো ভালো সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ দেখে অভ্যস্ত হয়েছে। নিম্নমানের যাত্রাপালার পরিবর্তে প্রকৃত চলচ্চিত্র এবং মানসম্পন্ন ওয়েব সিরিজের চাহিদা বেড়েছে।
বর্তমানে হাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতির আশা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশের মেধাবী তরুণেরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও ভালো কাজের সূচনা করেছে।
ঠিক এই সময়ে আমাদের ‘বক্ষ দোলানো’ নাচ দেখে অভ্যস্ত শিল্পবোদ্ধাদের মধ্যে বন্যপ্রাণীর প্রতি দরদ উথলে উঠেছে। তাঁরা শ্লীলতা-অশ্লীলতার মানদণ্ড নির্ধারণ করছেন। কোন চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া যাবে, আর কোনটা দেওয়া যাবে না, সে বিষয়ে সেন্সর বোর্ডকে নসিহত দিচ্ছে, যা উদীয়মান চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে শিল্পবোধসম্পন্ন সব মানুষের উচিত এর তীব্র প্রতিবাদ করা এবং এদের বয়কট করা। এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলে এই জাতি শিল্পবোধহীন নিম্নমানের জাতিতে পরিণত হবে।
সত্যজিৎ রায়ের সময় এক শ্রেণির মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব ছিল, যারা চলচ্চিত্র বুঝত না। তবে তাদের এত বাড়বাড়ন্ত ছিল না। ‘পথের পাঁচালী’র মতো চলচ্চিত্র তাদের ভালো না লাগলেও তারা চুপ থেকেছিল। ভালো না লাগার বিষয়টিকে নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবে মনে করেছিল। এই ধরনের ব্যর্থতাবোধ শিল্পের উৎকর্ষের জন্য জরুরি। এ জাতীয় বোধ থাকলে মানুষ তার বোধের সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে।
বর্তমান সময়ে এসে শিল্পবোধহীন এই শ্রেণির দাপট বেড়েছে। এই শ্রেণি এখন মনে করে ‘আমি বুঝিনি’, তার মানে কিছু হয়নি। হাওয়া চলচ্চিত্রটি যখন দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে, তখন এই চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো আইনি নোটিশ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রটিতে ব্যবহৃত ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
হাওয়া সিনেমায় ব্যবহৃত গালিকে যারা অশ্লীল বলে অভিযোগ তুলেছেন, তারা মূলত শিল্পবোধহীন-মধ্যবিত্ত। এদের অনেকে ভারী ভারী ডিগ্রির সনদধারী হলেও তাদের সে অর্থে ‘শিক্ষিত’ বলা যাবে না। শিক্ষিত হতে হলে ন্যূনতম শিল্পবোধ থাকা জরুরি। কারণ একমাত্র সৃজনশীল বিনোদনের চর্চাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। তবে এদের শিক্ষাটা মাথায় নয়, সার্টিফিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
জগতের প্রতিটি মানুষের ক্ষোভের ভাষা ও অভিব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু শিল্পবোধহীন এই মধ্যবিত্ত সমালোচকেরা, যারা হাওয়া সিনেমায় ব্যবহৃত ‘খানকির পোলা’ (হাওয়া চলচ্চিত্রে পোলা ব্যবহার করলেও খুলনার ভাষা অনুযায়ী ‘ছাওয়াল’ হবে) গালিটিকে অশ্লীল মনে করেন, তাঁরাও পারিবারিক জীবনে বা সামাজিক নানা পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হলে হয়তো ‘বাল’, ‘শুয়োরের বাচ্চা’, ‘কুত্তার বাচ্চা’, বা তাঁদের জানা অন্য কোনো গালি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু মলমূত্রকে যেমন ভালো বা মন্দ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় না, তেমনি গালির কোনো ভালোমন্দ হয় না। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত ক্ষোভের ভাষা অশ্লীল, আর মধ্যবিত্তের ক্ষোভের ভাষা শ্লীল—বিষয়টি এমন নয়।
ধরে নেওয়া যাক, কোনো ব্যক্তি হয়তো একেবারেই গালি জানেন না, বা ব্যবহার করেন না। এ রকম ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হলে তিনি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেন, যা গালি থেকে অশ্লীল। ক্ষোভ কোনো সুখকর বস্তু নয়। এর মধ্যে শালীনতা খুঁজে বেড়ানো অর্থহীন।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বেশি ক্ষুব্ধ থাকে। শিক্ষিত বাবুদের জীবন তাঁরা যাপন করেন না। মাত্রাতিরিক্ত শ্রমঘামের জীবন কখনোই সুখকর নয়। তাই এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে গালির ব্যবহারটাও বেশি। গালি তাদের নিত্যসঙ্গী। ক্ষুব্ধ হলেও তারা গালি ব্যবহার করে, ক্ষোভহীন অবস্থায় থাকলেও এরা গালি ব্যবহার করে। পার্থক্য কেবল অভিব্যক্তিতে। বন্ধুকেও হয়তো তারা আদর করে ‘খানকির ছাওয়াল’ বলে ডাক দিয়ে থাকে।
ভাগ্যিস এই সমালোচকেরা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কালজয়ী উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ পড়ার যোগ্যতা রাখে না। শুরুর ১০-১৫ পাতা উপন্যাসের পটভূমি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এর দু-তিন পাতাও যদি তারা পড়ত, তবে না বুঝেই ‘খোয়াবনামা’র মতো উপন্যাসকে অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলত।
গালির ব্যবহার যখন প্রাসঙ্গিক, তখন সেটা অশ্লীল নয়, অপরিহার্য। কারণ ক্ষোভ জীবনের একটি অনুভূতি, যার বহিঃপ্রকাশ ভাষায় ও অভিব্যক্তিতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গের সংগীত শিল্পী নচিকেতাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনার গানে মাঝেমধ্যে শুয়োরের বাচ্চা, তথা গালি ব্যবহার করা হয়। এই গালি তো আপনার (নচিকেতা) মেয়েও শুনে থাকে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?’
জবাবে নচিকেতা বলেছিলেন, ‘যারা দেশের ক্ষতি করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার করে, ব্যক্তি স্বার্থে দেশের ক্ষতি করে, সেই সব “শুয়োরের বাচ্চাদের” আপনি যদি “শুয়োরের বাচ্চা” না বলেন, তবে আপনার ক্ষোভের প্রকাশ যথাযথ হবে না। কেবল আমার মেয়ে কেন, সব বাচ্চাই স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ জানবে, আল্টিমেটলি জেনে যায়। এর প্রয়োগ তারা কোথায় করছে, সেটাই দেখার বিষয়।’
অঞ্চল ভেদে ক্ষোভ প্রকাশের আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। এসব ভাষা সম্পর্কে ধারণা থাকা মন্দ কিছু নয়, বরং ভালো। এর প্রয়োগ যথাযথ জায়গায় হলেই হলো। তবে কবি-সাহিত্যিক হলে ক্ষোভের তীব্রতা গালি ব্যবহার না করেও প্রকাশ করা সম্ভব। সবাই তো আর কবি-সাহিত্যিক নয়। আবার ব্যক্তিজীবনের তাৎক্ষণিক ক্ষোভের শৈল্পিক উপস্থাপনও সম্ভব নয়।
সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যারা ক্ষোভের যথাযথ প্রকাশ ঘটায় না, তাদের অনেকেই আবার সুবিধাবাদী। তারা ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ শত্রু হতে চায় না, সুবিধা নিতে চায়। তারা জানে চারপাশে হাজারো ‘শুয়োরের বাচ্চা’, তাদের না চটিয়ে বরং তৈল মর্দনই শ্রেয়।
যারা শিল্পে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের প্রাসঙ্গিকতা বোঝেন না, তাঁরা তালে তালে হাওয়া চলচ্চিত্রটি দেখে ফেলায় বেধেছে বিপত্তি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় নিজেকে প্রকাশ করা বেশ সস্তা হওয়ায় তাঁরা তা আবার প্রকাশও করে ফেলছেন। হাওয়া চলচ্চিত্রটি তাদের জন্য নয়। কিন্তু এর একটি গান সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটি চলচ্চিত্রটির প্রমোশনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এ গানের কারণে যারা হাওয়া সিনেমার দর্শক নন, তাঁদের অনেকেই চলচ্চিত্রটি দেখেছেন এবং হতাশ হয়েছেন। এ কারণেই ভাষা নিয়ে বিপত্তি বেধেছে।
কেবল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগই নয়, সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী এই সিনেমার বিরুদ্ধে নারীকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন ও অশ্লীলতার অভিযোগ তুলেছেন। আইনি নোটিশ পর্যন্ত দিয়েছেন। এই ঘটনাটির মধ্য দিয়ে দেশের উচ্চতর পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাট বিরাট সব শিল্পবোধসম্পন্ন মানুষের যে আধিক্য রয়েছে, তার একটা উদাহরণ সৃষ্টি হলো।
বাংলাদেশের ‘চলচ্চিত্র’ তথা নিম্নমানের যাত্রাপালায় দীর্ঘদিন বক্ষ-দোলানো অপ্রাসঙ্গিক নাচ, অতি নিম্নমানের সংলাপ এবং গৎবাঁধা কাহিনি রাজত্ব করেছে। এসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কখনো বাধার মুখে পড়েননি। এমনকি এখনো নিম্নমানের যাত্রাপালার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এগুলোকে নিম্নমানের যাত্রাপালা বলাটাই শ্রেয়। কারণ, এগুলোকে যদি আমরা চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিই, তবে বাঙালি জাতি যে চলচ্চিত্র বোঝে না, বিশ্ব দরবারে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো কখনোই চলচ্চিত্র হয়ে ওঠেনি।
দুই হাজারের দশকের শেষের দিকে স্মার্টফোন এবং তথ্যপ্রযুক্তি যখন সহজলভ্য হয়ে গেল, তখন ‘বক্ষ দোলানো’ নাচসমৃদ্ধ নিম্নমানের যাত্রাপালার চাহিদাও থাকল না। হাতের মুঠোয় পর্নো ছবি দেখার সুযোগ চলে আসায় কাটপিসযুক্ত সিনেমার বাজার শেষ হয়ে গেল। হলগুলো একে একে বন্ধ হতে থাকল। চলচ্চিত্র শিল্প দীর্ঘদিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করল। এই সময়ের মধ্যে দেশের অসংখ্য তরুণ নেটফ্লিক্সসহ অনলাইন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন দেশের ভালো ভালো সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ দেখে অভ্যস্ত হয়েছে। নিম্নমানের যাত্রাপালার পরিবর্তে প্রকৃত চলচ্চিত্র এবং মানসম্পন্ন ওয়েব সিরিজের চাহিদা বেড়েছে।
বর্তমানে হাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতির আশা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশের মেধাবী তরুণেরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও ভালো কাজের সূচনা করেছে।
ঠিক এই সময়ে আমাদের ‘বক্ষ দোলানো’ নাচ দেখে অভ্যস্ত শিল্পবোদ্ধাদের মধ্যে বন্যপ্রাণীর প্রতি দরদ উথলে উঠেছে। তাঁরা শ্লীলতা-অশ্লীলতার মানদণ্ড নির্ধারণ করছেন। কোন চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া যাবে, আর কোনটা দেওয়া যাবে না, সে বিষয়ে সেন্সর বোর্ডকে নসিহত দিচ্ছে, যা উদীয়মান চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে শিল্পবোধসম্পন্ন সব মানুষের উচিত এর তীব্র প্রতিবাদ করা এবং এদের বয়কট করা। এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলে এই জাতি শিল্পবোধহীন নিম্নমানের জাতিতে পরিণত হবে।
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১৫ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১৫ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১৫ ঘণ্টা আগে