মহিউদ্দিন খান মোহন
প্রবীণ রাজনীতিক ও চলচ্চিত্রকার শফি বিক্রমপুরী একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতার বালকপুত্র পিতার কাছে বায়না ধরল সে রাজনীতি করবে, তাকে রাজনীতি শেখাতে হবে। পিতা বললেন, বাবা, রাজনীতি কোনো ভালো কাজ নয়। এটা শেখার দরকার নেই। পুত্র বলল, রাজনীতি ভালো কাজ না হলে তুমি কর কেন? তোমার কাছে কত মানুষ আসে, তোমাকে সালাম দেয়। তুমি বক্তৃতা করলে হাজার হাজার মানুষ শোনে, হাততালি দেয়। রাজনীতি ভালো কাজ। আমি শিখব। নাছোড়বান্দা পুত্রকে সামলাতে না পেরে পিতা বললেন, তাহলে আসো আজ তোমাকে রাজনীতির প্রথম পাঠ দিই। তুমি রেডি তো? পুত্র জানাল সে রেডি। পিতা তাকে বললেন, তুমি এই টেবিলটার ওপরে উঠে লাফ দেবে, আর আমি তোমাকে ধরব। পুত্র সরল মনে টেবিল থেকে লাফ দিল। আর অমনি পিতা তাকে না ধরে এক পাশে সরে গেলেন। মেঝেতে পড়ে পুত্রের হাঁটু-কনুইর চামড়া ছিঁড়ে গেল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি এমন করলে কেন? আমাকে ধরলে না কেন? পিতা পুত্রকে বললেন, এটা হলো তোমার রাজনীতির প্রথম পাঠ। মনে রাখবা, রাজনীতিতে কাউকে শতভাগ বিশ্বাস করতে নেই, কারও ওপর পুরোপুরি ভরসাও করতে নেই। গল্পটি এখানেই শেষ। ওই পুত্র পরে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিল কি না, গল্পে সে কথাও নেই। তবে এটা একটি শিক্ষণীয় গল্প, সন্দেহ নেই।
রাজনীতি একটি জটিল বিষয়–এটা রাজনীতির ভেতরের লোকেরাই বলে থাকেন। পোড় খাওয়া রাজনীতিকেরা এই কর্মপ্রক্রিয়াটিতে সম্পৃক্ত হয়ে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তা অনেক সময়ই সুখকর হয় না। রাজনীতিতে কে যে কখন কার শত্রুতে পরিণত হবে, তা যেমন বলা যায় না, তেমনি কে কখন বন্ধু বনে যাবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। পুরো বিষয়টি নির্ভর করে পারস্পরিক স্বার্থের ওপর। সে স্বার্থ কখনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক, আবার কখনো দলীয়। প্রয়োজনের সময় যাকে বাহুডোরে বেঁধে নেওয়া হয়, প্রয়োজন শেষ হলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে খুব একটা দেরি হয় না। আবার ক্ষমতা বা সিংহাসনের লোভে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষটির চরম শত্রুতে পরিণত হওয়ার দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই।
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতার অনেক নজির দেখতে পাব। কারবালার যুদ্ধ দিয়েই শুরু করি। রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)-কে সমঝোতার কথা বলে দামেস্কে ডেকে এনেছিল শাসক ইয়াজিদ। ইমাম হুসাইন সরল বিশ্বাসে তাঁর পরিবার ও কয়েকজন সঙ্গীসহ মদিনা থেকে আসছিলেন। কিন্তু দামেস্কে পৌঁছাতে পারেননি। তার আগেই ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ময়দানে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক ঘেরাও এবং অসম যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন। সীতা অপহরণকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল রাম-রাবণের যুদ্ধ। সে যুদ্ধে রাবণের ভাই বিভীষণ বিশ্বাসঘাতকতা করায় রামের যুদ্ধ জয় সহজ হয়েছিল। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল পলাশীর আমবাগানে। সেই যুদ্ধের সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের ওপর শতভাগ বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন নবাব। কিন্তু তাঁর বিশ্বাসঘাতকতায় মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়ে ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ পরাজিত করতে পেরেছিল পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের নবাব বাহিনীকে। শেরে মহীশূর নামে ইতিহাসখ্যাত বীর ছিলেন মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান। ইংরেজদের সঙ্গে যে যুদ্ধে তাঁর পরাজয় ঘটে এবং তিনি নিহত হন, সেই যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন প্রধান সেনাপতি ও টিপুর চাচাশ্বশুর মীর সাদিক।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কাদার মির্জা। বিশ্বস্ত ভেবে জেনারেল আইয়ুব খানকে বসিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধানের পদে। সেই আইয়ুব খানই ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর এক ধাক্কায় সরিয়ে দেন ইস্কান্দার মির্জাকে। দখলে নিয়ে নেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার গদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের জাতিরাষ্ট্রটির তিনি প্রতিষ্ঠাতা। জাতির জনক। তিনি কি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিলেন, নিজের পরে যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন, সেই বন্ধু খন্দকার মোশতাক তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারেন? তিনি কি এটাও ভাবতে পেরেছিলেন, যে দেশের মানুষের জন্য জীবনের সোনালি সময়গুলো ব্যয় করেছেন, অমানুষিক কষ্ট-যন্ত্রণা-নির্যাতন ভোগ করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাঁকে হত্যা করতে পারে? না, এ রকম ভাবনা তাঁর মনে কখনো আসেনি। তাই দেশি-বিদেশি কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে এ বিষয়ে সতর্ক করলে তিনি উচ্চ স্বরে হেসে বলতেন, ‘বাঙালি আমাকে মারবে না।’ এই সরল বিশ্বাসের দাম তাঁকে দিতে হয়েছে স্ত্রী-পুত্রসহ জীবন দিয়ে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কি কখনো ভাবতে পেরেছিলেন, তাঁরই বন্ধু জেনারেল মঞ্জুর তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীই কি কখনো ভাবতে পেরেছিলেন, অস্ত্র হাতে যারা তাঁকে সর্বক্ষণ পাহারা দেয় শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, তাদেরই আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে তাঁর প্রাণ যাবে? পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো কয়েকজনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউল হককে। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! সেই জিয়াউল হকের দ্বারা তিনি শুধু ক্ষমতাচ্যুতই হননি, তাঁকে ফাঁসির দড়িতেও ঝুলতে হয়েছে। খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শেষ মেয়াদে বিশ্বস্ত ভেবে এবং শতভাগ আস্থা স্থাপন করে কয়েকজনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান করেছিলেন জেনারেল মইন উ আহমেদকে। কিন্তু রাজনীতির এক জটিল পরিস্থিতিতে সেই মইন উ আহমেদ বিশ্বাস ও আস্থার মূল্য দেননি। ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করতে তিনি যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, তার বলি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
স্বার্থের কাছে বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা খুব ঠুনকো বিষয়। স্বার্থের কারণে অতি আপনজনও চরম শত্রুতে পরিণত হয়। আর রাজনীতিতে এই চর্চাটা খুব বেশি। ইতিহাস ঘাঁটলে এ রকম হাজারো দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। সেই পৌরাণিক আমল থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত রাজনীতির জগতে বিশ্বাসঘাতকতার নজির একের পর এক স্থাপিত হয়ে আসছে। হয়তো এ পৃথিবীতে রাজনীতি যত দিন থাকবে, তত দিন এ রকম নজির স্থাপিত হতেই থাকবে।
নিবন্ধের শুরুতে যে গল্পটি বলেছি, তার সারমর্ম নিশ্চয়ই সহৃদয় পাঠক হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন। আর এ জন্যই রাজনীতির যাঁরা পাকা খেলোয়াড়, তাঁরা সবাইকে গয়রহ বিশ্বাস করেন না। তাঁরা জানেন, লোক ছাড়া কাজ চলবে না এটা যেমন সত্য, তেমনি ভুল লোককে ভুল জায়গায় অধিষ্ঠানও চরম ভুল। যার খেসারত গদি কিংবা জীবন দিয়ে দিতে হয়। তাঁরা ঘুড়িকে বাতাসে ভেসে বেড়াতে দিলেও সুতোর নাটাইটা শক্ত হাতেই ধরে রাখেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
প্রবীণ রাজনীতিক ও চলচ্চিত্রকার শফি বিক্রমপুরী একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতার বালকপুত্র পিতার কাছে বায়না ধরল সে রাজনীতি করবে, তাকে রাজনীতি শেখাতে হবে। পিতা বললেন, বাবা, রাজনীতি কোনো ভালো কাজ নয়। এটা শেখার দরকার নেই। পুত্র বলল, রাজনীতি ভালো কাজ না হলে তুমি কর কেন? তোমার কাছে কত মানুষ আসে, তোমাকে সালাম দেয়। তুমি বক্তৃতা করলে হাজার হাজার মানুষ শোনে, হাততালি দেয়। রাজনীতি ভালো কাজ। আমি শিখব। নাছোড়বান্দা পুত্রকে সামলাতে না পেরে পিতা বললেন, তাহলে আসো আজ তোমাকে রাজনীতির প্রথম পাঠ দিই। তুমি রেডি তো? পুত্র জানাল সে রেডি। পিতা তাকে বললেন, তুমি এই টেবিলটার ওপরে উঠে লাফ দেবে, আর আমি তোমাকে ধরব। পুত্র সরল মনে টেবিল থেকে লাফ দিল। আর অমনি পিতা তাকে না ধরে এক পাশে সরে গেলেন। মেঝেতে পড়ে পুত্রের হাঁটু-কনুইর চামড়া ছিঁড়ে গেল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি এমন করলে কেন? আমাকে ধরলে না কেন? পিতা পুত্রকে বললেন, এটা হলো তোমার রাজনীতির প্রথম পাঠ। মনে রাখবা, রাজনীতিতে কাউকে শতভাগ বিশ্বাস করতে নেই, কারও ওপর পুরোপুরি ভরসাও করতে নেই। গল্পটি এখানেই শেষ। ওই পুত্র পরে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিল কি না, গল্পে সে কথাও নেই। তবে এটা একটি শিক্ষণীয় গল্প, সন্দেহ নেই।
রাজনীতি একটি জটিল বিষয়–এটা রাজনীতির ভেতরের লোকেরাই বলে থাকেন। পোড় খাওয়া রাজনীতিকেরা এই কর্মপ্রক্রিয়াটিতে সম্পৃক্ত হয়ে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তা অনেক সময়ই সুখকর হয় না। রাজনীতিতে কে যে কখন কার শত্রুতে পরিণত হবে, তা যেমন বলা যায় না, তেমনি কে কখন বন্ধু বনে যাবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। পুরো বিষয়টি নির্ভর করে পারস্পরিক স্বার্থের ওপর। সে স্বার্থ কখনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক, আবার কখনো দলীয়। প্রয়োজনের সময় যাকে বাহুডোরে বেঁধে নেওয়া হয়, প্রয়োজন শেষ হলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে খুব একটা দেরি হয় না। আবার ক্ষমতা বা সিংহাসনের লোভে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষটির চরম শত্রুতে পরিণত হওয়ার দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই।
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতার অনেক নজির দেখতে পাব। কারবালার যুদ্ধ দিয়েই শুরু করি। রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)-কে সমঝোতার কথা বলে দামেস্কে ডেকে এনেছিল শাসক ইয়াজিদ। ইমাম হুসাইন সরল বিশ্বাসে তাঁর পরিবার ও কয়েকজন সঙ্গীসহ মদিনা থেকে আসছিলেন। কিন্তু দামেস্কে পৌঁছাতে পারেননি। তার আগেই ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ময়দানে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক ঘেরাও এবং অসম যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন। সীতা অপহরণকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল রাম-রাবণের যুদ্ধ। সে যুদ্ধে রাবণের ভাই বিভীষণ বিশ্বাসঘাতকতা করায় রামের যুদ্ধ জয় সহজ হয়েছিল। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল পলাশীর আমবাগানে। সেই যুদ্ধের সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের ওপর শতভাগ বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন নবাব। কিন্তু তাঁর বিশ্বাসঘাতকতায় মাত্র তিন হাজার সৈন্য নিয়ে ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ পরাজিত করতে পেরেছিল পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের নবাব বাহিনীকে। শেরে মহীশূর নামে ইতিহাসখ্যাত বীর ছিলেন মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান। ইংরেজদের সঙ্গে যে যুদ্ধে তাঁর পরাজয় ঘটে এবং তিনি নিহত হন, সেই যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন প্রধান সেনাপতি ও টিপুর চাচাশ্বশুর মীর সাদিক।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কাদার মির্জা। বিশ্বস্ত ভেবে জেনারেল আইয়ুব খানকে বসিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধানের পদে। সেই আইয়ুব খানই ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর এক ধাক্কায় সরিয়ে দেন ইস্কান্দার মির্জাকে। দখলে নিয়ে নেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার গদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের জাতিরাষ্ট্রটির তিনি প্রতিষ্ঠাতা। জাতির জনক। তিনি কি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিলেন, নিজের পরে যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন, সেই বন্ধু খন্দকার মোশতাক তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারেন? তিনি কি এটাও ভাবতে পেরেছিলেন, যে দেশের মানুষের জন্য জীবনের সোনালি সময়গুলো ব্যয় করেছেন, অমানুষিক কষ্ট-যন্ত্রণা-নির্যাতন ভোগ করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাঁকে হত্যা করতে পারে? না, এ রকম ভাবনা তাঁর মনে কখনো আসেনি। তাই দেশি-বিদেশি কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে এ বিষয়ে সতর্ক করলে তিনি উচ্চ স্বরে হেসে বলতেন, ‘বাঙালি আমাকে মারবে না।’ এই সরল বিশ্বাসের দাম তাঁকে দিতে হয়েছে স্ত্রী-পুত্রসহ জীবন দিয়ে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কি কখনো ভাবতে পেরেছিলেন, তাঁরই বন্ধু জেনারেল মঞ্জুর তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীই কি কখনো ভাবতে পেরেছিলেন, অস্ত্র হাতে যারা তাঁকে সর্বক্ষণ পাহারা দেয় শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, তাদেরই আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে তাঁর প্রাণ যাবে? পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো কয়েকজনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউল হককে। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! সেই জিয়াউল হকের দ্বারা তিনি শুধু ক্ষমতাচ্যুতই হননি, তাঁকে ফাঁসির দড়িতেও ঝুলতে হয়েছে। খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শেষ মেয়াদে বিশ্বস্ত ভেবে এবং শতভাগ আস্থা স্থাপন করে কয়েকজনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান করেছিলেন জেনারেল মইন উ আহমেদকে। কিন্তু রাজনীতির এক জটিল পরিস্থিতিতে সেই মইন উ আহমেদ বিশ্বাস ও আস্থার মূল্য দেননি। ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করতে তিনি যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, তার বলি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
স্বার্থের কাছে বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা খুব ঠুনকো বিষয়। স্বার্থের কারণে অতি আপনজনও চরম শত্রুতে পরিণত হয়। আর রাজনীতিতে এই চর্চাটা খুব বেশি। ইতিহাস ঘাঁটলে এ রকম হাজারো দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। সেই পৌরাণিক আমল থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত রাজনীতির জগতে বিশ্বাসঘাতকতার নজির একের পর এক স্থাপিত হয়ে আসছে। হয়তো এ পৃথিবীতে রাজনীতি যত দিন থাকবে, তত দিন এ রকম নজির স্থাপিত হতেই থাকবে।
নিবন্ধের শুরুতে যে গল্পটি বলেছি, তার সারমর্ম নিশ্চয়ই সহৃদয় পাঠক হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন। আর এ জন্যই রাজনীতির যাঁরা পাকা খেলোয়াড়, তাঁরা সবাইকে গয়রহ বিশ্বাস করেন না। তাঁরা জানেন, লোক ছাড়া কাজ চলবে না এটা যেমন সত্য, তেমনি ভুল লোককে ভুল জায়গায় অধিষ্ঠানও চরম ভুল। যার খেসারত গদি কিংবা জীবন দিয়ে দিতে হয়। তাঁরা ঘুড়িকে বাতাসে ভেসে বেড়াতে দিলেও সুতোর নাটাইটা শক্ত হাতেই ধরে রাখেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৬ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১৬ ঘণ্টা আগে