বিভুরঞ্জন সরকার
১ মে, মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময়ের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারান ১০ জন শ্রমিক। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক কনভেনশনে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে পয়লা মে তারিখকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে মেহনতি মানুষকে সম্মান জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মে দিবস। শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের দিন মহান মে দিবস।
আমাদের দেশেও প্রতিবছর ঘটা করে মে দিবস পালন করা হয়। পয়লা মে সরকারি ছুটির দিন, কিন্তু সকাল সন্ধ্যার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে আমাদের দেশের শ্রমিকেরা যে মজুরি পান তা নিয়ে কি তাঁরা সন্তুষ্ট? তাঁরা কি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারছেন? বাস্তবে আমাদের শ্রমিকদের জীবন নানা দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে কাটছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হলেও এর অভাবে দেশের, বিশেষত গার্মেন্টস কারখানাগুলো শ্রমিকের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডসহ একের পর এক দুর্ঘটনায় শ্রমিকেরা হতাহত হলেও এ-সংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগ হয় না। এ প্রসঙ্গে তাজরীন গার্মেন্টস এবং রানা প্লাজার দুর্ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।
আমাদের দেশে সংগঠিত খাতের চেয়ে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নানা ধরনের কাজে অংশ নিচ্ছেন।
গার্মেন্টস ছাড়াও কৃষি, নির্মাণ, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, চা-বাগান, ওষুধ শিল্প, কোমলপানীয়, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদি খাতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশি। নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মজুরি-বৈষম্যের শিকার। দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও এখন কার্যত মুখ থুবরে পড়েছে। নানা অসুস্থ প্রবণতা ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে গ্রাস করেছে। সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলন দেশে আছে তবে সেই ধারাটা দুর্বল।
প্রবীণ শ্রমিকনেতা মঞ্জুরুল আহসান খান একবার বলেছিলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা না করে শ্রমিকের ক্ষতি করে। নেতাগিরি একটা ব্যবসা, প্রচুর টাকাপয়সা পাওয়া যায় এতে।’ বাংলাদেশের এখনকার ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রে মঞ্জুরুল আহসানের অভিযোগটি নির্মম সত্য। শ্রমিক স্বার্থের কথা বলে, শ্রমিকদের নাম ভাঙিয়ে, শ্রমিকদের সংগঠিত শক্তির ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন সেক্টরে বা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব যা করছেন, তার নাম স্রেফ ব্যবসা, বিনা পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। সে জন্য আমাদের দেশে শ্রমিকেরা ভালো না থাকলেও ভালো থাকেন শ্রমিকনেতারা এবং মালিকেরা।
মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন খাতের কয়েকজন শ্রমিকদের কথা এখানে তুলে ধরছি—
দক্ষিণাঞ্চলের একটি উপজেলায় প্রায় দুই দশক ধরে লেদ মেশিনে কাজ করেন কাজল নামের এক শ্রমিক। এত বছর এই পেশায় নিয়োজিত হওয়ার কারণে প্রাত্যহিক অল্প-বিস্তর ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে পারলেও সকাল ৯টা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত কাজ করতে করতে কখনো কখনো ঝিমঝিম করে তাঁর হাত-পা।
মাসে যে টাকা মাইনে পান, তা দিয়ে মাসের ১৫-২০ দিন চলে গেলেও বাকি দিনগুলো আর চলতে চায় না। শ্রমিক হিসেবে তাঁর অধিকারের কথা জানতে চাইলে বিস্মিত হয়ে বলেন, ‘একজন শ্রমিক হিসাবে আমার কী অধিকার, তা আমি কেমনে জানব? এসব আমার মালিক আমাকে কখনো বলে নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মে দিবস কী জানি না। ওই দিন শ্রমিক গো হইলে আমরা ছুটি পাইতাম। মালিক এসব জানতে পারে।’ জীবন নিয়ে আলাদা কোনো ভাবনা নেই কাজলের। দুই ছেলে এক মেয়ের সংসারে তাঁর একটাই চাওয়া—ছেলেমেয়েকে মানুষ করা। আর যত দিন তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম আছেন, তত দিন তিনি কাজ করতে চান লেদ মেশিনে। কারণ, এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ তাঁর জানা নেই।
রাবেয়া খাতুন একটি স্পিনিং মিলের শ্রমিক। কয়েক বছর ধরে একটি স্পিনিং মিলে কাজ করছেন। প্রতিদিনের কাজ শেষ করতে হিমশিম খেতে হয় রাবেয়াকে। আবার একটু এদিক-ওদিক হলেই শুনতে হয় কটু কথা। তিনি বলেন, এভাবে বকাঝকার চেয়ে মারা ভালো। সারাদিন দাঁড়িয়ে কাজ, বসার উপায় নেই। মাঝেমধ্যে পা চিনচিন করে ওঠে। তবে অন্যান্য কারখানা থেকে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা কিছুটা ভালো বলে তিনি জানান। এখানে তাঁদের কারখানার কাজে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে চিকিৎসার খরচ দেওয়া হয়। রোজার সময় ইফতারি দেওয়া হয়। এসব সুযোগ-সুবিধা পেলেও মজুরির ব্যাপারে রাবেয়া বেশ হতাশ। সারাদিন কাজ করে তিনি যে সামান্য টাকা পান, অভাবের সংসার এই অল্প টাকায় চলতে চায় না। বেতনের বড় একটা অংশ ঘর ভাড়াতেই চলে যায়। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং এই প্রতিকূল সময়ে তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকাই যেন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার কোনো মানসিকতা যেন আর তাঁর নেই। তাই তো মে দিবসের কথা উঠলেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ও আমি জানি না। সে আবার কী?’
লেদ মেশিনের কারখানায় কাজ করেন হাসান হাবিব। তিনি বলেন, ‘একজন শ্রমিক হিসেবে কাজের ন্যায্য মজুরি পাই না। তারপরও সংসারের প্রয়োজনে, জীবন বাঁচানোর তাগিদে বা ভবিষ্যতের জন্য অল্প টাকায় শ্রম বিক্রি করি। যে বয়সে তাঁর ব্যস্ত থাকার কথা পড়াশোনা ও জীবন গড়ায়, সে সময়েই তাঁকে নামতে হয়েছে জীবন সংগ্রামে। ছয় সদস্যের সংসারে বাবা ও হাসানই হচ্ছেন উপার্জনকারী। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় হাসানকে। দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাসে যে মজুরি পান, তা বর্তমান বাজারে খুবই সামান্য। কাজের সময়, পরিবেশ, মজুরি, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা প্রতিটি বিষয়েই হাসানের ভীষণ ক্ষোভ। তাই এই মে দিবসে তাঁর দাবি—চাই সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ন্যায্য মজুরি, আট ঘণ্টা শ্রম, সরকারি ছুটি ভোগের অধিকার, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ।
উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা শহরের আবদুর রহিম একজন ওয়েল্ডিং শ্রমিক। বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কাছে কাজের কোনো বিকল্প নেই। রাত পোহালেই তাঁকে বের হতে হয় কাজের উদ্দেশ্যে। তাঁর মতে, কাজ নিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন। জীবনের জন্য কাজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বাভাবিক কাজের সময় থাকলেও তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তি ১-২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়। ঘণ্টা হিসেবে দৈনিক মজুরি পান তিনি। প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকা, সেই হিসেবে দৈনিক গড়ে ৯-১০ ঘণ্টা কাজের মজুরি পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘মালিকের সুবিধামতো কাজ করলে কাজের যথেষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে। ইলেকট্রিক ও লোহা দিয়ে কাজ করতে হয় বলে আমাদের প্রত্যেকটি কাজের ঝুঁকি বেশি। বর্তমান বাজার হিসেবে আমাদের মজুরি বৃদ্ধি হয় না। কাজ শেখার সময় নামমাত্র মজুরিতে কাজ করতে হয়। যার ভিত্তিতে জীবনধারণ খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তবে কাজে দক্ষতা অর্জন করায় এখন হেডমিস্ত্রি হয়েছি, যা বর্তমানে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে।’
খুলনায় রূপসা এলাকায় প্রায় ৪২টি মাছের কোম্পানি আছে। সেখানে কয়েক হাজার নারীশ্রমিক নিয়োজিত আছেন। তাঁদেরই একজন জুলেখা বেগম, তিনি চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। মে দিবসে তাঁর ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক হিসেবে আমাদের ন্যায্য দাবি ও ন্যায্য মজুরি আদায়ই আমাদের আন্দোলন। সকাল-সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঠিকমতো মজুরি পাই না। একজন পুরুষ আট ঘণ্টা কাজ করে যে মজুরি পাচ্ছেন, আমি সেই কাজ করে তাঁর তুলনায় পাচ্ছি অর্ধেক। আমাদের এখানে মজুরি বৈষম্য আছে।’ জুলেখা আরও বলেন, কোম্পানিতে পুরুষের তুলনায় তাঁদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। সরকারি বিধান আছে, গর্ভকালে নারীরা চার মাস ছুটি ভোগ করবেন। কিন্তু তাঁদের কোম্পানিতে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। কখনো কখনো এমন হয় যে কোম্পানির অফিসের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়, কিন্তু বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজের পরিবেশ ভালো না। লিখিত কোনো নিয়োগপত্র তাঁদের নেই। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যেই জুলেখা জীবন কাটাচ্ছেন।
আমজাদ হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। ট্রাকে, ঠেলা গাড়িতে বিভিন্ন মাল ওঠা-নামা করান তিনি। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন তাও অনেক বছর হয়ে গেছে। শুরু থেকে কাজ করছেন ঢাকার নয়াবাজারে। মাল টানার কাজে কোনো স্থিরতা না থাকায় আমজাদ হোসেনের নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা তাঁর সংসারে। শ্রমিক বলে সমাজে কোনো মর্যাদা পান না আমজাদ হোসেন। এ ছাড়া তাঁর কাজের পরিবেশও স্বাস্থ্যকর না। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ঘিঞ্জি এলাকায় কাজ করতে হয় তাঁকে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ যদি একই রকম হয়, তবে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান টাকা দেওয়া উচিত। তবে নারীদের পক্ষে অনেক কষ্টের কাজ করা সম্ভব না বলে তাঁর বিশ্বাস। মে দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আমজাদ হোসেনের। তবে বছরের একটা দিন শ্রমিকদের তিনি গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় মিছিল করতে দেখেন বলে জানান।
ঢাকার নলগোলার মোকসেদা কাজ করেন ভাঙারি শ্রমিক হিসেবে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা কাজ করেও মোকসেদা যে টাকা পান একজন পুরুষ শ্রমিক পান তাঁর দ্বিগুণ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক হিসেবে একই কাজ করার পরেও তাঁকে দুপুরের খাবারের সময় সবার জন্য পানি নিয়ে আসা এবং থালাবাসন ধোয়ার কাজও করতে হয়। কিন্তু এসব কাজের বিনিময়ে মজুরি এত অল্প পান যে তিনি অসন্তোষ লুকিয়ে রাখতে পারেন না। তবু কেন এই কাজে আছেন জানতে চাইলে, আক্ষেপ করে বলেন, ‘কাজ নাই, কী করুম ভাই?’ পুরান ঢাকায় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন মোকসেদা। দুই ছেলে এক মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। বাইরে সারাদিন অনিচ্ছা আর ক্ষোভ নিয়ে কাজ করেও ঘরেও শান্তি নেই। স্বামী নেশা করেন, আর প্রায়ই তাঁকে মারধর করেন। ঘরে-বাইরে এত অশান্তির মাঝেও বেঁচে আছেন জুলেখা, লড়াই করে যাচ্ছেন অবিরাম।
গত বছর এবং এ বছর করোনা মহামারিভাইরাস মহামারির কারণে এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্যোগ। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। কেউ কেউ কিছু সরকারি ত্রাণ সাহায্য পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। যাঁরা কোনো সাহায্য পাননি, তাঁদের অবস্থা সঙ্গীন। কবে এই দুর্যোগকাল শেষ হবে, কবে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম, আয়-উপার্জন শুরু হবে, তা জানা না থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় জীবন কাটছে যেসব শ্রমজীবী মানুষের, তাঁদের কাছে মে দিবস কোনো আলাদা বার্তা নিয়ে এসেছে বলে মনে হয় না।
তবে এটা ঠিক যে কোনো কালে, কোনো দেশেই শ্রমিকদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, ন্যায্য মজুরি কেউ আপনা-আপনি দিয়ে দেয় না, লড়াই করেই তা আদায় করতে হয়, হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প প্রয়োজন। আবার শিল্প বিকাশের জন্য শিল্প ক্ষেত্রে শিল্পবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন। অসুস্থ ও সুবিধাবাদী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শিল্পের বিকাশ ও স্থিতির জন্য ক্ষতিকর। সে জন্যই শিল্প বিকাশের স্বার্থে, জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির স্বার্থে দেশে সুস্থ ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের যে অভাব এখন তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। অসংগঠিত খাতের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবনের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সবার জন্য বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। সব খাতেই শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। শ্রম আইন যাতে বাস্তবায়িত হয়, তার প্রতি কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। প্রতিবছর মে দিবস এ অঙ্গীকারই সামনে নিয়ে আসে ।
১ মে, মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময়ের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারান ১০ জন শ্রমিক। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক কনভেনশনে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে পয়লা মে তারিখকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে মেহনতি মানুষকে সম্মান জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মে দিবস। শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের দিন মহান মে দিবস।
আমাদের দেশেও প্রতিবছর ঘটা করে মে দিবস পালন করা হয়। পয়লা মে সরকারি ছুটির দিন, কিন্তু সকাল সন্ধ্যার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে আমাদের দেশের শ্রমিকেরা যে মজুরি পান তা নিয়ে কি তাঁরা সন্তুষ্ট? তাঁরা কি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারছেন? বাস্তবে আমাদের শ্রমিকদের জীবন নানা দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে কাটছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হলেও এর অভাবে দেশের, বিশেষত গার্মেন্টস কারখানাগুলো শ্রমিকের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডসহ একের পর এক দুর্ঘটনায় শ্রমিকেরা হতাহত হলেও এ-সংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগ হয় না। এ প্রসঙ্গে তাজরীন গার্মেন্টস এবং রানা প্লাজার দুর্ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।
আমাদের দেশে সংগঠিত খাতের চেয়ে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নানা ধরনের কাজে অংশ নিচ্ছেন।
গার্মেন্টস ছাড়াও কৃষি, নির্মাণ, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, চা-বাগান, ওষুধ শিল্প, কোমলপানীয়, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদি খাতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশি। নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মজুরি-বৈষম্যের শিকার। দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও এখন কার্যত মুখ থুবরে পড়েছে। নানা অসুস্থ প্রবণতা ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে গ্রাস করেছে। সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলন দেশে আছে তবে সেই ধারাটা দুর্বল।
প্রবীণ শ্রমিকনেতা মঞ্জুরুল আহসান খান একবার বলেছিলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা না করে শ্রমিকের ক্ষতি করে। নেতাগিরি একটা ব্যবসা, প্রচুর টাকাপয়সা পাওয়া যায় এতে।’ বাংলাদেশের এখনকার ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রে মঞ্জুরুল আহসানের অভিযোগটি নির্মম সত্য। শ্রমিক স্বার্থের কথা বলে, শ্রমিকদের নাম ভাঙিয়ে, শ্রমিকদের সংগঠিত শক্তির ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন সেক্টরে বা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব যা করছেন, তার নাম স্রেফ ব্যবসা, বিনা পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। সে জন্য আমাদের দেশে শ্রমিকেরা ভালো না থাকলেও ভালো থাকেন শ্রমিকনেতারা এবং মালিকেরা।
মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন খাতের কয়েকজন শ্রমিকদের কথা এখানে তুলে ধরছি—
দক্ষিণাঞ্চলের একটি উপজেলায় প্রায় দুই দশক ধরে লেদ মেশিনে কাজ করেন কাজল নামের এক শ্রমিক। এত বছর এই পেশায় নিয়োজিত হওয়ার কারণে প্রাত্যহিক অল্প-বিস্তর ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে পারলেও সকাল ৯টা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত কাজ করতে করতে কখনো কখনো ঝিমঝিম করে তাঁর হাত-পা।
মাসে যে টাকা মাইনে পান, তা দিয়ে মাসের ১৫-২০ দিন চলে গেলেও বাকি দিনগুলো আর চলতে চায় না। শ্রমিক হিসেবে তাঁর অধিকারের কথা জানতে চাইলে বিস্মিত হয়ে বলেন, ‘একজন শ্রমিক হিসাবে আমার কী অধিকার, তা আমি কেমনে জানব? এসব আমার মালিক আমাকে কখনো বলে নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মে দিবস কী জানি না। ওই দিন শ্রমিক গো হইলে আমরা ছুটি পাইতাম। মালিক এসব জানতে পারে।’ জীবন নিয়ে আলাদা কোনো ভাবনা নেই কাজলের। দুই ছেলে এক মেয়ের সংসারে তাঁর একটাই চাওয়া—ছেলেমেয়েকে মানুষ করা। আর যত দিন তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম আছেন, তত দিন তিনি কাজ করতে চান লেদ মেশিনে। কারণ, এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ তাঁর জানা নেই।
রাবেয়া খাতুন একটি স্পিনিং মিলের শ্রমিক। কয়েক বছর ধরে একটি স্পিনিং মিলে কাজ করছেন। প্রতিদিনের কাজ শেষ করতে হিমশিম খেতে হয় রাবেয়াকে। আবার একটু এদিক-ওদিক হলেই শুনতে হয় কটু কথা। তিনি বলেন, এভাবে বকাঝকার চেয়ে মারা ভালো। সারাদিন দাঁড়িয়ে কাজ, বসার উপায় নেই। মাঝেমধ্যে পা চিনচিন করে ওঠে। তবে অন্যান্য কারখানা থেকে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা কিছুটা ভালো বলে তিনি জানান। এখানে তাঁদের কারখানার কাজে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে চিকিৎসার খরচ দেওয়া হয়। রোজার সময় ইফতারি দেওয়া হয়। এসব সুযোগ-সুবিধা পেলেও মজুরির ব্যাপারে রাবেয়া বেশ হতাশ। সারাদিন কাজ করে তিনি যে সামান্য টাকা পান, অভাবের সংসার এই অল্প টাকায় চলতে চায় না। বেতনের বড় একটা অংশ ঘর ভাড়াতেই চলে যায়। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং এই প্রতিকূল সময়ে তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকাই যেন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার কোনো মানসিকতা যেন আর তাঁর নেই। তাই তো মে দিবসের কথা উঠলেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ও আমি জানি না। সে আবার কী?’
লেদ মেশিনের কারখানায় কাজ করেন হাসান হাবিব। তিনি বলেন, ‘একজন শ্রমিক হিসেবে কাজের ন্যায্য মজুরি পাই না। তারপরও সংসারের প্রয়োজনে, জীবন বাঁচানোর তাগিদে বা ভবিষ্যতের জন্য অল্প টাকায় শ্রম বিক্রি করি। যে বয়সে তাঁর ব্যস্ত থাকার কথা পড়াশোনা ও জীবন গড়ায়, সে সময়েই তাঁকে নামতে হয়েছে জীবন সংগ্রামে। ছয় সদস্যের সংসারে বাবা ও হাসানই হচ্ছেন উপার্জনকারী। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় হাসানকে। দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাসে যে মজুরি পান, তা বর্তমান বাজারে খুবই সামান্য। কাজের সময়, পরিবেশ, মজুরি, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা প্রতিটি বিষয়েই হাসানের ভীষণ ক্ষোভ। তাই এই মে দিবসে তাঁর দাবি—চাই সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ন্যায্য মজুরি, আট ঘণ্টা শ্রম, সরকারি ছুটি ভোগের অধিকার, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ।
উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা শহরের আবদুর রহিম একজন ওয়েল্ডিং শ্রমিক। বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কাছে কাজের কোনো বিকল্প নেই। রাত পোহালেই তাঁকে বের হতে হয় কাজের উদ্দেশ্যে। তাঁর মতে, কাজ নিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন। জীবনের জন্য কাজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বাভাবিক কাজের সময় থাকলেও তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তি ১-২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়। ঘণ্টা হিসেবে দৈনিক মজুরি পান তিনি। প্রতি ঘণ্টা ১০ টাকা, সেই হিসেবে দৈনিক গড়ে ৯-১০ ঘণ্টা কাজের মজুরি পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘মালিকের সুবিধামতো কাজ করলে কাজের যথেষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে। ইলেকট্রিক ও লোহা দিয়ে কাজ করতে হয় বলে আমাদের প্রত্যেকটি কাজের ঝুঁকি বেশি। বর্তমান বাজার হিসেবে আমাদের মজুরি বৃদ্ধি হয় না। কাজ শেখার সময় নামমাত্র মজুরিতে কাজ করতে হয়। যার ভিত্তিতে জীবনধারণ খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তবে কাজে দক্ষতা অর্জন করায় এখন হেডমিস্ত্রি হয়েছি, যা বর্তমানে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে।’
খুলনায় রূপসা এলাকায় প্রায় ৪২টি মাছের কোম্পানি আছে। সেখানে কয়েক হাজার নারীশ্রমিক নিয়োজিত আছেন। তাঁদেরই একজন জুলেখা বেগম, তিনি চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। মে দিবসে তাঁর ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক হিসেবে আমাদের ন্যায্য দাবি ও ন্যায্য মজুরি আদায়ই আমাদের আন্দোলন। সকাল-সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঠিকমতো মজুরি পাই না। একজন পুরুষ আট ঘণ্টা কাজ করে যে মজুরি পাচ্ছেন, আমি সেই কাজ করে তাঁর তুলনায় পাচ্ছি অর্ধেক। আমাদের এখানে মজুরি বৈষম্য আছে।’ জুলেখা আরও বলেন, কোম্পানিতে পুরুষের তুলনায় তাঁদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। সরকারি বিধান আছে, গর্ভকালে নারীরা চার মাস ছুটি ভোগ করবেন। কিন্তু তাঁদের কোম্পানিতে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। কখনো কখনো এমন হয় যে কোম্পানির অফিসের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়, কিন্তু বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজের পরিবেশ ভালো না। লিখিত কোনো নিয়োগপত্র তাঁদের নেই। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যেই জুলেখা জীবন কাটাচ্ছেন।
আমজাদ হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। ট্রাকে, ঠেলা গাড়িতে বিভিন্ন মাল ওঠা-নামা করান তিনি। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন তাও অনেক বছর হয়ে গেছে। শুরু থেকে কাজ করছেন ঢাকার নয়াবাজারে। মাল টানার কাজে কোনো স্থিরতা না থাকায় আমজাদ হোসেনের নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা তাঁর সংসারে। শ্রমিক বলে সমাজে কোনো মর্যাদা পান না আমজাদ হোসেন। এ ছাড়া তাঁর কাজের পরিবেশও স্বাস্থ্যকর না। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ঘিঞ্জি এলাকায় কাজ করতে হয় তাঁকে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ যদি একই রকম হয়, তবে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান টাকা দেওয়া উচিত। তবে নারীদের পক্ষে অনেক কষ্টের কাজ করা সম্ভব না বলে তাঁর বিশ্বাস। মে দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আমজাদ হোসেনের। তবে বছরের একটা দিন শ্রমিকদের তিনি গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় মিছিল করতে দেখেন বলে জানান।
ঢাকার নলগোলার মোকসেদা কাজ করেন ভাঙারি শ্রমিক হিসেবে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা কাজ করেও মোকসেদা যে টাকা পান একজন পুরুষ শ্রমিক পান তাঁর দ্বিগুণ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক হিসেবে একই কাজ করার পরেও তাঁকে দুপুরের খাবারের সময় সবার জন্য পানি নিয়ে আসা এবং থালাবাসন ধোয়ার কাজও করতে হয়। কিন্তু এসব কাজের বিনিময়ে মজুরি এত অল্প পান যে তিনি অসন্তোষ লুকিয়ে রাখতে পারেন না। তবু কেন এই কাজে আছেন জানতে চাইলে, আক্ষেপ করে বলেন, ‘কাজ নাই, কী করুম ভাই?’ পুরান ঢাকায় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন মোকসেদা। দুই ছেলে এক মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। বাইরে সারাদিন অনিচ্ছা আর ক্ষোভ নিয়ে কাজ করেও ঘরেও শান্তি নেই। স্বামী নেশা করেন, আর প্রায়ই তাঁকে মারধর করেন। ঘরে-বাইরে এত অশান্তির মাঝেও বেঁচে আছেন জুলেখা, লড়াই করে যাচ্ছেন অবিরাম।
গত বছর এবং এ বছর করোনা মহামারিভাইরাস মহামারির কারণে এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্যোগ। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। কেউ কেউ কিছু সরকারি ত্রাণ সাহায্য পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। যাঁরা কোনো সাহায্য পাননি, তাঁদের অবস্থা সঙ্গীন। কবে এই দুর্যোগকাল শেষ হবে, কবে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম, আয়-উপার্জন শুরু হবে, তা জানা না থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় জীবন কাটছে যেসব শ্রমজীবী মানুষের, তাঁদের কাছে মে দিবস কোনো আলাদা বার্তা নিয়ে এসেছে বলে মনে হয় না।
তবে এটা ঠিক যে কোনো কালে, কোনো দেশেই শ্রমিকদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, ন্যায্য মজুরি কেউ আপনা-আপনি দিয়ে দেয় না, লড়াই করেই তা আদায় করতে হয়, হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প প্রয়োজন। আবার শিল্প বিকাশের জন্য শিল্প ক্ষেত্রে শিল্পবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন। অসুস্থ ও সুবিধাবাদী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শিল্পের বিকাশ ও স্থিতির জন্য ক্ষতিকর। সে জন্যই শিল্প বিকাশের স্বার্থে, জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির স্বার্থে দেশে সুস্থ ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের যে অভাব এখন তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। অসংগঠিত খাতের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবনের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সবার জন্য বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। সব খাতেই শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। শ্রম আইন যাতে বাস্তবায়িত হয়, তার প্রতি কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। প্রতিবছর মে দিবস এ অঙ্গীকারই সামনে নিয়ে আসে ।
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
১ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
২ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
২ ঘণ্টা আগে