ড. বেনজীর আহমেদ
গোল্ডেন গেট ব্রিজ, সানফ্রান্সিসিকো। স্কুলের নিচের ক্লাসে বইয়ে এই ব্রিজ নিয়ে লেখা এক ইংরেজি কবিতা পড়েছিলাম। বইয়ের এক পাতা, মাঝ বরাবর অর্ধেকে ব্রিজটির দম্ভপূর্ণ ছবি, ডান পাশে কবিতাটি ছাপা। স্কুলপড়ুয়া এক শিশুর মনে আঁকিবুঁকি জিজ্ঞাসা—কোথায় আমেরিকা? কোথায় সানফ্রানসিসকো? কেমন সেটা?
১৯৭৬ সালে ঢাকায় এসেছি। পরিচিত এক বড় ভাই বিমানে চাকরি করতেন। তখন বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে। একদিন তাঁর কাছে যাই বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজের ওঠানামা দেখব বলে। বড় ভাই ট্রানজিটে নিয়ে গেলেন, স্ন্যাকস করবেন।
খেতে খেতে পরিচয় এক আমেরিকান ট্রানজিট যাত্রীর সঙ্গে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কখনো আমেরিকা গিয়েছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘আসবে একসময়।’ আমি বললাম, ‘যাব সানফ্রান্সিসকো।’ তিনি বললেন, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘গোল্ডেন গেট ব্রিজ দেখব।’
আইফেল টাওয়ার কি ফ্রান্সকে পরিচিতি দেয়, নাকি ফ্রান্সকে আইফেল টাওয়ারের? স্ট্যাচু অব লিবার্টি, টুইন টাওয়ার, পেট্রোনাস টাওয়ার—এগুলো মডার্ন মার্ভেল, তাদের দেশকে পরিচিতি দেয়, তার শৌর্যবীর্য উৎকর্ষতার মহিমা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।
প্রমত্তা পদ্মার বুকে দানবাকৃতির সেতু হবে, পদ্মার দুপারের মানুষকে যুক্ত করবে, দেশকে বিভাজিত বদ্বীপের বিভক্তি থেকে পরিত্রাণ দেবে, সম্ভব? ভেবেছে কি কেউ?
আশির দশকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আমি দক্ষিণের জেলা গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতাম, তখন যাওয়া-আসার সবচেয়ে ভালো সময় ছিল বর্ষাকাল। আমরা বেলা ১১টার দিকে সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২০-২৫ জনের একটি দল হইহই করে লঞ্চে উঠতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমুল আড্ডা, লঞ্চের আপার ক্লাসে, সামনে-পেছনে। কেউ কেউ তাস নিয়ে বসে যেত। তারপর রাত নেমে এলে নদীর ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে ঘুম এসে যেত। লঞ্চে রান্না খুব সুস্বাদু ছিল, নাকি বাড়ন্ত বয়সের দুর্নিবার ক্ষুধা; যে কারণেই হোক, খাবার খুব মজা ছিল।
খেয়েই ঘুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে জিজ্ঞাসা করতাম মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টির কাছাকাছি পৌঁছালাম কি না। কাঠপট্টির কাছাকাছি পৌঁছালেই সেখান থেকে সদরঘাট ৩০-৪০ মিনিটের দূরত্ব। আর সদরঘাট মানেই তখন ঢাকা।
প্রায় এক দিনের যাত্রা, তাও বলছি তখনকার সময়ে ঢাকায় যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকালের কথা।
শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাড়ি গেলে ঢাকা আসা-যাওয়া ছিল ভিন্ন এক সংগ্রাম। এ অন্য এক অভিযাত্রা। আমার মফস্বল শহর। শহরের সবাইকে চিনি। সব রিকশাওয়ালা পরিচিত। বিকেলে কাউকে বলে রাখতাম ঢাকায় যাব। রিকশাওয়ালা ভোররাতে এসে ডেকে তুলত। তৈরি হয়ে রিকশায় করে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে হরিদাসপুর লঞ্চঘাটে যেতাম। তারপর ভোর ৬টায় ছোট একতলা লঞ্চে করে পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় পৌঁছাতাম টেকেরহাটে। রোড সাইডে চায়ের দোকানে অপেক্ষা। তখন মাওয়ায় কোনো ফেরিঘাট ছিল না। সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল-ফরিদপুর রুটে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসে করে ফরিদপুরের গোয়ালচামট বাসস্ট্যান্ড। তারপর আবার লোকাল বাস অথবা বেবিট্যাক্সিতে করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। বললাম যত সহজে, যাত্রা তত সহজ ছিল না। পথে টেকেরহাট ফেরি, দিকনগর ফেরি, দৌলতদিয়া ঘাটের আগেও গোয়ালন্দ ফেরি। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পড়ন্ত বিকেল। সেখানে পৌঁছে আগে ঘাটের বিখ্যাত সব হোটেলে দুপুরের খাওয়া। তারপর পদ্মা পার হয়ে আরিচা ঘাটে আসতে আসতে সন্ধ্যা। তারপর মুড়ির টিন বাসে করে গাবতলী। সেখান থেকে রিকশায় মিরপুর রোড ধরে যখন আমার প্রিয় জহুরুল হক হলে পৌঁছেছি, তখন রাত ৮টা কিংবা ৯টা। সমস্ত শরীর, ট্রাভেল ব্যাগ ধুলায় ধূসরিত। পুরু শরীরে ধুলাবালুর আস্তর।
মাওয়া ঘাটের বয়স খুব বেশি নয়। স্বপ্নের সেতু চালু হচ্ছে। ঘাটটি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে পারাপারের অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সেই হয়তো মৃত্যু হবে না কারও আর।
সহজ করে বলি। এই কদিন আগেও মিডিয়ায় মেলা হইচই। ঢাকায় সবজির দাম বেড়েছে। বেগুনের কেজি ৬০ টাকা। সেদিন সকালে দক্ষিণের কৃষক বেগুন বেচেছেন কেজি ১৭ টাকা দরে। ২৫ জুনের পর তাঁকে অন্তত ১৭ টাকায় আর বেগুন বেচতে হবে না, যখন ঢাকায় সেটির দর ৬০ টাকা থাকবে।
যোগাযোগ মানে চলাচল। আর চলাচল মানেই আর্থিক সমৃদ্ধি। পুরো দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়ন হবে, নগরায়ণের গতি বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাড়বে, নতুন করে কর্মসংস্থান হবে কোটি মানুষের। মেগা প্রকল্পগুলো দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে।
বঙ্গবন্ধু স্টিমারে করে বাড়ি যেতেন। সড়কযোগাযোগ সে সময় তেমন ছিল না বললেই চলে। সে জন্য আমার এলাকার মানুষ মামলা-মোকদ্দমা, জমিজমার রেকর্ড-সংক্রান্ত দেনদরবারের বিষয় ছাড়া সে সময়কার জেলা শহর ফরিদপুরমুখো হতো না। খুলনা নৌপথ সহজ ছিল। শিক্ষা, ব্যবসা, চাকরির জন্য সবাই খুলনা পছন্দ করত। এ জন্য খুলনা শহরে আমাদের এলাকার মানুষের চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি এখনো রয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে বর্ষায় দিগন্তছোঁয়া অপর পারের উদ্দেশ্যে ‘বদর বদর’ বলে ব্যাপারীর নৌকা এখন আর খুব একটা পাড়ি দেবে না। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়রে অমর সৃষ্টি কুবের, কপিলা চরিত্রগুলো আমাদের অগ্রযাত্রার আবাহনে বিস্মৃত ও ধোঁয়াশা হয়ে ইতিহাসের আরও গভীরে চলে যাবে। সেই সঙ্গে সংগ্রামী কুবেরদের বঞ্চনা, শোক ও লাঞ্ছনাও জাদুঘরমুখী হবে।
মিষ্টিপাগল বাঙালি। আমাদের দেশে জন্ম হলে মিষ্টি, পরীক্ষায় পাস করলে মিষ্টি, বিয়ে হলে মিষ্টি, মৃত্যু হলে মিলাদের মিষ্টি, পরীক্ষায় ফেল করলেও মিষ্টি আছে—দোয়া অনুষ্ঠানের মিষ্টি, যাতে ভবিষ্যতে পাস করা যায়। ভালো খবরে মিষ্টি, বাজি ধরে মিষ্টি, উৎসব-পালা-পার্বণেও মিষ্টি।
আগামীকাল স্বপ্নের সেতুর যাত্রা শুরু। সারা দেশে উৎসবের আমেজ। ঈর্ষা এক মারাত্মক মানবীয় রিপু। একশ্রেণির বাঙালির মধ্যে সেটা অনেক প্রকট। তাই উৎসবের মিষ্টি মেজাজ দেখে ক্ষিপ্ত ও ঈর্ষাতাড়িত হয়ে তেতোর ফেরিওয়ালারা নোটিশ দিয়েই হাজির হয়েছেন। আপনার তেতো আপনিই গিলুন। আমাদের শোনার বা দেখার সময় নেই।
এ পর্যন্ত এই সেতু নিয়ে আমাদের দেশীয় কুশীলবেরা তাঁদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে যত ভানুমতির খেল দেখানোর চেষ্টা করেছেন, তাতে করে দুর্দমনীয় বাঙালির, এ দেশের মানুষের কিছু আসে-যায় না।
আমি নিশ্চিত এগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে মানুষের তেমন আগ্রহ না থাকলেও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম খরস্রোতা নদীতে একটি উদীয়মান জাতির সাহসী নেতৃত্ব কীভাবে লক্ষ্যে স্থির থেকে এই অনন্য ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল নির্মাণ করেছেন, প্রকৌশলীরা কীভাবে পলিবাহিত চঞ্চলা অস্থির প্রমত্তা পদ্মার বুকে এক সুবিশাল সেতু নির্মাণ করেছেন, তার নির্মাণ প্রয়াসের বাঁকে কত বিস্ময়, চমক ও চ্যালেঞ্জ ছিল এবং প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও নির্মাণকর্মীরা কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করেছেন, তা গবেষণার খোরাক হবে।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য হিসেবে দুই দার্শনিক নীতিকে চিহ্নিত করেছেন—ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনের স্বপ্ন। জাতির পিতা এ দেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন। এই ক্ষুদ্র সময়ে তিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জনের শুভযাত্রা করেছিলেন। আর দেশের সাম্প্রতিকতম অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে ক্ষুধা পরাজিতের পথে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই গ্লোবাল পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়। তার প্রায় ১০০ বছর আগে সানফ্রান্সিসকো পোতাশ্রয়ের মূলে গোল্ডেন গেট ব্রিজ নির্মিত হয়। সেটি ছিল তাদের এক অর্জিত শৌর্যবীর্যের প্রতীক।
আগামীকাল ২৫ জুন বৈশ্বিক মঞ্চে ‘আমার টাকায় আমার সেতু/ বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’ শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমাদের নবযাত্রা শুরু হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি থাকছেন সেই নবযাত্রার হুইসিল ব্লোয়ার হিসেবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার): মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
গোল্ডেন গেট ব্রিজ, সানফ্রান্সিসিকো। স্কুলের নিচের ক্লাসে বইয়ে এই ব্রিজ নিয়ে লেখা এক ইংরেজি কবিতা পড়েছিলাম। বইয়ের এক পাতা, মাঝ বরাবর অর্ধেকে ব্রিজটির দম্ভপূর্ণ ছবি, ডান পাশে কবিতাটি ছাপা। স্কুলপড়ুয়া এক শিশুর মনে আঁকিবুঁকি জিজ্ঞাসা—কোথায় আমেরিকা? কোথায় সানফ্রানসিসকো? কেমন সেটা?
১৯৭৬ সালে ঢাকায় এসেছি। পরিচিত এক বড় ভাই বিমানে চাকরি করতেন। তখন বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে। একদিন তাঁর কাছে যাই বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজের ওঠানামা দেখব বলে। বড় ভাই ট্রানজিটে নিয়ে গেলেন, স্ন্যাকস করবেন।
খেতে খেতে পরিচয় এক আমেরিকান ট্রানজিট যাত্রীর সঙ্গে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কখনো আমেরিকা গিয়েছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘আসবে একসময়।’ আমি বললাম, ‘যাব সানফ্রান্সিসকো।’ তিনি বললেন, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘গোল্ডেন গেট ব্রিজ দেখব।’
আইফেল টাওয়ার কি ফ্রান্সকে পরিচিতি দেয়, নাকি ফ্রান্সকে আইফেল টাওয়ারের? স্ট্যাচু অব লিবার্টি, টুইন টাওয়ার, পেট্রোনাস টাওয়ার—এগুলো মডার্ন মার্ভেল, তাদের দেশকে পরিচিতি দেয়, তার শৌর্যবীর্য উৎকর্ষতার মহিমা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।
প্রমত্তা পদ্মার বুকে দানবাকৃতির সেতু হবে, পদ্মার দুপারের মানুষকে যুক্ত করবে, দেশকে বিভাজিত বদ্বীপের বিভক্তি থেকে পরিত্রাণ দেবে, সম্ভব? ভেবেছে কি কেউ?
আশির দশকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আমি দক্ষিণের জেলা গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতাম, তখন যাওয়া-আসার সবচেয়ে ভালো সময় ছিল বর্ষাকাল। আমরা বেলা ১১টার দিকে সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২০-২৫ জনের একটি দল হইহই করে লঞ্চে উঠতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমুল আড্ডা, লঞ্চের আপার ক্লাসে, সামনে-পেছনে। কেউ কেউ তাস নিয়ে বসে যেত। তারপর রাত নেমে এলে নদীর ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে ঘুম এসে যেত। লঞ্চে রান্না খুব সুস্বাদু ছিল, নাকি বাড়ন্ত বয়সের দুর্নিবার ক্ষুধা; যে কারণেই হোক, খাবার খুব মজা ছিল।
খেয়েই ঘুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে জিজ্ঞাসা করতাম মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টির কাছাকাছি পৌঁছালাম কি না। কাঠপট্টির কাছাকাছি পৌঁছালেই সেখান থেকে সদরঘাট ৩০-৪০ মিনিটের দূরত্ব। আর সদরঘাট মানেই তখন ঢাকা।
প্রায় এক দিনের যাত্রা, তাও বলছি তখনকার সময়ে ঢাকায় যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকালের কথা।
শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাড়ি গেলে ঢাকা আসা-যাওয়া ছিল ভিন্ন এক সংগ্রাম। এ অন্য এক অভিযাত্রা। আমার মফস্বল শহর। শহরের সবাইকে চিনি। সব রিকশাওয়ালা পরিচিত। বিকেলে কাউকে বলে রাখতাম ঢাকায় যাব। রিকশাওয়ালা ভোররাতে এসে ডেকে তুলত। তৈরি হয়ে রিকশায় করে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে হরিদাসপুর লঞ্চঘাটে যেতাম। তারপর ভোর ৬টায় ছোট একতলা লঞ্চে করে পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় পৌঁছাতাম টেকেরহাটে। রোড সাইডে চায়ের দোকানে অপেক্ষা। তখন মাওয়ায় কোনো ফেরিঘাট ছিল না। সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল-ফরিদপুর রুটে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসে করে ফরিদপুরের গোয়ালচামট বাসস্ট্যান্ড। তারপর আবার লোকাল বাস অথবা বেবিট্যাক্সিতে করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। বললাম যত সহজে, যাত্রা তত সহজ ছিল না। পথে টেকেরহাট ফেরি, দিকনগর ফেরি, দৌলতদিয়া ঘাটের আগেও গোয়ালন্দ ফেরি। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পড়ন্ত বিকেল। সেখানে পৌঁছে আগে ঘাটের বিখ্যাত সব হোটেলে দুপুরের খাওয়া। তারপর পদ্মা পার হয়ে আরিচা ঘাটে আসতে আসতে সন্ধ্যা। তারপর মুড়ির টিন বাসে করে গাবতলী। সেখান থেকে রিকশায় মিরপুর রোড ধরে যখন আমার প্রিয় জহুরুল হক হলে পৌঁছেছি, তখন রাত ৮টা কিংবা ৯টা। সমস্ত শরীর, ট্রাভেল ব্যাগ ধুলায় ধূসরিত। পুরু শরীরে ধুলাবালুর আস্তর।
মাওয়া ঘাটের বয়স খুব বেশি নয়। স্বপ্নের সেতু চালু হচ্ছে। ঘাটটি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে পারাপারের অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সেই হয়তো মৃত্যু হবে না কারও আর।
সহজ করে বলি। এই কদিন আগেও মিডিয়ায় মেলা হইচই। ঢাকায় সবজির দাম বেড়েছে। বেগুনের কেজি ৬০ টাকা। সেদিন সকালে দক্ষিণের কৃষক বেগুন বেচেছেন কেজি ১৭ টাকা দরে। ২৫ জুনের পর তাঁকে অন্তত ১৭ টাকায় আর বেগুন বেচতে হবে না, যখন ঢাকায় সেটির দর ৬০ টাকা থাকবে।
যোগাযোগ মানে চলাচল। আর চলাচল মানেই আর্থিক সমৃদ্ধি। পুরো দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়ন হবে, নগরায়ণের গতি বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাড়বে, নতুন করে কর্মসংস্থান হবে কোটি মানুষের। মেগা প্রকল্পগুলো দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে।
বঙ্গবন্ধু স্টিমারে করে বাড়ি যেতেন। সড়কযোগাযোগ সে সময় তেমন ছিল না বললেই চলে। সে জন্য আমার এলাকার মানুষ মামলা-মোকদ্দমা, জমিজমার রেকর্ড-সংক্রান্ত দেনদরবারের বিষয় ছাড়া সে সময়কার জেলা শহর ফরিদপুরমুখো হতো না। খুলনা নৌপথ সহজ ছিল। শিক্ষা, ব্যবসা, চাকরির জন্য সবাই খুলনা পছন্দ করত। এ জন্য খুলনা শহরে আমাদের এলাকার মানুষের চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি এখনো রয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে বর্ষায় দিগন্তছোঁয়া অপর পারের উদ্দেশ্যে ‘বদর বদর’ বলে ব্যাপারীর নৌকা এখন আর খুব একটা পাড়ি দেবে না। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়রে অমর সৃষ্টি কুবের, কপিলা চরিত্রগুলো আমাদের অগ্রযাত্রার আবাহনে বিস্মৃত ও ধোঁয়াশা হয়ে ইতিহাসের আরও গভীরে চলে যাবে। সেই সঙ্গে সংগ্রামী কুবেরদের বঞ্চনা, শোক ও লাঞ্ছনাও জাদুঘরমুখী হবে।
মিষ্টিপাগল বাঙালি। আমাদের দেশে জন্ম হলে মিষ্টি, পরীক্ষায় পাস করলে মিষ্টি, বিয়ে হলে মিষ্টি, মৃত্যু হলে মিলাদের মিষ্টি, পরীক্ষায় ফেল করলেও মিষ্টি আছে—দোয়া অনুষ্ঠানের মিষ্টি, যাতে ভবিষ্যতে পাস করা যায়। ভালো খবরে মিষ্টি, বাজি ধরে মিষ্টি, উৎসব-পালা-পার্বণেও মিষ্টি।
আগামীকাল স্বপ্নের সেতুর যাত্রা শুরু। সারা দেশে উৎসবের আমেজ। ঈর্ষা এক মারাত্মক মানবীয় রিপু। একশ্রেণির বাঙালির মধ্যে সেটা অনেক প্রকট। তাই উৎসবের মিষ্টি মেজাজ দেখে ক্ষিপ্ত ও ঈর্ষাতাড়িত হয়ে তেতোর ফেরিওয়ালারা নোটিশ দিয়েই হাজির হয়েছেন। আপনার তেতো আপনিই গিলুন। আমাদের শোনার বা দেখার সময় নেই।
এ পর্যন্ত এই সেতু নিয়ে আমাদের দেশীয় কুশীলবেরা তাঁদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে যত ভানুমতির খেল দেখানোর চেষ্টা করেছেন, তাতে করে দুর্দমনীয় বাঙালির, এ দেশের মানুষের কিছু আসে-যায় না।
আমি নিশ্চিত এগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে মানুষের তেমন আগ্রহ না থাকলেও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম খরস্রোতা নদীতে একটি উদীয়মান জাতির সাহসী নেতৃত্ব কীভাবে লক্ষ্যে স্থির থেকে এই অনন্য ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল নির্মাণ করেছেন, প্রকৌশলীরা কীভাবে পলিবাহিত চঞ্চলা অস্থির প্রমত্তা পদ্মার বুকে এক সুবিশাল সেতু নির্মাণ করেছেন, তার নির্মাণ প্রয়াসের বাঁকে কত বিস্ময়, চমক ও চ্যালেঞ্জ ছিল এবং প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও নির্মাণকর্মীরা কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করেছেন, তা গবেষণার খোরাক হবে।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য হিসেবে দুই দার্শনিক নীতিকে চিহ্নিত করেছেন—ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনের স্বপ্ন। জাতির পিতা এ দেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন। এই ক্ষুদ্র সময়ে তিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জনের শুভযাত্রা করেছিলেন। আর দেশের সাম্প্রতিকতম অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে ক্ষুধা পরাজিতের পথে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই গ্লোবাল পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়। তার প্রায় ১০০ বছর আগে সানফ্রান্সিসকো পোতাশ্রয়ের মূলে গোল্ডেন গেট ব্রিজ নির্মিত হয়। সেটি ছিল তাদের এক অর্জিত শৌর্যবীর্যের প্রতীক।
আগামীকাল ২৫ জুন বৈশ্বিক মঞ্চে ‘আমার টাকায় আমার সেতু/ বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’ শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমাদের নবযাত্রা শুরু হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি থাকছেন সেই নবযাত্রার হুইসিল ব্লোয়ার হিসেবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার): মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
২০ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
২০ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
২০ ঘণ্টা আগে