বিভুরঞ্জন সরকার
আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই নামসর্বস্ব। সব দলের সারা দেশে জেলা-উপজেলায় কমিটি থাকা তো দূরের কথা, পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি আছে কি না সন্দেহ। নিবন্ধিত দলের বাইরে আরও দল আছে। এতগুলো রাজনৈতিক দল কেন গঠিত হয়েছে, দলগুলো আসলে কী করে, তা আমাদের দেশের মানুষের জানা নেই। অথচ বলা হয়ে থাকে, এই দলগুলো নাকি মানুষের জন্যই গঠিত হয়েছে। দেশে সক্রিয় এবং কার্যকর দলের সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। জনসমর্থন বিবেচনায় সামান্য এগিয়ে-পিছিয়ে দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। অন্য দলগুলোকে মোটাদাগে এই দুই দলের চর-অনুচর বললে বাড়িয়ে বলা হয় না। কিন্তু দলগুলো তা মানতে চাইবে না। কারণ, না মানা হলো আমাদের দেশের রাজনীতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য। কেউ কাউকে মানতে চায় না। সবাই সবার গন্ধ ছড়াতে চায়। কিন্তু সবার গায়ে গন্ধ আছে, নাকি দুর্গন্ধ বেরোয়, তা কেউ যাচাই করার গরজ বোধ করে না।
এক সময় অনেকেই মনে করতেন, আমাদের দেশে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হবে। একবার আওয়ামী লীগ, তো আরেকবার বিএনপি শাসনক্ষমতায় থাকবে। তেমনটা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু এখন কি মনে হয় যে, এই দুই দল পালাক্রমে দেশ শাসন করতে পারবে? আওয়ামী লীগ পরপর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। পরের মেয়াদেও যে এর ব্যতিক্রম ঘটবে, সে কথা জোর দিয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। বিএনপি নেতারা সেটা বলছেন বটে; কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করার মতো বিএনপির শক্তিসামর্থ্য আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ হলো, কোনো দল বা ব্যক্তি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে ওই দল বা ব্যক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, টানা বিরোধী দলে থাকলে ওই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের অবসাদ দেখা দেয়, হতাশা তৈরি হয় এবং হতোদ্যম হয়ে পড়ে। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ—বিএনপি এখন সেই ক্লান্তিকর অবস্থায় পৌঁছেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ’ রেখে হাজারটা পদ্মা সেতু করলেও বর্তমান সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।
তাঁর এই বক্তব্য জাস্টিফাই করার জন্য তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন দিয়ে দেখুক না উনাদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে? হাজারটা পদ্মা সেতু করেও কোনো লাভ হয় না। আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিল পাকিস্তান আমলে… কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, জনগণ যদি গণতন্ত্রকে না পায়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, তার অধিকার যদি না থাকে, তার ভোটাধিকার না থাকে, সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।’
বিএনপি নেতা আইয়ুব খানের উদাহরণ দিলেন কেন? আইয়ুব খানের উন্নয়ন কি দেশের পূর্বাঞ্চলে খুব দৃশ্যমান ছিল? উন্নয়ন-বৈষম্য কি আইয়ুবের বিরুদ্ধে ক্ষোভের একটি বড় কারণ ছিল না? তা ছাড়া আইয়ুবের পতন-ঘণ্টা কিন্তু ১০ বছরের মাথায়ই বেজে উঠেছিল। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারের সময় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু মানুষ কেন এটা প্রতিবাদহীন মেনে নিচ্ছে, সেটার কারণ কি বিএনপি নেতৃত্ব খোঁজার চেষ্টা করেছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি দেশে যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয়, এখানে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। তা না হলে এখানে কোনোমতেই আপনার যদি একেবারে স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন, তাহলেও সেটাকে সুষ্ঠু করতে পারবেন না; ইমপসিবল।’
এখন নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকার কীভাবে হবে, সেটা কিন্তু তিনি বলেননি। ওটাও কি একপ্রকার ‘ইমপসিবল’ বিষয় নয়?
অনেকেই অতীতমুখী হতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই পর্যায়ে আমাকে একটু অতীতমুখী হতেই হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। আমেরিকার সে সময়ের দাপটের সঙ্গে ভারত তুলনীয় ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে দুই দেশের অবস্থান ছিল বিপরীতমুখী। ভারতের সরকার ও ভারতীয় জনগণ আমাদের পক্ষে। আমেরিকার নিক্সন প্রশাসন আমাদের চরম বিরোধী; কিন্তু সে দেশের অনেকেই ছিলেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, দরদি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের অবস্থান ছিল নিক্সনের কাছে ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’। তাই প্রেসিডেন্ট নিক্সন হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ভারত যদি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো বন্ধ না করে, তাহলে আমেরিকা চুপ করে বসে থাকতে পারে না। ভারতকে শিক্ষা দিতে বাধ্য হবে।’
ইন্দিরা গান্ধীও ছিলেন ‘বাপের বেটি’। তিনি প্রতিকূলতা মোকাবিলার সাহস রাখতেন। নিক্সনের কথার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমেরিকাকে ভারত বন্ধু মনে করে, বস্ নয়!! ভারত তার ভাগ্য নিজেই লিখতে জানে! আমরা জানি কাকে কীভাবে জবাব দিতে হয়!’
১৯৭১ সালের নভেম্বরে হোয়াইট হাউসে বসে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের চোখে চোখ রেখে ঠিক এই কথাগুলোই বলে এসেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। হেনরি কিসিঞ্জারের আত্মজীবনীতে এ সব কথা লেখা আছে। হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দেশ সফরের অংশ হিসেবে আমেরিকা গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু নিক্সনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক ও আলোচনা প্রীতিপূর্ণ ছিল না। নিক্সনের মনোভাব ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এই অবস্থায় ভারত-মার্কিন যৌথ সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে নিক্সনের সামনে থেকে গটগট করে উঠে চলে এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
হেনরি কিসিঞ্জার তাঁকে গাড়িতে ওঠার সময়ে বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার! প্রেসিডেন্ট স্যারের প্রতি আরেকটু ধৈর্য দেখালে বোধ হয় ভালো করতেন!’
উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘থ্যাংক ইউ মিস্টার সেক্রেটারি ফর ইওর ভ্যালুয়েবল সাজেশন! বিইং এ ডেভেলপিং কান্ট্রি উই হ্যাভ ব্যাকবোন এনাফ টু ফাইট দ্য অ্যাট্রোসিটিস! উই শ্যাল প্রুভ দ্যাট ডেইজ আর গন টু রুল অ্যানি নেশন ফার ফ্রম থাউজেন্ডস অব মাইলস!’
এর পর...
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজের চাকা পালামের রানওয়ে ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি তলব পেয়ে বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ি হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বেরিয়ে গেলেন বাজপেয়ি।
খবর হয়ে গেল: জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ি।
বিবিসির সাংবাদিক ডোনাল্ড পল জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাজপেয়িকে, ‘আপনাকে ইন্দিরার কট্টর সমালোচক বলেই সবাই জানে! তারপরও আপনি সরকারের হয়ে জাতিসংঘে গলা ফাটাচ্ছেন?’
অটলবিহারী বাজপেয়িকে বলেছিলেন, ‘একটা বাগানে গোলাপও থাকে, লিলিও থাকে। প্রত্যেকেই ভাবে সে-ই সবচেয়ে সুন্দর! সবচেয়ে সুন্দর কিন্তু বাগানটাই। আমি আজ বাগান বাঁচাতে এসেছি। এটার নামই ভারতীয় গণতন্ত্র!’
বাকি ইতিহাস হয়তো অনেকেরই জানা।
পাকিস্তানে ২৭০টা প্যাটন ট্যাংক পাঠানোর আগে আমেরিকা সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমকে ডেকে ডেমনস্ট্র্যাট করে দেখাল, এই ট্যাংক এমনই প্রযুক্তিতে তৈরি, যাকে কখনোই কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। উদ্দেশ্য ছিল এটাই, যাতে সারা পৃথিবীর কোনো দেশই ভয়ে ভারতকে সাহায্য করতে না এগোয়। শুধু এখানেই আমেরিকা থেমে থাকেনি। ভারতে তেল সরবরাহ করা একমাত্র মার্কিন কোম্পানি ‘বার্মা শেল’-কে জানিয়ে দিল, তারা যেন ভারতে তেল সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করে।
এর পরের ইতিহাস শুধু লড়াই আর লড়াই।
ইন্দিরা গান্ধীর তীক্ষ্ণ কূটনৈতিক তৎপরতায় ইউক্রেন থেকে তেল আনিয়ে চলল ভারতের টিকে থাকার লড়াই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্যাটন ট্যাংককে ধ্বংস করে তুলে নেওয়া হয়েছিল ভারতের মাটিতে। রাজস্থান মরুভূমির তপ্ত বালিতে মুখ রগড়ে দেওয়া হয়েছিল মার্কিন অহংকারের।
১৮ দিনের যুদ্ধের শেষে ফলাফল—
সুদূরপ্রসারী ফলাফল—
মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সময় আজ শুধুই ইতিহাস!
সেই সময় থেকে ৫০ বছর পথ চলে আজ ভারত সত্যিই ক্লান্ত! গণতন্ত্র আজ শুধুই একটি শব্দমাত্র। প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীরা আজ গণতন্ত্রের অংশ নয়, শাসকের নজরে শত্রুর সমান।
ভারতে একসময় যে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, এখন তার পরিসর সীমিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে তো আমরা কোনো সময়ই দলমত-নির্বিশেষে সবাই মিলে একটি বাগানই ভাবতে পারিনি। আমরা ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি করেই সময় কাটিয়ে দিলাম। আমরা ঐক্য নয়, বিরোধিতা চাই। আমরা এক করতে চাই না, ভাঙতে চাই। ওলটপালট হলেই না কিছু মানুষের লুটেপুটে খেতে সুবিধা।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই নামসর্বস্ব। সব দলের সারা দেশে জেলা-উপজেলায় কমিটি থাকা তো দূরের কথা, পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি আছে কি না সন্দেহ। নিবন্ধিত দলের বাইরে আরও দল আছে। এতগুলো রাজনৈতিক দল কেন গঠিত হয়েছে, দলগুলো আসলে কী করে, তা আমাদের দেশের মানুষের জানা নেই। অথচ বলা হয়ে থাকে, এই দলগুলো নাকি মানুষের জন্যই গঠিত হয়েছে। দেশে সক্রিয় এবং কার্যকর দলের সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। জনসমর্থন বিবেচনায় সামান্য এগিয়ে-পিছিয়ে দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। অন্য দলগুলোকে মোটাদাগে এই দুই দলের চর-অনুচর বললে বাড়িয়ে বলা হয় না। কিন্তু দলগুলো তা মানতে চাইবে না। কারণ, না মানা হলো আমাদের দেশের রাজনীতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য। কেউ কাউকে মানতে চায় না। সবাই সবার গন্ধ ছড়াতে চায়। কিন্তু সবার গায়ে গন্ধ আছে, নাকি দুর্গন্ধ বেরোয়, তা কেউ যাচাই করার গরজ বোধ করে না।
এক সময় অনেকেই মনে করতেন, আমাদের দেশে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হবে। একবার আওয়ামী লীগ, তো আরেকবার বিএনপি শাসনক্ষমতায় থাকবে। তেমনটা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু এখন কি মনে হয় যে, এই দুই দল পালাক্রমে দেশ শাসন করতে পারবে? আওয়ামী লীগ পরপর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। পরের মেয়াদেও যে এর ব্যতিক্রম ঘটবে, সে কথা জোর দিয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। বিএনপি নেতারা সেটা বলছেন বটে; কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করার মতো বিএনপির শক্তিসামর্থ্য আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ হলো, কোনো দল বা ব্যক্তি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে ওই দল বা ব্যক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, টানা বিরোধী দলে থাকলে ওই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের অবসাদ দেখা দেয়, হতাশা তৈরি হয় এবং হতোদ্যম হয়ে পড়ে। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ—বিএনপি এখন সেই ক্লান্তিকর অবস্থায় পৌঁছেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ’ রেখে হাজারটা পদ্মা সেতু করলেও বর্তমান সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।
তাঁর এই বক্তব্য জাস্টিফাই করার জন্য তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন দিয়ে দেখুক না উনাদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে? হাজারটা পদ্মা সেতু করেও কোনো লাভ হয় না। আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিল পাকিস্তান আমলে… কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, জনগণ যদি গণতন্ত্রকে না পায়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, তার অধিকার যদি না থাকে, তার ভোটাধিকার না থাকে, সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।’
বিএনপি নেতা আইয়ুব খানের উদাহরণ দিলেন কেন? আইয়ুব খানের উন্নয়ন কি দেশের পূর্বাঞ্চলে খুব দৃশ্যমান ছিল? উন্নয়ন-বৈষম্য কি আইয়ুবের বিরুদ্ধে ক্ষোভের একটি বড় কারণ ছিল না? তা ছাড়া আইয়ুবের পতন-ঘণ্টা কিন্তু ১০ বছরের মাথায়ই বেজে উঠেছিল। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারের সময় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু মানুষ কেন এটা প্রতিবাদহীন মেনে নিচ্ছে, সেটার কারণ কি বিএনপি নেতৃত্ব খোঁজার চেষ্টা করেছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি দেশে যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয়, এখানে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। তা না হলে এখানে কোনোমতেই আপনার যদি একেবারে স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন, তাহলেও সেটাকে সুষ্ঠু করতে পারবেন না; ইমপসিবল।’
এখন নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকার কীভাবে হবে, সেটা কিন্তু তিনি বলেননি। ওটাও কি একপ্রকার ‘ইমপসিবল’ বিষয় নয়?
অনেকেই অতীতমুখী হতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই পর্যায়ে আমাকে একটু অতীতমুখী হতেই হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। আমেরিকার সে সময়ের দাপটের সঙ্গে ভারত তুলনীয় ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে দুই দেশের অবস্থান ছিল বিপরীতমুখী। ভারতের সরকার ও ভারতীয় জনগণ আমাদের পক্ষে। আমেরিকার নিক্সন প্রশাসন আমাদের চরম বিরোধী; কিন্তু সে দেশের অনেকেই ছিলেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, দরদি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের অবস্থান ছিল নিক্সনের কাছে ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’। তাই প্রেসিডেন্ট নিক্সন হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ভারত যদি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো বন্ধ না করে, তাহলে আমেরিকা চুপ করে বসে থাকতে পারে না। ভারতকে শিক্ষা দিতে বাধ্য হবে।’
ইন্দিরা গান্ধীও ছিলেন ‘বাপের বেটি’। তিনি প্রতিকূলতা মোকাবিলার সাহস রাখতেন। নিক্সনের কথার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমেরিকাকে ভারত বন্ধু মনে করে, বস্ নয়!! ভারত তার ভাগ্য নিজেই লিখতে জানে! আমরা জানি কাকে কীভাবে জবাব দিতে হয়!’
১৯৭১ সালের নভেম্বরে হোয়াইট হাউসে বসে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের চোখে চোখ রেখে ঠিক এই কথাগুলোই বলে এসেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। হেনরি কিসিঞ্জারের আত্মজীবনীতে এ সব কথা লেখা আছে। হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দেশ সফরের অংশ হিসেবে আমেরিকা গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু নিক্সনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক ও আলোচনা প্রীতিপূর্ণ ছিল না। নিক্সনের মনোভাব ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এই অবস্থায় ভারত-মার্কিন যৌথ সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে নিক্সনের সামনে থেকে গটগট করে উঠে চলে এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
হেনরি কিসিঞ্জার তাঁকে গাড়িতে ওঠার সময়ে বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার! প্রেসিডেন্ট স্যারের প্রতি আরেকটু ধৈর্য দেখালে বোধ হয় ভালো করতেন!’
উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘থ্যাংক ইউ মিস্টার সেক্রেটারি ফর ইওর ভ্যালুয়েবল সাজেশন! বিইং এ ডেভেলপিং কান্ট্রি উই হ্যাভ ব্যাকবোন এনাফ টু ফাইট দ্য অ্যাট্রোসিটিস! উই শ্যাল প্রুভ দ্যাট ডেইজ আর গন টু রুল অ্যানি নেশন ফার ফ্রম থাউজেন্ডস অব মাইলস!’
এর পর...
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজের চাকা পালামের রানওয়ে ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি তলব পেয়ে বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ি হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বেরিয়ে গেলেন বাজপেয়ি।
খবর হয়ে গেল: জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ি।
বিবিসির সাংবাদিক ডোনাল্ড পল জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাজপেয়িকে, ‘আপনাকে ইন্দিরার কট্টর সমালোচক বলেই সবাই জানে! তারপরও আপনি সরকারের হয়ে জাতিসংঘে গলা ফাটাচ্ছেন?’
অটলবিহারী বাজপেয়িকে বলেছিলেন, ‘একটা বাগানে গোলাপও থাকে, লিলিও থাকে। প্রত্যেকেই ভাবে সে-ই সবচেয়ে সুন্দর! সবচেয়ে সুন্দর কিন্তু বাগানটাই। আমি আজ বাগান বাঁচাতে এসেছি। এটার নামই ভারতীয় গণতন্ত্র!’
বাকি ইতিহাস হয়তো অনেকেরই জানা।
পাকিস্তানে ২৭০টা প্যাটন ট্যাংক পাঠানোর আগে আমেরিকা সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমকে ডেকে ডেমনস্ট্র্যাট করে দেখাল, এই ট্যাংক এমনই প্রযুক্তিতে তৈরি, যাকে কখনোই কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। উদ্দেশ্য ছিল এটাই, যাতে সারা পৃথিবীর কোনো দেশই ভয়ে ভারতকে সাহায্য করতে না এগোয়। শুধু এখানেই আমেরিকা থেমে থাকেনি। ভারতে তেল সরবরাহ করা একমাত্র মার্কিন কোম্পানি ‘বার্মা শেল’-কে জানিয়ে দিল, তারা যেন ভারতে তেল সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করে।
এর পরের ইতিহাস শুধু লড়াই আর লড়াই।
ইন্দিরা গান্ধীর তীক্ষ্ণ কূটনৈতিক তৎপরতায় ইউক্রেন থেকে তেল আনিয়ে চলল ভারতের টিকে থাকার লড়াই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্যাটন ট্যাংককে ধ্বংস করে তুলে নেওয়া হয়েছিল ভারতের মাটিতে। রাজস্থান মরুভূমির তপ্ত বালিতে মুখ রগড়ে দেওয়া হয়েছিল মার্কিন অহংকারের।
১৮ দিনের যুদ্ধের শেষে ফলাফল—
সুদূরপ্রসারী ফলাফল—
মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সময় আজ শুধুই ইতিহাস!
সেই সময় থেকে ৫০ বছর পথ চলে আজ ভারত সত্যিই ক্লান্ত! গণতন্ত্র আজ শুধুই একটি শব্দমাত্র। প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীরা আজ গণতন্ত্রের অংশ নয়, শাসকের নজরে শত্রুর সমান।
ভারতে একসময় যে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, এখন তার পরিসর সীমিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে তো আমরা কোনো সময়ই দলমত-নির্বিশেষে সবাই মিলে একটি বাগানই ভাবতে পারিনি। আমরা ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি করেই সময় কাটিয়ে দিলাম। আমরা ঐক্য নয়, বিরোধিতা চাই। আমরা এক করতে চাই না, ভাঙতে চাই। ওলটপালট হলেই না কিছু মানুষের লুটেপুটে খেতে সুবিধা।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১৭ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১৭ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১৭ ঘণ্টা আগে