মামুনুর রশীদ
শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেককে অস্ত্র আইনের দুটি ধারায় ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই সাজা হওয়ায় তাঁকে ১৫ বছর জেল খাটতে হবে।
একই অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মোহাম্মদ সাহেদসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বাংলাদেশে বেসামরিক খাতে সরকারের বড় লগ্নির দুটি জায়গা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। সেই স্বাস্থ্য খাতে বরাবরই নানা ধরনের দুর্নীতির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের জীবন-মরণের সমস্যা। এখানে যদি মহাপরিচালক থেকে গাড়িচালক পর্যন্ত অভিযুক্ত হন, তাহলে একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। যদিও জানি এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আগেও পাইনি, এখনো পাব না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাস্থ্যের মূল খাতটি ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত। ক্লিনিক ব্যবসা তখন শুরু হয়নি। কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার বেসরকারি খাতে টিমটিম করে বিরাজ করছিল। ছোটখাটো সরকারি ডিসপেনসারি ও সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য জায়গা ছিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো। কালক্রমে উপজেলা পর্যন্ত হাসপাতাল সম্প্রসারিত হয়। সেখানেও জনগণের চিকিৎসার দাবিটুকু সক্ষমতা সাপেক্ষে মেনে নেওয়া হতো। চিকিৎসা ছিল মানুষের অধিকার। স্বল্পসংখ্যক মেডিকেল কলেজে যথার্থ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দান করতেন এবং ভালো শিক্ষক পেয়ে প্রকৃত চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ ছিল। কালক্রমে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের ধুম পড়ে গেল। বর্তমানে একটি জেলা শহরে এবং সমগ্র জেলাজুড়ে শতাধিক ক্লিনিক পাওয়া যায়। এই ক্লিনিকগুলোতে প্রতি শুক্রবারে অথবা ছুটির দিনে ঢাকার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বর্তমানে হিসাব করলে বেসরকারি খাতে যে বিপুল পরিমাণ লগ্নি হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় খাতের চেয়েও অনেক বেশি। এদিকে স্বাভাবিক কারণে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের লগ্নিও বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে এবং উন্নয়নমূলক কাজে সরকারের প্রচুর অর্থ লগ্নি করা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনুদানও বেড়েছে। এই অর্থ ব্যয়ের জন্য সব সময়ই টেন্ডারের আশ্রয় নিতে হয় এবং টেন্ডারের আইনকানুন ভাঙারও নানা রকম পদ্ধতি বেরিয়ে গেছে। সরকারি, বিদেশি অনুদান ও ঋণের টাকা বড় অংশের বিতরণকারী হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সম্প্রতি টিকা আমদানি নিয়ে যা কিছু ঘটতে দেখা গেছে, তাতে বড় বড় সরকারি আমলা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক নেতারা অংশীদার ছিলেন। অসহায় মানুষ এসব বিষয় শুধুই প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের করার কিছুই ছিল না। এই সময়ে অভিযুক্ত মহাপরিচালক দায়িত্বে ছিলেন এবং প্রায়ই টেলিভিশনের পর্দায় অবতীর্ণ হতেন। চালক মালেকের ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে যাঁর গাড়ি তিনি চালান, তিনি এবং তাঁকে কেন্দ্র করে থাকেন যত ক্ষমতাবান আছেন, তাঁরা। এ তো এক মহাবিপদ হলো। গাড়িতে বসে সবাই অনেক গোপন কথা বলে থাকেন, অনেক নীতিনির্ধারণী বিষয়ও তার মধ্যে থাকে। গাড়িচালক এসব কথা শুনে ব্ল্যাকমেল করতে পারেন অথবা যথাস্থানে কথাটি পাচার করে কিছু টাকাও কামাই করে নিতে পারেন। তাহলে ক্ষমতাবানদের গাড়ির চালকদের নিয়ে কী করা যায়? অনেক ছোটখাটো ক্ষমতাবানকে দেখেছি বসের ফোন নম্বরের সঙ্গে সঙ্গে চালকের ফোন নম্বরটিও রাখেন এবং প্রতিনিয়ত বসের গতিবিধির খবরও সেখান থেকে পেয়ে থাকেন। তাই মালেক যথেষ্টই চতুরতার সঙ্গে বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়েছেন; বিশেষ করে ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি একটা বড় বিষয়; এটাকেই বিশেষভাবে পুঁজি করেছেন মালেক।
মালেক ধরা পড়েছেন। কারণ, বিষয়টি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল, চেষ্টা করেও গোপন করতে পারেননি। কিন্তু আরও অনেক চালক আছেন, যাঁরা ধরা পড়েননি, কিন্তু এমন কাজ করে যাচ্ছেন।
মহাপরিচালক আবার সাহেদের সঙ্গে মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। সেটাও বোধ হয় কিছু অসাবধানতার কারণে। মহাপরিচালক একজন চিকিৎসকও বটে। যেখানে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, সেটাও স্বাস্থ্যবিষয়ক। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি দুর্নীতির ঘটনায় যদি একজন চিকিৎসক জড়িত হয়ে পড়েন, তাহলে বিষয়টি তো সত্যিই ভয়ংকর। আগেই বলেছি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় রাষ্ট্রের বড় লগ্নি এখানে করা হয়েছে। আজকের পত্রিকায় দেখা গেল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। প্রার্থীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছিল। শেষ পর্যন্ত এই বিতর্কিত নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। এ কথা এখন প্রায় সবাই জানে। সরকারি নিয়োগে যেখানে একসময় ঘুষের মাত্রা ছিল ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ, এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২৫ লাখ। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে শুনেছি ৩ থেকে ৪ লাখের কথা। এখন তা বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। একজন শিক্ষক যদি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন, তাহলে প্রথমেই অসততার একটা ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে এই মহান ব্রতে যোগ দিলেন। এই টাকা তুলতে গিয়ে যত ধরনের বাণিজ্য সম্ভব, তাতে তাঁকে ঢুকে যেতে হবে। কোচিং-বাণিজ্য, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস-বাণিজ্য এবং একই সঙ্গে নানা ধরনের ছোটখাটো ব্যবসায়ও যুক্ত হয়ে যান।
ক্ষা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাছে একটি গৌণ বিষয়। একবার এক জেলা শহরে নামকরা শিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সময়টা ছিল সকালবেলা। সেই বাড়িতে গিয়ে দেখলাম একটা স্কুল চলছে।
ভাবলাম এটা একটা মর্নিং স্কুল। কিন্তু সেই শিক্ষক সহাস্যে বললেন, ‘কী করব। এত ছাত্রের চাপ, তাই একটা কোচিং সেন্টারই খুলে বসতে হলো।’ দেখে বোধ হয় মনে হচ্ছে এটা একটা স্কুল। দু-একজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরা জানালেন এই শিক্ষকেরাই স্কুলের শিক্ষক। স্কুলে তেমন একটা পড়ান না। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই কোচিংয়ে আসতে হলো। যাঁদের টাকা আছে, তাঁরা কোচিংয়ে বাচ্চাদের দেন আর যাঁদের টাকা নেই তাঁদের বাচ্চারা লেখাপড়ায় বেশি দূরে যেতে পারে না। এখন অভিভাবকদের চাহিদা জিপিএ-৫। মুখস্থবিদ্যা এবং অনৈতিক প্রক্রিয়ায় ছাত্ররা এগিয়ে গেলেও অভিভাবকদের কিছু আসে-যায় না। তাঁরা জিপিএ ৫-এর সোনার হরিণ চান।
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের সামনেই একদল দালাল থাকে, যারা রোগী ভর্তি, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য রোগী ধরার কাজ করে থাকে এবং ডাক্তারদের কেউ কেউ এটাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। সবটা মিলিয়ে মানুষের জীবন ও শিক্ষাকে বিপন্ন করে বাণিজ্যটাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে যে কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম নেই, তা নয়। কিন্তু সেই উজ্জ্বল ব্যতিক্রমকেই এই সমাজের কেউ গ্রহণ করে নাকি গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে যেকোনোভাবে অর্থ উপার্জনকেই মুখ্য বলে ভেবে নেয়? সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দ্বিগুণ করে দিল, সেই সঙ্গে দুর্নীতিও দ্বিগুণ হয়ে গেল। দুর্নীতির এই অবাধ উল্লম্ফনকে রোধ করার আপাত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ভূত তাড়ানোর শর্ষেতেই ভূত থেকে যায়।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেককে অস্ত্র আইনের দুটি ধারায় ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই সাজা হওয়ায় তাঁকে ১৫ বছর জেল খাটতে হবে।
একই অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মোহাম্মদ সাহেদসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বাংলাদেশে বেসামরিক খাতে সরকারের বড় লগ্নির দুটি জায়গা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। সেই স্বাস্থ্য খাতে বরাবরই নানা ধরনের দুর্নীতির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের জীবন-মরণের সমস্যা। এখানে যদি মহাপরিচালক থেকে গাড়িচালক পর্যন্ত অভিযুক্ত হন, তাহলে একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। যদিও জানি এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আগেও পাইনি, এখনো পাব না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাস্থ্যের মূল খাতটি ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত। ক্লিনিক ব্যবসা তখন শুরু হয়নি। কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার বেসরকারি খাতে টিমটিম করে বিরাজ করছিল। ছোটখাটো সরকারি ডিসপেনসারি ও সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য জায়গা ছিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো। কালক্রমে উপজেলা পর্যন্ত হাসপাতাল সম্প্রসারিত হয়। সেখানেও জনগণের চিকিৎসার দাবিটুকু সক্ষমতা সাপেক্ষে মেনে নেওয়া হতো। চিকিৎসা ছিল মানুষের অধিকার। স্বল্পসংখ্যক মেডিকেল কলেজে যথার্থ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দান করতেন এবং ভালো শিক্ষক পেয়ে প্রকৃত চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ ছিল। কালক্রমে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের ধুম পড়ে গেল। বর্তমানে একটি জেলা শহরে এবং সমগ্র জেলাজুড়ে শতাধিক ক্লিনিক পাওয়া যায়। এই ক্লিনিকগুলোতে প্রতি শুক্রবারে অথবা ছুটির দিনে ঢাকার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বর্তমানে হিসাব করলে বেসরকারি খাতে যে বিপুল পরিমাণ লগ্নি হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় খাতের চেয়েও অনেক বেশি। এদিকে স্বাভাবিক কারণে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের লগ্নিও বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে এবং উন্নয়নমূলক কাজে সরকারের প্রচুর অর্থ লগ্নি করা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনুদানও বেড়েছে। এই অর্থ ব্যয়ের জন্য সব সময়ই টেন্ডারের আশ্রয় নিতে হয় এবং টেন্ডারের আইনকানুন ভাঙারও নানা রকম পদ্ধতি বেরিয়ে গেছে। সরকারি, বিদেশি অনুদান ও ঋণের টাকা বড় অংশের বিতরণকারী হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সম্প্রতি টিকা আমদানি নিয়ে যা কিছু ঘটতে দেখা গেছে, তাতে বড় বড় সরকারি আমলা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক নেতারা অংশীদার ছিলেন। অসহায় মানুষ এসব বিষয় শুধুই প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের করার কিছুই ছিল না। এই সময়ে অভিযুক্ত মহাপরিচালক দায়িত্বে ছিলেন এবং প্রায়ই টেলিভিশনের পর্দায় অবতীর্ণ হতেন। চালক মালেকের ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে যাঁর গাড়ি তিনি চালান, তিনি এবং তাঁকে কেন্দ্র করে থাকেন যত ক্ষমতাবান আছেন, তাঁরা। এ তো এক মহাবিপদ হলো। গাড়িতে বসে সবাই অনেক গোপন কথা বলে থাকেন, অনেক নীতিনির্ধারণী বিষয়ও তার মধ্যে থাকে। গাড়িচালক এসব কথা শুনে ব্ল্যাকমেল করতে পারেন অথবা যথাস্থানে কথাটি পাচার করে কিছু টাকাও কামাই করে নিতে পারেন। তাহলে ক্ষমতাবানদের গাড়ির চালকদের নিয়ে কী করা যায়? অনেক ছোটখাটো ক্ষমতাবানকে দেখেছি বসের ফোন নম্বরের সঙ্গে সঙ্গে চালকের ফোন নম্বরটিও রাখেন এবং প্রতিনিয়ত বসের গতিবিধির খবরও সেখান থেকে পেয়ে থাকেন। তাই মালেক যথেষ্টই চতুরতার সঙ্গে বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়েছেন; বিশেষ করে ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি একটা বড় বিষয়; এটাকেই বিশেষভাবে পুঁজি করেছেন মালেক।
মালেক ধরা পড়েছেন। কারণ, বিষয়টি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল, চেষ্টা করেও গোপন করতে পারেননি। কিন্তু আরও অনেক চালক আছেন, যাঁরা ধরা পড়েননি, কিন্তু এমন কাজ করে যাচ্ছেন।
মহাপরিচালক আবার সাহেদের সঙ্গে মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। সেটাও বোধ হয় কিছু অসাবধানতার কারণে। মহাপরিচালক একজন চিকিৎসকও বটে। যেখানে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, সেটাও স্বাস্থ্যবিষয়ক। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি দুর্নীতির ঘটনায় যদি একজন চিকিৎসক জড়িত হয়ে পড়েন, তাহলে বিষয়টি তো সত্যিই ভয়ংকর। আগেই বলেছি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় রাষ্ট্রের বড় লগ্নি এখানে করা হয়েছে। আজকের পত্রিকায় দেখা গেল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। প্রার্থীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছিল। শেষ পর্যন্ত এই বিতর্কিত নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। এ কথা এখন প্রায় সবাই জানে। সরকারি নিয়োগে যেখানে একসময় ঘুষের মাত্রা ছিল ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ, এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২৫ লাখ। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে শুনেছি ৩ থেকে ৪ লাখের কথা। এখন তা বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। একজন শিক্ষক যদি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন, তাহলে প্রথমেই অসততার একটা ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে এই মহান ব্রতে যোগ দিলেন। এই টাকা তুলতে গিয়ে যত ধরনের বাণিজ্য সম্ভব, তাতে তাঁকে ঢুকে যেতে হবে। কোচিং-বাণিজ্য, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস-বাণিজ্য এবং একই সঙ্গে নানা ধরনের ছোটখাটো ব্যবসায়ও যুক্ত হয়ে যান।
ক্ষা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাছে একটি গৌণ বিষয়। একবার এক জেলা শহরে নামকরা শিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সময়টা ছিল সকালবেলা। সেই বাড়িতে গিয়ে দেখলাম একটা স্কুল চলছে।
ভাবলাম এটা একটা মর্নিং স্কুল। কিন্তু সেই শিক্ষক সহাস্যে বললেন, ‘কী করব। এত ছাত্রের চাপ, তাই একটা কোচিং সেন্টারই খুলে বসতে হলো।’ দেখে বোধ হয় মনে হচ্ছে এটা একটা স্কুল। দু-একজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরা জানালেন এই শিক্ষকেরাই স্কুলের শিক্ষক। স্কুলে তেমন একটা পড়ান না। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই কোচিংয়ে আসতে হলো। যাঁদের টাকা আছে, তাঁরা কোচিংয়ে বাচ্চাদের দেন আর যাঁদের টাকা নেই তাঁদের বাচ্চারা লেখাপড়ায় বেশি দূরে যেতে পারে না। এখন অভিভাবকদের চাহিদা জিপিএ-৫। মুখস্থবিদ্যা এবং অনৈতিক প্রক্রিয়ায় ছাত্ররা এগিয়ে গেলেও অভিভাবকদের কিছু আসে-যায় না। তাঁরা জিপিএ ৫-এর সোনার হরিণ চান।
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের সামনেই একদল দালাল থাকে, যারা রোগী ভর্তি, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য রোগী ধরার কাজ করে থাকে এবং ডাক্তারদের কেউ কেউ এটাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। সবটা মিলিয়ে মানুষের জীবন ও শিক্ষাকে বিপন্ন করে বাণিজ্যটাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে যে কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম নেই, তা নয়। কিন্তু সেই উজ্জ্বল ব্যতিক্রমকেই এই সমাজের কেউ গ্রহণ করে নাকি গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে যেকোনোভাবে অর্থ উপার্জনকেই মুখ্য বলে ভেবে নেয়? সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দ্বিগুণ করে দিল, সেই সঙ্গে দুর্নীতিও দ্বিগুণ হয়ে গেল। দুর্নীতির এই অবাধ উল্লম্ফনকে রোধ করার আপাত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ভূত তাড়ানোর শর্ষেতেই ভূত থেকে যায়।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
২ ঘণ্টা আগে