ফারুক মেহেদী
দৃষ্টি এখন নায়িকা পরীমণির বেডরুমে! মনে হচ্ছে সবাই হাঁ করে আছে! ব্রেকফাস্ট, ডিনার, লাঞ্চ-মেনু একটাই—পরীমণি! এক মেনুতে এত আগ্রহ এর আগে কখনো কেউ দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না! একটি দেশ, যেখানে করোনায় দিনে কমবেশি আড়াই শ মানুষ মারা যাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন সহস্র মানুষ নতুন করে সংক্রমণের শিকার হচ্ছে, সংসারে হাহাকার চলছে। হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে নিশ্বাসের কষ্টে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে কতশত জন। যে দেশে কাজ হারিয়ে, দুমুঠো খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতছে মানুষ। অনেক কষ্টে কমিয়ে আনা গরিব মানুষের সংখ্যা যে দেশে ২০ শতাংশ থেকে এখন বেড়ে ৩৫ শতাংশের দিকে চলে যাচ্ছে, যেখানে ব্যবসা নেই, আয় নেই, পড়াশোনা নেই। এর মধ্যেও নতুন প্রকোপ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে। এর নিষ্ঠুরতায় জীবন দিচ্ছে আরও কত কতজন। কারও কারও ঘরে প্রিয়জন হারানোর কান্নায় বাতাস ভারী হচ্ছে।
এর মধ্যেই আমরা কেউ আছি পরীমণি কার কার সঙ্গে, কী কী করছেন–এসব নিয়ে। কী কী করছেন মানে, আরও পরিষ্কার হতে চায় সবাই। খুলে বলতে হবে। না হলে মজা হচ্ছে না নাকি! তাঁর বাসায় মদের বার, সেখানে কারা যেত? কোন অচিনপুরের রাজপুত্র তাঁকে বিলাসবহুল হ্যারিয়ার জিপ দিল? দুবাইয়ের বুরজ খলিফায় তিনি কার সঙ্গে রাত কাটালেন, কোন রথী-মহারথী তাঁকে বিলাসব্যসনে ভাসাল? সব জানা চাই, সব। আর এসব নিয়ে একটি দেশ, সমাজ, পরিবার আর লাখো কোটি মানুষকে মজার উদ্রেক করে দিয়েছে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিকতা।
এটাই কী তবে আমাদের সমাজ? এটাই তাহলে আমাদের মূল্যবোধ আর আত্মপরিচয়ের স্বরূপ? না। এসব বলা আমার বিষয় নয়। আমি পরীমণি বিশেষজ্ঞ নই। আমি বিনোদন, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা নীতিনৈতিকতায়ও অভিজ্ঞ কেউ নই। কিছু প্রশ্ন মনে উঠল বলে তা বললাম। আমার বলার বিষয় হলো আসলে একটি কঠিন সময় কিংবা ক্রান্তিকাল নিয়ে। যে ক্রান্তিকালে আমরা কেউ জানি না, বাঁচব কি না। আমরা বলতে পারি না যে আজকে কথা বলছি, কালকে বলতে পারব কি না। আমরা এ-ও জানি না, আমার ঘরের প্রিয়জন সে কালকে আমাদের সঙ্গে থাকবে কি না। আমার প্রিয় সোনামণির মুখে হাসি থাকবে, এ-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
আমি শুধু বলতে চাই, আমরা কঠিন এক বাস্তবতার মধ্যে আছি। একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ আমরা। সরকারি-বেসরকারি খাতের সহায়তায় দেশটি যখন অনেক সংগ্রাম আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল, যখন বিশ্বের সবাই বিস্ময়ে এ দেশটির এগিয়ে যাওয়া দেখছিল, বাহ্বা দিচ্ছিল, তখনই করোনার মতো মরণব্যাধির আক্রমণ। গত দেড় বছরে দফায় দফায় এর সংক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ায় অনিবার্য লকডাউনে দেশটির চলার পথে তৈরি হলো প্রতিবন্ধকতা। জীবন বাঁচাতে জীবিকায় তালা পড়ল।
পেশাগত কারণে দেশের মন্ত্রী, আমলা, আমদানি-রপ্তানিকারক, শীর্ষ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ—সবার সঙ্গে প্রায় নিয়মিত কথা বলতে হয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যা জানতে পারছি তা রীতিমতো ভয়ংকর। তাঁদের অনেকে বিধ্বস্ত। লাখো শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে অচল ব্যবসা আর ব্যাংকঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তাঁরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। কেউ কেউ নিজেদের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলে যা জানলাম, তার কিছু কিছু সম্পর্কে বলতে চাই এখানে। এত সব জরুরি বিষয় যখন চারপাশে, তখন কী করে পরীমণির মতো একজন নায়িকার ব্যক্তিগত জীবন বা বেডরুমের বিষয়টি জাতীয় জীবনে কতটা গুরুত্ব পায়, সেটিই ভেবে ভীত হই।
তো, দেশের অর্থনীতির ভিত যাঁদের শ্রমে-ঘামে তৈরি, তাঁদের কথা থেকে যা বুঝলাম তা হলো, করোনাকালে জীবন বাঁচাতে দেওয়া লকডাউনের কঠিন ছোবলের চরম নিষ্ঠুরতায় জীবন চলছে মানুষের। প্রায় অচল শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য–সবকিছু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র গরিব অসহায় মানুষ আরও গরিব হলেন। কাজ হারালেন লাখো দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষ। অনেকে খাবার পাচ্ছেন না। কেউ ভিক্ষা করে পরিবারের প্রিয়জনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সংগ্রাম করছেন। অনেক ছোট ছোট কারখানা চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে উদ্যোক্তা দেউলিয়া হয়েছেন। ব্যবসায় পুঁজি হারিয়ে অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি হয়েছেন। কেউ আবার শেষ পুঁজি খাটিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পেরে পাগলের মতো ছুটছেন। শিক্ষাব্যবস্থায় স্থায়ী তালা লাগার ফলে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-কিন্ডারগার্টেনের উদ্যোক্তারা পথে বসেছেন। লাখো মানুষের জীবিকা যে পর্যটন খাতে, বলতে গেলে সেটিও প্রায় স্থায়ীভাবে অচল হয়ে থাকায় শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ জলে। জিডিপির প্রায় ৫৪ শতাংশ যে সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল, এটি প্রায় শেষ।
বলা যায় ভোগ আর উৎপাদন যেখানে বাধাগ্রস্ত, সেখানের একটি অর্থনীতি চলে কীভাবে? আর যদি অর্থনীতি না চলে, তবে একটি দেশে কি শান্তি থাকার কথা? আসলেও কি দেশের মানুষের মনে শান্তি আছে? তাদের মনে কি আনন্দ, খুশি বলে কিছু আছে? এভাবে কি মানুষ বাঁচে? এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে?
তারপরও মানুষ বেঁচে আছে। বাঁচতে চায়। বাঁচতে হবে। আনন্দহীন, বিষাদের এ সময়ে দেশটিকে কীভাবে সামনে নিয়ে যাওয়া যায়, এখন সেই পরিকল্পনা দরকার। এই করোনাকালে দেশের কত মানুষ গরিব হলো? তাদের কতজন ঠিকমতো খেতে পায় না? কত মানুষ চাকরি ও কাজ হারাল? তাঁদের পরিবারগুলো কীভাবে চলে? দেশের কোন কোন ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো? কোন কোন খাত একেবারেই শেষ হয়ে গেল? কোন কোন খাতের উদ্যোক্তারা বেশি পুঁজি খোয়ালেন? কারা ব্যবসা বন্ধের ফলে ব্যাংকে ঋণখেলাপি হলেন? কোন কোন এসএমই খাত পথে বসে গেছে? কোন কোন খাত দেউলিয়া? সেবা খাতে কত ক্ষতি হলো? পর্যটন ও এভিয়েশন খাতের ক্ষতি কীভাবে পোষাবে? অনানুষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কেমন ক্ষতি হলো? এ রকম হাজারো বিষয় আছে, প্রশ্ন আছে। দেশের মানুষ এমন একটি সংকটের মুখে পড়েছে, যখন এ প্রশ্নগুলো সামনে আসে। সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার সময় এসেছে। সরকারেরও উচিত এসব প্রশ্নের জবাব বের করা।
সবার আগে দরকার একটি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। কী কী প্রশ্ন করলে দেশের ক্ষতির চিত্রটি পাওয়া যাবে, এ রকম একটি উদ্যোগ নিতে হবে। এ পর্যন্ত বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি তা হলো, ক্ষতির হিসাবটি প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজেরা করতে পারে। নিজেরা বলতে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাত বা যারা এসব কাজে অভিজ্ঞ, তাদের নিয়েও এটা করতে পারে। কেউ বলছেন বিবিএসকে দিয়ে করানো যায়। আবার কেউ বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। যে যা-ই বলুক মোটকথা হলো, ক্ষতির হিসাবটি করতে হবে। এরপর একটি টাস্কফোর্স করার পক্ষেও মত এসেছে। বলা হচ্ছে, একটি টাস্কফোর্স করা হলে তারা ঠিক করবে কোন কোন খাতে ক্ষতি কত এবং সেই মাত্রা অনুযায়ী তাদের কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এই টাস্কফোর্সই ঠিক করবে পুরো ক্ষতি পোষানোর জন্য সহায়তাটা কী পদ্ধতিতে দেওয়া হবে এবং এর অর্থায়ন কীভাবে হবে।
এখন আসলে কথা বলতে হবে এসব বিষয়ে। একটি সুন্দর এগিয়ে যাওয়ার দেশকে তার চলার পথ কীভাবে মসৃণ করা যায়, এখানের মানুষ নিজেরা কীভাবে সুখে, হাসি-আনন্দে থাকবে, তাদের নিজেরা কীভাবে ভালো থাকবে, কীভাবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখবে, তাদের আয়ের পথ সচল রাখা যায় কীভাবে–এখন কথা বলা দরকার এসব নিয়ে। অথচ কী দুর্ভাগ্য, আমরা পুরো জাতি হাঁ করে গিলছি পরীমণিকে! তাঁকে নিয়ে চর্চা করে দিন-রাত পার করে দিচ্ছি! আমাদের যেন এর চেয়ে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই! পরচর্চা, পরের ইচ্ছা, রুচি, ব্যক্তিগত জীবন যেন আমাদের মন আর মগজে সুড়সুড়ি দিচ্ছে! যারা তাঁকে নিয়ে খেলছে, তারা কুলীন বলে তাদের নিয়ে আগ্রহের চেয়ে একজন ব্যক্তি পরীমণি নিয়েই সবার ঘুম হারাম। আসলে আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনের অগ্রাধিকার বোঝা দরকার সবার আগে। না হলে সবই হবে, তবে আমাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পাব না!
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দৃষ্টি এখন নায়িকা পরীমণির বেডরুমে! মনে হচ্ছে সবাই হাঁ করে আছে! ব্রেকফাস্ট, ডিনার, লাঞ্চ-মেনু একটাই—পরীমণি! এক মেনুতে এত আগ্রহ এর আগে কখনো কেউ দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না! একটি দেশ, যেখানে করোনায় দিনে কমবেশি আড়াই শ মানুষ মারা যাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন সহস্র মানুষ নতুন করে সংক্রমণের শিকার হচ্ছে, সংসারে হাহাকার চলছে। হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে নিশ্বাসের কষ্টে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে কতশত জন। যে দেশে কাজ হারিয়ে, দুমুঠো খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতছে মানুষ। অনেক কষ্টে কমিয়ে আনা গরিব মানুষের সংখ্যা যে দেশে ২০ শতাংশ থেকে এখন বেড়ে ৩৫ শতাংশের দিকে চলে যাচ্ছে, যেখানে ব্যবসা নেই, আয় নেই, পড়াশোনা নেই। এর মধ্যেও নতুন প্রকোপ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে। এর নিষ্ঠুরতায় জীবন দিচ্ছে আরও কত কতজন। কারও কারও ঘরে প্রিয়জন হারানোর কান্নায় বাতাস ভারী হচ্ছে।
এর মধ্যেই আমরা কেউ আছি পরীমণি কার কার সঙ্গে, কী কী করছেন–এসব নিয়ে। কী কী করছেন মানে, আরও পরিষ্কার হতে চায় সবাই। খুলে বলতে হবে। না হলে মজা হচ্ছে না নাকি! তাঁর বাসায় মদের বার, সেখানে কারা যেত? কোন অচিনপুরের রাজপুত্র তাঁকে বিলাসবহুল হ্যারিয়ার জিপ দিল? দুবাইয়ের বুরজ খলিফায় তিনি কার সঙ্গে রাত কাটালেন, কোন রথী-মহারথী তাঁকে বিলাসব্যসনে ভাসাল? সব জানা চাই, সব। আর এসব নিয়ে একটি দেশ, সমাজ, পরিবার আর লাখো কোটি মানুষকে মজার উদ্রেক করে দিয়েছে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিকতা।
এটাই কী তবে আমাদের সমাজ? এটাই তাহলে আমাদের মূল্যবোধ আর আত্মপরিচয়ের স্বরূপ? না। এসব বলা আমার বিষয় নয়। আমি পরীমণি বিশেষজ্ঞ নই। আমি বিনোদন, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা নীতিনৈতিকতায়ও অভিজ্ঞ কেউ নই। কিছু প্রশ্ন মনে উঠল বলে তা বললাম। আমার বলার বিষয় হলো আসলে একটি কঠিন সময় কিংবা ক্রান্তিকাল নিয়ে। যে ক্রান্তিকালে আমরা কেউ জানি না, বাঁচব কি না। আমরা বলতে পারি না যে আজকে কথা বলছি, কালকে বলতে পারব কি না। আমরা এ-ও জানি না, আমার ঘরের প্রিয়জন সে কালকে আমাদের সঙ্গে থাকবে কি না। আমার প্রিয় সোনামণির মুখে হাসি থাকবে, এ-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
আমি শুধু বলতে চাই, আমরা কঠিন এক বাস্তবতার মধ্যে আছি। একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ আমরা। সরকারি-বেসরকারি খাতের সহায়তায় দেশটি যখন অনেক সংগ্রাম আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল, যখন বিশ্বের সবাই বিস্ময়ে এ দেশটির এগিয়ে যাওয়া দেখছিল, বাহ্বা দিচ্ছিল, তখনই করোনার মতো মরণব্যাধির আক্রমণ। গত দেড় বছরে দফায় দফায় এর সংক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ায় অনিবার্য লকডাউনে দেশটির চলার পথে তৈরি হলো প্রতিবন্ধকতা। জীবন বাঁচাতে জীবিকায় তালা পড়ল।
পেশাগত কারণে দেশের মন্ত্রী, আমলা, আমদানি-রপ্তানিকারক, শীর্ষ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ—সবার সঙ্গে প্রায় নিয়মিত কথা বলতে হয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যা জানতে পারছি তা রীতিমতো ভয়ংকর। তাঁদের অনেকে বিধ্বস্ত। লাখো শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে অচল ব্যবসা আর ব্যাংকঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তাঁরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। কেউ কেউ নিজেদের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলে যা জানলাম, তার কিছু কিছু সম্পর্কে বলতে চাই এখানে। এত সব জরুরি বিষয় যখন চারপাশে, তখন কী করে পরীমণির মতো একজন নায়িকার ব্যক্তিগত জীবন বা বেডরুমের বিষয়টি জাতীয় জীবনে কতটা গুরুত্ব পায়, সেটিই ভেবে ভীত হই।
তো, দেশের অর্থনীতির ভিত যাঁদের শ্রমে-ঘামে তৈরি, তাঁদের কথা থেকে যা বুঝলাম তা হলো, করোনাকালে জীবন বাঁচাতে দেওয়া লকডাউনের কঠিন ছোবলের চরম নিষ্ঠুরতায় জীবন চলছে মানুষের। প্রায় অচল শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য–সবকিছু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র গরিব অসহায় মানুষ আরও গরিব হলেন। কাজ হারালেন লাখো দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষ। অনেকে খাবার পাচ্ছেন না। কেউ ভিক্ষা করে পরিবারের প্রিয়জনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সংগ্রাম করছেন। অনেক ছোট ছোট কারখানা চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে উদ্যোক্তা দেউলিয়া হয়েছেন। ব্যবসায় পুঁজি হারিয়ে অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি হয়েছেন। কেউ আবার শেষ পুঁজি খাটিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পেরে পাগলের মতো ছুটছেন। শিক্ষাব্যবস্থায় স্থায়ী তালা লাগার ফলে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-কিন্ডারগার্টেনের উদ্যোক্তারা পথে বসেছেন। লাখো মানুষের জীবিকা যে পর্যটন খাতে, বলতে গেলে সেটিও প্রায় স্থায়ীভাবে অচল হয়ে থাকায় শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ জলে। জিডিপির প্রায় ৫৪ শতাংশ যে সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল, এটি প্রায় শেষ।
বলা যায় ভোগ আর উৎপাদন যেখানে বাধাগ্রস্ত, সেখানের একটি অর্থনীতি চলে কীভাবে? আর যদি অর্থনীতি না চলে, তবে একটি দেশে কি শান্তি থাকার কথা? আসলেও কি দেশের মানুষের মনে শান্তি আছে? তাদের মনে কি আনন্দ, খুশি বলে কিছু আছে? এভাবে কি মানুষ বাঁচে? এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে?
তারপরও মানুষ বেঁচে আছে। বাঁচতে চায়। বাঁচতে হবে। আনন্দহীন, বিষাদের এ সময়ে দেশটিকে কীভাবে সামনে নিয়ে যাওয়া যায়, এখন সেই পরিকল্পনা দরকার। এই করোনাকালে দেশের কত মানুষ গরিব হলো? তাদের কতজন ঠিকমতো খেতে পায় না? কত মানুষ চাকরি ও কাজ হারাল? তাঁদের পরিবারগুলো কীভাবে চলে? দেশের কোন কোন ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো? কোন কোন খাত একেবারেই শেষ হয়ে গেল? কোন কোন খাতের উদ্যোক্তারা বেশি পুঁজি খোয়ালেন? কারা ব্যবসা বন্ধের ফলে ব্যাংকে ঋণখেলাপি হলেন? কোন কোন এসএমই খাত পথে বসে গেছে? কোন কোন খাত দেউলিয়া? সেবা খাতে কত ক্ষতি হলো? পর্যটন ও এভিয়েশন খাতের ক্ষতি কীভাবে পোষাবে? অনানুষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কেমন ক্ষতি হলো? এ রকম হাজারো বিষয় আছে, প্রশ্ন আছে। দেশের মানুষ এমন একটি সংকটের মুখে পড়েছে, যখন এ প্রশ্নগুলো সামনে আসে। সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার সময় এসেছে। সরকারেরও উচিত এসব প্রশ্নের জবাব বের করা।
সবার আগে দরকার একটি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। কী কী প্রশ্ন করলে দেশের ক্ষতির চিত্রটি পাওয়া যাবে, এ রকম একটি উদ্যোগ নিতে হবে। এ পর্যন্ত বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি তা হলো, ক্ষতির হিসাবটি প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজেরা করতে পারে। নিজেরা বলতে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাত বা যারা এসব কাজে অভিজ্ঞ, তাদের নিয়েও এটা করতে পারে। কেউ বলছেন বিবিএসকে দিয়ে করানো যায়। আবার কেউ বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। যে যা-ই বলুক মোটকথা হলো, ক্ষতির হিসাবটি করতে হবে। এরপর একটি টাস্কফোর্স করার পক্ষেও মত এসেছে। বলা হচ্ছে, একটি টাস্কফোর্স করা হলে তারা ঠিক করবে কোন কোন খাতে ক্ষতি কত এবং সেই মাত্রা অনুযায়ী তাদের কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এই টাস্কফোর্সই ঠিক করবে পুরো ক্ষতি পোষানোর জন্য সহায়তাটা কী পদ্ধতিতে দেওয়া হবে এবং এর অর্থায়ন কীভাবে হবে।
এখন আসলে কথা বলতে হবে এসব বিষয়ে। একটি সুন্দর এগিয়ে যাওয়ার দেশকে তার চলার পথ কীভাবে মসৃণ করা যায়, এখানের মানুষ নিজেরা কীভাবে সুখে, হাসি-আনন্দে থাকবে, তাদের নিজেরা কীভাবে ভালো থাকবে, কীভাবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখবে, তাদের আয়ের পথ সচল রাখা যায় কীভাবে–এখন কথা বলা দরকার এসব নিয়ে। অথচ কী দুর্ভাগ্য, আমরা পুরো জাতি হাঁ করে গিলছি পরীমণিকে! তাঁকে নিয়ে চর্চা করে দিন-রাত পার করে দিচ্ছি! আমাদের যেন এর চেয়ে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই! পরচর্চা, পরের ইচ্ছা, রুচি, ব্যক্তিগত জীবন যেন আমাদের মন আর মগজে সুড়সুড়ি দিচ্ছে! যারা তাঁকে নিয়ে খেলছে, তারা কুলীন বলে তাদের নিয়ে আগ্রহের চেয়ে একজন ব্যক্তি পরীমণি নিয়েই সবার ঘুম হারাম। আসলে আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনের অগ্রাধিকার বোঝা দরকার সবার আগে। না হলে সবই হবে, তবে আমাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পাব না!
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৯ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
২০ ঘণ্টা আগে