স্বপ্না রেজা
রাতের রানী। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিষয়। কোনো কবি, সাহিত্যিক তাঁর রচনায় এ নামে কাউকে সম্বোধন করেছেন কি না ইতিমধ্যে, তা আমার জানা নেই। তবে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান প্রায়ই মনে গুনগুনিয়ে ওঠে, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল...’। কবি কিন্তু লেখেননি, মোর প্রিয়া হবে এসো রাতের রানী। লিখলেও সমস্যা ছিল না। কারণ, তিনি ভালোবেসেই লিখতেন। তাঁর রাণী তো তাঁর প্রিয়তমা। যাহোক, সম্প্রতি বেশ কজন নারীর ইস্যুতে রাতের রানী কথাটা কানে এল। সমাজটাকে নাড়া দিল। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কানে বেশ লাগল কথাটা। কবি বা সাহিত্যিক নন, টিভিতে সেই আওয়াজ পেলাম অন্যভাবে। কথায় নিঃসন্দেহে রসবোধ আছে বোঝা যায়। রস তো থাকবেই, কারণ কথাটা পুরুষের মুখ থেকে বলা। চমকে যতটা না উঠেছি, তার চেয়ে বহুগুণে হতভম্ব হয়েছি। হোঁচট খেয়েছি। তারপরও ভেবেছি কথাটা ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক। মনকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করেছি ভালো কিছু ভেবে। সম্ভব হয়নি। খারাপ অর্থে কথাটা বলা। যাহোক, রানী তো রাজার স্ত্রী। যে রাজার একটা সাম্রাজ্য থাকে। হোক সেটা দিনের কিংবা রাতের রাজা। ভাষার ব্যাকরণে তাই-ই বলে। রানীর পুংলিঙ্গ রাজা। সেই সূত্রে বাংলাদেশে রাতের রানী কেউ থাকলে নিশ্চয়ই রাতের রাজা বলে কেউ আছেন। থাকার কথা। আর যাঁরা রাতের রানীকে চেনেন, তাঁরাও রাতের রাজাকে চিনবেন বা চেনেন, নিশ্চিত। রাজাদের সাম্রাজ্যটাও অজানা থাকার কথা নয়।
এমন একটা সময়ে এমন এক বিশেষণ উচ্চারিত হলো, যখন নারীরা উন্নয়নশীল দেশের অংশীদার। তাঁদের অংশীদারত্ব শ্রমে, অবদানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করছেন বিভিন্ন সেক্টরে। এগিয়ে যাচ্ছেন নিজেরা, এগিয়ে নিচ্ছেন দেশকে, গোটা জাতিকে। কোথাও কোথাও পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে আছেন। একসময় পুরুষ কৃষিতে কাজ করলেও প্রবাসে কাজ করার মনোবাসনায় সেই জায়গাটিতে নারীর আধিক্য বেড়ে গেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে নেই। সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে নারীরা বেশ এগিয়েছেন। পর্বত জয়, খেলায় জয়—কতই না অর্জন নারীর। সেখানে কিন্তু দিন, রাতের প্রশ্ন নেই। ওঠে না। এ জন্য মাননীয় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। কারণ, তিনি নারীবান্ধব একজন সরকারপ্রধান। যথেষ্ট উৎসাহিত করেন নারীকে এগিয়ে যেতে। নারীরা দিনরাত কাজ করেন। কাজের প্রয়োজনে দিনে যেমন নারীরা কাজ করেন, রাতেও করেন। মিডিয়া, পোশাকশিল্প, কলকারখানা, সংস্কৃতি অঙ্গনে রাতভর কাজ চলে প্রয়োজনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীও কাজ করেন। কাজেই সন্ধ্যার পর কেন নারীরা বাসার বাইরে বের হবেন, সর্বজনীনভাবে প্রশ্ন উঠলে সেটা হয় নিতান্তই অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সর্বোপরি প্রতিবন্ধকতামূলক। প্রতিহিংসাপরায়ণ তো বটেই। পরীমণির ইস্যুতে একজন সিনিয়র অভিনয়শিল্পীকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বলতে শুনলাম, সন্ধ্যার পর নারীর বাইরে বের হওয়াটা ঠিক নয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে নারীর কাজের পরিধি ও অবদান, অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি মোটেও অবগত নন নিশ্চিত। সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা রেখে জানতে ইচ্ছে করছে যে তাঁরা কি সব সময়ই দিনের আলোয় চলচ্চিত্রে কাজ করতেন কিংবা তাঁর সময়কালে তিনি কি সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতেন না? আর একজন অভিনয়শিল্পীকে বলতে শুনলাম, পরীমণির টাকার উৎস কী, দেখা দরকার। ওই দুজন অভিনয়শিল্পী একবারও বললেন না যে পরীমণি কোনো ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসার শিকার কি না, তা দেখা দরকার। কিংবা কারা এই অল্পবয়সী অভিনয়শিল্পীর পেছনে ছিলেন এত দিন, তাঁদের খুঁজে বের করা দরকার। যাঁরা নারীদের রাতের রানী বলে আখ্যায়িত করলেন, মনে হলো ওই দুই নারী অভিনয়শিল্পীও সেই কাতারে দাঁড়িয়েই কথা বলছেন। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা আর নারী থাকলেন না। রাতের রানী অপবাদ গায়ে মাখলেন না। মাখবেনই-বা কেন? তাঁরা তো নারী জাতিভুক্ত না হয়ে স্বতন্ত্র নারী হয়ে থাকতে ভালোবাসেন। তাঁরা ভেবে নিয়েছেন তাঁরা মোটেও অরক্ষিত হবেন না এই সমাজে, যে সমাজে আড়াই বছরের নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং যে সমাজে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
শহরে অনেক অভিজাত ক্লাব আছে। ক্লাবের সদস্য কিন্তু সাধারণ মানুষ হন না, হতে পারেন না। যাঁরা ধনী ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে, তাঁরাই হন। পেশাগত জীবনে উঁচুতে যাঁরা অবস্থান করেন, তাঁরাও সদস্য হন। ক্লাবে পার্টি হয়, আড্ডা হয়, মনোরঞ্জন চলে। ওই সব জায়গায় মদ্যপান স্বাভাবিক ঘটনা। উঠতি বয়সের ধনীর সন্তানসহ মাঝবয়সী, বৃদ্ধরাও সেখানে মত্ত থাকেন। কোনো কোনো ক্লাবে পার্টিকে প্রাণবন্ত করতে অর্থের বিনিময়ে অল্পবয়সী নারীকে ব্যবহার করা হয়। ধনীদের কেউ কেউ ঘরে স্ত্রী রেখে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীর কাছে যান না, তাঁরা ক্লাবে যান। রাতভর চলে সেখানে ফুর্তি। প্রশ্ন, কে দেখেন এসব? ক্লাব কেন, ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন কী উদ্দেশ্যে, তা মনিটর করার জন্য আদতে কোনো সংস্থা আছে কি না? এর আগে কিন্তু স্পোর্টিং ক্লাবগুলো থেকে নিষিদ্ধ ক্যাসিনো সংস্কৃতি উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপরও কেন অন্য সব ক্লাবে অভিযান চালানো হয়নি?
অসামাজিক কার্যকলাপ শব্দটার সঙ্গে নারীকে যুক্ত করা যত সহজ এই সমাজে, পুরুষকে নয়। ধর্ষণের পর হত্যা করেও মৃত নারীর সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মৃত নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। অপবাদ নিতে হয়। সেই সমাজে তো জীবিত নারীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা অব্যাহত থাকবেই। রাতের রানী কথাটা মূলত তারই ধারাবাহিকতা।
দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। এ কথা কারোর অজানা নয় যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বর্বররা বাংলাদেশের নারীদের সতীত্বের প্রতি নৃশংস আঘাত হেনেছিল। সম্ভ্রমহানি করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সব নির্যাতিত নারীকে বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি দেশের নারীর সর্বোচ্চ সম্মান। এমন এক জাতিসত্তার ইতিহাস থাকতে ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অবস্থান সুদৃঢ় অবস্থায় থাকতে কোনো নারীকে রাতের রানী বিশেষণ দেওয়াটা বড্ড অশোভন লেগেছে। নারী জাতির প্রতি অসম্মানজনক লেগেছে। মোটেও ভালো লাগেনি। মার্জিত লাগেনি। মুখ খিস্তির মতোন শোনাল।
সমাজটা আদতে কতটুকু বদলেছে? মোটেও বদলায়নি; বিশেষ করে নারীর প্রতি সমাজের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। সমাজের পোশাকেও অবয়বে নারীবান্ধব বিষয়টি দৃশ্যমান থাকলেও শেকড়ে ফকফকা। নারীর প্রতি নেতিবাচক আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তার বড় প্রমাণ। অপেক্ষায় আছি, কেউ একজন বলুক, রাতের রাজার সাম্রাজ্য এবার নির্মূল করা হবে। হবে তো?
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
রাতের রানী। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিষয়। কোনো কবি, সাহিত্যিক তাঁর রচনায় এ নামে কাউকে সম্বোধন করেছেন কি না ইতিমধ্যে, তা আমার জানা নেই। তবে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান প্রায়ই মনে গুনগুনিয়ে ওঠে, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল...’। কবি কিন্তু লেখেননি, মোর প্রিয়া হবে এসো রাতের রানী। লিখলেও সমস্যা ছিল না। কারণ, তিনি ভালোবেসেই লিখতেন। তাঁর রাণী তো তাঁর প্রিয়তমা। যাহোক, সম্প্রতি বেশ কজন নারীর ইস্যুতে রাতের রানী কথাটা কানে এল। সমাজটাকে নাড়া দিল। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কানে বেশ লাগল কথাটা। কবি বা সাহিত্যিক নন, টিভিতে সেই আওয়াজ পেলাম অন্যভাবে। কথায় নিঃসন্দেহে রসবোধ আছে বোঝা যায়। রস তো থাকবেই, কারণ কথাটা পুরুষের মুখ থেকে বলা। চমকে যতটা না উঠেছি, তার চেয়ে বহুগুণে হতভম্ব হয়েছি। হোঁচট খেয়েছি। তারপরও ভেবেছি কথাটা ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক। মনকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করেছি ভালো কিছু ভেবে। সম্ভব হয়নি। খারাপ অর্থে কথাটা বলা। যাহোক, রানী তো রাজার স্ত্রী। যে রাজার একটা সাম্রাজ্য থাকে। হোক সেটা দিনের কিংবা রাতের রাজা। ভাষার ব্যাকরণে তাই-ই বলে। রানীর পুংলিঙ্গ রাজা। সেই সূত্রে বাংলাদেশে রাতের রানী কেউ থাকলে নিশ্চয়ই রাতের রাজা বলে কেউ আছেন। থাকার কথা। আর যাঁরা রাতের রানীকে চেনেন, তাঁরাও রাতের রাজাকে চিনবেন বা চেনেন, নিশ্চিত। রাজাদের সাম্রাজ্যটাও অজানা থাকার কথা নয়।
এমন একটা সময়ে এমন এক বিশেষণ উচ্চারিত হলো, যখন নারীরা উন্নয়নশীল দেশের অংশীদার। তাঁদের অংশীদারত্ব শ্রমে, অবদানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করছেন বিভিন্ন সেক্টরে। এগিয়ে যাচ্ছেন নিজেরা, এগিয়ে নিচ্ছেন দেশকে, গোটা জাতিকে। কোথাও কোথাও পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে আছেন। একসময় পুরুষ কৃষিতে কাজ করলেও প্রবাসে কাজ করার মনোবাসনায় সেই জায়গাটিতে নারীর আধিক্য বেড়ে গেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে নেই। সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে নারীরা বেশ এগিয়েছেন। পর্বত জয়, খেলায় জয়—কতই না অর্জন নারীর। সেখানে কিন্তু দিন, রাতের প্রশ্ন নেই। ওঠে না। এ জন্য মাননীয় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। কারণ, তিনি নারীবান্ধব একজন সরকারপ্রধান। যথেষ্ট উৎসাহিত করেন নারীকে এগিয়ে যেতে। নারীরা দিনরাত কাজ করেন। কাজের প্রয়োজনে দিনে যেমন নারীরা কাজ করেন, রাতেও করেন। মিডিয়া, পোশাকশিল্প, কলকারখানা, সংস্কৃতি অঙ্গনে রাতভর কাজ চলে প্রয়োজনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীও কাজ করেন। কাজেই সন্ধ্যার পর কেন নারীরা বাসার বাইরে বের হবেন, সর্বজনীনভাবে প্রশ্ন উঠলে সেটা হয় নিতান্তই অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সর্বোপরি প্রতিবন্ধকতামূলক। প্রতিহিংসাপরায়ণ তো বটেই। পরীমণির ইস্যুতে একজন সিনিয়র অভিনয়শিল্পীকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বলতে শুনলাম, সন্ধ্যার পর নারীর বাইরে বের হওয়াটা ঠিক নয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে নারীর কাজের পরিধি ও অবদান, অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি মোটেও অবগত নন নিশ্চিত। সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা রেখে জানতে ইচ্ছে করছে যে তাঁরা কি সব সময়ই দিনের আলোয় চলচ্চিত্রে কাজ করতেন কিংবা তাঁর সময়কালে তিনি কি সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতেন না? আর একজন অভিনয়শিল্পীকে বলতে শুনলাম, পরীমণির টাকার উৎস কী, দেখা দরকার। ওই দুজন অভিনয়শিল্পী একবারও বললেন না যে পরীমণি কোনো ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসার শিকার কি না, তা দেখা দরকার। কিংবা কারা এই অল্পবয়সী অভিনয়শিল্পীর পেছনে ছিলেন এত দিন, তাঁদের খুঁজে বের করা দরকার। যাঁরা নারীদের রাতের রানী বলে আখ্যায়িত করলেন, মনে হলো ওই দুই নারী অভিনয়শিল্পীও সেই কাতারে দাঁড়িয়েই কথা বলছেন। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা আর নারী থাকলেন না। রাতের রানী অপবাদ গায়ে মাখলেন না। মাখবেনই-বা কেন? তাঁরা তো নারী জাতিভুক্ত না হয়ে স্বতন্ত্র নারী হয়ে থাকতে ভালোবাসেন। তাঁরা ভেবে নিয়েছেন তাঁরা মোটেও অরক্ষিত হবেন না এই সমাজে, যে সমাজে আড়াই বছরের নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং যে সমাজে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
শহরে অনেক অভিজাত ক্লাব আছে। ক্লাবের সদস্য কিন্তু সাধারণ মানুষ হন না, হতে পারেন না। যাঁরা ধনী ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে, তাঁরাই হন। পেশাগত জীবনে উঁচুতে যাঁরা অবস্থান করেন, তাঁরাও সদস্য হন। ক্লাবে পার্টি হয়, আড্ডা হয়, মনোরঞ্জন চলে। ওই সব জায়গায় মদ্যপান স্বাভাবিক ঘটনা। উঠতি বয়সের ধনীর সন্তানসহ মাঝবয়সী, বৃদ্ধরাও সেখানে মত্ত থাকেন। কোনো কোনো ক্লাবে পার্টিকে প্রাণবন্ত করতে অর্থের বিনিময়ে অল্পবয়সী নারীকে ব্যবহার করা হয়। ধনীদের কেউ কেউ ঘরে স্ত্রী রেখে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীর কাছে যান না, তাঁরা ক্লাবে যান। রাতভর চলে সেখানে ফুর্তি। প্রশ্ন, কে দেখেন এসব? ক্লাব কেন, ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন কী উদ্দেশ্যে, তা মনিটর করার জন্য আদতে কোনো সংস্থা আছে কি না? এর আগে কিন্তু স্পোর্টিং ক্লাবগুলো থেকে নিষিদ্ধ ক্যাসিনো সংস্কৃতি উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপরও কেন অন্য সব ক্লাবে অভিযান চালানো হয়নি?
অসামাজিক কার্যকলাপ শব্দটার সঙ্গে নারীকে যুক্ত করা যত সহজ এই সমাজে, পুরুষকে নয়। ধর্ষণের পর হত্যা করেও মৃত নারীর সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মৃত নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। অপবাদ নিতে হয়। সেই সমাজে তো জীবিত নারীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা অব্যাহত থাকবেই। রাতের রানী কথাটা মূলত তারই ধারাবাহিকতা।
দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। এ কথা কারোর অজানা নয় যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বর্বররা বাংলাদেশের নারীদের সতীত্বের প্রতি নৃশংস আঘাত হেনেছিল। সম্ভ্রমহানি করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সব নির্যাতিত নারীকে বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি দেশের নারীর সর্বোচ্চ সম্মান। এমন এক জাতিসত্তার ইতিহাস থাকতে ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অবস্থান সুদৃঢ় অবস্থায় থাকতে কোনো নারীকে রাতের রানী বিশেষণ দেওয়াটা বড্ড অশোভন লেগেছে। নারী জাতির প্রতি অসম্মানজনক লেগেছে। মোটেও ভালো লাগেনি। মার্জিত লাগেনি। মুখ খিস্তির মতোন শোনাল।
সমাজটা আদতে কতটুকু বদলেছে? মোটেও বদলায়নি; বিশেষ করে নারীর প্রতি সমাজের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। সমাজের পোশাকেও অবয়বে নারীবান্ধব বিষয়টি দৃশ্যমান থাকলেও শেকড়ে ফকফকা। নারীর প্রতি নেতিবাচক আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তার বড় প্রমাণ। অপেক্ষায় আছি, কেউ একজন বলুক, রাতের রাজার সাম্রাজ্য এবার নির্মূল করা হবে। হবে তো?
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১০ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১০ ঘণ্টা আগে