অর্ণব সান্যাল
একজন খেপলেন মনমতো সংবাদ প্রকাশিত না হওয়ায়। আরেকজন খেপলেন আদালতের সমন পেয়ে। তবে দুজনেরই যে জায়গায় মিল, সেটি হলো—হেনস্তা করায়। আর এই ‘ইচ্ছে হলো তাই হেনস্তা করলাম’—এই মনোভাবটি সৃষ্টি হলো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ‘হ্যাডম’ থেকে। কিন্তু এই হ্যাডমের মালিকানা আসলে কার?
হ্যাঁ, বলছি দুই ইউএনও’র কথা। ইংরেজির বাংলা করলে দাঁড়ায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সরকারি কর্মচারী বিধি মোতাবেক তাঁরা একেকটি উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এই পদের সরকারি কর্মচারীদের কাজের ফিরিস্তি অনেক, সরকারি ওয়েবসাইটে খুঁজতে গিয়ে বিশাল বিশাল তালিকা পাওয়া গেল। তাতে কী নেই! সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তদারকির ভারও আছে। এককথায়, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্বটি ইউএনওর কাঁধেই দেওয়া আছে। আর এত এত কাজ যখন ইউএনওদের করতে হচ্ছে, ফলে সরকারি সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশ্নও করতে থাকেন এক ব্যক্তিকেই। আর তা করতে গিয়েই একজন সাংবাদিককে শুনতে হলো মহামান্য হাইকোর্টের মন্তব্য অনুযায়ী, ‘মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা’।
আচ্ছা, ঘটনা দুটির অল্পবিস্তর একটু জেনে নেওয়া যাক। কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ার খবর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদ। এর জের ধরে তাঁকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেন ইউএনও কায়সার খসরু। সেই কথোপকথনের রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে আদালত বলেন, ওই ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা মাস্তানের ভাষার চেয়েও খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে কায়সার খসরুকে এরই মধ্যে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
অন্যদিকে এর আগে আদালতের জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বোয়ালমারীর ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়ার বিরুদ্ধে। গত ৭ জুন তাঁদের তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। পরে ২১ জুন ইউএনও এবং নাজির হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। তা গ্রহণ করে তাঁদের আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অতিসম্প্রতি।
এই দুটি ঘটনার বিশ্লেষণে এবার যাওয়া যাক। আগেই বলেছি, নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের সর্বময় কর্তা হয়ে থাকেন ইউএনও। দুটি ঘটনাতেই তাঁদের সেই ‘সর্বময়তার’ বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পারছি স্পষ্ট চোখেই। মজার বিষয় হলো, যে দুই পক্ষের বিরুদ্ধে তাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় ‘হ্যাডম’ (বা শুদ্ধ বাংলায় ক্ষমতা) দেখালেন, সেই দুটি পক্ষের কাজই হলো তাঁদের কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণের সীমারেখায় আটকে রাখা, যথেচ্ছাচার করতে না দেওয়া। বিচার বিভাগেরই কাজ যেকোনো মূল্যে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত রাখা, আর তাতেই তথ্য দিয়ে জ্বালানি জোগায় সংবাদমাধ্যম। অথচ এই দুটি পক্ষের বিরুদ্ধেই সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা খড়্গহস্ত হচ্ছেন। তবে কি একমেবাদ্বিতীয়ম্ হতেই এমন আচরণ?
সাংবাদিকতার ওপর রাগ-ক্ষোভ সংশ্লিষ্ট সবারই। অনিয়মের খবরে তো আরও বেশি। কারণ, তাতে কারও না কারও বাড়া ভাতে ছাই পড়ে। আর ওতেই যত গন্ডগোল। তবে প্রতিবাদের রাস্তা কিন্তু বন্ধ নেই। সংবাদের প্রতিবাদ করে পত্র পাঠানোই যায়, এমনকি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগও করা যায়। কিন্তু যখনই একজন ক্ষমতার (সরকারি বা বেসরকারি) চর্চাকারী ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বসেন, তখনই বোঝা যায়, ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের আচরণের যে ধরনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা সেখানে একটি বড় প্রভাবক। বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে এমন, ‘আমার এত ক্ষমতা, আমাকে নিয়ে এত কথা? খেয়ে ফেলব একদম!’ এ ঘরানার আচরণের অন্যতম কারণ, সরকারিভাবে এক ব্যক্তির হাতে অত্যধিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া। চূড়ান্ত ক্ষমতা যেকোনো সময় চূড়ান্তভাবে ব্যক্তিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারে। ঠিক সেই সময়টাতেই চলে আসে হ্যাডম দেখানো। এ সমস্যাটির সহজ সমাধান করা যেতে পারে সরকারি প্রশাসনের যেকোনো পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে। অথচ আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে প্রায়োগিকভাবে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব হলো না। আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রায়ে দেওয়া ১২ দফা নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? আর এই অক্ষমতার কারণেই কিন্তু খোদ আদালতের জারিকারককেই মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা দেখিয়ে দিতে পারেন যেকোনো ইউএনও!
এই দেখিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টিতে অপরাধীকে ‘উচিত শিক্ষা’ না দেওয়ার ব্যাপারটিও দায়ী। আপনি যদি চিরায়ত সত্যের মতো জেনেই থাকেন যে হাজারো অপরাধেও আপনার বেতনটি বন্ধ হবে না, আপনার চাকরিটি বহাল তবিয়তেই থাকবে—তবে কেন সতর্ক হবেন? একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, এ দেশে সরকারি চাকরির সোনার হরিণের রূপ গ্রহণের মূল কারণও এটি। চূড়ান্ত দায়মুক্তির সঙ্গে আজীবনের ভরণপোষণের নিশ্চয়তা—বেপরোয়া হতে আর কী লাগে?
তা ছাড়া, সরকারি কর্মচারী ‘স্যার’ ডাকা বা সাষ্টাঙ্গে সম্মান প্রদর্শন না করাসংক্রান্ত জটিলতা তো আছেই। স্যার বা ম্যাডাম না ডাকায় সরকারি কর্মচারীরা নাগরিকদের হেনস্তা করছেন বা দপ্তর থেকে বের করে দিচ্ছেন—এমন ভূরি ভূরি খবর গুগলে একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে। ওসবের প্রত্যক্ষ উদাহরণে বরং আর না যাই। মূল কথা হলো, আমরা সামন্ত শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার বহু বছর পরও সামন্তের ধারণা থেকে বের হতে পারিনি। কথায় কথায় ব্রিটিশ বা পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করার ইতিহাস গৌরবের সঙ্গে বয়ান করলেও, ঠিক তেমনি একটি সামন্ত শাসন আমরা নিজেদের ঘরের ভেতর বানিয়েছি। তাতে পিষ্ট করছি নিজেদের ঘরের আপনজনদেরই। আর কখনো রাজনীতিবিদ বা কখনো সরকারি কর্মচারীরা সেই সামন্ত প্রভুদের শূন্যস্থানটি অলংকৃত করে চলেছেন এবং হ্যাডম দেখাচ্ছেন। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট নাটকের সংলাপে তাঁরা শুধু ধমকের সুরে গালিগালাজের তুবড়ি ছুটিয়ে মাস্তানের ভঙ্গিতে বলে যাচ্ছেন, ‘আমরা হ্যাডমের মালিক, আমাদের স্যার ডাকবা!’অর্ণব সান্যাল
অথচ সেই হ্যাডম যাঁদের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে, এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী তাঁদের হাতেই তা থাকার কথা ছিল। তাঁদেরই ‘স্যার বা ম্যাডাম’ ডাকার কথা ছিল। কিন্তু বাংলা প্রবাদে আছে, ‘অদন্তের দাঁত হ’ল, কামড় খেতে খেতে প্রাণ গেল’। আক্ষরিক অর্থে, যে শিশুর সবেমাত্র দাঁত উঠেছে, তার মুখের কাছে আঙুল নিলেই তৎক্ষণাৎ কামড়ে দেবে। সমস্যা হলো, আমাদের শিশুরা বড় হয়েছে ঢের আগেই, কিন্তু কামড়ানোর ‘মজা’ কিছুদিন হলো পেয়েছে। এই ‘মজা’ থেকে তাদের বের করার কার্যকর প্যারেন্টিংয়ের চর্চা আমরা এখনো দেখছি না তেমন। তবে কি কামড় খাওয়াই আমাদের ভবিতব্য হবে?
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও পড়ুন:
একজন খেপলেন মনমতো সংবাদ প্রকাশিত না হওয়ায়। আরেকজন খেপলেন আদালতের সমন পেয়ে। তবে দুজনেরই যে জায়গায় মিল, সেটি হলো—হেনস্তা করায়। আর এই ‘ইচ্ছে হলো তাই হেনস্তা করলাম’—এই মনোভাবটি সৃষ্টি হলো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ‘হ্যাডম’ থেকে। কিন্তু এই হ্যাডমের মালিকানা আসলে কার?
হ্যাঁ, বলছি দুই ইউএনও’র কথা। ইংরেজির বাংলা করলে দাঁড়ায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সরকারি কর্মচারী বিধি মোতাবেক তাঁরা একেকটি উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এই পদের সরকারি কর্মচারীদের কাজের ফিরিস্তি অনেক, সরকারি ওয়েবসাইটে খুঁজতে গিয়ে বিশাল বিশাল তালিকা পাওয়া গেল। তাতে কী নেই! সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তদারকির ভারও আছে। এককথায়, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্বটি ইউএনওর কাঁধেই দেওয়া আছে। আর এত এত কাজ যখন ইউএনওদের করতে হচ্ছে, ফলে সরকারি সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশ্নও করতে থাকেন এক ব্যক্তিকেই। আর তা করতে গিয়েই একজন সাংবাদিককে শুনতে হলো মহামান্য হাইকোর্টের মন্তব্য অনুযায়ী, ‘মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা’।
আচ্ছা, ঘটনা দুটির অল্পবিস্তর একটু জেনে নেওয়া যাক। কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ার খবর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদ। এর জের ধরে তাঁকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেন ইউএনও কায়সার খসরু। সেই কথোপকথনের রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে আদালত বলেন, ওই ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা মাস্তানের ভাষার চেয়েও খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে কায়সার খসরুকে এরই মধ্যে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
অন্যদিকে এর আগে আদালতের জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বোয়ালমারীর ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়ার বিরুদ্ধে। গত ৭ জুন তাঁদের তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। পরে ২১ জুন ইউএনও এবং নাজির হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। তা গ্রহণ করে তাঁদের আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অতিসম্প্রতি।
এই দুটি ঘটনার বিশ্লেষণে এবার যাওয়া যাক। আগেই বলেছি, নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের সর্বময় কর্তা হয়ে থাকেন ইউএনও। দুটি ঘটনাতেই তাঁদের সেই ‘সর্বময়তার’ বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পারছি স্পষ্ট চোখেই। মজার বিষয় হলো, যে দুই পক্ষের বিরুদ্ধে তাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় ‘হ্যাডম’ (বা শুদ্ধ বাংলায় ক্ষমতা) দেখালেন, সেই দুটি পক্ষের কাজই হলো তাঁদের কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণের সীমারেখায় আটকে রাখা, যথেচ্ছাচার করতে না দেওয়া। বিচার বিভাগেরই কাজ যেকোনো মূল্যে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত রাখা, আর তাতেই তথ্য দিয়ে জ্বালানি জোগায় সংবাদমাধ্যম। অথচ এই দুটি পক্ষের বিরুদ্ধেই সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা খড়্গহস্ত হচ্ছেন। তবে কি একমেবাদ্বিতীয়ম্ হতেই এমন আচরণ?
সাংবাদিকতার ওপর রাগ-ক্ষোভ সংশ্লিষ্ট সবারই। অনিয়মের খবরে তো আরও বেশি। কারণ, তাতে কারও না কারও বাড়া ভাতে ছাই পড়ে। আর ওতেই যত গন্ডগোল। তবে প্রতিবাদের রাস্তা কিন্তু বন্ধ নেই। সংবাদের প্রতিবাদ করে পত্র পাঠানোই যায়, এমনকি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগও করা যায়। কিন্তু যখনই একজন ক্ষমতার (সরকারি বা বেসরকারি) চর্চাকারী ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বসেন, তখনই বোঝা যায়, ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের আচরণের যে ধরনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা সেখানে একটি বড় প্রভাবক। বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে এমন, ‘আমার এত ক্ষমতা, আমাকে নিয়ে এত কথা? খেয়ে ফেলব একদম!’ এ ঘরানার আচরণের অন্যতম কারণ, সরকারিভাবে এক ব্যক্তির হাতে অত্যধিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া। চূড়ান্ত ক্ষমতা যেকোনো সময় চূড়ান্তভাবে ব্যক্তিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারে। ঠিক সেই সময়টাতেই চলে আসে হ্যাডম দেখানো। এ সমস্যাটির সহজ সমাধান করা যেতে পারে সরকারি প্রশাসনের যেকোনো পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে। অথচ আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে প্রায়োগিকভাবে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব হলো না। আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রায়ে দেওয়া ১২ দফা নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? আর এই অক্ষমতার কারণেই কিন্তু খোদ আদালতের জারিকারককেই মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা দেখিয়ে দিতে পারেন যেকোনো ইউএনও!
এই দেখিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টিতে অপরাধীকে ‘উচিত শিক্ষা’ না দেওয়ার ব্যাপারটিও দায়ী। আপনি যদি চিরায়ত সত্যের মতো জেনেই থাকেন যে হাজারো অপরাধেও আপনার বেতনটি বন্ধ হবে না, আপনার চাকরিটি বহাল তবিয়তেই থাকবে—তবে কেন সতর্ক হবেন? একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, এ দেশে সরকারি চাকরির সোনার হরিণের রূপ গ্রহণের মূল কারণও এটি। চূড়ান্ত দায়মুক্তির সঙ্গে আজীবনের ভরণপোষণের নিশ্চয়তা—বেপরোয়া হতে আর কী লাগে?
তা ছাড়া, সরকারি কর্মচারী ‘স্যার’ ডাকা বা সাষ্টাঙ্গে সম্মান প্রদর্শন না করাসংক্রান্ত জটিলতা তো আছেই। স্যার বা ম্যাডাম না ডাকায় সরকারি কর্মচারীরা নাগরিকদের হেনস্তা করছেন বা দপ্তর থেকে বের করে দিচ্ছেন—এমন ভূরি ভূরি খবর গুগলে একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে। ওসবের প্রত্যক্ষ উদাহরণে বরং আর না যাই। মূল কথা হলো, আমরা সামন্ত শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার বহু বছর পরও সামন্তের ধারণা থেকে বের হতে পারিনি। কথায় কথায় ব্রিটিশ বা পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করার ইতিহাস গৌরবের সঙ্গে বয়ান করলেও, ঠিক তেমনি একটি সামন্ত শাসন আমরা নিজেদের ঘরের ভেতর বানিয়েছি। তাতে পিষ্ট করছি নিজেদের ঘরের আপনজনদেরই। আর কখনো রাজনীতিবিদ বা কখনো সরকারি কর্মচারীরা সেই সামন্ত প্রভুদের শূন্যস্থানটি অলংকৃত করে চলেছেন এবং হ্যাডম দেখাচ্ছেন। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট নাটকের সংলাপে তাঁরা শুধু ধমকের সুরে গালিগালাজের তুবড়ি ছুটিয়ে মাস্তানের ভঙ্গিতে বলে যাচ্ছেন, ‘আমরা হ্যাডমের মালিক, আমাদের স্যার ডাকবা!’অর্ণব সান্যাল
অথচ সেই হ্যাডম যাঁদের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে, এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী তাঁদের হাতেই তা থাকার কথা ছিল। তাঁদেরই ‘স্যার বা ম্যাডাম’ ডাকার কথা ছিল। কিন্তু বাংলা প্রবাদে আছে, ‘অদন্তের দাঁত হ’ল, কামড় খেতে খেতে প্রাণ গেল’। আক্ষরিক অর্থে, যে শিশুর সবেমাত্র দাঁত উঠেছে, তার মুখের কাছে আঙুল নিলেই তৎক্ষণাৎ কামড়ে দেবে। সমস্যা হলো, আমাদের শিশুরা বড় হয়েছে ঢের আগেই, কিন্তু কামড়ানোর ‘মজা’ কিছুদিন হলো পেয়েছে। এই ‘মজা’ থেকে তাদের বের করার কার্যকর প্যারেন্টিংয়ের চর্চা আমরা এখনো দেখছি না তেমন। তবে কি কামড় খাওয়াই আমাদের ভবিতব্য হবে?
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১৭ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১৭ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১৭ ঘণ্টা আগে