ফারুক মেহেদী
একজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে করোনাকালীন অর্থনীতি নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। জানতে চাইলাম, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা বা এ-সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরনটি কেমন? তিনি ত্যক্তবিরক্ত হয়ে বললেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কিংবা সংস্থার কাজের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। এখানে কাজ হয় অ্যাডহক ভিত্তিতে। একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেখুন, কারওয়ান বাজারে সকালবেলা দিনমজুরেরা কাজের জন্য জড়ো হন। তাঁরা ওই দিনের কাজের সন্ধানে থাকেন। তাঁরা জানেন না যে পরের দিন কী হবে বা কোনো কাজ পাবেন কি না? তাঁদের যেমন এক দিন পরের কাজ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই; তেমনি আমাদের সরকারেরও দৈনিকভিত্তিক চিন্তা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। এর ফলে সঠিক সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে নাগরিক জীবনে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’
তাঁর আলাপটি শুনছিলাম আর তখন আমার চোখে কিছু ছবি ভাসছিল। ছবিগুলো কমবেশি আমরা সবাই দেখেছি। ছবিগুলো নিদারুণ কষ্ট আর ভোগান্তির। এসব ছবি অসহায়, স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী নারী-পুরুষের জীবন বাজি রেখে রাজধানীতে ফেরার তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ছবিগুলো চোখের সামনে ভাসছে—গাড়ি নেই, লঞ্চ নেই, ট্রেন নেই, এমনকি অটোও নেই যে এসবে চড়ে তাঁরা ঢাকায় ফিরবেন। আমি ভাবছি আর দেখছি, তাঁরা মাইলের পর মাইল হেঁটে, কোনো একটি পিকআপ ভ্যান বা ট্রাক পেলে সেটিতে গাদাগাদি করে, জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে, কেউবা কী ভয়ংকর কশরত করে ফেরিতে উঠে ঢাকায় নিজের কর্মস্থলে ফিরছেন! আমার চোখে ভাসছে তাঁদের একেকজনের মলিন মুখ! কেউ কোলের ছোট্ট শিশুটিকেও নিয়ে কী মর্মান্তিক, অবর্ণনীয় ভোগান্তি সয়ে ফিরছেন! ভাবছি কী নিষ্ঠুর বাস্তবতা! দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য, নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্য সরকার বা মালিকেরা যেভাবে বলছেন, সেভাবেই তাঁরা জীবনকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেও কাজে ফিরতে চান!
দেশে লকডাউন চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবাই জানে যে এ সময়ের মধ্যে পোশাকসহ সব শিল্পকারখানা বন্ধ। ঈদের ছুটিতে সবাই এভাবে বাড়িতে গেছেন; বিশেষ করে কারখানার শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ। ঢাকায় কর্মহীন থাকা তাঁদের জন্য সত্যি কঠিন। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা গ্রামে অবস্থান করেছেন। বলা নেই কওয়া নেই এক দিন আগে আকস্মিক ঘোষণা এল, ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব কারখানা খোলা। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা!
এর আগে জানালেন ৫ আগস্ট পর্যন্ত কড়া লকডাউন। সবাই তা-ই জানে। অথচ কোনো প্রস্তুতি না দিয়ে, সময় না দিয়ে জানালেন সব রপ্তানিমুখী কারখানা চালু। তাহলে যাঁরা ঈদে বাড়ি গেলেন, অসহায়, স্বল্প আয়ের দিনমজুর কিংবা কারখানার কর্মী, যাঁদের রাজধানীতে বসে বসে খাওয়ার কোনো উপায় নেই, থাকার জায়গা নেই; যাঁদের অনেকে অনিশ্চিত ভেবে মেসও ছেড়ে গেছেন, তাঁরা এক দিনের নোটিশে কীভাবে ঢাকায় ফিরবেন? আর তাঁরা যে ফিরবেন, কীভাবে ফিরবেন? তাঁদের জন্য কী গণপরিবহনের অনুমোদন আছে? জানাননি তো! হ্যাঁ, জানালেন। কখন? এর পরের দিন বিকেলে। কী জানালেন? শুধু শ্রমিকদের পরিবহনের নৌপথ খোলা থাকবে ১ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত। তাহলে নৌপথের বাইরে যারা আছেন, তাঁরা কীভাবে আসবেন? পরিষ্কার করে জানালেন না। সমালোচনার পর তা-ও জানালেন। তবে এর মধ্যে আরও সময় চলে গেছে। রাতে জানালেন যে নৌপথের মতো গণপরিবহনও ১ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। বাহ্, বাঁচা গেল তাহলে!
এটা ঠিক যে করোনা আমাদের তাবৎ জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শুধু আমাদের কেন, সারা পৃথিবী আজ এই মরণব্যাধি মহামারির কারণে বিপন্নপ্রায় অবস্থায়। এর কবলে পড়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, সমাজ, ধর্ম—সবকিছুই অচল। সবার মতো বাংলাদেশও এর শিকার। এতে কারও হাত নেই, কিছু করারও নেই। সরকার দেড় বছর ধরে চেষ্টা করছে সবকিছুর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে। তবে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সবই করা হচ্ছে সমন্বয়হীনভাবে। এখানেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা। সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সবই করছে, কিন্তু সময়ে করছে না। আগে থেকে পরিকল্পনা, গবেষণা বা পর্যালোচনা না করেই সবকিছু করছে। ফলে তা সফল হচ্ছে না।
করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের চাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আন্তরিকতার অভাব নেই। আমি বিশ্বাস করি, সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব চান যে দেশের মানুষ ভালো থাকুক, খেয়েপরে বেঁচে থাকুক। সমস্যা হলো যাঁরা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করবেন, তাঁদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আমরা দেখেছি, হাসপাতালগুলোয় চরম অব্যবস্থাপনা। সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ নিয়েও উপযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম সময়মতো কেনা যায়নি। যা-ও কেনা হলো তাতেও নানান অনিয়ম-অপচয়ের অভিযোগ। অনেক হাসপাতালকে করোনা টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হলো অথচ তারা এ কাজে উপযুক্ত নয়। যে কারণে সাহেদ আর সাবরিনাদের জন্ম! এ রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে শুধু অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের কারণে।
সবশেষ আমরা দেখলাম, ঈদের আগে থেকে করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময় লকডাউন নিয়ে। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা লকডাউন অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিলেও আকস্মিক বলা হলো, আট দিনের জন্য লকডাউন শিথিল। আবার ঈদের এক দিন পর, মানে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন। পোশাকশিল্পসহ সব বন্ধ। তখনই সমালোচনা হচ্ছিল যে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত অগ্রাহ্য করে ঈদের জন্য কেন লকডাউন শিথিল করা হলো? এ সময়ে কি করোনা তার সংক্রমণ শিথিল করবে? তা তো নয়; বরং করোনা যে মারাত্মক রূপে ছড়িয়ে পড়েছে, এটা তো প্রতিদিনের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মিছিল দেখেই আমরা বুঝতে পারছি।
তখনই বলা হচ্ছিল যে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার জন্য লকডাউন শিথিল করা হোক। কারণ অর্থনীতি এমনিতেই অচল হয়ে আছে। অসংখ্য মানুষ কর্ম হারিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সেবা খাত প্রায় শেষ। বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। এর মধ্যেও রপ্তানিমুখী খাতই একমাত্র সম্ভাবনাময়। প্রচুর অর্ডার আসছে। আগের লোকসান কাটিয়ে খাতটি ঘুরে দাঁড়াবে। তখনো ঘোষণা এল, না, সব বন্ধ থাকবে। অর্থনীতি যে এত চাপ সইতে পারবে না, এ বিষয়টিও সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় আসেনি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, ঘোষণামতো লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানিমুখী সব শিল্প খুলে দিতে হলো।
তো, দিলেন তো দিলেন, চারদিকে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি করলেন। কেন এমনটি হলো? যদি এমনই করবেন, তাহলে আপনাদের কর্মপরিকল্পনা, পর্যালোচনা, গবেষণা কোথায়? কেন অ্যাডহক ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অসহায়, গরিব মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছেন? তাঁরাও মানুষ। তাঁদেরও অধিকার আছে একটু রয়েসয়ে স্বস্তির সঙ্গে জীবনযাপনের। যেকোনো সিদ্ধান্ত হোক পরিকল্পিত, সুষ্ঠু এবং বিবেচনাপ্রসূত। না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো নাগরিক জীবনে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে করোনাকালীন অর্থনীতি নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। জানতে চাইলাম, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা বা এ-সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরনটি কেমন? তিনি ত্যক্তবিরক্ত হয়ে বললেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কিংবা সংস্থার কাজের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। এখানে কাজ হয় অ্যাডহক ভিত্তিতে। একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেখুন, কারওয়ান বাজারে সকালবেলা দিনমজুরেরা কাজের জন্য জড়ো হন। তাঁরা ওই দিনের কাজের সন্ধানে থাকেন। তাঁরা জানেন না যে পরের দিন কী হবে বা কোনো কাজ পাবেন কি না? তাঁদের যেমন এক দিন পরের কাজ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই; তেমনি আমাদের সরকারেরও দৈনিকভিত্তিক চিন্তা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। এর ফলে সঠিক সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে নাগরিক জীবনে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’
তাঁর আলাপটি শুনছিলাম আর তখন আমার চোখে কিছু ছবি ভাসছিল। ছবিগুলো কমবেশি আমরা সবাই দেখেছি। ছবিগুলো নিদারুণ কষ্ট আর ভোগান্তির। এসব ছবি অসহায়, স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী নারী-পুরুষের জীবন বাজি রেখে রাজধানীতে ফেরার তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ছবিগুলো চোখের সামনে ভাসছে—গাড়ি নেই, লঞ্চ নেই, ট্রেন নেই, এমনকি অটোও নেই যে এসবে চড়ে তাঁরা ঢাকায় ফিরবেন। আমি ভাবছি আর দেখছি, তাঁরা মাইলের পর মাইল হেঁটে, কোনো একটি পিকআপ ভ্যান বা ট্রাক পেলে সেটিতে গাদাগাদি করে, জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে, কেউবা কী ভয়ংকর কশরত করে ফেরিতে উঠে ঢাকায় নিজের কর্মস্থলে ফিরছেন! আমার চোখে ভাসছে তাঁদের একেকজনের মলিন মুখ! কেউ কোলের ছোট্ট শিশুটিকেও নিয়ে কী মর্মান্তিক, অবর্ণনীয় ভোগান্তি সয়ে ফিরছেন! ভাবছি কী নিষ্ঠুর বাস্তবতা! দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য, নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্য সরকার বা মালিকেরা যেভাবে বলছেন, সেভাবেই তাঁরা জীবনকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেও কাজে ফিরতে চান!
দেশে লকডাউন চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবাই জানে যে এ সময়ের মধ্যে পোশাকসহ সব শিল্পকারখানা বন্ধ। ঈদের ছুটিতে সবাই এভাবে বাড়িতে গেছেন; বিশেষ করে কারখানার শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ। ঢাকায় কর্মহীন থাকা তাঁদের জন্য সত্যি কঠিন। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা গ্রামে অবস্থান করেছেন। বলা নেই কওয়া নেই এক দিন আগে আকস্মিক ঘোষণা এল, ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব কারখানা খোলা। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা!
এর আগে জানালেন ৫ আগস্ট পর্যন্ত কড়া লকডাউন। সবাই তা-ই জানে। অথচ কোনো প্রস্তুতি না দিয়ে, সময় না দিয়ে জানালেন সব রপ্তানিমুখী কারখানা চালু। তাহলে যাঁরা ঈদে বাড়ি গেলেন, অসহায়, স্বল্প আয়ের দিনমজুর কিংবা কারখানার কর্মী, যাঁদের রাজধানীতে বসে বসে খাওয়ার কোনো উপায় নেই, থাকার জায়গা নেই; যাঁদের অনেকে অনিশ্চিত ভেবে মেসও ছেড়ে গেছেন, তাঁরা এক দিনের নোটিশে কীভাবে ঢাকায় ফিরবেন? আর তাঁরা যে ফিরবেন, কীভাবে ফিরবেন? তাঁদের জন্য কী গণপরিবহনের অনুমোদন আছে? জানাননি তো! হ্যাঁ, জানালেন। কখন? এর পরের দিন বিকেলে। কী জানালেন? শুধু শ্রমিকদের পরিবহনের নৌপথ খোলা থাকবে ১ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত। তাহলে নৌপথের বাইরে যারা আছেন, তাঁরা কীভাবে আসবেন? পরিষ্কার করে জানালেন না। সমালোচনার পর তা-ও জানালেন। তবে এর মধ্যে আরও সময় চলে গেছে। রাতে জানালেন যে নৌপথের মতো গণপরিবহনও ১ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। বাহ্, বাঁচা গেল তাহলে!
এটা ঠিক যে করোনা আমাদের তাবৎ জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শুধু আমাদের কেন, সারা পৃথিবী আজ এই মরণব্যাধি মহামারির কারণে বিপন্নপ্রায় অবস্থায়। এর কবলে পড়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, সমাজ, ধর্ম—সবকিছুই অচল। সবার মতো বাংলাদেশও এর শিকার। এতে কারও হাত নেই, কিছু করারও নেই। সরকার দেড় বছর ধরে চেষ্টা করছে সবকিছুর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে। তবে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সবই করা হচ্ছে সমন্বয়হীনভাবে। এখানেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা। সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সবই করছে, কিন্তু সময়ে করছে না। আগে থেকে পরিকল্পনা, গবেষণা বা পর্যালোচনা না করেই সবকিছু করছে। ফলে তা সফল হচ্ছে না।
করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের চাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আন্তরিকতার অভাব নেই। আমি বিশ্বাস করি, সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব চান যে দেশের মানুষ ভালো থাকুক, খেয়েপরে বেঁচে থাকুক। সমস্যা হলো যাঁরা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করবেন, তাঁদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আমরা দেখেছি, হাসপাতালগুলোয় চরম অব্যবস্থাপনা। সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ নিয়েও উপযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম সময়মতো কেনা যায়নি। যা-ও কেনা হলো তাতেও নানান অনিয়ম-অপচয়ের অভিযোগ। অনেক হাসপাতালকে করোনা টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হলো অথচ তারা এ কাজে উপযুক্ত নয়। যে কারণে সাহেদ আর সাবরিনাদের জন্ম! এ রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে শুধু অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের কারণে।
সবশেষ আমরা দেখলাম, ঈদের আগে থেকে করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময় লকডাউন নিয়ে। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা লকডাউন অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিলেও আকস্মিক বলা হলো, আট দিনের জন্য লকডাউন শিথিল। আবার ঈদের এক দিন পর, মানে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন। পোশাকশিল্পসহ সব বন্ধ। তখনই সমালোচনা হচ্ছিল যে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত অগ্রাহ্য করে ঈদের জন্য কেন লকডাউন শিথিল করা হলো? এ সময়ে কি করোনা তার সংক্রমণ শিথিল করবে? তা তো নয়; বরং করোনা যে মারাত্মক রূপে ছড়িয়ে পড়েছে, এটা তো প্রতিদিনের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মিছিল দেখেই আমরা বুঝতে পারছি।
তখনই বলা হচ্ছিল যে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার জন্য লকডাউন শিথিল করা হোক। কারণ অর্থনীতি এমনিতেই অচল হয়ে আছে। অসংখ্য মানুষ কর্ম হারিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সেবা খাত প্রায় শেষ। বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। এর মধ্যেও রপ্তানিমুখী খাতই একমাত্র সম্ভাবনাময়। প্রচুর অর্ডার আসছে। আগের লোকসান কাটিয়ে খাতটি ঘুরে দাঁড়াবে। তখনো ঘোষণা এল, না, সব বন্ধ থাকবে। অর্থনীতি যে এত চাপ সইতে পারবে না, এ বিষয়টিও সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় আসেনি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, ঘোষণামতো লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানিমুখী সব শিল্প খুলে দিতে হলো।
তো, দিলেন তো দিলেন, চারদিকে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি করলেন। কেন এমনটি হলো? যদি এমনই করবেন, তাহলে আপনাদের কর্মপরিকল্পনা, পর্যালোচনা, গবেষণা কোথায়? কেন অ্যাডহক ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অসহায়, গরিব মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছেন? তাঁরাও মানুষ। তাঁদেরও অধিকার আছে একটু রয়েসয়ে স্বস্তির সঙ্গে জীবনযাপনের। যেকোনো সিদ্ধান্ত হোক পরিকল্পিত, সুষ্ঠু এবং বিবেচনাপ্রসূত। না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো নাগরিক জীবনে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১ দিন আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১ দিন আগে