বিভুরঞ্জন সরকার
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুদিন আজ। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট তখনকার পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি সপরিবারে ঢাকা আসেন। কবির জন্য ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়। ১৯৪২ সাল থেকেই কবি অসুস্থ। তিনি পরের বছরগুলোতে কার্যত জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে ছিলেন। কাজী নজরুলে ইসলাম বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
‘মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ তাঁর একটি গানের লাইন। সে জন্য মৃত্যুর পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে তড়িঘড়ি করে সমাহিত করা হয়েছিল। এর পেছনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। দ্রোহ ও সাম্য চিন্তার কবিকে ‘ইসলামি কবি’ হিসেবে প্রমাণের একটি চেষ্টা পাকিস্তানি শাসকদের যেমন ছিল, তেমনি পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের শাসকদেরও ছিল। তাঁর কিছু লেখা উদ্ধৃত করে, তাঁর মাথায় টুপি পরা ছবি প্রচার করে এটা বোঝাতে চেষ্টা করা হয় যে, নজরুল খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন অথবা তাঁর সাহিত্যের মূল উপজীব্য বুঝি ছিল ইসলাম।
প্রকৃত অর্থে নজরুল মোটেও ধর্মীয় কবি ছিলেন না। এটা সত্য যে, তিনি হামদ, নাত, গজলসহ ইসলামি সংগীত রচনা করেছেন। তাঁর লেখায় আরবি-ফারসি শব্দও প্রচুর ব্যবহার করেছেন। আবার তিনি শ্যামা সংগীত, ভজন, কীর্তনও লিখেছেন। হিন্দুদের দেব-দেবী তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার একজন মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মচর্চায় তাঁর আগ্রহ দেখা যায়নি। তিনি বিয়ে করেছিলেন হিন্দু নারী প্রমীলা দেবীকে। সন্তানদের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী অনিরুদ্ধ ইসলাম ও কাজী সব্যসাচী ইসলাম।
ধর্মবিশ্বাস দিয়ে নয়, নজরুল মানুষকে দেখতেন মানুষ হিসেবে। তিনি লিখেছেন—‘নদীর পাশ দিয়ে চলতে যখন দেখি একটি লোক ডুবে মরছে, মনের চিরন্তন মানুষটি তখন এ প্রশ্ন ভাবার অবসর দেয় না যে, লোকটা হিন্দু না মুসলমান, একজন মানুষ ডুবছে এইটেই—সবচেয়ে বড়ো, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে—মন বলে আমি একজন মানুষকে বাঁচিয়েছি।’ তিনি লিখেছেন—‘হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/কান্ডারি বলো, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।’ যারা হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়িতে জাতের মান নির্ধারণ করেন, তাঁদের তিনি ‘বেকুব’ বলে তিরস্কার করেছেন।
ধর্মাচরণ নিয়ে তাঁকে বিদ্রূপ-গঞ্জনা কম সহ্য করতে হয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন—‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মেলানো যদি হাতাহাতির চেয়েও অশোভন হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে, আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে বেগ পেতে হবে না। কেননা একজনের হাতে আছে লাঠি, আর একজনের আস্তিনে আছে ছুরি। বর্তমানে সাহিত্য নিয়ে ধূলোবালি, এতো ধোঁয়া, এতো কোলাহল উঠছে যে ওর মাঝে সামান্য দীপবর্তিকা নিয়ে পথ খুঁজতে গেলে আমার বাতিও নিভবে, আমিও মরব।’
নজরুল বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। কিন্তু এর মধ্যে ৩৫ বছর ছিলেন জীবন্মৃত। তিনি তাঁর কবিতায় বলেছিলেন—‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না/সারাদিনমান কোলাহল করি কারো ধ্যান ভাঙিব না।/নিশ্চল-নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।’
১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে রকমই ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল, লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন মাত্র ২২ বছর। এই অল্প সময়ে তিনি কবিতা-গান-গল্প-নাটক-উপন্যাস প্রবন্ধ কত কিছুই না লিখেছেন। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নজরুলের জীবন ছিল একদিকে ছন্নছাড়া, অন্যদিকে ধূমকেতুর মতো। বেঁচে থাকার জন্য জীবনে তাঁকে কত কী না করতে হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে তিনি প্রথম সাড়া ফেলেন। এই কবিতায় তিনি যেমন ‘ভৃগু ভগবান বুকে পদচিহ্ন এঁকে’ দিতে চেয়েছেন, তেমনি ‘খোদার আসন আরশ ছেদিয়া ওঠা’র কথাও বলেছেন। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে যেমন খ্যাতি পেয়েছেন, তেমনি প্রেমের কবি, সাম্যের কবি, মানবতার কবি হিসেবেও তাঁকেই গণ্য করা হয়। দ্রোহ আর প্রেম তাঁর কাছে অভিন্ন ছিল। তিনি বলেছেন—‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হতে রণতূর্য।’
তাঁকে সাম্য ও মানবতার কবি বলা হয়। কারণ, তাঁর কলম থেকেই বেরিয়েছে—‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান।’ অন্যায়, অসাম্যের বিরুদ্ধে, অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল ক্ষুরধার।
নজরুল লিখেছেন—‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি/সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’ তাঁর কলম থেকেই বেরিয়েছে—‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ/এক সে আকাশ মায়ের কোলে/যেন রবি শশী দোলে/এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।’
আবার সমাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধেও নজরুল ছিলেন সমান সোচ্চার। লিখেছেন—‘দেখিনু সেদিন রেলে/কুলি বলে এক বাবুসাব তারে টেনে দিল নিচে ফেলে/চোখ ফেটে এল জল/এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?’
নজরুলের সময়ে তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ কিছু কম হয়নি। তাঁকে তুচ্ছ করার জন্য ‘বালক প্রতিভা’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর পরিণতি আসেনি। কিন্তু যাঁরা এসব করেছেন, তাঁরা হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অতলে; নজরুল আছেন উজ্জ্বল দেদীপ্যমান। নজরুল বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমর্থন ও অকাতর স্নেহ পেয়েছেন। ১৯৪১ সালে এক সাহিত্য সভায় তিনি বলেছিলেন—‘যদি আর বাঁশি না বাজে—আমি কবি বলে বলছি না; আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি—আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি। আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’
সত্যদ্রষ্টা কবিকে তাঁর মৃত্যুর দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুদিন আজ। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট তখনকার পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি সপরিবারে ঢাকা আসেন। কবির জন্য ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়। ১৯৪২ সাল থেকেই কবি অসুস্থ। তিনি পরের বছরগুলোতে কার্যত জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে ছিলেন। কাজী নজরুলে ইসলাম বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
‘মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ তাঁর একটি গানের লাইন। সে জন্য মৃত্যুর পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে তড়িঘড়ি করে সমাহিত করা হয়েছিল। এর পেছনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। দ্রোহ ও সাম্য চিন্তার কবিকে ‘ইসলামি কবি’ হিসেবে প্রমাণের একটি চেষ্টা পাকিস্তানি শাসকদের যেমন ছিল, তেমনি পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের শাসকদেরও ছিল। তাঁর কিছু লেখা উদ্ধৃত করে, তাঁর মাথায় টুপি পরা ছবি প্রচার করে এটা বোঝাতে চেষ্টা করা হয় যে, নজরুল খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন অথবা তাঁর সাহিত্যের মূল উপজীব্য বুঝি ছিল ইসলাম।
প্রকৃত অর্থে নজরুল মোটেও ধর্মীয় কবি ছিলেন না। এটা সত্য যে, তিনি হামদ, নাত, গজলসহ ইসলামি সংগীত রচনা করেছেন। তাঁর লেখায় আরবি-ফারসি শব্দও প্রচুর ব্যবহার করেছেন। আবার তিনি শ্যামা সংগীত, ভজন, কীর্তনও লিখেছেন। হিন্দুদের দেব-দেবী তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার একজন মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মচর্চায় তাঁর আগ্রহ দেখা যায়নি। তিনি বিয়ে করেছিলেন হিন্দু নারী প্রমীলা দেবীকে। সন্তানদের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী অনিরুদ্ধ ইসলাম ও কাজী সব্যসাচী ইসলাম।
ধর্মবিশ্বাস দিয়ে নয়, নজরুল মানুষকে দেখতেন মানুষ হিসেবে। তিনি লিখেছেন—‘নদীর পাশ দিয়ে চলতে যখন দেখি একটি লোক ডুবে মরছে, মনের চিরন্তন মানুষটি তখন এ প্রশ্ন ভাবার অবসর দেয় না যে, লোকটা হিন্দু না মুসলমান, একজন মানুষ ডুবছে এইটেই—সবচেয়ে বড়ো, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে—মন বলে আমি একজন মানুষকে বাঁচিয়েছি।’ তিনি লিখেছেন—‘হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/কান্ডারি বলো, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।’ যারা হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়িতে জাতের মান নির্ধারণ করেন, তাঁদের তিনি ‘বেকুব’ বলে তিরস্কার করেছেন।
ধর্মাচরণ নিয়ে তাঁকে বিদ্রূপ-গঞ্জনা কম সহ্য করতে হয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন—‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মেলানো যদি হাতাহাতির চেয়েও অশোভন হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে, আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে বেগ পেতে হবে না। কেননা একজনের হাতে আছে লাঠি, আর একজনের আস্তিনে আছে ছুরি। বর্তমানে সাহিত্য নিয়ে ধূলোবালি, এতো ধোঁয়া, এতো কোলাহল উঠছে যে ওর মাঝে সামান্য দীপবর্তিকা নিয়ে পথ খুঁজতে গেলে আমার বাতিও নিভবে, আমিও মরব।’
নজরুল বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। কিন্তু এর মধ্যে ৩৫ বছর ছিলেন জীবন্মৃত। তিনি তাঁর কবিতায় বলেছিলেন—‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না/সারাদিনমান কোলাহল করি কারো ধ্যান ভাঙিব না।/নিশ্চল-নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।’
১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে রকমই ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল, লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন মাত্র ২২ বছর। এই অল্প সময়ে তিনি কবিতা-গান-গল্প-নাটক-উপন্যাস প্রবন্ধ কত কিছুই না লিখেছেন। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নজরুলের জীবন ছিল একদিকে ছন্নছাড়া, অন্যদিকে ধূমকেতুর মতো। বেঁচে থাকার জন্য জীবনে তাঁকে কত কী না করতে হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে তিনি প্রথম সাড়া ফেলেন। এই কবিতায় তিনি যেমন ‘ভৃগু ভগবান বুকে পদচিহ্ন এঁকে’ দিতে চেয়েছেন, তেমনি ‘খোদার আসন আরশ ছেদিয়া ওঠা’র কথাও বলেছেন। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে যেমন খ্যাতি পেয়েছেন, তেমনি প্রেমের কবি, সাম্যের কবি, মানবতার কবি হিসেবেও তাঁকেই গণ্য করা হয়। দ্রোহ আর প্রেম তাঁর কাছে অভিন্ন ছিল। তিনি বলেছেন—‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হতে রণতূর্য।’
তাঁকে সাম্য ও মানবতার কবি বলা হয়। কারণ, তাঁর কলম থেকেই বেরিয়েছে—‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান।’ অন্যায়, অসাম্যের বিরুদ্ধে, অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল ক্ষুরধার।
নজরুল লিখেছেন—‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি/সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’ তাঁর কলম থেকেই বেরিয়েছে—‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ/এক সে আকাশ মায়ের কোলে/যেন রবি শশী দোলে/এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।’
আবার সমাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধেও নজরুল ছিলেন সমান সোচ্চার। লিখেছেন—‘দেখিনু সেদিন রেলে/কুলি বলে এক বাবুসাব তারে টেনে দিল নিচে ফেলে/চোখ ফেটে এল জল/এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?’
নজরুলের সময়ে তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ কিছু কম হয়নি। তাঁকে তুচ্ছ করার জন্য ‘বালক প্রতিভা’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর পরিণতি আসেনি। কিন্তু যাঁরা এসব করেছেন, তাঁরা হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অতলে; নজরুল আছেন উজ্জ্বল দেদীপ্যমান। নজরুল বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমর্থন ও অকাতর স্নেহ পেয়েছেন। ১৯৪১ সালে এক সাহিত্য সভায় তিনি বলেছিলেন—‘যদি আর বাঁশি না বাজে—আমি কবি বলে বলছি না; আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি—আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি। আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’
সত্যদ্রষ্টা কবিকে তাঁর মৃত্যুর দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১২ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১২ ঘণ্টা আগে