আন্তোনিও জিউস্তৎজি
শনিবার তালেবান সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আপাতত কাবুল শহরে ঢুকবে না। পশ্চিমা কূটনীতিক আর সৈন্যদের সরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে তারা। কিন্তু রোববার আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই দেশ ছাড়েন। এই ঘটনা আফগানিস্তানের পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে তোলে। যে শূন্যস্থান তৈরি হয়, সেটা তৎক্ষণাৎ পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় তালেবান। তালেবান এখন আশা করছে, আগামী দিনগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করার। আর সেটা হতে হবে কাবুলের রাজনৈতিক নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে। যদিও তালেবান খুব সহজেই আবার আফগানিস্তানের ‘আমিরাত’ খেতাবধারী হতে পারবে, তবু ধারণা করা হচ্ছে, তাদের সরকারে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
তালেবান আমেরিকার সঙ্গে ২০১৮-১৯ সালে একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। তখন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তাদের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে ক্ষমতা ভাগ হলে সব পদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাদের হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কাবুলে গনি প্রশাসন সামরিক লড়াই বেছে নিয়েছিল এই আশায় যে, তালেবানের কাছে তাদের নিজস্ব শক্তিমত্তা প্রমাণ করবে।
২০২০ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে লড়াইয়ের প্রথম পর্যায় বেশি ভালো যায়নি। জো বাইডেন এপ্রিলে তাঁর সিদ্ধান্ত জানানোর পর কাবুলের প্রভাব একেবারেই কমে গেল। এপ্রিলের শেষের দিকে তালেবান ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে তারা শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষমতা চায়। আবার, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনার কাছে গনি মাথা নত করেননি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখবেন, যেন তালেবানকে আটকে রাখা যায় এবং তাদের সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য করা যায়।
এখন আমরা সবাই জানি যে, এই পরিকল্পনা একেবারেই কাজ করেনি। এপ্রিল মাসেও গনি সরকারের সামরিক শক্তির ওপর যে ভরসা ছিল, তা আর পরীক্ষিত ছিল না। নতুন সরকার গঠনের জন্য তালেবানের এখন কারও সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই, কারণ প্রতিপক্ষ এখন কোনো ক্ষমতাই ধারণ করে না। এখন তালেবানই নিজের শর্তে চলবে।
এটা পরাজয়ের মূল্য। রণক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা পরীক্ষা করা ছিল গনির বাজে সিদ্ধান্ত। আফগান সেনারা ইতিমধ্যে ২০২০ সালের শেষ দিকে এবং ২০২১ সালের শুরুর দিকে প্রধান সড়কগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাদের লড়াই করার চেষ্টায় ছিল, এই সড়কগুলো দিয়েই মে মাসের প্রথম দিকে সময়ে সময়ে তালেবানরা অগ্রসর হয়ে একের পর এক শহর দখল করা শুরু করেছিল। এটি একটি দুর্যোগের পূর্বাভাস ছিল। এমনকি এর প্রকৃত গতিও সবাইকে অবাক করেছিল। বাইডেন প্রশাসন বারবার চেষ্টা করেছে গনির ওপর চাপ দিতে, যেন তিনি অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা মেনে নেন। এতে বাইডেন প্রশাসন তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল, এমনকি গনিকে তহবিলের আংশিক স্থগিতাদেশের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো না। এটা হতে পারে আফগানিস্তানে বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ভুল।
তালেবান সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে তারা ১৯৬৪ সালের সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করবে। সাধারণ চোখে এটিকে ইতিবাচক ইশারা মনে হয়। কেননা, ১৯৬৪ সালের সংবিধানকে অতীতে আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের দশকের সূচনা হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছিল। যাই হোক, এটিতে কোনো রাজনৈতিক দলের উল্লেখ ছিল না এবং এটি ছিল একটি রাজতন্ত্রবাদী সংবিধান। আমাদের দেখতে হবে তালেবান নতুন কী যোগ করবে এতে।
যাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে গত কয়েক মাসে চুক্তি করেছে, তাদের নিয়েই তালেবান এগিয়ে যেতে চাইছে। নেতাদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাউদ্দিন রব্বানী, সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং সাবেক ডেপুটি প্রেসিডেন্ট করিম খলিলি রয়েছেন। কিছু ইসলামিক দল ও গ্রুপ যেমন, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার পরিচালিত হিজব-ই ইসলামিও তালেবানের সঙ্গে চুক্তি
করেছে। তারা ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়।
তালেবান মধ্যম সারির টেকনোক্র্যাট এবং আমলাদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে। মধ্যস্তরের টেকনোক্র্যাট ও আমলাদের প্রতি তালেবান অনুরোধ করেছে, তারা যেন দেশেই থাকে এবং সরকারি কাজে অংশ নেয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি চালনা শিখতে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও তারা সহায়তা নিচ্ছে।
তালেবান জোটের সম্ভাব্য শরিকরা নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিল না, বরং প্রায়ই তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রগতিশীল আইনের সঙ্গে খুব বেশি বিরোধ ছাড়াই সহাবস্থান করেছে। এই আইনগুলো খুব সীমিত উপায়ে এবং মূলত শহরকেন্দ্রগুলোতে বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা নিয়ে সংশয় আছে যে, বিদ্যমান আইন বাতিল করা হবে কিন্তু এটা পরিষ্কার না যে তালেবান ঘড়ির কাঁটা কতটা পেছনে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তালেবান তাদের নতুন দখল করা এলাকায় সেসব নিয়মই চালু করেছে, যা ২০০৩ সাল থেকে ২০০টি গ্রামে চালু করেছিল। সেগুলো হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষা শুধু প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত সীমিত, নারীরা শুধু শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোতে নিযুক্ত থাকবে, নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারবে না, নারীদের একা ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ, বোরকা পরা বাধ্যতামূলক, টেলিভিশন দেখা যাবে না, গানবাজনা করা যাবে না, মসজিদে যাওয়া বাধ্যতামূলক ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রাথমিকভাবে তালেবান এটা থেকে যদি সরে যায়, তবে তা হবে খুব সীমিত আকারে। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টিও তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। তালেবানের ইসলামি এবং সুফি মিত্ররা কিছুটা মধ্যপন্থী ব্যবস্থা নিতে যেমন, পাইকারিভাবে বোরকা ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা সরে আসতে পরামর্শ দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে বিচক্ষণ হতে হবে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে অনেক কাজ করতে হবে তাদের। পাকিস্তান, ইরান, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং চীন হচ্ছে সেই দেশগুলো। এদের কোনো কোনো দেশের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক আছে, কিন্তু এরা তালেবানকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। প্রতিটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু স্বার্থ, তারা চায় তালেবান সেগুলোর প্রতি সম্মান জানাক। তালেবান সরকার অবশ্যই চাইবে দেশের অর্থনীতি যেন সচল হয় এবং দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে স্থবির হয়ে পড়া সেবামূলক কাজগুলো যেন দ্রুত আবার শুরু হয়।
আফগানিস্তানের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন নির্ভর করবে নতুন জোটের স্থিতিশীলতার ওপর। আঞ্চলিক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষাকারী যে ইসলামি দলগুলো রয়েছে, তারা কি রক্ষণশীল তালেবানের সঙ্গে সফল একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে? সেটা গড়ে তুলতে হলে তালেবানকে প্রযুক্তিগত আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এবং আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। তালেবান ইতিমধ্যেই এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা ইরানের অভিভাবক পরিষদের মতো একটি পরিষদ গড়ে তুলবে, যারা পরীক্ষা করে দেখবে দেশের আইনগুলো ধর্মীয় আইনের সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়। অন্যদিকে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় পরিচালিত হবে উচ্চশিক্ষিত ধর্মীয় ব্যক্তিদের দিয়ে।
যেহেতু অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশ এখন আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা চায়, তাই নতুন জোট সরকারের কোনো ফাটল ধরানোর কাজ বাইরের দেশগুলো করবে বলে মনে হয় না। একই রকমভাবে ২০২১ সালের পরাজিত শক্তি তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এমন কাউকে খুঁজতে থাকবে, যারা যেকোনো প্রতিরোধ যুদ্ধে তাদের সমর্থন জোগাবে। আপাতত এই নতুন জোট সরকারে প্রতিবেশীদের মূল মিত্রদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এটি আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি নতুন পর্যায়ের সূচনা।
(দ্য গার্ডিয়ান থেকে বাংলায় অনূদিত)
লেখক: জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী, রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট, খণ্ডকালীন অধ্যাপক, কিংস কলেজ, লন্ডন
শনিবার তালেবান সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আপাতত কাবুল শহরে ঢুকবে না। পশ্চিমা কূটনীতিক আর সৈন্যদের সরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে তারা। কিন্তু রোববার আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই দেশ ছাড়েন। এই ঘটনা আফগানিস্তানের পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে তোলে। যে শূন্যস্থান তৈরি হয়, সেটা তৎক্ষণাৎ পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় তালেবান। তালেবান এখন আশা করছে, আগামী দিনগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করার। আর সেটা হতে হবে কাবুলের রাজনৈতিক নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে। যদিও তালেবান খুব সহজেই আবার আফগানিস্তানের ‘আমিরাত’ খেতাবধারী হতে পারবে, তবু ধারণা করা হচ্ছে, তাদের সরকারে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
তালেবান আমেরিকার সঙ্গে ২০১৮-১৯ সালে একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। তখন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তাদের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে ক্ষমতা ভাগ হলে সব পদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাদের হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কাবুলে গনি প্রশাসন সামরিক লড়াই বেছে নিয়েছিল এই আশায় যে, তালেবানের কাছে তাদের নিজস্ব শক্তিমত্তা প্রমাণ করবে।
২০২০ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে লড়াইয়ের প্রথম পর্যায় বেশি ভালো যায়নি। জো বাইডেন এপ্রিলে তাঁর সিদ্ধান্ত জানানোর পর কাবুলের প্রভাব একেবারেই কমে গেল। এপ্রিলের শেষের দিকে তালেবান ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে তারা শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষমতা চায়। আবার, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনার কাছে গনি মাথা নত করেননি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখবেন, যেন তালেবানকে আটকে রাখা যায় এবং তাদের সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য করা যায়।
এখন আমরা সবাই জানি যে, এই পরিকল্পনা একেবারেই কাজ করেনি। এপ্রিল মাসেও গনি সরকারের সামরিক শক্তির ওপর যে ভরসা ছিল, তা আর পরীক্ষিত ছিল না। নতুন সরকার গঠনের জন্য তালেবানের এখন কারও সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই, কারণ প্রতিপক্ষ এখন কোনো ক্ষমতাই ধারণ করে না। এখন তালেবানই নিজের শর্তে চলবে।
এটা পরাজয়ের মূল্য। রণক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা পরীক্ষা করা ছিল গনির বাজে সিদ্ধান্ত। আফগান সেনারা ইতিমধ্যে ২০২০ সালের শেষ দিকে এবং ২০২১ সালের শুরুর দিকে প্রধান সড়কগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাদের লড়াই করার চেষ্টায় ছিল, এই সড়কগুলো দিয়েই মে মাসের প্রথম দিকে সময়ে সময়ে তালেবানরা অগ্রসর হয়ে একের পর এক শহর দখল করা শুরু করেছিল। এটি একটি দুর্যোগের পূর্বাভাস ছিল। এমনকি এর প্রকৃত গতিও সবাইকে অবাক করেছিল। বাইডেন প্রশাসন বারবার চেষ্টা করেছে গনির ওপর চাপ দিতে, যেন তিনি অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা মেনে নেন। এতে বাইডেন প্রশাসন তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল, এমনকি গনিকে তহবিলের আংশিক স্থগিতাদেশের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো না। এটা হতে পারে আফগানিস্তানে বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ভুল।
তালেবান সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে তারা ১৯৬৪ সালের সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করবে। সাধারণ চোখে এটিকে ইতিবাচক ইশারা মনে হয়। কেননা, ১৯৬৪ সালের সংবিধানকে অতীতে আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের দশকের সূচনা হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছিল। যাই হোক, এটিতে কোনো রাজনৈতিক দলের উল্লেখ ছিল না এবং এটি ছিল একটি রাজতন্ত্রবাদী সংবিধান। আমাদের দেখতে হবে তালেবান নতুন কী যোগ করবে এতে।
যাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে গত কয়েক মাসে চুক্তি করেছে, তাদের নিয়েই তালেবান এগিয়ে যেতে চাইছে। নেতাদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাউদ্দিন রব্বানী, সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং সাবেক ডেপুটি প্রেসিডেন্ট করিম খলিলি রয়েছেন। কিছু ইসলামিক দল ও গ্রুপ যেমন, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার পরিচালিত হিজব-ই ইসলামিও তালেবানের সঙ্গে চুক্তি
করেছে। তারা ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়।
তালেবান মধ্যম সারির টেকনোক্র্যাট এবং আমলাদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে। মধ্যস্তরের টেকনোক্র্যাট ও আমলাদের প্রতি তালেবান অনুরোধ করেছে, তারা যেন দেশেই থাকে এবং সরকারি কাজে অংশ নেয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি চালনা শিখতে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও তারা সহায়তা নিচ্ছে।
তালেবান জোটের সম্ভাব্য শরিকরা নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিল না, বরং প্রায়ই তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রগতিশীল আইনের সঙ্গে খুব বেশি বিরোধ ছাড়াই সহাবস্থান করেছে। এই আইনগুলো খুব সীমিত উপায়ে এবং মূলত শহরকেন্দ্রগুলোতে বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা নিয়ে সংশয় আছে যে, বিদ্যমান আইন বাতিল করা হবে কিন্তু এটা পরিষ্কার না যে তালেবান ঘড়ির কাঁটা কতটা পেছনে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তালেবান তাদের নতুন দখল করা এলাকায় সেসব নিয়মই চালু করেছে, যা ২০০৩ সাল থেকে ২০০টি গ্রামে চালু করেছিল। সেগুলো হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষা শুধু প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত সীমিত, নারীরা শুধু শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোতে নিযুক্ত থাকবে, নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারবে না, নারীদের একা ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ, বোরকা পরা বাধ্যতামূলক, টেলিভিশন দেখা যাবে না, গানবাজনা করা যাবে না, মসজিদে যাওয়া বাধ্যতামূলক ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রাথমিকভাবে তালেবান এটা থেকে যদি সরে যায়, তবে তা হবে খুব সীমিত আকারে। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টিও তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। তালেবানের ইসলামি এবং সুফি মিত্ররা কিছুটা মধ্যপন্থী ব্যবস্থা নিতে যেমন, পাইকারিভাবে বোরকা ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা সরে আসতে পরামর্শ দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে বিচক্ষণ হতে হবে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে অনেক কাজ করতে হবে তাদের। পাকিস্তান, ইরান, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং চীন হচ্ছে সেই দেশগুলো। এদের কোনো কোনো দেশের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক আছে, কিন্তু এরা তালেবানকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। প্রতিটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু স্বার্থ, তারা চায় তালেবান সেগুলোর প্রতি সম্মান জানাক। তালেবান সরকার অবশ্যই চাইবে দেশের অর্থনীতি যেন সচল হয় এবং দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে স্থবির হয়ে পড়া সেবামূলক কাজগুলো যেন দ্রুত আবার শুরু হয়।
আফগানিস্তানের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন নির্ভর করবে নতুন জোটের স্থিতিশীলতার ওপর। আঞ্চলিক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষাকারী যে ইসলামি দলগুলো রয়েছে, তারা কি রক্ষণশীল তালেবানের সঙ্গে সফল একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে? সেটা গড়ে তুলতে হলে তালেবানকে প্রযুক্তিগত আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এবং আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। তালেবান ইতিমধ্যেই এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা ইরানের অভিভাবক পরিষদের মতো একটি পরিষদ গড়ে তুলবে, যারা পরীক্ষা করে দেখবে দেশের আইনগুলো ধর্মীয় আইনের সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়। অন্যদিকে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় পরিচালিত হবে উচ্চশিক্ষিত ধর্মীয় ব্যক্তিদের দিয়ে।
যেহেতু অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশ এখন আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা চায়, তাই নতুন জোট সরকারের কোনো ফাটল ধরানোর কাজ বাইরের দেশগুলো করবে বলে মনে হয় না। একই রকমভাবে ২০২১ সালের পরাজিত শক্তি তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এমন কাউকে খুঁজতে থাকবে, যারা যেকোনো প্রতিরোধ যুদ্ধে তাদের সমর্থন জোগাবে। আপাতত এই নতুন জোট সরকারে প্রতিবেশীদের মূল মিত্রদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এটি আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি নতুন পর্যায়ের সূচনা।
(দ্য গার্ডিয়ান থেকে বাংলায় অনূদিত)
লেখক: জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী, রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট, খণ্ডকালীন অধ্যাপক, কিংস কলেজ, লন্ডন
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১৫ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১৬ ঘণ্টা আগে