লাভা মাহমুদা
দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে নাড়তে বাঙালির অন্দরে ঢুকেই পড়ল বৈশাখ। প্রাণের অনুরণন জাগানিয়া উচ্ছ্বাসের বৈশাখ। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ু বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই দেশে বৈশাখ আসে ঠিক মোহনীয় আমেজে নয়, অনেকটা রুক্ষ উত্তাপে। মাঝেমধ্যে ঝড়বৃষ্টি, কখনো সখনো বা কালবৈশাখীর প্রলয়নৃত্যে মানুষকে জানান দেয় তার আগমনী বার্তা। নতুন ফুল-ফলের ঘ্রাণে ভরে ওঠে বাতাস। জীর্ণ পাতা ঝরে জায়গা করে নেয় নতুনেরা। এই বৈশাখের প্রথম দিনটিই ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন–নববর্ষ, যা বাঙালির সার্বজনীন আবেগের ঝরনাধারায় উৎসারিত একমাত্র চিরায়ত লোকজ উৎসব। এ বর্ষবরণ আমার কাছে যত না উদ্যাপনের, তার চেয়েও বেশি উপলব্ধির; হৃদয় মন ও মননে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার আরেক নাম। লাল শাড়ি রেশমি চুড়ি পরে রমনার বটমূলে বা মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়াই শুধু নয়, আমার নাভিমূলে টান দিয়ে যাওয়া অনুভূতিরও অধিক।
ষোল শতকের মাঝামাঝি মোঘল সম্রাট আকবর অনেকটা দায়ে পড়ে বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন করেন। এই বাংলা ছিল মোঘলদের গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী প্রদেশ বা সুবাহ। বিভিন্ন দৈবদুর্বিপাকে ফসলহানি ঘটলে দিল্লি পর্যন্ত খাজনা পৌঁছাত না। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ফসল উঠলে প্রজাদের কাছ থেকে জমিদারদের খাজনা আদায়ের জন্য বৈশাখের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ ঘোষণা দেওয়া হয়। ফসলের সাথে সম্পর্কিত বলে ‘বঙ্গাব্দ’ শব্দ ব্যবহারের আগে বাংলা সনকে ‘ফসলি সন’ বলা হতো। মোঘলরা দায়ে পড়ে নববর্ষের প্রচলন করলেও সময়ের বাঁক পেরিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনটিই আমাদের সার্বজনীন বৈষম্যহীন আনন্দ আয়োজনের সবচেয়ে বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
গত বছর নববর্ষের ঠিক আগে যে মহামারি ছোবল বসিয়েছিল, এবার সেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে, হয়েছে তীব্রতর। বিপর্যয় মানবের অস্তিত্ব, সভ্যতা ছিন্নভিন্ন। জীবনের জয়রথ থেমে গেছে। ভয়াবহ দুর্বিপাকে পড়েছে বিশ্ববাসী। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ কোটি ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যাও প্রায় ৩০ লাখ। সব সূচকই বাড়ছে লাফিয়ে । আমাদের দেশেও ভয়াবহ অবস্থা। শুধু দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মৃত্যুর মিছিল দেখছি, আর বিরহগাথা শুনছি। কত পরিবার তছনছ হয়ে গেল, গুনে শেষ করা যাবে না। আতঙ্ক, উদ্বেগ আর মৃত্যুভয়ে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। প্রত্যেকের ছিল একেকটা জীবন, সংসার, স্বপ্ন, সাধ।
কোভিড-১৯ সব স্বপ্নসাধ ছিন্নভিন্ন করে দিল। কে কবে ভেবেছিল, অমরত্ব লাভের প্রত্যাশায় নিরন্তর কাজ করে যাওয়া মানবসভ্যতার মৃত্যুর কাছে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ। এখন আমরা নৈকট্যকে ভয় পাই, দূরত্বই সহায়। আজ স্বপ্ন দেখার দিনে দেখছি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন, নতুন আলোয় দেখছি শুধুই অন্ধকার। তাই জীবনের আগে উৎসব নয়। এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের মতো নিষিদ্ধ হয়েছে বৈশাখী সব আয়োজনও।
প্লেগ, কলেরা, গুটিবসন্ত, স্প্যানিশ ফ্লুসহ অনেক মহামারি এসেছিল আগেও। বিজ্ঞানের জয়রথ তাদের থামিয়ে দিয়েছে। এবার ইতিহাসের স্বল্পতম সময়ে এসেছে ভ্যাকসিন। এবারও আশাবাদী হতে চাই, আশায় বাঁচতে চাই। জীবনের জয়ধ্বনিকে কেউ থামাতে পারবে না। এই মহামারির কবল থেকে রেহাই পাবে ধরিত্রী। করোনাভাইরাস নামক মৃত্যুদূত শুধুই একটি সাধারণ ভাইরাসের নাম হবে। পরাজয়ের গ্লানি যেমন আছে, জয়ের আনন্দও আছে। সে আনন্দধ্বনিতে আমি না থাকলেও আমার প্রজন্ম নিশ্চয়ই সামিল হবে। তখন মানুষে মানুষে দূরত্ব নয়, আরও মানবিক নৈকট্য আসবে। আর গাইতে চাই মনুষ্যত্বের জয়গান। সংকল্প করতে চাই অন্তত মানবিক মানুষ হওয়ার। অন্যায়, অশুভ আর অমঙ্গলের সাথে যেন কখনও না হয় মিতালি।
“উজ্জ্বল হোক জ্ঞানসূর্য-উদয়সমারোহ–
প্রাণ লভুক সকল ভুবন, নয়ন লভুক অন্ধ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য।”
অন্ধকার ভেদ করে আলো আসবেই। মানবসভ্যতার ধ্বংস নয়, বিকাশ অনিবার্য। করোনাভাইরাসের বিনাশে শুভ হোক নতুন বছর । মমত্ববোধ তৈরি হোক বিচ্ছিন্নতায়। সকলের মঙ্গল হোক। শুভ নববর্ষ ১৪২৮।
দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে নাড়তে বাঙালির অন্দরে ঢুকেই পড়ল বৈশাখ। প্রাণের অনুরণন জাগানিয়া উচ্ছ্বাসের বৈশাখ। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ু বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই দেশে বৈশাখ আসে ঠিক মোহনীয় আমেজে নয়, অনেকটা রুক্ষ উত্তাপে। মাঝেমধ্যে ঝড়বৃষ্টি, কখনো সখনো বা কালবৈশাখীর প্রলয়নৃত্যে মানুষকে জানান দেয় তার আগমনী বার্তা। নতুন ফুল-ফলের ঘ্রাণে ভরে ওঠে বাতাস। জীর্ণ পাতা ঝরে জায়গা করে নেয় নতুনেরা। এই বৈশাখের প্রথম দিনটিই ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন–নববর্ষ, যা বাঙালির সার্বজনীন আবেগের ঝরনাধারায় উৎসারিত একমাত্র চিরায়ত লোকজ উৎসব। এ বর্ষবরণ আমার কাছে যত না উদ্যাপনের, তার চেয়েও বেশি উপলব্ধির; হৃদয় মন ও মননে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার আরেক নাম। লাল শাড়ি রেশমি চুড়ি পরে রমনার বটমূলে বা মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়াই শুধু নয়, আমার নাভিমূলে টান দিয়ে যাওয়া অনুভূতিরও অধিক।
ষোল শতকের মাঝামাঝি মোঘল সম্রাট আকবর অনেকটা দায়ে পড়ে বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন করেন। এই বাংলা ছিল মোঘলদের গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী প্রদেশ বা সুবাহ। বিভিন্ন দৈবদুর্বিপাকে ফসলহানি ঘটলে দিল্লি পর্যন্ত খাজনা পৌঁছাত না। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ফসল উঠলে প্রজাদের কাছ থেকে জমিদারদের খাজনা আদায়ের জন্য বৈশাখের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ ঘোষণা দেওয়া হয়। ফসলের সাথে সম্পর্কিত বলে ‘বঙ্গাব্দ’ শব্দ ব্যবহারের আগে বাংলা সনকে ‘ফসলি সন’ বলা হতো। মোঘলরা দায়ে পড়ে নববর্ষের প্রচলন করলেও সময়ের বাঁক পেরিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনটিই আমাদের সার্বজনীন বৈষম্যহীন আনন্দ আয়োজনের সবচেয়ে বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
গত বছর নববর্ষের ঠিক আগে যে মহামারি ছোবল বসিয়েছিল, এবার সেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে, হয়েছে তীব্রতর। বিপর্যয় মানবের অস্তিত্ব, সভ্যতা ছিন্নভিন্ন। জীবনের জয়রথ থেমে গেছে। ভয়াবহ দুর্বিপাকে পড়েছে বিশ্ববাসী। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ কোটি ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যাও প্রায় ৩০ লাখ। সব সূচকই বাড়ছে লাফিয়ে । আমাদের দেশেও ভয়াবহ অবস্থা। শুধু দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মৃত্যুর মিছিল দেখছি, আর বিরহগাথা শুনছি। কত পরিবার তছনছ হয়ে গেল, গুনে শেষ করা যাবে না। আতঙ্ক, উদ্বেগ আর মৃত্যুভয়ে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। প্রত্যেকের ছিল একেকটা জীবন, সংসার, স্বপ্ন, সাধ।
কোভিড-১৯ সব স্বপ্নসাধ ছিন্নভিন্ন করে দিল। কে কবে ভেবেছিল, অমরত্ব লাভের প্রত্যাশায় নিরন্তর কাজ করে যাওয়া মানবসভ্যতার মৃত্যুর কাছে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ। এখন আমরা নৈকট্যকে ভয় পাই, দূরত্বই সহায়। আজ স্বপ্ন দেখার দিনে দেখছি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন, নতুন আলোয় দেখছি শুধুই অন্ধকার। তাই জীবনের আগে উৎসব নয়। এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের মতো নিষিদ্ধ হয়েছে বৈশাখী সব আয়োজনও।
প্লেগ, কলেরা, গুটিবসন্ত, স্প্যানিশ ফ্লুসহ অনেক মহামারি এসেছিল আগেও। বিজ্ঞানের জয়রথ তাদের থামিয়ে দিয়েছে। এবার ইতিহাসের স্বল্পতম সময়ে এসেছে ভ্যাকসিন। এবারও আশাবাদী হতে চাই, আশায় বাঁচতে চাই। জীবনের জয়ধ্বনিকে কেউ থামাতে পারবে না। এই মহামারির কবল থেকে রেহাই পাবে ধরিত্রী। করোনাভাইরাস নামক মৃত্যুদূত শুধুই একটি সাধারণ ভাইরাসের নাম হবে। পরাজয়ের গ্লানি যেমন আছে, জয়ের আনন্দও আছে। সে আনন্দধ্বনিতে আমি না থাকলেও আমার প্রজন্ম নিশ্চয়ই সামিল হবে। তখন মানুষে মানুষে দূরত্ব নয়, আরও মানবিক নৈকট্য আসবে। আর গাইতে চাই মনুষ্যত্বের জয়গান। সংকল্প করতে চাই অন্তত মানবিক মানুষ হওয়ার। অন্যায়, অশুভ আর অমঙ্গলের সাথে যেন কখনও না হয় মিতালি।
“উজ্জ্বল হোক জ্ঞানসূর্য-উদয়সমারোহ–
প্রাণ লভুক সকল ভুবন, নয়ন লভুক অন্ধ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য।”
অন্ধকার ভেদ করে আলো আসবেই। মানবসভ্যতার ধ্বংস নয়, বিকাশ অনিবার্য। করোনাভাইরাসের বিনাশে শুভ হোক নতুন বছর । মমত্ববোধ তৈরি হোক বিচ্ছিন্নতায়। সকলের মঙ্গল হোক। শুভ নববর্ষ ১৪২৮।
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
৬ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
৬ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৬ ঘণ্টা আগে