ড. মো. আইনুল ইসলাম
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। এদিন বাঙালির প্রিয় নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণীসহ পরিবারের প্রায় সবাইকে ঘাতকচক্র নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। ইতিহাস যাকে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে বিনির্মাণ করেছিল, কৃতঘ্ন ঘাতকেরা কলঙ্কিত সেই দিনটির রাতের অন্ধকারে শুধু তাঁকে সপরিবারে হত্যাই করেনি—তারা হত্যার চেষ্টা করেছিল বাঙালি ও বাংলাদেশকেও। কিন্তু নির্বোধ ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি—মহাকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ, যাঁরা মানবের মুক্তির জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন—যেমন যিশু, সক্রেটিস, জোয়ান অব আর্ক, লিংকন, গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং—এই নামগুলোর পাশে ১৫ আগস্ট তারা ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ নামের আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকেও যুক্ত করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা স্বাদ আমূল ধ্বংস করাই ছিল হত্যাকারীদের মূল লক্ষ্য। বাঙালির জীবনে শোকাবহ এই আগস্টে আরও একটি চেষ্টা হয়েছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। জাতির পিতার আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনাকেও গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ সেই চেষ্টায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী শহীদ ও ৩০০ লোক আহত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নাম ও নিশানা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার সেই চেষ্টা বাঙালি হিসেবে আমাদের আরও একবার চরমভাবে লজ্জিত করেছিল। বিস্মিত হতে হয়, হত্যাকারীরা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক সব জঙ্গি হামলার ঘটনাও এই আগস্ট মাসেই সংঘটিত করেছিল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি জঙ্গি সংগঠন দেশের ৬৩ জেলার ৩০০ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে দেশে আরও একবার কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৭৫৭ সালে, এরপর ১৯০ বছর ইংরেজদের দখলে ছিল ভারতবর্ষ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য এমনই ছিল—বাংলাদেশের মানুষকে আবারও দীর্ঘ সময় ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা। তাই তো তারা আগস্টের ওই কালরাতে হত্যা করেছিল—বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে। ঘাতকদের হাতে আরও কয়েকজন ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন। যদিও বলা হয়, নির্মম ও হৃদয়বিদারক ওই হত্যাকাণ্ড ছিল কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের সামরিক অভ্যুত্থান, আদতে তা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর গভীর চক্রান্তের অংশ। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে একটি পাকিস্তানপন্থী সরকার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমিক সরকারকে সমূলে উৎখাত করাই ছিল হত্যাকারীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এ কথা সবাই জানেন যে স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ রচনা করছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে যা মোটেও ভালো ঠেকছিল না। বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সাফল্য ও দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার গতি বুঝতে পেরেই স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্রনায়ককে নির্মমভাবে হত্যার উদাহরণ আরও অনেক আছে, কিন্তু অবোধ শিশু থেকে শুরু করে নবপরিণীতা বঁধু কিংবা অন্তঃসত্ত্বা তরুণীসহ পরিবারের সবাইকে এ রকম নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু কি তা-ই, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে সরকারেরই আদেশে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ নামে কালো আইন করে পৃথিবীর বুকে আরও একবার কলঙ্কিত ইতিহাস রচিত হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য জাতীয় নেতাকে একসঙ্গে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ভয়ংকর গ্রেনেড দিয়ে হামলার ঘটনা, মৌলবাদী জঙ্গিদের আগস্টে দেশজুড়ে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাসহ আরও অনেক ঘৃণ্য চেষ্টা—সবই একসূত্রে গাথা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার আরও অনেক চেষ্টা হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। প্রতিবারই তিনি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন। গ্রেনেডের উপর্যুপরি হামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে রক্ষা করতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষেরা মানব বর্ম তৈরি করে ২০ জন শহীদ হয়েছিলেন, এমন নজিরও পৃথিবীর ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায় না। দুঃখের বিষয়, এ রকম নৃশংস গ্রেনেড হামলাও হয়েছিল বাঙালির জন্য বেদনাময়, অথচ হত্যাকারীদের পছন্দের এই আগস্টেই এবং তা-ও ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ও ছত্রচ্ছায়ায়।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের হয়েছিল। তবে বিচার পেতে ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইনটি বাতিল করতে হয়েছিল। ১ মার্চ ১৯৯৭ সালে বিচারকার্য শুরু হয় আর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়; আরও কয়েক হত্যাকারী এখনো পলাতক। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলাটির বিচারকাজ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় ঘোষণায় জীবিত ৪৯ জন আসামির মধ্যে ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়। এ রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, সভ্যতার চরম উৎকর্ষের একবিংশ শতকেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার নজির স্থাপন করা যায়।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যের হত্যাকারীদের কয়েকজনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধু খুনের পরিকল্পনা প্রণয়নকারী, বাস্তবায়নকারী ও উপকারভোগীদের স্বরূপ উন্মোচন করা একান্ত প্রয়োজন। যেকোনো হত্যাকাণ্ড বা অন্যায় কর্মকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচার হলে তার পুনরাবৃত্তি নিরুৎসাহিত হয়, যা আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অত্যাবশকীয়। তাই ১৫ ও ২১ আগস্টের খুনিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার ও সাজা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। এদিন বাঙালির প্রিয় নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণীসহ পরিবারের প্রায় সবাইকে ঘাতকচক্র নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। ইতিহাস যাকে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে বিনির্মাণ করেছিল, কৃতঘ্ন ঘাতকেরা কলঙ্কিত সেই দিনটির রাতের অন্ধকারে শুধু তাঁকে সপরিবারে হত্যাই করেনি—তারা হত্যার চেষ্টা করেছিল বাঙালি ও বাংলাদেশকেও। কিন্তু নির্বোধ ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি—মহাকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ, যাঁরা মানবের মুক্তির জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন—যেমন যিশু, সক্রেটিস, জোয়ান অব আর্ক, লিংকন, গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং—এই নামগুলোর পাশে ১৫ আগস্ট তারা ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ নামের আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকেও যুক্ত করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা স্বাদ আমূল ধ্বংস করাই ছিল হত্যাকারীদের মূল লক্ষ্য। বাঙালির জীবনে শোকাবহ এই আগস্টে আরও একটি চেষ্টা হয়েছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। জাতির পিতার আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনাকেও গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ সেই চেষ্টায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী শহীদ ও ৩০০ লোক আহত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নাম ও নিশানা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার সেই চেষ্টা বাঙালি হিসেবে আমাদের আরও একবার চরমভাবে লজ্জিত করেছিল। বিস্মিত হতে হয়, হত্যাকারীরা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক সব জঙ্গি হামলার ঘটনাও এই আগস্ট মাসেই সংঘটিত করেছিল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি জঙ্গি সংগঠন দেশের ৬৩ জেলার ৩০০ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে দেশে আরও একবার কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৭৫৭ সালে, এরপর ১৯০ বছর ইংরেজদের দখলে ছিল ভারতবর্ষ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য এমনই ছিল—বাংলাদেশের মানুষকে আবারও দীর্ঘ সময় ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা। তাই তো তারা আগস্টের ওই কালরাতে হত্যা করেছিল—বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে। ঘাতকদের হাতে আরও কয়েকজন ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন। যদিও বলা হয়, নির্মম ও হৃদয়বিদারক ওই হত্যাকাণ্ড ছিল কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের সামরিক অভ্যুত্থান, আদতে তা ছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর গভীর চক্রান্তের অংশ। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে একটি পাকিস্তানপন্থী সরকার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমিক সরকারকে সমূলে উৎখাত করাই ছিল হত্যাকারীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এ কথা সবাই জানেন যে স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ রচনা করছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে যা মোটেও ভালো ঠেকছিল না। বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সাফল্য ও দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার গতি বুঝতে পেরেই স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্রনায়ককে নির্মমভাবে হত্যার উদাহরণ আরও অনেক আছে, কিন্তু অবোধ শিশু থেকে শুরু করে নবপরিণীতা বঁধু কিংবা অন্তঃসত্ত্বা তরুণীসহ পরিবারের সবাইকে এ রকম নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু কি তা-ই, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে সরকারেরই আদেশে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ নামে কালো আইন করে পৃথিবীর বুকে আরও একবার কলঙ্কিত ইতিহাস রচিত হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য জাতীয় নেতাকে একসঙ্গে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ভয়ংকর গ্রেনেড দিয়ে হামলার ঘটনা, মৌলবাদী জঙ্গিদের আগস্টে দেশজুড়ে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাসহ আরও অনেক ঘৃণ্য চেষ্টা—সবই একসূত্রে গাথা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার আরও অনেক চেষ্টা হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। প্রতিবারই তিনি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন। গ্রেনেডের উপর্যুপরি হামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে রক্ষা করতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষেরা মানব বর্ম তৈরি করে ২০ জন শহীদ হয়েছিলেন, এমন নজিরও পৃথিবীর ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায় না। দুঃখের বিষয়, এ রকম নৃশংস গ্রেনেড হামলাও হয়েছিল বাঙালির জন্য বেদনাময়, অথচ হত্যাকারীদের পছন্দের এই আগস্টেই এবং তা-ও ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ও ছত্রচ্ছায়ায়।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের হয়েছিল। তবে বিচার পেতে ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইনটি বাতিল করতে হয়েছিল। ১ মার্চ ১৯৯৭ সালে বিচারকার্য শুরু হয় আর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়; আরও কয়েক হত্যাকারী এখনো পলাতক। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলাটির বিচারকাজ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় ঘোষণায় জীবিত ৪৯ জন আসামির মধ্যে ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়। এ রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, সভ্যতার চরম উৎকর্ষের একবিংশ শতকেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার নজির স্থাপন করা যায়।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যের হত্যাকারীদের কয়েকজনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধু খুনের পরিকল্পনা প্রণয়নকারী, বাস্তবায়নকারী ও উপকারভোগীদের স্বরূপ উন্মোচন করা একান্ত প্রয়োজন। যেকোনো হত্যাকাণ্ড বা অন্যায় কর্মকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচার হলে তার পুনরাবৃত্তি নিরুৎসাহিত হয়, যা আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অত্যাবশকীয়। তাই ১৫ ও ২১ আগস্টের খুনিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার ও সাজা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১৫ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
১৫ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
১৫ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
১৫ ঘণ্টা আগে