বিভুরঞ্জন সরকার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানামুখী আলোচনা। এই নগরগুলোতে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী কেমন হবে সে বিষয়ে ধারণা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। পুরোনো মেয়রদের সবাই এবার ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাননি।
রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক এবারও দলের পছন্দ। কিন্তু বরিশাল, গাজীপুর ও সিলেটে দিয়েছে নতুন প্রার্থী। এর মধ্যে বড় চমক হিসেবে সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আর বরিশালে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে থাকেন, তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি খুব পরিচিত নন।
সিলেট আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা মনোনয়নপ্রার্থী হলেও কেন একজন ‘প্রবাসী’ প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড বেছে নিল, তা আমরা জানি না। তবে এমন প্রচার আছে, বাইরে থাকলেও তাঁর খুঁটির জোর আছে। জোর যে আছে তার প্রমাণ, তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, জয়ের জন্য প্রার্থীর চেয়ে ‘নৌকা’ প্রতীক এখনো ভোটারদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কি না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবার মনোনয়ন পাননি। কিন্তু ওই পরিবারের বাইরের কেউও মনোনয়ন পাননি, দল বেছে নিয়েছে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন আবদুল্লাহকে।
চাচা-ভাতিজার প্রতিযোগিতায় চাচার এই প্রাথমিক বিজয় রাজনৈতিক মহলে অনেক ‘গসিপের’ জন্ম দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দিনই নিহত হয়েছিলেন তাঁর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। রব সেরনিয়াবাতের দুই পুত্র আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। পরে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ছিলেন আড়ালে। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ কেন এত দিন পর মনোনয়ন প্রার্থী হলেন তার প্রকৃত কারণ আমাদের জানা না থাকলেও এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে মেয়র হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সুনামের চেয়ে বেশি অর্জন করেছেন অপবাদ। দলের মধ্যে তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এবার আওয়ামী লীগ বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনযুদ্ধে নামতে চায় না, তার প্রমাণ পাওয়া গেল পরিচিত সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে অপরিচিত মুখ খোকন আব্দুল্লাহকে বেছে নেওয়ায়। নতুন প্রার্থীর ইমেজও ক্লিন, আবার বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য।
গাজীপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীণ নেতা আজমত উল্লা খান। তিনি ২০১৩ সালে একবার মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ২০২১ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দল ও মেয়র পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এখন শোনা যাচ্ছে, জাহাঙ্গীর আলম ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ার কথা ভাবছেন। অন্য মহানগরেও মনোনয়নবঞ্চিতরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন বল আভাস মিলছে।
প্রশ্ন হলো, পাঁচ সিটিতে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে একযোগে নির্বাচনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন কি না। যদি দলের মধ্যে বিভাজন থাকে এবং মনোনয়নবঞ্চিতরা যদি এটা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন যে দল ঠিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সে জন্যই পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সচেষ্ট থাকবে বলেই মনে হয়। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার স্পষ্ট করেই বলেছেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ১৯ এপ্রিল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি দলীয় এমপিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ঈদ সামনে, সবাই এলাকায় যাবেন। নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না। দলাদলি করবেন না। এতে কোনো লাভ নেই। মনোনয়ন দেব আমি।’
আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে না চলার প্রবণতা দিনে দিনে জোরালো হয়ে উঠছে। নিকট অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা গেছে। এমনকি অনেক জায়গায় দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ও পেয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কিংবা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে কারও বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির আওয়ামী লীগে খুব একটা নেই। কাউকে কাউকে সাময়িক বহিষ্কার করলেও পরে আবার তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্যই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার ঘটনা বেশি ঘটছে।
আওয়ামী লীগের বড় সম্পদ তৃণমূলে এর সবল উপস্থিতি। সম্ভবত বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের আগে যাঁরা ঢাকা থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এলাকায় গিয়ে মিলেমিশে ঈদ করো, মানুষের খোঁজখবর নাও, আমরা যাদের ঘর দিয়েছি তারা কেমন আছে জিজ্ঞেস করো, সবার বাড়ির আঙিনায় যেটুকুই খালি জায়গা আছে গাছপালা, শাকসবজি লাগাতে বলো, সেই সঙ্গে বিএনপির অপপ্রচার, বিশৃঙ্খলা, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও জনগণকে সতর্ক থাকতে বলো। হাঁস-মুরগি যে যা পারে তা উৎপাদন করতে হবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
শেখ হাসিনার এসব পরামর্শ ধ্রুপদী রাজনীতির কৌশলের বাইরের কিছু নয়। নেতা-কর্মীরা এসব পরামর্শ অনুসরণ করলে দল জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকটে পড়ার কথা নয়। রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চলার পথ ফুল বিছানো ছিল না বরং অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই তাঁকে এগোতে হয়েছে। কখনো তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ শেরপা। বাবা-মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূসহ অসংখ্য স্বজন হারিয়ে, পদে পদে বিপদ, এমনকি জীবননাশের হুমকির মধ্যে পড়েও তিনি রাজনীতিতে অটল থেকেছেন এবং দেশবাসীর ভালোবাসাও পেয়েছেন।
তবে বাংলাদেশে ক্ষমতার ভেতরে-বাইরে রাজনীতি এক নয়। ক্ষমতায় থাকতে গেলে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আপস করতে হয়। কিন্তু সেটা যখন আদর্শের সঙ্গে, জনকল্যাণের নীতির সঙ্গে ক্রমাগত বিরোধাত্মক হতে থাকে, মানুষের ভালোবাসাও উবে যেতে থাকে। তার জায়গা দখল করে হিংসা, ঘৃণা। বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতি ত্থেকে শুদ্ধতা বিদায় নিয়েছে বলে মনে করা হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো কটলারেন্স’ নীতির কথা বলা হলেও দুর্নীতি কমছে না। সুশাসনের অভাব নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি আছে। গণতন্ত্র নিয়েও বিতর্ক, প্রশ্ন আছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।
তবে দেশের মানুষের অভাব-দুঃখের তীব্রতা যে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কমেছে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বহুল অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে তার সাক্ষ্য দেয় সারা বিশ্ব। একসময় বাংলাদেশ ছিল বড় দেশগুলোর করুণানির্ভর, তলাবিহীন ঝুড়ি। খাদ্য ঘাটতি, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিত্যসঙ্গী ত্রাণ পাওয়ার আশায় হাত পেতে থাকা একটি দেশ। কিন্তু এখন বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই উন্নয়নের রোল মডেল।
বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলার মতো মানুষ এখন অনেক আছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ মডেল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একদিকে দৃঢ, অন্যদিকে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সক্ষম। ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তার মানে অবশ্যই এটা নয় যে দেশে কোনো সমস্যা নেই। দুর্নীতি আছে, আছে লুটপাট, বৈষম্য এবং সুশাসনের অভাব। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে শেখ হাসিনার কাছে মানুষ যে কঠোরতা প্রত্যাশা করে, তা পূরণ না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা কমছে না। মানুষ যাদের খারাপ মনে করে, তাদের প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানামুখী আলোচনা। এই নগরগুলোতে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী কেমন হবে সে বিষয়ে ধারণা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। পুরোনো মেয়রদের সবাই এবার ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাননি।
রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক এবারও দলের পছন্দ। কিন্তু বরিশাল, গাজীপুর ও সিলেটে দিয়েছে নতুন প্রার্থী। এর মধ্যে বড় চমক হিসেবে সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আর বরিশালে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে থাকেন, তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি খুব পরিচিত নন।
সিলেট আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা মনোনয়নপ্রার্থী হলেও কেন একজন ‘প্রবাসী’ প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড বেছে নিল, তা আমরা জানি না। তবে এমন প্রচার আছে, বাইরে থাকলেও তাঁর খুঁটির জোর আছে। জোর যে আছে তার প্রমাণ, তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, জয়ের জন্য প্রার্থীর চেয়ে ‘নৌকা’ প্রতীক এখনো ভোটারদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কি না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবার মনোনয়ন পাননি। কিন্তু ওই পরিবারের বাইরের কেউও মনোনয়ন পাননি, দল বেছে নিয়েছে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন আবদুল্লাহকে।
চাচা-ভাতিজার প্রতিযোগিতায় চাচার এই প্রাথমিক বিজয় রাজনৈতিক মহলে অনেক ‘গসিপের’ জন্ম দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দিনই নিহত হয়েছিলেন তাঁর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। রব সেরনিয়াবাতের দুই পুত্র আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। পরে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ছিলেন আড়ালে। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ কেন এত দিন পর মনোনয়ন প্রার্থী হলেন তার প্রকৃত কারণ আমাদের জানা না থাকলেও এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে মেয়র হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সুনামের চেয়ে বেশি অর্জন করেছেন অপবাদ। দলের মধ্যে তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এবার আওয়ামী লীগ বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনযুদ্ধে নামতে চায় না, তার প্রমাণ পাওয়া গেল পরিচিত সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে অপরিচিত মুখ খোকন আব্দুল্লাহকে বেছে নেওয়ায়। নতুন প্রার্থীর ইমেজও ক্লিন, আবার বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য।
গাজীপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীণ নেতা আজমত উল্লা খান। তিনি ২০১৩ সালে একবার মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ২০২১ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দল ও মেয়র পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এখন শোনা যাচ্ছে, জাহাঙ্গীর আলম ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ার কথা ভাবছেন। অন্য মহানগরেও মনোনয়নবঞ্চিতরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন বল আভাস মিলছে।
প্রশ্ন হলো, পাঁচ সিটিতে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে একযোগে নির্বাচনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন কি না। যদি দলের মধ্যে বিভাজন থাকে এবং মনোনয়নবঞ্চিতরা যদি এটা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন যে দল ঠিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সে জন্যই পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সচেষ্ট থাকবে বলেই মনে হয়। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার স্পষ্ট করেই বলেছেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ১৯ এপ্রিল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি দলীয় এমপিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ঈদ সামনে, সবাই এলাকায় যাবেন। নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না। দলাদলি করবেন না। এতে কোনো লাভ নেই। মনোনয়ন দেব আমি।’
আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে না চলার প্রবণতা দিনে দিনে জোরালো হয়ে উঠছে। নিকট অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা গেছে। এমনকি অনেক জায়গায় দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ও পেয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কিংবা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে কারও বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির আওয়ামী লীগে খুব একটা নেই। কাউকে কাউকে সাময়িক বহিষ্কার করলেও পরে আবার তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্যই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার ঘটনা বেশি ঘটছে।
আওয়ামী লীগের বড় সম্পদ তৃণমূলে এর সবল উপস্থিতি। সম্ভবত বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের আগে যাঁরা ঢাকা থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এলাকায় গিয়ে মিলেমিশে ঈদ করো, মানুষের খোঁজখবর নাও, আমরা যাদের ঘর দিয়েছি তারা কেমন আছে জিজ্ঞেস করো, সবার বাড়ির আঙিনায় যেটুকুই খালি জায়গা আছে গাছপালা, শাকসবজি লাগাতে বলো, সেই সঙ্গে বিএনপির অপপ্রচার, বিশৃঙ্খলা, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও জনগণকে সতর্ক থাকতে বলো। হাঁস-মুরগি যে যা পারে তা উৎপাদন করতে হবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
শেখ হাসিনার এসব পরামর্শ ধ্রুপদী রাজনীতির কৌশলের বাইরের কিছু নয়। নেতা-কর্মীরা এসব পরামর্শ অনুসরণ করলে দল জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকটে পড়ার কথা নয়। রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চলার পথ ফুল বিছানো ছিল না বরং অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই তাঁকে এগোতে হয়েছে। কখনো তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ শেরপা। বাবা-মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূসহ অসংখ্য স্বজন হারিয়ে, পদে পদে বিপদ, এমনকি জীবননাশের হুমকির মধ্যে পড়েও তিনি রাজনীতিতে অটল থেকেছেন এবং দেশবাসীর ভালোবাসাও পেয়েছেন।
তবে বাংলাদেশে ক্ষমতার ভেতরে-বাইরে রাজনীতি এক নয়। ক্ষমতায় থাকতে গেলে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আপস করতে হয়। কিন্তু সেটা যখন আদর্শের সঙ্গে, জনকল্যাণের নীতির সঙ্গে ক্রমাগত বিরোধাত্মক হতে থাকে, মানুষের ভালোবাসাও উবে যেতে থাকে। তার জায়গা দখল করে হিংসা, ঘৃণা। বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতি ত্থেকে শুদ্ধতা বিদায় নিয়েছে বলে মনে করা হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো কটলারেন্স’ নীতির কথা বলা হলেও দুর্নীতি কমছে না। সুশাসনের অভাব নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি আছে। গণতন্ত্র নিয়েও বিতর্ক, প্রশ্ন আছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।
তবে দেশের মানুষের অভাব-দুঃখের তীব্রতা যে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কমেছে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বহুল অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে তার সাক্ষ্য দেয় সারা বিশ্ব। একসময় বাংলাদেশ ছিল বড় দেশগুলোর করুণানির্ভর, তলাবিহীন ঝুড়ি। খাদ্য ঘাটতি, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিত্যসঙ্গী ত্রাণ পাওয়ার আশায় হাত পেতে থাকা একটি দেশ। কিন্তু এখন বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই উন্নয়নের রোল মডেল।
বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলার মতো মানুষ এখন অনেক আছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ মডেল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একদিকে দৃঢ, অন্যদিকে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সক্ষম। ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তার মানে অবশ্যই এটা নয় যে দেশে কোনো সমস্যা নেই। দুর্নীতি আছে, আছে লুটপাট, বৈষম্য এবং সুশাসনের অভাব। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে শেখ হাসিনার কাছে মানুষ যে কঠোরতা প্রত্যাশা করে, তা পূরণ না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা কমছে না। মানুষ যাদের খারাপ মনে করে, তাদের প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।
শেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
৮ ঘণ্টা আগেআমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
৮ ঘণ্টা আগেআমেরিকার ১৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাম্প।
৮ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
৮ ঘণ্টা আগে