সেলিম জাহান
তাঁর লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় প্রয়াত ঋতু গুহের গানের মাধ্যমে। সত্তরের দশকের প্রথম দিক থেকে প্রচুর শুনতে শুরু করেছিলাম ঋতু গুহের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। কণ্ঠের, সুরের এবং বোধের অমন সুনন্দ সমন্বয় বড় একটা দেখা যায় না। কিছু কিছু গান তো তাঁর কণ্ঠে অনন্য মনে হতো—‘কাঙাল, আমারে কাঙাল করেছো’ কিংবা ‘আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’, অথবা ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’। মনে হতো, এ গানগুলো ঋতু গুহ ভিন্ন আর কারও গলায় মানাবে না।
একবার আকাশবাণী থেকে তিনি গাইলেন সেই অসামান্য রবীন্দ্রসঙ্গীত, ‘এ পরবাসে রবে কে হায়’। ঋতু গুহের কণ্ঠের সেই আর্তি কখনও ভুলব না, বিশেষত যখন তিনি গেয়ে উঠেছেন, ‘এমন কেহ নাহি এ প্রান্তরে’। সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিতে অমিয়া ঠাকুরের খালি গলায় শোনা সে গানের পরে অমনটা আর শুনিনি।
কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি তাঁর গানের সুতো ধরে জানা গেল যে, ঋতু গুহের বর হচ্ছেন বুদ্ধদেব গুহ—লেখক এবং ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। প্রথম থেকেই বুদ্ধদেব গুহ সম্পর্কে তিনটি বিষয় আমাকে মুগ্ধ করত—অনেকটা ঈর্ষণীয় মনে হতো বলা চলে।
প্রথমত রূপ, অর্থ ও সাফল্যের অমন সুষম সমন্বয় বড় একটা দেখা যায় না। যৌবনে অত্যন্ত রূপবান ছিলেন বুদ্ধদেব গুহ—কাটা চেহারা, একমাথা ঘন চুল, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। রাজপুত্রের মতো লাগত তাঁকে। যখন পেশায় ছিলেন, তখন তাঁর পেশায় তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম সারির। লেখক হিসেবে তাঁর সাফল্য ও খ্যাতি আকাশচুম্বী।
দ্বিতীয়ত, জঙ্গল ও শিকার তাঁর লেখায় যে সূক্ষ্ম আর বিস্তৃতভাবে উঠে এসেছে, তা অনন্য। প্রকৃতি আর নিসর্গ নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও লিখেছেন, কিন্তু তিনি অন্য ঘরানার লোক এবং অন্য মেজাজের লেখক। বুদ্ধদেব গুহ জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন বনে-জঙ্গলে এবং তিনি নিজে একজন দক্ষ শিকারি ছিলেন। জিম করবেট সম্পর্কে তাঁর একধরনের মুগ্ধতা ছিল।
তৃতীয়ত, দুটি অন্যতম প্রতিভা ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্কিত—ঋতু গুহ ও বুদ্ধদেব গুহের এ সম্পৃক্ততার কারণেও আমি মুগ্ধ হতাম। বুদ্ধদেব গুহ একসময় খুব ভালো টপ্পা গাইতেন, পরে ছেড়ে দেন। গান ছাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে, বুদ্ধদেব গুহ জবাব দিয়েছিলেন, ‘ঋতু এত ভালো গায়। আমার গাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না’। অসম্ভব শ্রদ্ধাভাজন বুদ্ধদেব গুহ সর্বদা তাঁর স্ত্রীর প্রতি। সবাইকে উপহার দিয়ে বেড়ান ঋতু গুহের দীর্ঘ বাদন রেকর্ড। যাকে-তাকে কলম উপহার দেওয়াও তাঁর এক বাতিক।
বুদ্ধদেব গুহের প্রচুর লেখা আমি পড়েছি—‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘একটু উষ্ণতার জন্যে’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘ঝাঁকিদর্শন’, ‘রিয়া’। তাঁর ‘ঋভু’ চরিত্রটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। তাঁর বাংলাদেশ সংযোগের কথায় আমি আনন্দিত হই। জন্ম তাঁর রংপুরে, পড়াশোনা করেছেন রংপুর জিলা স্কুল ও কারমাইকেল কলেজে। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের একটা বিরাট অংশ কেটেছে রংপুর, জয়পুরহাট ও বরিশালে। বরিশালের কথাটি আমাকে প্রীত করে।
এত কথা বললাম এ কারণে যে বর্তমানে বুদ্ধদেব গুহ কোভিড-১৯ আক্রান্ত। খুব গুরুতরভাবে নয়, যেমন, তাঁর শ্বাসকষ্ট নেই, মুখের স্বাদেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি তাঁর, নিজেকে তিনি অবরুদ্ধ রেখেছেন একটি হোটেলে। বলা বাহুল্য, বুদ্ধদেব গুহের কন্যা ও গাড়িরচালকও কোভিডে আক্রান্ত।
কয়েক দিন আগে ওপার বাংলায় কোভিডের শিকার হয়েছেন প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ। বাংলাদেশে আমরা হারিয়েছি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক ও অভিনেত্রী কবরী সারোয়ারসহ আরও বেশ কয়েকজন গুণীজনকে। ‘ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’, তেমনি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেলেই আমি শঙ্কিত হই, আতঙ্কিত বোধ করি।
কিন্তু বুদ্ধদেব গুহকে নিয়ে আমি শঙ্কিত বা আশঙ্কিত কোনোটাই হব না, কারণ দুদিন আগেই বুদ্ধদেব গুহ বলেছেন, ‘এত তাড়াতাড়ি সব শেষ হবে না।’ অসম্ভব মনোবলের অধিকারী ও আশাবাদী এ মানুষটির প্রতি আমার আস্থা অনেক। তাই আমিও বলি, ‘এত তাড়াতাড়ি সব শেষ হবে না। বুদ্ধদেব গুহ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
তাঁর লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় প্রয়াত ঋতু গুহের গানের মাধ্যমে। সত্তরের দশকের প্রথম দিক থেকে প্রচুর শুনতে শুরু করেছিলাম ঋতু গুহের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। কণ্ঠের, সুরের এবং বোধের অমন সুনন্দ সমন্বয় বড় একটা দেখা যায় না। কিছু কিছু গান তো তাঁর কণ্ঠে অনন্য মনে হতো—‘কাঙাল, আমারে কাঙাল করেছো’ কিংবা ‘আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’, অথবা ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’। মনে হতো, এ গানগুলো ঋতু গুহ ভিন্ন আর কারও গলায় মানাবে না।
একবার আকাশবাণী থেকে তিনি গাইলেন সেই অসামান্য রবীন্দ্রসঙ্গীত, ‘এ পরবাসে রবে কে হায়’। ঋতু গুহের কণ্ঠের সেই আর্তি কখনও ভুলব না, বিশেষত যখন তিনি গেয়ে উঠেছেন, ‘এমন কেহ নাহি এ প্রান্তরে’। সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিতে অমিয়া ঠাকুরের খালি গলায় শোনা সে গানের পরে অমনটা আর শুনিনি।
কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি তাঁর গানের সুতো ধরে জানা গেল যে, ঋতু গুহের বর হচ্ছেন বুদ্ধদেব গুহ—লেখক এবং ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। প্রথম থেকেই বুদ্ধদেব গুহ সম্পর্কে তিনটি বিষয় আমাকে মুগ্ধ করত—অনেকটা ঈর্ষণীয় মনে হতো বলা চলে।
প্রথমত রূপ, অর্থ ও সাফল্যের অমন সুষম সমন্বয় বড় একটা দেখা যায় না। যৌবনে অত্যন্ত রূপবান ছিলেন বুদ্ধদেব গুহ—কাটা চেহারা, একমাথা ঘন চুল, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। রাজপুত্রের মতো লাগত তাঁকে। যখন পেশায় ছিলেন, তখন তাঁর পেশায় তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম সারির। লেখক হিসেবে তাঁর সাফল্য ও খ্যাতি আকাশচুম্বী।
দ্বিতীয়ত, জঙ্গল ও শিকার তাঁর লেখায় যে সূক্ষ্ম আর বিস্তৃতভাবে উঠে এসেছে, তা অনন্য। প্রকৃতি আর নিসর্গ নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও লিখেছেন, কিন্তু তিনি অন্য ঘরানার লোক এবং অন্য মেজাজের লেখক। বুদ্ধদেব গুহ জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন বনে-জঙ্গলে এবং তিনি নিজে একজন দক্ষ শিকারি ছিলেন। জিম করবেট সম্পর্কে তাঁর একধরনের মুগ্ধতা ছিল।
তৃতীয়ত, দুটি অন্যতম প্রতিভা ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্কিত—ঋতু গুহ ও বুদ্ধদেব গুহের এ সম্পৃক্ততার কারণেও আমি মুগ্ধ হতাম। বুদ্ধদেব গুহ একসময় খুব ভালো টপ্পা গাইতেন, পরে ছেড়ে দেন। গান ছাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে, বুদ্ধদেব গুহ জবাব দিয়েছিলেন, ‘ঋতু এত ভালো গায়। আমার গাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না’। অসম্ভব শ্রদ্ধাভাজন বুদ্ধদেব গুহ সর্বদা তাঁর স্ত্রীর প্রতি। সবাইকে উপহার দিয়ে বেড়ান ঋতু গুহের দীর্ঘ বাদন রেকর্ড। যাকে-তাকে কলম উপহার দেওয়াও তাঁর এক বাতিক।
বুদ্ধদেব গুহের প্রচুর লেখা আমি পড়েছি—‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘একটু উষ্ণতার জন্যে’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘ঝাঁকিদর্শন’, ‘রিয়া’। তাঁর ‘ঋভু’ চরিত্রটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। তাঁর বাংলাদেশ সংযোগের কথায় আমি আনন্দিত হই। জন্ম তাঁর রংপুরে, পড়াশোনা করেছেন রংপুর জিলা স্কুল ও কারমাইকেল কলেজে। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের একটা বিরাট অংশ কেটেছে রংপুর, জয়পুরহাট ও বরিশালে। বরিশালের কথাটি আমাকে প্রীত করে।
এত কথা বললাম এ কারণে যে বর্তমানে বুদ্ধদেব গুহ কোভিড-১৯ আক্রান্ত। খুব গুরুতরভাবে নয়, যেমন, তাঁর শ্বাসকষ্ট নেই, মুখের স্বাদেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি তাঁর, নিজেকে তিনি অবরুদ্ধ রেখেছেন একটি হোটেলে। বলা বাহুল্য, বুদ্ধদেব গুহের কন্যা ও গাড়িরচালকও কোভিডে আক্রান্ত।
কয়েক দিন আগে ওপার বাংলায় কোভিডের শিকার হয়েছেন প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ। বাংলাদেশে আমরা হারিয়েছি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক ও অভিনেত্রী কবরী সারোয়ারসহ আরও বেশ কয়েকজন গুণীজনকে। ‘ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’, তেমনি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেলেই আমি শঙ্কিত হই, আতঙ্কিত বোধ করি।
কিন্তু বুদ্ধদেব গুহকে নিয়ে আমি শঙ্কিত বা আশঙ্কিত কোনোটাই হব না, কারণ দুদিন আগেই বুদ্ধদেব গুহ বলেছেন, ‘এত তাড়াতাড়ি সব শেষ হবে না।’ অসম্ভব মনোবলের অধিকারী ও আশাবাদী এ মানুষটির প্রতি আমার আস্থা অনেক। তাই আমিও বলি, ‘এত তাড়াতাড়ি সব শেষ হবে না। বুদ্ধদেব গুহ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
২ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
২ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
২ ঘণ্টা আগে