ড. মো. ফখরুল ইসলাম
হঠাৎ করে সারা দেশের নদীর পাড়গুলোতে প্রচণ্ড ভাঙন শুরু হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সবদিক থেকেই ছোট-বড় অনেক নদীপাড়ের মানুষ ভাঙন-আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। হিমালয়ের পাদদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় সিকিম, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে বন্যা হওয়ার পর ছোট-বড় সব নদী দিয়ে ধেয়ে আসে সেই পানি। উজানের নদী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর গঙ্গাধরের ভাঙনে মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। তারা গঙ্গাধর নদের ভাঙা তীরের মাটি ঘেঁষে মানববন্ধন করছেন। নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে—সবাই পরস্পরের হাত ধরাধরি করে নাগেশ্বরীর বল্লভের খাস ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গাধরের দিকে তাকিয়ে মিনতি করে যেন বলছেন, গঙ্গাধর আর সামনে ভাঙিস না, মোর এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু নদীর তো আর মানুষের মিনতি শোনার মতো কান নেই। সে তো মানববন্ধন কী তা বোঝে না! তবুও মানুষ অসময়ে নদীর তীরে এসে ভিড় করে, সময় থাকতে নদীকে গুরুত্ব দেয় না।
উত্তরের তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, ব্রহ্মপুত্র, ছোট যমুনা, করতোয়া কাঁটাখালী—সব নদীতেই এখন পানির নিম্নটান। বন্যা কমে পানিতে টান পড়লে নদীতে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দেয়। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কালমাটি, রাজপুর, উলিপুরে তিস্তা নদী; কাঁঠালবাড়ী, কুড়িগ্রামে ধরলা নদী; জোড়গাছ, চিলমারী, ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ; সিরাজগঞ্জ, কাজীপুর, বাঘাবাড়িতে যমুনা নদী; রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, নড়িয়ায় পদ্মা যেন গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি প্রতিপত্তি নিয়ে কূলে আঁছড়ে পড়ছে।
যমুনার ভাঙনে গোবিন্দাসীর ভালুকটিয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদ নদীর স্রোত থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে। মসজিদ রক্ষায় গ্রামবাসী গাছ, কাঠ, বাঁশ নিয়ে নদীতে নেমে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্রোতকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু স্রোতের তাণ্ডবে চেষ্টার পরিমাণ খুবই সামান্য মনে হচ্ছে। টিনের চালাঘর বড় নৌকায় তুলে নদী পাড়ি দিয়ে ডাঙায় কোথাও গিয়ে বসতি গড়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন নদীভাঙনাক্রান্ত হতাশ মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের কাছে কাজীরপাড়া জামে মসজিদসহ আরও তিনটি বাড়ি ৩০ মিটার এলাকা নিয়ে মাত্র এক মিনিটে পদ্মার পেটে চলে গেছে। কয়েক বছর ধরে নড়িয়ার বাজার, মাজার, স্কুল, অফিসঘরসহ অনেক তিন-চারতলা বিল্ডিং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছিল ওটাই শেষ বিনাশ। আর পদ্মা এদিকে ভাঙতে আসবে না। কারণ নানা সরকারিভাবে ভাঙন বন্ধে আশ্বাসের বাণী শোনানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে যৎসামান্যই। ফলে এ বছর আরও বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাবাসী। এ বছর স্রোতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সবকিছু নিমিষেই নদীতে চলে যাচ্ছে।
প্রতিবছর প্লাবন ও তার সঙ্গে নদীভাঙন আমাদের অমোঘ নিয়মের একটি। বন্যা শুরুর আগে এক দফা নদী ভাঙে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক দফা ভাঙন শুরু হয়। তবে বন্যা-পরবর্তী নদীভাঙনটাই বেশি মারাত্মক। এ সময় স্রোতের টান ভাটির দিকে বেশি হওয়ায় নদীতীরের নরম মাটি, বালু কোনোভাবেই নিজেকে স্রোতের সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে পারে না। ফসলি জমি, বাড়িঘর, বাজার-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, অফিস, পাঠাগার সবকিছুই স্রোতের তোড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, অসহায় মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখে। সরকারি লোকজন আসে, মিডিয়ার ক্যামেরা আসে, ছবি তুলে দেশবাসীকে জানায়। তারা বরাদ্দ চায়, অর্থ পায় এবং কাজও করে। কিন্তু নদী নাছোড়বান্দার মতো প্রতিবছর আবারও ভাঙে, আরও বেশি শক্তি নিয়ে। নদী কারও শাসন-বাঁধন মানে না। কর্তৃপক্ষের সেসব শাসন-বাঁধন নদীর কাছে দুর্বল মনে হয়, হয়তোবা তাই বলে সে আবারও প্রবল স্রোত সঙ্গে নিয়ে গর্জে ওঠে। মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, রেলসড়ক, বড় মসজিদ, ছয়তলা কলেজ—সবকিছুই নদীর পেটে ঢুকে যায় অনায়াসে। আমরা কয়েক বছর ধরে এ কষ্টগুলো দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছি।
আক্রান্ত মানুষ বেশি উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলে সরকারি লোকজন এসে বালুর বস্তা, কংক্রিটের চাকতি ফেলে ভাঙন ঠেকানোর নিষ্ফল চেষ্টা করেন। তত দিনে স্রোত কমে গেলে যে যাঁর মতো সটকে পড়েন অকুস্থল থেকে। আমরা শুনি, নদীর একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে। ওকূলে জমি জেগে ওঠে, বসতি গড়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলো দখল করে নেয় সেই কূলের লাঠিয়াল, জোতদার বাহিনী। যে একূলে জোত-জমি হারান, তিনি অপর কূলে গিয়ে কখনো সেই জোত-জমি ফিরে পান বলে এমন ঘটনার নজির খুব কম শোনা যায়।
নদীভাঙন আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি। সেটার কথা আমরা জানি, দুশ্চিন্তা নিয়ে মনে মনে ভাবি। কিন্তু সঠিক সময়ে বা খরার মধ্যে এর প্রতিকার না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকি। একনেকে নদীভাঙন ঠেকাতে পরিকল্পনা পাস হয়, যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ আসে; কিন্তু সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করি না, শেষ করতেও পারি না। কাজ শেষ করার আগে নতুন করে বন্যা আঘাত হানতে শুরু করে। উপায়ান্তর না দেখে বালুর বস্তা সম্বল করে হইহুল্লোড় শুরু করে দিই প্রতিবছর। বন্যা বা ভাঙন শুরু হওয়ার পর সবার টনক নড়ে। বন্যার পানির স্রোতের মধ্যে অথবা ভাঙনকবলিত তীরের মধ্যে আনাড়ি লোক দিয়ে নদীর পানিতে বালুর বস্তা ছুড়ে দিই। এটাই কি নদীভাঙন রোধের প্রকৃত উপায়? আমি শিশুকাল থেকে এমনটি দেখে আসছি। তখন নদীপাড়ে গিয়ে বালুর বস্তা ছুড়ে ফেলার দৃশ্য মজা করে দেখতাম। এখন নানা টিভি চ্যানেলে আরও সুন্দর করে এসব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
প্রবল স্রোতে বালুর বস্তাগুলো কোথায় ভেসে যায় তার কোনো দৃশ্য কোনো ক্যামেরাতে ধরা পড়ে না। সেগুলো প্রতিবছর কোথায় যায়, কে জানে? নদীতে ঘোলা পানি না হলে আন্ডার-ওয়াটার ক্যামেরা ফিট করলে তা হয়তো দেখা যেত, বোঝা যেত।
ভাবছেন, হয়তো আমি কৌতুক করছি। কিন্তু তা মোটেও নয়। নদীভাঙা মানুষগুলো ‘পরিবেশ রিফুজি’। তাদের খাবার পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ, শুকনো খাদ্য থাকে না, বিপদের সময় তাদের শোয়ার জায়গা, মলমূত্র ত্যাগের জায়গাও রাস্তা। পশুখাদ্য পানির নিচে থাকায় গবাদিপশুগুলো খাদ্যাভাবে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে অল্পদিনেই।
বন্যা বা নদীভাঙনের সময় নদীতীরে যাঁরা মানববন্ধন করছেন, তাঁরা আসলে কাকে কী মেসেজ দিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। আপনারা বর্ষা শুরুর আগে বা শীতকালে মানববন্ধন করুন। আর বলুন, এ বছর বর্ষাকালে বৃষ্টি নামার আগেই যেন নদীতীরে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে বাঁধা হয়ে যায়। ভাঙনকবলিত এলাকায় জাভা বা ওকিনাওয়ার মতো বড় তিন কাঁটাওয়ালা শিঙাড়া টাইপের ব্লক ফেলা হয়, যেটা স্রোতে ভাসিয়ে নিতে পারবে না। নদীতীর বাঁধন, নদীশাসন—এসব যাদের কাজ, তাদের একাগ্রতা, জবাবদিহি ও টেকসই নির্মাণের নিশ্চয়তা, নৈতিকতা ইত্যাদির নিশ্চয়তা চাই জানিয়ে দাবি তুলে ধরতে হবে। নতুবা জনগণ এই হেঁয়ালিপূর্ণ কাজকে কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না, মেনে নেবে না। কারণ মানববন্ধন করে সঠিক সময়ে সঠিক মানুষকে বা কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে। সঠিক দাবি উপযুক্ত লোকের কাছে পৌঁছাতে হবে। নদীভাঙনের সময় নদীরা বেহুঁশ থাকে। সে সময় কোনো নদীর নিজের এসব মানববন্ধন দেখা বা শোনার মতো কোনো সামর্থ্য, সক্ষমতা কোনোটাই নেই। প্রতিবছর বন্যা ও নদীভাঙন শুরুর পর শুধু অসময়ে অরণ্যে রোদন করে কোনো ভালো ফল আশা করা বৃথা।
লেখক: অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
হঠাৎ করে সারা দেশের নদীর পাড়গুলোতে প্রচণ্ড ভাঙন শুরু হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সবদিক থেকেই ছোট-বড় অনেক নদীপাড়ের মানুষ ভাঙন-আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। হিমালয়ের পাদদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় সিকিম, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে বন্যা হওয়ার পর ছোট-বড় সব নদী দিয়ে ধেয়ে আসে সেই পানি। উজানের নদী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর গঙ্গাধরের ভাঙনে মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। তারা গঙ্গাধর নদের ভাঙা তীরের মাটি ঘেঁষে মানববন্ধন করছেন। নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে—সবাই পরস্পরের হাত ধরাধরি করে নাগেশ্বরীর বল্লভের খাস ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গাধরের দিকে তাকিয়ে মিনতি করে যেন বলছেন, গঙ্গাধর আর সামনে ভাঙিস না, মোর এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু নদীর তো আর মানুষের মিনতি শোনার মতো কান নেই। সে তো মানববন্ধন কী তা বোঝে না! তবুও মানুষ অসময়ে নদীর তীরে এসে ভিড় করে, সময় থাকতে নদীকে গুরুত্ব দেয় না।
উত্তরের তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, ব্রহ্মপুত্র, ছোট যমুনা, করতোয়া কাঁটাখালী—সব নদীতেই এখন পানির নিম্নটান। বন্যা কমে পানিতে টান পড়লে নদীতে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দেয়। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কালমাটি, রাজপুর, উলিপুরে তিস্তা নদী; কাঁঠালবাড়ী, কুড়িগ্রামে ধরলা নদী; জোড়গাছ, চিলমারী, ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ; সিরাজগঞ্জ, কাজীপুর, বাঘাবাড়িতে যমুনা নদী; রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, নড়িয়ায় পদ্মা যেন গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি প্রতিপত্তি নিয়ে কূলে আঁছড়ে পড়ছে।
যমুনার ভাঙনে গোবিন্দাসীর ভালুকটিয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদ নদীর স্রোত থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে। মসজিদ রক্ষায় গ্রামবাসী গাছ, কাঠ, বাঁশ নিয়ে নদীতে নেমে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্রোতকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু স্রোতের তাণ্ডবে চেষ্টার পরিমাণ খুবই সামান্য মনে হচ্ছে। টিনের চালাঘর বড় নৌকায় তুলে নদী পাড়ি দিয়ে ডাঙায় কোথাও গিয়ে বসতি গড়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন নদীভাঙনাক্রান্ত হতাশ মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের কাছে কাজীরপাড়া জামে মসজিদসহ আরও তিনটি বাড়ি ৩০ মিটার এলাকা নিয়ে মাত্র এক মিনিটে পদ্মার পেটে চলে গেছে। কয়েক বছর ধরে নড়িয়ার বাজার, মাজার, স্কুল, অফিসঘরসহ অনেক তিন-চারতলা বিল্ডিং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছিল ওটাই শেষ বিনাশ। আর পদ্মা এদিকে ভাঙতে আসবে না। কারণ নানা সরকারিভাবে ভাঙন বন্ধে আশ্বাসের বাণী শোনানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে যৎসামান্যই। ফলে এ বছর আরও বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাবাসী। এ বছর স্রোতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সবকিছু নিমিষেই নদীতে চলে যাচ্ছে।
প্রতিবছর প্লাবন ও তার সঙ্গে নদীভাঙন আমাদের অমোঘ নিয়মের একটি। বন্যা শুরুর আগে এক দফা নদী ভাঙে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক দফা ভাঙন শুরু হয়। তবে বন্যা-পরবর্তী নদীভাঙনটাই বেশি মারাত্মক। এ সময় স্রোতের টান ভাটির দিকে বেশি হওয়ায় নদীতীরের নরম মাটি, বালু কোনোভাবেই নিজেকে স্রোতের সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে পারে না। ফসলি জমি, বাড়িঘর, বাজার-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, অফিস, পাঠাগার সবকিছুই স্রোতের তোড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, অসহায় মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখে। সরকারি লোকজন আসে, মিডিয়ার ক্যামেরা আসে, ছবি তুলে দেশবাসীকে জানায়। তারা বরাদ্দ চায়, অর্থ পায় এবং কাজও করে। কিন্তু নদী নাছোড়বান্দার মতো প্রতিবছর আবারও ভাঙে, আরও বেশি শক্তি নিয়ে। নদী কারও শাসন-বাঁধন মানে না। কর্তৃপক্ষের সেসব শাসন-বাঁধন নদীর কাছে দুর্বল মনে হয়, হয়তোবা তাই বলে সে আবারও প্রবল স্রোত সঙ্গে নিয়ে গর্জে ওঠে। মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, রেলসড়ক, বড় মসজিদ, ছয়তলা কলেজ—সবকিছুই নদীর পেটে ঢুকে যায় অনায়াসে। আমরা কয়েক বছর ধরে এ কষ্টগুলো দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছি।
আক্রান্ত মানুষ বেশি উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলে সরকারি লোকজন এসে বালুর বস্তা, কংক্রিটের চাকতি ফেলে ভাঙন ঠেকানোর নিষ্ফল চেষ্টা করেন। তত দিনে স্রোত কমে গেলে যে যাঁর মতো সটকে পড়েন অকুস্থল থেকে। আমরা শুনি, নদীর একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে। ওকূলে জমি জেগে ওঠে, বসতি গড়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলো দখল করে নেয় সেই কূলের লাঠিয়াল, জোতদার বাহিনী। যে একূলে জোত-জমি হারান, তিনি অপর কূলে গিয়ে কখনো সেই জোত-জমি ফিরে পান বলে এমন ঘটনার নজির খুব কম শোনা যায়।
নদীভাঙন আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি। সেটার কথা আমরা জানি, দুশ্চিন্তা নিয়ে মনে মনে ভাবি। কিন্তু সঠিক সময়ে বা খরার মধ্যে এর প্রতিকার না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকি। একনেকে নদীভাঙন ঠেকাতে পরিকল্পনা পাস হয়, যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ আসে; কিন্তু সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করি না, শেষ করতেও পারি না। কাজ শেষ করার আগে নতুন করে বন্যা আঘাত হানতে শুরু করে। উপায়ান্তর না দেখে বালুর বস্তা সম্বল করে হইহুল্লোড় শুরু করে দিই প্রতিবছর। বন্যা বা ভাঙন শুরু হওয়ার পর সবার টনক নড়ে। বন্যার পানির স্রোতের মধ্যে অথবা ভাঙনকবলিত তীরের মধ্যে আনাড়ি লোক দিয়ে নদীর পানিতে বালুর বস্তা ছুড়ে দিই। এটাই কি নদীভাঙন রোধের প্রকৃত উপায়? আমি শিশুকাল থেকে এমনটি দেখে আসছি। তখন নদীপাড়ে গিয়ে বালুর বস্তা ছুড়ে ফেলার দৃশ্য মজা করে দেখতাম। এখন নানা টিভি চ্যানেলে আরও সুন্দর করে এসব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
প্রবল স্রোতে বালুর বস্তাগুলো কোথায় ভেসে যায় তার কোনো দৃশ্য কোনো ক্যামেরাতে ধরা পড়ে না। সেগুলো প্রতিবছর কোথায় যায়, কে জানে? নদীতে ঘোলা পানি না হলে আন্ডার-ওয়াটার ক্যামেরা ফিট করলে তা হয়তো দেখা যেত, বোঝা যেত।
ভাবছেন, হয়তো আমি কৌতুক করছি। কিন্তু তা মোটেও নয়। নদীভাঙা মানুষগুলো ‘পরিবেশ রিফুজি’। তাদের খাবার পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ, শুকনো খাদ্য থাকে না, বিপদের সময় তাদের শোয়ার জায়গা, মলমূত্র ত্যাগের জায়গাও রাস্তা। পশুখাদ্য পানির নিচে থাকায় গবাদিপশুগুলো খাদ্যাভাবে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে অল্পদিনেই।
বন্যা বা নদীভাঙনের সময় নদীতীরে যাঁরা মানববন্ধন করছেন, তাঁরা আসলে কাকে কী মেসেজ দিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। আপনারা বর্ষা শুরুর আগে বা শীতকালে মানববন্ধন করুন। আর বলুন, এ বছর বর্ষাকালে বৃষ্টি নামার আগেই যেন নদীতীরে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে বাঁধা হয়ে যায়। ভাঙনকবলিত এলাকায় জাভা বা ওকিনাওয়ার মতো বড় তিন কাঁটাওয়ালা শিঙাড়া টাইপের ব্লক ফেলা হয়, যেটা স্রোতে ভাসিয়ে নিতে পারবে না। নদীতীর বাঁধন, নদীশাসন—এসব যাদের কাজ, তাদের একাগ্রতা, জবাবদিহি ও টেকসই নির্মাণের নিশ্চয়তা, নৈতিকতা ইত্যাদির নিশ্চয়তা চাই জানিয়ে দাবি তুলে ধরতে হবে। নতুবা জনগণ এই হেঁয়ালিপূর্ণ কাজকে কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না, মেনে নেবে না। কারণ মানববন্ধন করে সঠিক সময়ে সঠিক মানুষকে বা কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে। সঠিক দাবি উপযুক্ত লোকের কাছে পৌঁছাতে হবে। নদীভাঙনের সময় নদীরা বেহুঁশ থাকে। সে সময় কোনো নদীর নিজের এসব মানববন্ধন দেখা বা শোনার মতো কোনো সামর্থ্য, সক্ষমতা কোনোটাই নেই। প্রতিবছর বন্যা ও নদীভাঙন শুরুর পর শুধু অসময়ে অরণ্যে রোদন করে কোনো ভালো ফল আশা করা বৃথা।
লেখক: অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১০ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১০ ঘণ্টা আগে