মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা
নতুন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সব সময়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, সে আর নতুন কথা কী। সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হলো একটি পুরোনো রীতির একঘেয়েমি কাটিয়ে একটি নতুন রীতি আলিঙ্গন করা। আশা করা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বসিত ও আপ্লুত করবে। শিক্ষকেরাও গতানুগতিকতার ক্লান্তি থেকে বেরিয়ে এসে নতুনধারার অনুশীলনে স্বস্তি বোধ করবেন। এই নতুনত্বের স্বাদ অভিভাবকদেরও স্পর্শ করবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন হাওয়া বইতে আরম্ভ করবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পাঠের যে শৃঙ্খলার সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা অভ্যস্ত ছিলেন, তা একেবারেই বদলে যাবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে, পড়বে কিন্তু পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবে না, আবার দশম শ্রেণির আগে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না, একেবারেই নতুন নিয়ম। অভ্যাসের প্রতি দুর্বলতার কারণে এই নতুন অনুশীলনে শিক্ষার্থীরা খানিকটা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। পরীক্ষা মানে শুধু পরীক্ষা নয়, পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীর সাফল্য অর্জনের উপায়। পরীক্ষার সাফল্য শিক্ষার্থীর প্রতিভার স্বীকৃতি, যা পেয়ে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক অনাবিল সুখ অনুভব করেন। ধারাবাহিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর প্রতিভার সেই স্বীকৃতি বহাল থাকা দরকার।
নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে আগের মতো থাকছে না বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ। দশটি অভিন্ন বিষয় সব শিক্ষার্থীকে পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকে নির্বাচন করা হবে পছন্দের বিভাগ। এই শৃঙ্খলা বেশ। তবে এখানে অতীত ঘাঁটা প্রয়োজন। ১৯৬০ সালের আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে এ রকমই একমুখী শিক্ষা ছিল। কী কারণে সেই একমুখী ব্যবস্থা ভেঙে নবম শ্রেণি থেকে তিনটি বিভাগ হয়েছিল আর কেনই-বা এখন তিনটি বিভাগ ভেঙে একটি হতে যাচ্ছে, সেটি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, সমস্যা চিহ্নিত হলে নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন সহজতর হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমে কারিগরি শিক্ষা থাকছে। থাকছে না চারুকলা, কারুকলা ও শরীরচর্চা। আবার একাদশ শ্রেণিতে একটি পাবলিক পরীক্ষা ও দ্বাদশ শ্রেণিতে একটি পাবলিক পরীক্ষা। শ্রেণিপাঠ মূল্যায়ন প্রধানত দুই রকম—ধারাবাহিক ও সামষ্টিক। শ্রেণিশিক্ষার সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক মূল্যায়নও হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে সাময়িক পরীক্ষাগুলোও হবে। প্রণীত শিক্ষাক্রম রীতিমতো বিরাট কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের সম্মুখ যোদ্ধা শিক্ষকশ্রেণি। আধুনিক শিক্ষাচিন্তা কার্যে পরিণত করার জন্য যত শিক্ষক প্রয়োজন এবং যত মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজন, তার যথেষ্ট অভাব আছে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবশ্যই প্রচুর প্রশিক্ষিত শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে দক্ষ শিক্ষকের জন্য সম্মানজনক বেতন-ভাতারও প্রয়োজন হবে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ইতিমধ্যে যেসব বিশেষজ্ঞ আলোচনায় এসেছেন, তাঁরা সবাই সন্তোষজনকসংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কথা বলেছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাই সম্মুখ সারির যোদ্ধা, তাঁদের হাতেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
নতুন শিক্ষা-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জরুরি মনে করি। দেশে এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই এবং মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকও নেই। তা ছাড়া, কোথাও কোথাও একজন শিক্ষক ষাট-সত্তর জন শিক্ষার্থী নিয়েও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন। পাঠচর্চার ধারাবাহিক মূল্যায়নে এরূপ অবস্থা বড় বাধা বলে গণ্য। ধারাবাহিকভাবে পাঠ-মূল্যায়নে একটি কক্ষে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ত্রিশ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকা অনুচিত। কারণ, তাতে উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। নতুন শিক্ষা-পরিকল্পনা কার্যে পরিণত করতে হলে গ্রামগঞ্জের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো টেনে তোলা প্রয়োজন। দেশে অসংখ্য স্কুল-কলেজ রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। তাই নতুন শিক্ষাচিন্তার আলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দুর্বল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দুর্বলতা দূর করার বিকল্প নেই।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে যেমন জটিলতা আছে, তেমনি যথেষ্ট ইতিবাচক দিকও রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বিশ্লেষণ করলে অনেক নতুন দিক দৃশ্যমান হবে। যেমন আগের পাঠ কার্যক্রমে কেবল পরীক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীকে বিচার করা হতো এবং সেই বিচার কিছুতেই সামগ্রিক বিচার নয়। পাঠের পাশাপাশি তার সাংস্কৃতিক মানসিকতা, আচরণগত সৌন্দর্য, দেশাত্মবোধ, মানবিকতা শ্রেণিপাঠের ধারাবাহিক মূল্যায়নে স্বীকৃতি পাবে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীকে কেবল মেধাবী হিসেবে পরিচিত করবে না, তাকে অনন্যসাধারণ মানুষ হিসেবেও পরিচিত করবে এবং শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্কও সুদৃঢ় করবে। তখন শিক্ষা প্রকৃত অর্থেই জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা উচ্চমর্যাদার সরকারি চাকরি ও গাড়ি-বাড়ির চাকচিক্য। আদর্শ জীবন গঠনের জন্য যে শিক্ষা, সে কথা সহজেই আমরা ভুলে যাই। নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সহায়ক বলে বিশ্বাস করি।
নতুন শিক্ষাক্রমে কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই চিন্তা যুগোপযোগী, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে আত্মকর্মসংস্থান বেঁচে থাকা ও টিকে থাকার একটি বড় নির্ভর হতে পারে এই কারিগরি শিক্ষা। যাদের কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা থাকবে, জীবনযুদ্ধে তারা হেরে যাবে না। সেই বিবেচনায় কারিগরি শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি একটি জোরালো ও সুচিন্তিত পদক্ষেপ। নতুন শিক্ষাক্রমের এটি অনন্য দিক। নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবিষয় ও পাঠশৃঙ্খলা দেখে বিশেষজ্ঞরা সুন্দর বিবেচনায় হ্যাঁ সূচক মন্তব্য করেছেন এবং সেই সঙ্গে এ-ও বলেছেন যে, শত সহস্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তবে কষ্টসাধ্য মানে অসম্ভব নয়, অনেক ভালো উদ্যোগই কষ্টসাধ্য।
জাতি গঠনে, জাতীয় উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে সরকার। সরকারের শুভ উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার দায়িত্ব সমাজের সচেতন শ্রেণির। সবার সহমত, আন্তরিকতা সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি। সমালোচনা সহজ, সমালোচনা নয়; বরং এই শিক্ষাক্রম ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরা চাই, যাতে নতুন শৃঙ্খলার শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীরা সাদরে গ্রহণ করতে পারে। এই ভূমিকা পালনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সমাজের এগিয়ে আসা কর্তব্য।
চলমান শিক্ষা কার্যক্রম ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পাঠকে নিজগুণে আত্মস্থ করতে অপারগ হয়েছে, ফলে তাদের নির্ভর করতে হয়েছে নোট-গাইডের ওপর। তাদের দুর্বলতাকে আশ্রয় করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে কোচিং-বাণিজ্য। বছরের পর বছর নোট-গাইড-কোচিং সেন্টার নিয়ে তারা মেতে থাকে, বিমুখ হয়ে পড়ে মূল পাঠ থেকে। শিক্ষার্থীরা মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে না, চিন্তাশক্তি জাগ্রত হয় না, আত্মপ্রকাশের ক্ষমতাও অর্জিত হয় না। পাসের অতিরিক্ত শিক্ষার মূল্য তাদের অজানা থাকে। নতুন শিক্ষাক্রম এই ভ্রান্তি তাদের ধরিয়ে দিতে সক্ষম হবে এবং জীবনের মহত্তর অর্থ শিক্ষার্থীরা আশা করি খুঁজে পাবে।
লেখক: প্রিন্সিপাল, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও প্রতিষ্ঠাতা, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ
নতুন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সব সময়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, সে আর নতুন কথা কী। সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হলো একটি পুরোনো রীতির একঘেয়েমি কাটিয়ে একটি নতুন রীতি আলিঙ্গন করা। আশা করা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বসিত ও আপ্লুত করবে। শিক্ষকেরাও গতানুগতিকতার ক্লান্তি থেকে বেরিয়ে এসে নতুনধারার অনুশীলনে স্বস্তি বোধ করবেন। এই নতুনত্বের স্বাদ অভিভাবকদেরও স্পর্শ করবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন হাওয়া বইতে আরম্ভ করবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পাঠের যে শৃঙ্খলার সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা অভ্যস্ত ছিলেন, তা একেবারেই বদলে যাবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে, পড়বে কিন্তু পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবে না, আবার দশম শ্রেণির আগে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না, একেবারেই নতুন নিয়ম। অভ্যাসের প্রতি দুর্বলতার কারণে এই নতুন অনুশীলনে শিক্ষার্থীরা খানিকটা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। পরীক্ষা মানে শুধু পরীক্ষা নয়, পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীর সাফল্য অর্জনের উপায়। পরীক্ষার সাফল্য শিক্ষার্থীর প্রতিভার স্বীকৃতি, যা পেয়ে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক অনাবিল সুখ অনুভব করেন। ধারাবাহিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর প্রতিভার সেই স্বীকৃতি বহাল থাকা দরকার।
নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে আগের মতো থাকছে না বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ। দশটি অভিন্ন বিষয় সব শিক্ষার্থীকে পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিকে নির্বাচন করা হবে পছন্দের বিভাগ। এই শৃঙ্খলা বেশ। তবে এখানে অতীত ঘাঁটা প্রয়োজন। ১৯৬০ সালের আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে এ রকমই একমুখী শিক্ষা ছিল। কী কারণে সেই একমুখী ব্যবস্থা ভেঙে নবম শ্রেণি থেকে তিনটি বিভাগ হয়েছিল আর কেনই-বা এখন তিনটি বিভাগ ভেঙে একটি হতে যাচ্ছে, সেটি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, সমস্যা চিহ্নিত হলে নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন সহজতর হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমে কারিগরি শিক্ষা থাকছে। থাকছে না চারুকলা, কারুকলা ও শরীরচর্চা। আবার একাদশ শ্রেণিতে একটি পাবলিক পরীক্ষা ও দ্বাদশ শ্রেণিতে একটি পাবলিক পরীক্ষা। শ্রেণিপাঠ মূল্যায়ন প্রধানত দুই রকম—ধারাবাহিক ও সামষ্টিক। শ্রেণিশিক্ষার সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক মূল্যায়নও হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে সাময়িক পরীক্ষাগুলোও হবে। প্রণীত শিক্ষাক্রম রীতিমতো বিরাট কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের সম্মুখ যোদ্ধা শিক্ষকশ্রেণি। আধুনিক শিক্ষাচিন্তা কার্যে পরিণত করার জন্য যত শিক্ষক প্রয়োজন এবং যত মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজন, তার যথেষ্ট অভাব আছে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবশ্যই প্রচুর প্রশিক্ষিত শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে দক্ষ শিক্ষকের জন্য সম্মানজনক বেতন-ভাতারও প্রয়োজন হবে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ইতিমধ্যে যেসব বিশেষজ্ঞ আলোচনায় এসেছেন, তাঁরা সবাই সন্তোষজনকসংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কথা বলেছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাই সম্মুখ সারির যোদ্ধা, তাঁদের হাতেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
নতুন শিক্ষা-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জরুরি মনে করি। দেশে এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই এবং মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকও নেই। তা ছাড়া, কোথাও কোথাও একজন শিক্ষক ষাট-সত্তর জন শিক্ষার্থী নিয়েও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন। পাঠচর্চার ধারাবাহিক মূল্যায়নে এরূপ অবস্থা বড় বাধা বলে গণ্য। ধারাবাহিকভাবে পাঠ-মূল্যায়নে একটি কক্ষে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ত্রিশ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকা অনুচিত। কারণ, তাতে উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। নতুন শিক্ষা-পরিকল্পনা কার্যে পরিণত করতে হলে গ্রামগঞ্জের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো টেনে তোলা প্রয়োজন। দেশে অসংখ্য স্কুল-কলেজ রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। তাই নতুন শিক্ষাচিন্তার আলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দুর্বল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দুর্বলতা দূর করার বিকল্প নেই।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে যেমন জটিলতা আছে, তেমনি যথেষ্ট ইতিবাচক দিকও রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বিশ্লেষণ করলে অনেক নতুন দিক দৃশ্যমান হবে। যেমন আগের পাঠ কার্যক্রমে কেবল পরীক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীকে বিচার করা হতো এবং সেই বিচার কিছুতেই সামগ্রিক বিচার নয়। পাঠের পাশাপাশি তার সাংস্কৃতিক মানসিকতা, আচরণগত সৌন্দর্য, দেশাত্মবোধ, মানবিকতা শ্রেণিপাঠের ধারাবাহিক মূল্যায়নে স্বীকৃতি পাবে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীকে কেবল মেধাবী হিসেবে পরিচিত করবে না, তাকে অনন্যসাধারণ মানুষ হিসেবেও পরিচিত করবে এবং শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্কও সুদৃঢ় করবে। তখন শিক্ষা প্রকৃত অর্থেই জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা উচ্চমর্যাদার সরকারি চাকরি ও গাড়ি-বাড়ির চাকচিক্য। আদর্শ জীবন গঠনের জন্য যে শিক্ষা, সে কথা সহজেই আমরা ভুলে যাই। নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সহায়ক বলে বিশ্বাস করি।
নতুন শিক্ষাক্রমে কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই চিন্তা যুগোপযোগী, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে আত্মকর্মসংস্থান বেঁচে থাকা ও টিকে থাকার একটি বড় নির্ভর হতে পারে এই কারিগরি শিক্ষা। যাদের কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা থাকবে, জীবনযুদ্ধে তারা হেরে যাবে না। সেই বিবেচনায় কারিগরি শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি একটি জোরালো ও সুচিন্তিত পদক্ষেপ। নতুন শিক্ষাক্রমের এটি অনন্য দিক। নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবিষয় ও পাঠশৃঙ্খলা দেখে বিশেষজ্ঞরা সুন্দর বিবেচনায় হ্যাঁ সূচক মন্তব্য করেছেন এবং সেই সঙ্গে এ-ও বলেছেন যে, শত সহস্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তবে কষ্টসাধ্য মানে অসম্ভব নয়, অনেক ভালো উদ্যোগই কষ্টসাধ্য।
জাতি গঠনে, জাতীয় উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে সরকার। সরকারের শুভ উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার দায়িত্ব সমাজের সচেতন শ্রেণির। সবার সহমত, আন্তরিকতা সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি। সমালোচনা সহজ, সমালোচনা নয়; বরং এই শিক্ষাক্রম ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরা চাই, যাতে নতুন শৃঙ্খলার শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীরা সাদরে গ্রহণ করতে পারে। এই ভূমিকা পালনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সমাজের এগিয়ে আসা কর্তব্য।
চলমান শিক্ষা কার্যক্রম ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পাঠকে নিজগুণে আত্মস্থ করতে অপারগ হয়েছে, ফলে তাদের নির্ভর করতে হয়েছে নোট-গাইডের ওপর। তাদের দুর্বলতাকে আশ্রয় করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে কোচিং-বাণিজ্য। বছরের পর বছর নোট-গাইড-কোচিং সেন্টার নিয়ে তারা মেতে থাকে, বিমুখ হয়ে পড়ে মূল পাঠ থেকে। শিক্ষার্থীরা মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে না, চিন্তাশক্তি জাগ্রত হয় না, আত্মপ্রকাশের ক্ষমতাও অর্জিত হয় না। পাসের অতিরিক্ত শিক্ষার মূল্য তাদের অজানা থাকে। নতুন শিক্ষাক্রম এই ভ্রান্তি তাদের ধরিয়ে দিতে সক্ষম হবে এবং জীবনের মহত্তর অর্থ শিক্ষার্থীরা আশা করি খুঁজে পাবে।
লেখক: প্রিন্সিপাল, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও প্রতিষ্ঠাতা, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৩ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৪ ঘণ্টা আগে