আবেদীন কাদের
আমি আমাদের সংসদ ভবনে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাতের ছবি দেখে একটি সংক্ষিপ্ত স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। এর ঠিক কিছুক্ষণ পর ঢাকার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, যিনি আমার প্রিয় সাংবাদিকদের একজন, একটি স্ট্যাটাস দেন এই বলে যে সংসদে মোনাজাত নিয়ে ফেসবুকে কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন। যেহেতু তিনি আমার শ্রদ্ধেয় এবং তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান আমি জানি, তাই বিষয়টি আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে। কারণ, তিনি তো শুধু লেখক-সাংবাদিকই নন, একসময়ের প্রগতিশীল রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, প্রগতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আমার বিস্ময়ের কারণ, তিনি কি বর্তমান সরকারের এই মোনাজাতকে সমর্থন করেন আইন পরিষদে, না কি এটি আওয়ামী লীগ নিজেকে যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক দাবি করে, তার সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক বলে এর প্রতিবাদ তাঁর ভালো লাগছে না!
আমার পরিচিত ওই সাংবদিক কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, না কি শ্রমিকের একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করেন আগের মতো—এটাই আমার প্রশ্ন। গণতন্ত্রে বিশ্বাস সবাইকেই করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। আমার নিজের কথাই বলতে পারি, গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো সমাজব্যবস্থা থাকলে আমিও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতাম না। এর হাজারটা বাজে দিক নিয়ে গত ২৫ বছর আমি শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করি, কিছুটা বইপত্রও পড়ার চেষ্টা করি। এটা খুব ভালো সমাজব্যবস্থা নয়, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বাকিগুলো এর চেয়ে বেশি খারাপ। এ ছাড়া গণতন্ত্রেরও আবার বিভিন্ন রকমফের আছে। এ বিষয়ে যাঁরা পণ্ডিত, তাঁদের সারাক্ষণের ভাবনা কীভাবে ৪৯ শতাংশ মানুষের অধিকারকে ৫১ শতাংশ মানুষের সর্বগ্রাসী হাত থেকে বাঁচানো যায়! কিন্তু সেটি যে কিছুতেই সম্পূর্ণ যায় না, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সংখ্যালঘিষ্ঠের অধিকার কতটুকু রক্ষা করা সম্ভব সেটাই নিয়ত চেষ্টার বিষয়। ৫১ শতাংশ যেন ইংরেজি বাক্য Takes all-এর চেষ্টা না করে বা পুরো ৪৯ শতাংশের অধিকার গিলে না ফেলে সেটির জন্য বিভিন্ন আইনের ব্যবস্থা করা হয়।
আমি বিভিন্ন তাত্ত্বিক বা পণ্ডিত, যাঁরা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করেন পশ্চিমা বিদ্যাপাড়ায় যেমন চার্লস টিলি বা রবার্ট ডাল বা মেকফারসন, তাঁদের তাত্ত্বিক আরগুমেন্টগুলো এখানে আনব না বিস্তারিত, কারণ ফেসবুক সে জায়গা নয় আলোচনার। আমি শুধু দুটো বিষয় এখানে উল্লেখ করব, যার ভিত্তিতে বুঝতে চেষ্টা করব কেন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, ভয়াবহভাবে জালিয়াতিপূর্ণ দানবীয় দল। প্রথমত, দলীয় ব্যবস্থা বা পার্টি সিস্টেম। গণতান্ত্রিক সমাজে দলীয় ব্যবস্থা কেমন থাকে, তাদের দলীয় কর্মপদ্ধতি কেমন? সহজ করে বলা যায়, দলগুলোর একেবারে নির্দলীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় বা তদারকিতে দলীয় গণতন্ত্রের পরীক্ষা দিতে হয়, অর্থাৎ এদের নেতা নির্বাচনে স্বচ্ছতা জরুরি। দ্বিতীয়ত, এদের অর্থের জোগানের হদিস পরিচ্ছন্নভাবে নির্দলীয় প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হয়, তারা সেটা অডিট করে। এই দুটি দিক, মানে অর্থ বা নেতা নির্বাচন পরিচ্ছন্ন না হলে তাদের রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয় না, বা এর নেতাদের জেলে যেতে হতে পারে আইন ভঙ্গের অপরাধে।
আমি ধরে নিচ্ছি, আমার পরিচিত ওই সাংবাদিক বন্ধু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাহলে তিনি জানান তাঁর প্রিয় দলটির নেতা-নেত্রীরা এসব নিয়ম মানেন কি না বা এসব না মানলেও তিনি তাঁদের গণতান্ত্রিক দল মনে করেন কি না?
এবার আসি রাজনীতিতে ধর্মের স্থান কী হবে সে বিষয়ে। যদি রাষ্ট্র ধর্মীয় শাসনতন্ত্র অনুযায়ী চলে, তাহলে সে ধর্মের নিয়মেই চলবে। কিন্তু যদি তা পশ্চিমা গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী শাসনতন্ত্র মানে, তাহলে সেখান থেকে ধর্মকে বিদায় দিতে হবে। কারণ, রাষ্ট্র ধর্মের বা বিশেষ ধর্মের প্রতি আনুগত্য দেখানো থেকে বিরত থাকবে; কিন্তু সাধারণ মানুষের ধর্ম পালনের অধিকারকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বা অন্য অজুহাতে কোনো ধর্মের মানুষকে বেশি সুবিধা দেওয়া মানে গণতন্ত্রের যে মূল রীতি ‘সবার সমান অধিকার’, তা অমান্য করা হবে। সে কারণেই গণতন্ত্রের শুরু থেকেই এর প্রধান শর্ত ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারাইজেশন প্রজেক্টের প্রিন্সিপ্যালগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। কিন্তু সংঘর্ষটা শুরু হয় ভোট চাইতে গেলে। কারণ, ধর্মাশ্রয়ী মানুষ অনেকেই নিজের ধর্মের প্রতি অহেতুক দুর্বল। তখন ভোটপ্রার্থীকে ভন্ডামির আশ্রয় নিতে হয় আজেবাজে কথার ঘূর্ণায়ন সৃষ্টি করে। আর আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীরা তা-ই করে থাকেন, কিছুটা নির্লজ্জভাবে। যা করলে ভোটাররা খুশি থাকবেন, তাঁরা তাই করেন—আর সে কারণে আইন পরিষদকে ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চ বা মসজিদ বানাতেও তাদের সংকোচ লাগে না। আর তার পক্ষে সাফাই গাওয়া তখন তাঁদের চূড়ান্ত প্রতারণাপূর্ণ অভ্যাসে পরিণত হয়।
আশা করি, এ কথাগুলোর আলোকে সহজেই বোঝা যাবে শেখ হাসিনা কতটা গণতান্ত্রিক রাজনীতিক। দলীয় গণতন্ত্র কতটা তিনি চর্চা করেন বা কতটা জাতীয় রাজনীতিতে! বা তাঁর দলের অর্থের জোগান কারা দেন, বিনিময়ে তিনি কী দেন তাঁদের! তবে শেখ হাসিনাও জগতের অন্যান্য রাজনীতিকের মতোই, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন পর্বে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক চরিত্রের মানুষ। ৮১ সালের ১৭ মে দিবসের সেই বৃষ্টিস্নাত ঢাকা বিমান বন্দর থেকে যদি তাঁর রাজনৈতিক সালতামামি বিচার করি, মোটা দাগে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনিও চেষ্টা করেছিলেন একজন সৎ, যতটা আমাদের সমাজে সৎ থাকা যায়, রাজনীতিক থাকতে। ৮১ থেকে ৯১ পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রম সত্যিই অসাধারণ। একেবারে ছেঁড়াখোঁড়া বিপর্যস্ত দলটিকে তিনি মৃত্তিকাসংলগ্ন একটি সাধারণ মানুষের দলে পরিণত করেন ভীষণ প্রতিকূলতার মাঝে। ৯১ থেকে ৯৬ সময়ও তাঁকে সত্যিকার সংগ্রামী রাজনীতিক হিসাবে ইতিহাস হয়তো বিচার করবে।
তাঁর হয়তো স্বপ্ন ছিল— স্বচ্ছভাবেই সাধারণ মানুষের ভোট ও ভাত নিশ্চিত করা। কিন্তু দুটি সেনাশাসন, একটি সেনাছাউনির সমর্থনে নির্বাচিত একনায়ক শাসন তাঁর ব্যক্তিজীবন এবং রাজনৈতিক জীবনকে যেভাবে নারকীয় অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, সেটি থেকে সুস্থ মনোজগৎ নিয়ে বেঁচে থাকা সত্যিই যে-কারও জন্য প্রায় অসম্ভব। তিনি তবু বেঁচে ছিলেন, এবং একজন মমতাময়ী মানুষ হিসেবেই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালের পর তাঁর পক্ষে আর সুস্থ চিন্তা নিয়ে রাজনীতি করা হয়তো প্রায় অসম্ভব করে দিয়েছে আমাদের সমাজ, আমাদের রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সামাজিক শক্তিগুলো। আমি তাঁর ব্যক্তিজীবনে সব-হারানোর কথা আলোচনায় আনছি না। সেটি শুধু তাঁর নয়, আমাদের ইতিহাসের নারকীয় ট্রাজেডি! কিন্তু তারপরও এগুলো তাঁর জীবনের কষ্টের দিক, তাঁর আপনজন বা অনুসারীরা এর জন্য বেদনার্ত হবেন, কিন্তু রাজনৈতিক ইতিহাস তাঁকে তাঁর অনুসারীদের মতো দেখবে না, ইতিহাসের বিচার হবে নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ। সেখানে তাঁকে কীভাবে বিচার করা হবে বলা মুশকিল, বিশেষ করে কিছুকাল আগের মধ্যরাতের নির্বাচনের পর।
সবশেষে আমার আগের কথাই আবার বলি—রাষ্ট্র এক দানবের নাম, আর রাষ্ট্রের পরিচালকেরা অধিকাংশই ক্ষমতার মদিরাচ্ছন্নতায় কখনও কখনও অমানুষে বা ভণ্ড প্রতারকে রূপান্তরিত হন। সাংবাদিকের বা বুদ্ধিজীবীর কাজ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালকদের নিরন্তর চাবুকের নিচে রাখা। তাতে একটি সমস্যা আছে, আর তা হলো—সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবীরাও মানুষ—তাঁদেরও পছন্দ থাকে, পছন্দের নেতা-নেত্রী থাকে। তাঁদেরও চাবুক চালাতে কষ্ট হয়, সে কষ্টের জন্য নিভৃতে একাকী তাঁর অশ্রুও ঝরতে পারে। তবু সে কষ্ট মেনে নিতে হয়! আর সম্ভব হলে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালকদের থেকে বা ‘শক্তি’র কাছ থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা শ্রেয়তর। কেননা আনুকূল্য নেওয়া তো সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবীর জন্য পাপ!
আমি আমাদের সংসদ ভবনে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাতের ছবি দেখে একটি সংক্ষিপ্ত স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। এর ঠিক কিছুক্ষণ পর ঢাকার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, যিনি আমার প্রিয় সাংবাদিকদের একজন, একটি স্ট্যাটাস দেন এই বলে যে সংসদে মোনাজাত নিয়ে ফেসবুকে কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন। যেহেতু তিনি আমার শ্রদ্ধেয় এবং তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান আমি জানি, তাই বিষয়টি আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে। কারণ, তিনি তো শুধু লেখক-সাংবাদিকই নন, একসময়ের প্রগতিশীল রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, প্রগতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আমার বিস্ময়ের কারণ, তিনি কি বর্তমান সরকারের এই মোনাজাতকে সমর্থন করেন আইন পরিষদে, না কি এটি আওয়ামী লীগ নিজেকে যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক দাবি করে, তার সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক বলে এর প্রতিবাদ তাঁর ভালো লাগছে না!
আমার পরিচিত ওই সাংবদিক কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, না কি শ্রমিকের একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করেন আগের মতো—এটাই আমার প্রশ্ন। গণতন্ত্রে বিশ্বাস সবাইকেই করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। আমার নিজের কথাই বলতে পারি, গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো সমাজব্যবস্থা থাকলে আমিও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতাম না। এর হাজারটা বাজে দিক নিয়ে গত ২৫ বছর আমি শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করি, কিছুটা বইপত্রও পড়ার চেষ্টা করি। এটা খুব ভালো সমাজব্যবস্থা নয়, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বাকিগুলো এর চেয়ে বেশি খারাপ। এ ছাড়া গণতন্ত্রেরও আবার বিভিন্ন রকমফের আছে। এ বিষয়ে যাঁরা পণ্ডিত, তাঁদের সারাক্ষণের ভাবনা কীভাবে ৪৯ শতাংশ মানুষের অধিকারকে ৫১ শতাংশ মানুষের সর্বগ্রাসী হাত থেকে বাঁচানো যায়! কিন্তু সেটি যে কিছুতেই সম্পূর্ণ যায় না, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সংখ্যালঘিষ্ঠের অধিকার কতটুকু রক্ষা করা সম্ভব সেটাই নিয়ত চেষ্টার বিষয়। ৫১ শতাংশ যেন ইংরেজি বাক্য Takes all-এর চেষ্টা না করে বা পুরো ৪৯ শতাংশের অধিকার গিলে না ফেলে সেটির জন্য বিভিন্ন আইনের ব্যবস্থা করা হয়।
আমি বিভিন্ন তাত্ত্বিক বা পণ্ডিত, যাঁরা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করেন পশ্চিমা বিদ্যাপাড়ায় যেমন চার্লস টিলি বা রবার্ট ডাল বা মেকফারসন, তাঁদের তাত্ত্বিক আরগুমেন্টগুলো এখানে আনব না বিস্তারিত, কারণ ফেসবুক সে জায়গা নয় আলোচনার। আমি শুধু দুটো বিষয় এখানে উল্লেখ করব, যার ভিত্তিতে বুঝতে চেষ্টা করব কেন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, ভয়াবহভাবে জালিয়াতিপূর্ণ দানবীয় দল। প্রথমত, দলীয় ব্যবস্থা বা পার্টি সিস্টেম। গণতান্ত্রিক সমাজে দলীয় ব্যবস্থা কেমন থাকে, তাদের দলীয় কর্মপদ্ধতি কেমন? সহজ করে বলা যায়, দলগুলোর একেবারে নির্দলীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় বা তদারকিতে দলীয় গণতন্ত্রের পরীক্ষা দিতে হয়, অর্থাৎ এদের নেতা নির্বাচনে স্বচ্ছতা জরুরি। দ্বিতীয়ত, এদের অর্থের জোগানের হদিস পরিচ্ছন্নভাবে নির্দলীয় প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হয়, তারা সেটা অডিট করে। এই দুটি দিক, মানে অর্থ বা নেতা নির্বাচন পরিচ্ছন্ন না হলে তাদের রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয় না, বা এর নেতাদের জেলে যেতে হতে পারে আইন ভঙ্গের অপরাধে।
আমি ধরে নিচ্ছি, আমার পরিচিত ওই সাংবাদিক বন্ধু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাহলে তিনি জানান তাঁর প্রিয় দলটির নেতা-নেত্রীরা এসব নিয়ম মানেন কি না বা এসব না মানলেও তিনি তাঁদের গণতান্ত্রিক দল মনে করেন কি না?
এবার আসি রাজনীতিতে ধর্মের স্থান কী হবে সে বিষয়ে। যদি রাষ্ট্র ধর্মীয় শাসনতন্ত্র অনুযায়ী চলে, তাহলে সে ধর্মের নিয়মেই চলবে। কিন্তু যদি তা পশ্চিমা গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী শাসনতন্ত্র মানে, তাহলে সেখান থেকে ধর্মকে বিদায় দিতে হবে। কারণ, রাষ্ট্র ধর্মের বা বিশেষ ধর্মের প্রতি আনুগত্য দেখানো থেকে বিরত থাকবে; কিন্তু সাধারণ মানুষের ধর্ম পালনের অধিকারকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বা অন্য অজুহাতে কোনো ধর্মের মানুষকে বেশি সুবিধা দেওয়া মানে গণতন্ত্রের যে মূল রীতি ‘সবার সমান অধিকার’, তা অমান্য করা হবে। সে কারণেই গণতন্ত্রের শুরু থেকেই এর প্রধান শর্ত ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারাইজেশন প্রজেক্টের প্রিন্সিপ্যালগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। কিন্তু সংঘর্ষটা শুরু হয় ভোট চাইতে গেলে। কারণ, ধর্মাশ্রয়ী মানুষ অনেকেই নিজের ধর্মের প্রতি অহেতুক দুর্বল। তখন ভোটপ্রার্থীকে ভন্ডামির আশ্রয় নিতে হয় আজেবাজে কথার ঘূর্ণায়ন সৃষ্টি করে। আর আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীরা তা-ই করে থাকেন, কিছুটা নির্লজ্জভাবে। যা করলে ভোটাররা খুশি থাকবেন, তাঁরা তাই করেন—আর সে কারণে আইন পরিষদকে ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চ বা মসজিদ বানাতেও তাদের সংকোচ লাগে না। আর তার পক্ষে সাফাই গাওয়া তখন তাঁদের চূড়ান্ত প্রতারণাপূর্ণ অভ্যাসে পরিণত হয়।
আশা করি, এ কথাগুলোর আলোকে সহজেই বোঝা যাবে শেখ হাসিনা কতটা গণতান্ত্রিক রাজনীতিক। দলীয় গণতন্ত্র কতটা তিনি চর্চা করেন বা কতটা জাতীয় রাজনীতিতে! বা তাঁর দলের অর্থের জোগান কারা দেন, বিনিময়ে তিনি কী দেন তাঁদের! তবে শেখ হাসিনাও জগতের অন্যান্য রাজনীতিকের মতোই, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন পর্বে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক চরিত্রের মানুষ। ৮১ সালের ১৭ মে দিবসের সেই বৃষ্টিস্নাত ঢাকা বিমান বন্দর থেকে যদি তাঁর রাজনৈতিক সালতামামি বিচার করি, মোটা দাগে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনিও চেষ্টা করেছিলেন একজন সৎ, যতটা আমাদের সমাজে সৎ থাকা যায়, রাজনীতিক থাকতে। ৮১ থেকে ৯১ পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রম সত্যিই অসাধারণ। একেবারে ছেঁড়াখোঁড়া বিপর্যস্ত দলটিকে তিনি মৃত্তিকাসংলগ্ন একটি সাধারণ মানুষের দলে পরিণত করেন ভীষণ প্রতিকূলতার মাঝে। ৯১ থেকে ৯৬ সময়ও তাঁকে সত্যিকার সংগ্রামী রাজনীতিক হিসাবে ইতিহাস হয়তো বিচার করবে।
তাঁর হয়তো স্বপ্ন ছিল— স্বচ্ছভাবেই সাধারণ মানুষের ভোট ও ভাত নিশ্চিত করা। কিন্তু দুটি সেনাশাসন, একটি সেনাছাউনির সমর্থনে নির্বাচিত একনায়ক শাসন তাঁর ব্যক্তিজীবন এবং রাজনৈতিক জীবনকে যেভাবে নারকীয় অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, সেটি থেকে সুস্থ মনোজগৎ নিয়ে বেঁচে থাকা সত্যিই যে-কারও জন্য প্রায় অসম্ভব। তিনি তবু বেঁচে ছিলেন, এবং একজন মমতাময়ী মানুষ হিসেবেই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালের পর তাঁর পক্ষে আর সুস্থ চিন্তা নিয়ে রাজনীতি করা হয়তো প্রায় অসম্ভব করে দিয়েছে আমাদের সমাজ, আমাদের রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সামাজিক শক্তিগুলো। আমি তাঁর ব্যক্তিজীবনে সব-হারানোর কথা আলোচনায় আনছি না। সেটি শুধু তাঁর নয়, আমাদের ইতিহাসের নারকীয় ট্রাজেডি! কিন্তু তারপরও এগুলো তাঁর জীবনের কষ্টের দিক, তাঁর আপনজন বা অনুসারীরা এর জন্য বেদনার্ত হবেন, কিন্তু রাজনৈতিক ইতিহাস তাঁকে তাঁর অনুসারীদের মতো দেখবে না, ইতিহাসের বিচার হবে নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ। সেখানে তাঁকে কীভাবে বিচার করা হবে বলা মুশকিল, বিশেষ করে কিছুকাল আগের মধ্যরাতের নির্বাচনের পর।
সবশেষে আমার আগের কথাই আবার বলি—রাষ্ট্র এক দানবের নাম, আর রাষ্ট্রের পরিচালকেরা অধিকাংশই ক্ষমতার মদিরাচ্ছন্নতায় কখনও কখনও অমানুষে বা ভণ্ড প্রতারকে রূপান্তরিত হন। সাংবাদিকের বা বুদ্ধিজীবীর কাজ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালকদের নিরন্তর চাবুকের নিচে রাখা। তাতে একটি সমস্যা আছে, আর তা হলো—সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবীরাও মানুষ—তাঁদেরও পছন্দ থাকে, পছন্দের নেতা-নেত্রী থাকে। তাঁদেরও চাবুক চালাতে কষ্ট হয়, সে কষ্টের জন্য নিভৃতে একাকী তাঁর অশ্রুও ঝরতে পারে। তবু সে কষ্ট মেনে নিতে হয়! আর সম্ভব হলে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালকদের থেকে বা ‘শক্তি’র কাছ থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা শ্রেয়তর। কেননা আনুকূল্য নেওয়া তো সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবীর জন্য পাপ!
যেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
২ ঘণ্টা আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
২ ঘণ্টা আগেসিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
২ ঘণ্টা আগে