নাদেরা সুলতানা নদী
আশির দশকে গ্রামের স্কুলে পড়ার সময়গুলোতে আমাদের মূল বিনোদন বলতে যা যা ছিল, তার মধ্যে রেডিও একটি। সকাল-সন্ধ্যার কিছু নিয়মিত অনুষ্ঠান, সাপ্তাহিক নাটক এবং সুযোগ এলেই সিনেমার গানের অনুষ্ঠানগুলো শোনা হতো। কী যে ভালো লাগত পুরোনো দিনের সেসব গান। কথা ও সুরে বিভোর হয়ে যেতাম।
সপ্তাহে (নাকি মাসিক ভুলে গেছি) একদিন আসত বেগম পত্রিকা। এর বাইরে মা-বাবা, পরিবারের বড়দের কেউ শহরে বেড়াতে গিয়ে কোনো সিনেমা দেখে এলে সেই গল্পও বেশ কিছুদিন এক নতুন বিনোদন হয়েই আসত আমাদের জন্য।
আর আসত মাঝে মাঝেই সানন্দা। সানন্দার মতো ঝকঝকে প্রিন্টের না হলেও আমাদের দেশের জনপ্রিয় সিনেমা পত্রিকা ছিল চিত্রালী।
বাসার বড়দের দেখা হয়ে গেলে সুযোগ বুঝে আমরাও চোখ বোলাতাম সিনেমার নায়িকা, নায়কদের নানান রঙের, পোজের ছবিতে। স্বাভাবিকভাবেই সব সময়ই কিছু স্পেশাল নায়ক-নায়িকার ক্রেজ, জনপ্রিয়তা থাকে, তখনো ছিল।
আমরা যখন স্কুলে, তখন তো আর আমাদের ওভাবে পছন্দ ছিল না। যা ছিল আমাদের মা, বাবা, মামা, চাচা, খালা, ফুফুদের পছন্দ, তা নিয়েই একটু আগ্রহ।
নায়ক-নায়িকা সবাই যে সময় থেকে আগানো বা ফ্যাশন সচেতন সমানভাবে থাকে, তা না। সময় থেকে আগানো মানে সেই সময়ের মূলধারার বাইরে কিছু উপস্থাপন, সেটা থাকে হাতে গোনা দু-একজনেরই।
পশ্চিমা পোশাকে নায়িকাদের অন্য রকম ছবি আমরা ছোটরা ওভাবে না বুঝে এমনিতেই চোখ বুলাতাম।
সেই বোঝা না-বোঝা সময়েই যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে থেকে গেছে, তা হচ্ছে শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক বা যে যেই পেশায় আছেন, বিশেষ করে রুপালি পর্দার তারকা, তাঁদের অনেক কিছুই আমরা অনেক সময় ঠিকঠাক বুঝতে পারব না। কিন্তু সম্মান নিয়ে দেখতে হবে। তাঁরা আমাদের মতো সাধারণ প্রকাশেই আটকে থাকা মানুষ নন।
কেউ কেউ শুধু ভালো কিছু কাজ দিয়েই খুব জনপ্রিয় হবেন, বেশি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাবেন, কেউ কেউ যাবেন না। কাজ নিয়ে সমালোচনাও হবে—এ সবই সেই মানুষের কাজের পরিধির অংশ!
তখন এত মিডিয়া বা নানান প্রকাশমাধ্যম ছিল না বিধায় আমাদের চিন্তার জানালা ছিল আমাদের কাছের মানুষ এবং তাদের ভাবনা-প্রকাশ। আমরা দেখেছি, রুপালি পর্দার মানুষদের ঘিরে ছিল শুধুই একটা আগ্রহ; কারও কারও প্রতি তীব্র ভালো লাগা এবং একটা অন্য রকম সম্মান, যে কাজটাই করুক না কেন তারা!
বিষয়টা এমন ছিল না যে, সেই সময় নায়ক-নায়িকাদের কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিল না। এমন না যে সব শিল্পী সব জনগণের মনের মতোই কোনো জীবনধারায় জীবনযাপন করতেন।
সেই সময়ও শিল্পীদের কেউ কেউ অন্য রকম জীবনযাপন করতেন, এটা কোনো তথ্য বা গবেষণা ছাড়াই বলা যায়। কিন্তু কোনো শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনযাপনের গোপন রহস্য নিয়ে কারও তেমন কৌতূহল দেখা যেত না।
কেন বলছি এই প্রসঙ্গ আজ? আসলে এই সময়ে আমাদের চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ, বিশেষ করে শিল্প-সংস্কৃতিতে কাজ করা নারীবিষয়ক ধারণার যে চিত্র নানান মিডিয়ার মাধ্যমে উঠে আসে, সেই সব দেখেশুনে খুব অবাক হতে হয়, বিস্মিত হই।
একজন মিথিলা, জয়া, বাঁধন বা এই সময়ের আলোচিত পরীমণির মতো কোনো নারী শিল্পীকে নিয়ে কোনো কোনো পোস্টে এমন নোংরা ভাষায় আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছে অসংখ্যা মানুষ। অনেক সময় কান্না পায় এই ভেবে নারীদের সম্পর্কে এমন মনোভাব পোষণ করেন, প্রকাশ করেন যাঁরা, তাঁরা আসলে কেমন মানুষ?
তাই আজ এই সময়ে এসে মাঝে মাঝেই মনে হয়, আমরা আগাচ্ছি? নাকি হাঁটছি উল্টো পথে?
লেখক: শিক্ষা ও সমাজ বিশ্লেষক
আশির দশকে গ্রামের স্কুলে পড়ার সময়গুলোতে আমাদের মূল বিনোদন বলতে যা যা ছিল, তার মধ্যে রেডিও একটি। সকাল-সন্ধ্যার কিছু নিয়মিত অনুষ্ঠান, সাপ্তাহিক নাটক এবং সুযোগ এলেই সিনেমার গানের অনুষ্ঠানগুলো শোনা হতো। কী যে ভালো লাগত পুরোনো দিনের সেসব গান। কথা ও সুরে বিভোর হয়ে যেতাম।
সপ্তাহে (নাকি মাসিক ভুলে গেছি) একদিন আসত বেগম পত্রিকা। এর বাইরে মা-বাবা, পরিবারের বড়দের কেউ শহরে বেড়াতে গিয়ে কোনো সিনেমা দেখে এলে সেই গল্পও বেশ কিছুদিন এক নতুন বিনোদন হয়েই আসত আমাদের জন্য।
আর আসত মাঝে মাঝেই সানন্দা। সানন্দার মতো ঝকঝকে প্রিন্টের না হলেও আমাদের দেশের জনপ্রিয় সিনেমা পত্রিকা ছিল চিত্রালী।
বাসার বড়দের দেখা হয়ে গেলে সুযোগ বুঝে আমরাও চোখ বোলাতাম সিনেমার নায়িকা, নায়কদের নানান রঙের, পোজের ছবিতে। স্বাভাবিকভাবেই সব সময়ই কিছু স্পেশাল নায়ক-নায়িকার ক্রেজ, জনপ্রিয়তা থাকে, তখনো ছিল।
আমরা যখন স্কুলে, তখন তো আর আমাদের ওভাবে পছন্দ ছিল না। যা ছিল আমাদের মা, বাবা, মামা, চাচা, খালা, ফুফুদের পছন্দ, তা নিয়েই একটু আগ্রহ।
নায়ক-নায়িকা সবাই যে সময় থেকে আগানো বা ফ্যাশন সচেতন সমানভাবে থাকে, তা না। সময় থেকে আগানো মানে সেই সময়ের মূলধারার বাইরে কিছু উপস্থাপন, সেটা থাকে হাতে গোনা দু-একজনেরই।
পশ্চিমা পোশাকে নায়িকাদের অন্য রকম ছবি আমরা ছোটরা ওভাবে না বুঝে এমনিতেই চোখ বুলাতাম।
সেই বোঝা না-বোঝা সময়েই যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে থেকে গেছে, তা হচ্ছে শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক বা যে যেই পেশায় আছেন, বিশেষ করে রুপালি পর্দার তারকা, তাঁদের অনেক কিছুই আমরা অনেক সময় ঠিকঠাক বুঝতে পারব না। কিন্তু সম্মান নিয়ে দেখতে হবে। তাঁরা আমাদের মতো সাধারণ প্রকাশেই আটকে থাকা মানুষ নন।
কেউ কেউ শুধু ভালো কিছু কাজ দিয়েই খুব জনপ্রিয় হবেন, বেশি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাবেন, কেউ কেউ যাবেন না। কাজ নিয়ে সমালোচনাও হবে—এ সবই সেই মানুষের কাজের পরিধির অংশ!
তখন এত মিডিয়া বা নানান প্রকাশমাধ্যম ছিল না বিধায় আমাদের চিন্তার জানালা ছিল আমাদের কাছের মানুষ এবং তাদের ভাবনা-প্রকাশ। আমরা দেখেছি, রুপালি পর্দার মানুষদের ঘিরে ছিল শুধুই একটা আগ্রহ; কারও কারও প্রতি তীব্র ভালো লাগা এবং একটা অন্য রকম সম্মান, যে কাজটাই করুক না কেন তারা!
বিষয়টা এমন ছিল না যে, সেই সময় নায়ক-নায়িকাদের কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিল না। এমন না যে সব শিল্পী সব জনগণের মনের মতোই কোনো জীবনধারায় জীবনযাপন করতেন।
সেই সময়ও শিল্পীদের কেউ কেউ অন্য রকম জীবনযাপন করতেন, এটা কোনো তথ্য বা গবেষণা ছাড়াই বলা যায়। কিন্তু কোনো শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনযাপনের গোপন রহস্য নিয়ে কারও তেমন কৌতূহল দেখা যেত না।
কেন বলছি এই প্রসঙ্গ আজ? আসলে এই সময়ে আমাদের চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ, বিশেষ করে শিল্প-সংস্কৃতিতে কাজ করা নারীবিষয়ক ধারণার যে চিত্র নানান মিডিয়ার মাধ্যমে উঠে আসে, সেই সব দেখেশুনে খুব অবাক হতে হয়, বিস্মিত হই।
একজন মিথিলা, জয়া, বাঁধন বা এই সময়ের আলোচিত পরীমণির মতো কোনো নারী শিল্পীকে নিয়ে কোনো কোনো পোস্টে এমন নোংরা ভাষায় আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছে অসংখ্যা মানুষ। অনেক সময় কান্না পায় এই ভেবে নারীদের সম্পর্কে এমন মনোভাব পোষণ করেন, প্রকাশ করেন যাঁরা, তাঁরা আসলে কেমন মানুষ?
তাই আজ এই সময়ে এসে মাঝে মাঝেই মনে হয়, আমরা আগাচ্ছি? নাকি হাঁটছি উল্টো পথে?
লেখক: শিক্ষা ও সমাজ বিশ্লেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১২ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
১২ ঘণ্টা আগে